মন্তব্য প্রতিবেদন । এম আনিছুর রহমান
[১] মুজিব অধ্যায় নিভে যাওয়ার পর গণতন্ত্রের মানসকন্যার পাশে কেউ ছিলনা বললেই চলে আর এখন দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতার একক আধিপত্যের কারনে চারিদিকে শুধুই আওয়ামী লীগ।নব্য আওয়ামী লীগ, সভ্য আওয়ামী লীগ, হাইব্রীড আওয়ামী লীগ, অতি উৎসাহী আওয়ামী লীগ এবং সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত টাইটেল- আওয়ামী লীগের দালাল। ‘দালাল’ শব্দটি সাধারণত স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষরাই বেশী ব্যবহার করে, যেমন- জমির দালাল। এই শব্দটি যখন সুশীল সমাজ বা কোন উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের মুখ থেকে বের হয় তখন তাকে সরাসরি মুর্খ বলাই উচিত অর্থাৎ এরা শিক্ষিত মুর্খ হিসেবে বিবেচিত, যেমন- ভিপি নূর।
[২] দেশে বর্তমানে শিক্ষিত মুর্খের অভাব নেই কিন্তু ভিপি নূর সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত অন্যতম শিক্ষিত মুর্খ । এই শিক্ষিত মুর্খের সাথে একটি লাইভ অনুষ্ঠানে টক-শো করতে এসেছিলেন দেশের প্রখ্যাত সম্পাদক জনাব নাঈমুল ইসলাম খান, যাকে দেশের সম্পাদকদেরও সম্পাদক বলা হয়।সেই আজকের কাগজ থেকে শুরু করে আমাদের নতুন সময় পর্যন্ত ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় দেশের বেশীরভাগ প্রখ্যাত সম্পাদকই তার সহযোগী সম্পাদক ছিলেন, তাদের মধ্যে প্রথমআলো সম্পাদক জনাব মতিউর রহমান, ভোরের কাগজ সম্পাদক জনাব শ্যামল দত্ত, তৃতীয় মাত্রার উপস্থাপক জনাব জিল্লুর রহমান অন্যতম।
[৩] যাইহোক শিক্ষিত মুর্খদের সাথে টক-শো করার সময় যাদের আছে তাদের জীবনে ব্যস্ততা কমে এসেছে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে। মহাব্যস্ত এই সিনিয়র সম্পাদকের হঠাৎ এত অফুরন্ত সময় হল কিভাবে? বিশ্লেষণে জানা যায় তিনি তার সকল পত্রিকার সম্পাদনা ট্রান্সফার করে বর্তমানে প্রধান সম্পাদক হিসেবে আছেন।সম্পাদক একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ যা হতে গেলে সরকারী অনুমতি লাগে কিন্তু প্রধান সম্পাদক, সম্পাদকের উচ্চ প্রটোকল হলেও এর জন্য সরকারী অনুমোদন লাগেনা, এমনকি তার খুব একটা জবাবদিহিতাও থাকেনা। অর্থাৎ সরকারী বিধি মোতাবেক মূল দায়-দায়িত্ব সম্পাদকের হাতে বুঝিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র নিজ মালিকানা সহ পত্রিকার কর্তৃত্বটা নিজ হাতের মুঠোয় রাখাটাই বর্তমানে প্রধান সম্পাদক হিসেবে তার মূল কাজ। এহেন কারনেই তিনি এখন বিভিন্ন টক-শো তে সরগরম হয়ে গেছেন। অন্য কেউ থাক বা না থাক, প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন টিভি চ্যানেলে খান সাহেব আছেনই। ইদানিং বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ছাড়াও বিভিন্ন পারসনাল জুম-মিটিংয়েও তার ব্যাপক উপস্থিতি অর্থাৎ তার জীবনে এখন অফুরন্ত বেকার সময় যা তিনি এভাবে টক-শো করে ব্যয় করেন।
গভীর বিশ্লেষণে আরও দেখা যায় তিনি বর্তমানে বিভিন্ন টক-শো করে সম্পাদনার চেয়েও অধিক পরিমান ইনকাম করেন, যা তার এই মূহুর্তের যাপিত জীবনের জন্য অপরিহার্যও বটে। বাহির থেকে সবাই পত্রিকার মালিকদের যতই ধনাঢ্য মনে করেন না কেন, বাস্তবে এর চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। একজন পত্রিকার মালিককে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করে ইন-হাউসের বেতন ভাতা দিতে হয়, যা বাহির থেকে কারও পক্ষে ধারনা করাও সম্ভব নয়। তাই বলে কোন শিক্ষিত মুর্খদের সাথে টক-শো করে তা করতেই হবে এমন কোন কথা নয়।
[৪] কোটা আন্দোলন করে অতি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের অনুভূতিকে পুঁজি করে ডাকসুর ভিপি হিসেবে হঠাৎ নেতা বনে যাওয়া এই ভিপি নূর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ আরও অনেক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের কাছেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে শিক্ষিত মুর্খ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন। বিষয়টি জানার পরও খান সাহেব তার সাথে টক-শো করতে যেয়ে আওয়ামী লীগের দালাল হিসেবে টাইটেল পেয়েছেন যা নূর সাহেব সরাসরি খান সাহেবকে বলেছেন। আবার টক-শোর আলোচনার মূল ধারা থেকে সরে যেয়ে এ নিয়ে খান সাহেব নূর সাহেবকে দীর্ঘক্ষণ ধারালো বয়ান দিয়ে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত নূর সাহেব কিছুটা কোণঠাসা হলেও তিনি সরাসরি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। এধরনের ঘটনার পরে আশা করা যেতেই পারে যে, এ থেকে শিক্ষা নিয়ে এরপর থেকে খান সাহেব আর কখনও কোন শিক্ষিত মুর্খের সাথে টক-শো করতে যাবেননা। নিজের লেভেল বজায় রেখে কোন অনুষ্ঠানে যাবেন বা কথা বলবেন। তার অনুসারীদেরকে তিনি এভাবে আর কখনও হতাশ করবেননা। তারপরও যদি তিনি এহেন কার্য পূণর্বার করেন তাহলে বুঝতে হবে তারও ডা: জাফরউল্লার মত বয়স হয়েছে।
[৫] আওয়ামী রাজনীতিতে যারা সরাসরি সম্পৃক্ত আছেন তারা সরাসরি শেখ হাসিনার কর্মীবৃন্দ; তাদের জন্য জননেত্রী সর্বদা নিবেদিত। অন্যদিকে শেখ হাসিনার সাথে দেশ মাতৃকার উন্নয়ন ও গঠনমূলক পরিকল্পনায় দেশের সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে সরাসরি যারা সম্পৃক্ত আছেন তাদের জন্য তিনি দেশ বিদেশে হন আরও বেশী সমাদৃত। এরা আওয়ামী লীগের নেতা/কর্মী বা দালাল কোনটাই নন। এরা সরাসরি শেখ হাসিনার একান্ত প্রতিনিধি। খান সাহেব তাদেরই একজন হলেও ইদানিং তিনি সংবাদপত্রের সুখদু:খ নিয়ে কম কথা বলছেন আর আওয়ামী লীগ এর সুখদু:খ নিয়ে একটু বেশীই বলছেন। যেমন: হীরক রাজার দেশে’র পরে সত্যজিৎ রায় গুপী গাইন ও বাঘা বাইন নিয়ে একটু বেশীই করে ফেলেছিলেন অবশ্য তিনি পথের পাঁচালী দিয়ে জগতের অনুভূতিকে জাগ্রত করেছেন। আশা করা যায় খান সাহেবও আগামীতে এমন কিছু করতে না পারলেও এর কাছাকাছি কিছু করবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক, জনসংযোগ নিউজ
ম:প্র:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য