। কাইসার রহমানি ।
মাননীয় রেল মন্ত্রী ও উনার স্ত্রীর কোন দোষ দেখতে পাচ্ছিনা। আমাদের চরিত্রের ধারাবাহিকতায়, ক্ষমতা দিয়ে প্রভাব খাটানোর অভ্যাস আমাদেরই রক্তে। যার কারণে এদেশে একজন মুচি যেমন ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, তেমনি মন্ত্রীরাও ( কেউ কেউ) । রাস্তার ফকিরও ক্ষমতার চর্চা করেন এদেশে। আমরা যারা এ ঘটনার প্রতিবাদ করছি, তাদের বেশিরভাগই কখনো না কখনো প্রভাব খাটিয়ে সুবিধা নিয়েছি। লাইনে না দাঁড়িয়ে বিদ্যুত বিল সবার আগে দেয়াও প্রভাব খাটানো। এরকম অসংখ্য ছোট ছোট উদাহরণ দেয়া যাবে, আপনার - আমার ক্ষমতা অপ ব্যবহারের প্রমাণ হিসেবে।
টিকিট ঝামেলায় মাননীয় রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। সাধারণ হয়েও আমরা প্রভাব খাটাই, আর তিনিতো মন্ত্রীর বউ। দীর্ঘদিনের রক্তে মেশা প্র্যাকটিসের চর্চা হবেনা, এতটা আশা করা অন্যায়।
আপনি যেটা করেন, অন্যরা সেটা করতে পারবেনা, এ মানসিকতটাতেই গণ্ডগোল আছে! এখানে প্রতিবাদ যতটা না মন থেকে, পরোক্ষভাবে এই প্রতিবাদ শ্রেণী বৈষম্যের। আমি প্রভাব খাটিয়ে কখনো কখনো ব্যর্থ হচ্ছি, মন্ত্রীর বউ সফল হবে, এতটা অ গুরুত্বপূর্ণ, সস্তা নাকি আমি? নিজেকে সস্তা বা ব্যর্থ ভাবতে আত্মগ্লানী হয় আমাদের। তাই প্রতিবাদ করে আত্মতৃপ্তি খোঁজা মনে- মনে। আমি পারিনা, কাউকে করতেই দিবোনা, এমন মানসিকতা নতুন না। তাই দাদা ভাই, মনের এই বৈষম্য যতদিন সবার দূর না হবে, ততদিন এসব চলতেই থাকবে। সুতরাং প্রতিবাদেও গন্ডগোল আছে, এটা পরিস্কার।
আমার সাংবাদিক বড় ভাই, ছোট ভাই, বসদের কেউ কেউ এ ঘটনার ন্যায় বিচার চাচ্ছেন। জাত গেল, জাত গেল বলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অথচ বেশিরভাগেরই চায়ের আড্ডাই গল্প শুনেছি, কিভাবে বড় ভাইকে ধরে সিরিয়াল না নিয়েই ডাক্তার দেখিয়েছেন, প্রভাব খাটিয়ে কিভাবে হাসপাতালের বেড পেয়েছেন, আগে টিকা দিয়েছেন, পদবী ও বেতন কিভাবে বাড়িয়েছেন আলগা খাতির করে, কিভাবে পাসপোর্ট করেছেন, কিভাবে বাসের টিকিট নিয়েছেন, কিভাবে লাইনে না দাঁড়িয়ে পানি ও বিদ্যুত বিল দিয়েছেন, গ্যাসের সংযোগ কিভাবে নিয়েছেন, কিভাবে মদ খেয়ে ধরা পড়ে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেয়েছেন, কিভাবে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি ভুরি ভুরি উদাহরণ দেয়া যাবে। যারা ক্ষমতার অপচর্চা করেন, তারাই আবার এ প্রসেস বা চর্চার বিরোধিতা করছেন। তাহলে এটা নির্মূল হবে কি করে! সত্যি কি নির্মূলের জন্য প্রতিবাদ, নাকি শ্রেণি বৈষম্যের আস্ফালন?
রেলের এ ঘটনার মূল কালপিট পাকশী বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন। বলছেন, উনি কি করে তারই বিভাগের একজনকে বরখাস্ত করতে পারেন হাওয়া থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে !!! মন্ত্রীর বউয়ের ফোনে কথা বলে রাগ প্রকাশটা আমাদের সংস্কৃতিরই অংশ । কিন্তু নাসির উদ্দিন কতটা তেলবাজ, লোভী যে, মন্ত্রীর বউকে খুশি করার জন্য সাথে সাথে টিটিইকে সাসপেন্ড করলেন। এ ভদ্রলোক চাটুকারি করে, রেলমন্ত্রীর বউকে খুশি করে, আগামীতে প্রমোশনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, ঘটনার দিন থেকে। সবার আগে বিচার হওয়া উচিৎ নাসির উদ্দিন সাহেবের। নেতাদের তুষ্ট করতে, নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করতে, ব্যক্তিগত লাভবান হতে আপনার পৌর মেয়র, কাউন্সিলর, এমপির সঙ্গে দেখা করার ঘটনা মনে পড়ে কি? আমি করলে ঠিক আছে, আর নাসির সাহেব তুষ্ট করে ফায়দা নেয়ার ঘটনা ঘটালে, সব দোষ তার। এখানেও শ্রেণি বৈষম্য। আমি পারিনা, তিনি পারছেন, তাই গা জ্বলছে।
সিস্টেমে সমস্যা না, সমস্যা মানুষে। মানুষ বদলালে, সিস্টেম বদলাবে। নিজেকে পরিবর্তন না করে, অপরকে পরিবর্তনের চেষ্টা করা মানে, আকাশের দিকে থুথু নিক্ষেপ। যেটা ঘুরে এসে নিজের উপরই পড়বে। আসুন আমি বদলাই, তাহলে তিনিও বদলাবেন। সিস্টেম সুন্দরভাবে চলবে। এ লেখাটি সবার জন্য না। কিছু সত্যিই ভাল মানুষ, আদর্শ মানুষ আছেন, যারা অন্যায় কিছু করেননা, সেটা অস্বীকার করছিনা।
লেখক- সিনিয়র সাংবাদিক
(১০মে,২০২২ তারিখে প্রকাশিত লেখকের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত)
গ:স:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য