। জনসংযোগ প্রতিবেদন ।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে সমগ্র বিশ্বে ভোজ্য তেল সরবরাহের সঙ্কট দেখা দিয়েছে এ কথা সত্য হলেও বাংলাদেশে এখনই এর প্রভাব পড়ার কথা নয়। সাধারণত এল,সি সম্পন্ন করার কমপক্ষে ৩/৪ মাস পরে ভোজ্য তেলপণ্য দেশে প্রবেশ করে। সে হিসেব মতে বর্তমান বাজারে সরবরাহকৃত ভোজ্য তেলের সিংহভাগই রপ্তানি হয়েছিল আজ থেকে আরও ৩/৪ মাস আগে যখন ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ লাগেনি। অন্যদিকে বর্তমানে যে সকল অর্ডার দেওয়া হচ্ছে তা দেশে প্রবেশ করবে আগামী ৩/৪ মাস পরে। তাই দেশীয় বাজারে চাহিদা মোতাবেক প্রচুর পরিমাণে ভোজ্য তেল সরবরাহ থাকার পরেও বর্তমান বাজারে তেল সঙ্কটটি সম্পূর্ণরুপে দেশের অভ্যন্তরীন অতিমুনাফা লোভী সিন্ডিকেটের কারসাজি মাত্র । বিষয় ভিত্তিক মতবিনিময়কালে জনসংযোগ নিউজকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেন দৈনিক যায়যায়দিনের বিজনেস এডিটর জনাব আহমেদ তোফায়েল। তিনি আরও বলেন- বিষয়টি সাময়িক এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তবে বিত্তবানদের সমস্যা না হলেও সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনকে হয়রানিমূলক করাটা বেশ দু:খজনক।
সর্বশেষ তথ্যসূত্রে দেশ, বিদেশে ভোজ্য তেলের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রেক্ষাপট : সংগ্রহে- জনসংযোগ নিউজ ডেস্ক
★ সয়াবিন তেল উৎপাদনকারি দেশের তালিকার শীর্ষ ১০ টি দেশের মধ্যে দুটি দেশ হলো রাশিয়া এবং ইউক্রেন। এই খাত থেকে তাদের রপ্তানি আয় যথাক্রমে ৩০১ m$ এবং ২২৪ m$। যুদ্ধের কারনে বর্তমানে রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে সয়াবিন তেল রপ্তানি ১০০% বন্ধ আছে।
★ সূর্যমুখী তেল উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম হলো ইউক্রেন এবং দ্বিতীয় হলো রাশিয়া। তাদের বার্ষিক গড় উৎপাদন যথাক্রমে ৪৪ লাখ মে. টন এবং ৪১ লাখ মে. টন এবং ইউক্রেন তার উৎপাদনের ৮৮% রপ্তানি করে আর রাশিয়া রপ্তানি করে প্রায় ৮৫%। বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে উভয় দেশের রপ্তানি ১০০% বন্ধ আছে।
★ সরিষা বীজ বা সরিষা তেল উৎপাদনে নেপাল বিশ্বে প্রথম হলেও পরের দুটি অবস্থান কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেনের। এই দুটি দেশ তাদের মোট সরিষা তেল বা বীজ উৎপাদনের প্রায় ৯৩% ই রপ্তানি করে এবং এই রপ্তানিও বর্তমানে ১০০% বন্ধ আছে।
★ পাম তেল বা ভেজিটেবল অয়েল উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম ইন্দোনেশিয়া এবং দ্বিতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া। তাদের বার্ষিক গড় উৎপাদন যথাক্রমে ২৪.৫ কোটি মে.টন এবং ৯.৯ কোটি মে.টন। ইন্দোনেশিয়া তাদের মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক রপ্তানি করে এবং মার্চ ২০২২ শেষ সপ্তাহ থেকে তারা পাম অয়েল রপ্তানি ১০০% বন্ধ রেখেছে। মালয়েশিয়াও রপ্তানি বন্ধের পরিকল্পনা করছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। ২০২১ সালে ২৭ লাখ ৭১ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। বাংলাদেশের সকল প্রকার তেলবীজ থেকে প্রাপ্ত তেল দিয়ে চাহিদার ১০% পূরণ করাও সম্ভব হয়না। মোট চাহিদার ৯০% ই পূরণ করতে হয় আমদানি করে। এখানে নির্মম সত্যটা হলো রাশিয়া- ইউক্রেন- ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বন্ধের কারণে সারা পৃথিবীতে ভোজ্য তেল যোগানে বিঘ্ন ঘটেছে, ফলে টাকা থাকলেও নিকট ভবিষ্যতেই ভোক্তাগণ তেল কিনতে পাবেননা, বেশি দাম দিয়ে হলেও না। এই সংকট দিন দিন বাড়বেই, যতোদিন রাশিয়া- ইউক্রেন সম্পর্ক উন্নতি না হয়। বিশ্বে আরেকটি ভোজ্য তেল উৎপাদনের ‘গুরু’ দেশ হলো আর্জেন্টিনা, তারাও নাকি রপ্তানি সীমিত করবে!
তাই সর্বশেষ তথ্যচিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- যদি আগামী ৩/৪ মাসেও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয় তাহলে বর্তমানে অর্ডার দেওয়া এল,সি‘র বিপরীতে যে সকল ভোজ্য তেল আগামী ৩/৪ মাস পরে দেশে আমদানি হবে সে সকল ভোজ্য তেল লিটার প্রতি ৫০০(পাঁচশত) টাকা বা তারও অধিক হারে বিক্রি হতে পারে। এমনও হতে পারে আমদানিকারকরা চাহিদারও অনেক কম পণ্য আমদানি করবে বা সরবরাহ না থাকায় এল,সি থাকা স্বত্বেও মাল আমদানিই হবেনা। সেক্ষেত্রে লোভী বা অসাধু সিন্ডিকেট মহল ষ্টক করার জন্য পণ্যই খুঁজে পাবেনা বাজারে, ঠিক যেমন এল,সি থাকার পরও মালামাল আমদানি করতে পারবেনা আমদানিকারকরা, তেমনি পকেটে টাকা থাকলেও তেল পাবেনা বাজারে ভোক্তারা।
আন্তর্জাতিক তথ্য,সূত্র ও গবেষণা বিশ্লেষণে দেখা যায়- রাশিয়া ইউক্রেন সমস্যার সমাধান এত সহজে হবেনা, বহু মাস থেকে বহু বছরও লাগতে পারে কারন বিষয়টি মি. পুতিনের অনেক গভীর পরিকল্পনার ছক । আবার বাণিজ্য মন্ত্রী সহ দেশীয় বিশ্লেষকদের মতে এ সমস্যা খুব দ্রুত কেটে যাবে; অন্যদিকে ভোক্তা যথাতথা, সাধারণ মানুষের মতে বিষয়টি আদৌ দ্রুত সমাধান হবে কিনা তা নিশ্চিত করন জরুরি। সবশেষে সরকার বিরুধীদের মতে এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার চেয়েও ভয়াবহ হবে। সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দের মতে যতদিন শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।
তাই সংশ্লিষ্ট মতামত যাই হোক না কেন সর্বজনীন মতামত হচ্ছে- এই পরিস্থিতিতে দেশবাসীর উচিত তেল ব্যবহারে মিতব্যয়ি হওয়া আর আগামী মৌসুমে সরকারী সহায়তায় বেশি করে তেলবীজ চাষ করা; কারন হয়ত বেগুনীর বিকল্প লাউ/কুমড়া হতে পারে কিন্তু তেলের বিকল্প পানি কখনই হতে পারেনা।
জ:প্র:/জ:নি:/১৫/০৫/২২
পাঠকের মন্তব্য