। আফজাল হোসেন।
মানুষ এক আজব প্রানী। খাঁচায় পাখি পোষার মতো কেউ কেউ অসুখ পুষতেও ভালোবাসে।
একটা অসুখও খুব অদ্ভূত। যার হয়, সে ভোগেনা, উপভোগ করে। উপভোগের ঠ্যালা সামলাতে গিয়ে চারপাশের মানুষজনের হয় বেহাল দশা। তারা না পারে সইতে, না পারে কইতে। রোগটা মনে ঢুকে সুড়সুড়ি দেয় আর মস্তিষ্কে সারাক্ষণ বার্তা পাঠাতে থাকে- তুমি আর আগের তুমি নেই, তুমি দামী হয়েছো, দেখো তোমার দাম বেড়েছে তা বুঝতে পারছেনা আশেপাশের মানুষজন- চুপ থেকোনা, ডঙ্কা বাজিয়ে জানিয়ে দাও, অহরহ জানাতে থাকো- তুমি দামী, বিশেষ মানুষ।
আক্রান্ত রোগী বুক ফোলানো ভাব অনুভব করে। দরকারে অদরকারে জোরে কথা বলে, শুধুই নিজের কথা বলতে, শোনাতে চায়। স্বভাবে তুলনাপ্রীতি জন্মায়। ওর থেকে আমি উপরে, আমার তুলনা আমিই- কথায় কথায় আমি আমি করতে, বলতে বেশ ভালো লাগে। রোগাক্রান্তদের মধ্যে বেশী দাম দিয়ে জিনিস কেনার বাতিক তৈরী হয়। উপলক্ষ্য পেলে একে তাকে দামী উপঢৌকন কিনে পাঠায়। সুযোগ তৈরী করে দামী জিনিস কেনার যুক্তি শোনায়। বুঝিয়ে দেয়- হে হে আমি কমদামী নই। এই লোক হাসানো রোগটা হচ্ছে আত্মপরিচয় সংকট। মানুষ যে পরিচয়ে ছিল, তাতে অসন্তুষ্ট হয়। অতীত ভুলে গিয়ে নতুন পরিচয়ে প্রতিষ্ঠা চায়।
যেভাবেই হোক, হঠাৎ জীবনে ফুড়ুৎ করে মাত্রাতিরিক্ত স্বাচ্ছন্দ এসে গেলে মাংস চর্বি এবং মগজের মধ্যে এ রোগের ভাইরাসটা ঢুকে পড়ে। স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি দুর্বল করে দেয়। নিজেকে জাহির করা ইচ্ছা কয়েকগুন বাড়িয়ে তোলে। সাধারণ- এটা মোটেও খারাপ পরিচয় নয়। দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষই তো সাধারণ, সে দল থেকে স্বাভাবিক নিয়ম এবং কর্মের মাধ্যমে অসাধারণ হয়ে ওঠার চেষ্টা করে মানুষ। সফলও হয়। এই চেষ্টা, সাফল্য আনন্দের এবং গৌরবেরও। কোন অর্জনকে কেউ দোষের বা অসুস্থতা ভাবেনা। পিতা হয়তো কৃষক বা কেরানী ছিলেন, ছিলেন খুবই সাধারণ, অস্বচ্ছল- সে পরিচয় দিতে কুন্ঠা হয় যাদের, যারা পূর্ব থেকেই অভিজাত, বনেদী- এমন পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য আকুল হয়ে পড়ে, তারা জানতে বা বুঝতে পারেনা সুস্থতা হারিয়েছে।
এদের কৃতজ্ঞতাবোধ নেই, দায়হীন ও অবিশ্বস্ত। বড়ো ও বিশেষ হওয়ার মানে না বুঝে নিজেদের বড়ো ভেবে শান্তি, সুখ, আনন্দ পেতে চাওয়া স্বাভাবিক নয়। এই রোগে ভোগাদের দায়িত্বহীন শতকান্ডে সাধারণের করুণা হয়, মায়া জাগে। সাধারণ অসহায়বোধ করে। নিজেদের প্রতি মায়াও জাগে- অন্যের অসুখ ছোঁয়াচে নয় তবে সে অসুস্থতা নিত্য যে সামাজিক সংকট বাড়িয়ে তুলছে, তা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় মেলেনা।
লেখক- নাট্য অভিনেতা ও নির্মাতা
(১৯মে,২০২২ তারিখে প্রকাশিত লেখকের টাইম লাইন থেকে সংগৃহীত)
খো:ম:/জ:নি:/১৯-০৫-২০২২
পাঠকের মন্তব্য