। এ্যাড. শফিউল আজম।
আওয়ামী লীগ কোন বিপ্লবী দল নয়। যারা নিজেদের বড় বেশী বিপ্লবী হিসেবে জাহির করতে চায় তাদের এ দল ত্যাগ করা উচিত। হক-ভাষানী-সোহরাওয়ার্দী-বঙ্গবন্ধু কেউ বিপ্লবী ছিলেননা। শেখ হাসিনাও কোন বিপ্লবের মাধ্যমে জননেত্রী হয়ে ওঠেননি।পাকিস্তানের ২৩ বছর সময়কালে বঙ্গবন্ধু দল পরিচালনায় কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোন ভুল করেননি। বঙ্গবন্ধুকে দলের ভিতর থেকে মিসগাইড করার সাহস কেউ তখন করেনি।
স্বাধীনতার পরে আত্মীয়তা সম্পর্কের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে কিছু অতি বিপ্লবী কর্তৃক ক্রমাগত বঙ্গবন্ধুকে ভুল বুঝিয়ে তাঁকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এসব অতি বিপ্লবীরা ব্যক্তিগত অহমিকা আর হামবড়া মনোভাবের কারনে দলের যে ক্ষতি করেছে তার মাশুল আওয়ামী লীগ এখনো দিয়ে যাচ্ছে। শেখ মনি বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রাণ দিয়েই তার প্রায়শ্চিত্ত করলেন,শেখ শহীদুল ইসলামের রাজনীতি আমরা দেখছি, বিপ্লবী সিরাজুল আলম খান, রব, জিকু,শাজাহান সিরাজ, কর্নেল তাহের,মেজর জলিলদের বিপ্লবীপনা এবং পতন দুটোই আমরা দেখেছি। ইনু, মাঈনুদের ভুল স্বীকারপুর্বক আত্মসমর্পনের রাজনীতিও আমরা দেখছি।
দলের নেতারা কোন ফেরেস্তা নয়- দোষে গুনে মানুষ। নেতার ভালত্বকে অনুসরণ এবং উৎসাহিত করা কর্মীর কাজ। নেতার মন্দ ও ত্রুটি পরিহার করতে সহযোগিতা করা আদর্শবান কর্মীর কাজ। ব্যক্তির চেয়ে দলকে প্রাধান্য দেয়া, নেতা কর্মী সকলের দায়িত্ব। দলীয় কর্মী আর বাড়ীর কাজের লোকের মধ্যে যে পার্থক্য বুঝেনা সে যেমন নেতার অযোগ্য, তেমনি নেতৃত্বের আনুগত্য ও চাটুকারীতার পার্থক্য না বুঝলে সেও কর্মী নামের কলংক।
শর্তহীন আনুগত্য মানুষের বেলায় প্রযোজ্য নয়,নিছক ঈশ্বরের জন্য। দল বেচে, কর্মী সমর্থক বেচে যারা নাম,যশ,খ্যাতি, বিত্ত সবকিছুর মালিক বনে দলের বিপক্ষে অবস্থান নিতে সাহস দেখিয়েছে তারা দলীয় কর্মীদের শর্তহীন আনুগত্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি?
ড: কামাল, লতিফ, কাদের, সুলতান, মন্টু, মিন্টু, মান্না, হাবিবুর রহমানদের দলচোরা অতিপ্রেমের রাজনীতি আমরা দেখেছি। কামাল দলের নমিনেশনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে পারায় নিজেকে সর্বাধিনায়ক ভাবতে শুরু করেছিল। কাদের ছিদ্দিকী তো নিজেকে বঙ্গবন্ধুর পোষ্যপুত্র দাবী করে একমাত্র উত্তরাধীকারী ঘোষনা করেছিল।
খন্দকার মোশতাক, ওবায়েদুর রহমান, তাহের উদ্দীন ঠাকুর, মিজান, আনোয়ার জাহিদদের চাটুকারীতা ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। অতি দলবাজ, চাটুকাররা দলের সর্বনাশ ছাড়া আর কিছু করতে পেরেছে কি?
রাতভর নমিনেশন বাণিজ্য,কমিটি বাণিজ্য,পদ পদবীর বাণিজ্য করবেন, দিনের বেলায় অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রীডদের বিরুদ্ধে বাকযুদ্ধ চালানোর মত ভন্ডামী করে বেড়াবেন -তা কি দলের নেতা কর্মীরা কম বুঝেন? এখন অনেককে দেখছি কথাবার্তায় শেখ হাসিনার চেয়েও বড় আওয়ামীলীগার সেজে বসে আছে। হুমকি দেয় অমুকের,তমুকের বিরোধীতা যারা করে তারা আওয়ামীলীগ হতে পারেনা। অমুক তমুক কারো নামে আওয়ামী লীগ ইজারা দেয়া হল কখন থেকে? ।
আওয়ামী লীগের মুলনীতি,ইতিহাস,বঙ্গবন্ধুর জীবনী, শেখ হাসানার ভিশন এগুলো জানুন, বুঝুন তারপর আওয়ামী লীগ করুন। কিছু না বুঝে না জেনে করার দল আওয়ামী লীগ নয়।
লেখক- এ্যাডভোকেট ও রাজনীতিবিদ
(২৪মে,২০২২ তারিখে প্রকাশিত লেখকের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত)
রা:স:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য