জনসংযোগ প্রতিবেদন । এম আনিছুর রহমান
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঢাকা মহানগর উত্তরের উত্তরা পূর্ব, পশ্চিম ও বিমান বন্দর থানা এবং ১ ও ৫১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। গত ২৯ জুলাই,২০২২ তারিখে উত্তরার ৩নং সেক্টরের ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠে বিকাল ৩ টায় আমন্ত্রিত বক্তাদের বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় । দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায়। প্রার্থীদের মনোনয়ন ফর্ম জমা নেওয়া এবং পরিচয় পর্ব শেষে রাত ১০টায় ২য় অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষনা হয়।
প্রথম অধিবেশন চলাকালীন ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এম,পি। বিশাল পরিসরে বর্ণাঢ্য আয়োজন ও হাজার হাজার নেতা কর্মীর সরাসরি উপস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর তিনি আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেই ফেললেন ” তৃণমুলে এতো বিশাল সমাবেশ অনেক দিন দেখিনি“।
এ ধরনের সফল আয়োজনের জন্য তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বিশেষ ধন্যবাদ প্রদান করেন। উপরোক্ত থানা ও ওয়ার্ডগুলোর অধীনস্থ প্রতিটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিট কমিটি গঠনের পরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং তারই প্রতিফলন ঘটে এই বিশাল কর্মী সমাবেশের মাধ্যমে। এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন; আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন এবং পরবর্তী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদি এভাবে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকে তাহলে কোন অপশক্তিই আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারবেনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি সাবেক যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম (এম,পি) বলেন; ৮০২ টি ইউনিট কমিটি গঠনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের তৃণমুল পর্যায়ে এতো বিশাল পরিসরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩ বছরের ইতিহাসেও এমন সম্মেলনের আয়োজন হয় নাই। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে তিনি এ ধরনের কর্মীবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানের অন্যতম বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাসিম তার বক্তব্যে অসাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন বিএনপি জোট দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গণতন্ত্রকে হত্যার পাঁয়তারা করছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণকে সাথে নিয়ে যেকোন মূল্যের বিনিময়ে তা প্রতিহত করবে।
সম্মেলন পরবর্তীতে চূড়ান্ত প্রার্থিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ত্যাগীদের মূল্যায়নের ব্যাপারে বজ্রকন্ঠে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি এবং যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য হাবিব হাসান। উল্লেখ্য এ সকল পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এই তিনজনই প্রধান নীতি নির্ধারক। তবে এ প্রসঙ্গে এসএম মান্নান কচি বলেন, শুধু ত্যাগী হলেই হবেনা তার গ্রহণযোগ্যতাও থাকতে হবে। এমন বহু ত্যাগী নেতা আছেন যাদের অবদান আওয়ামী লীগে চীর স্বরণীয় কিন্তু একটি সময় পরে দেখা গেছে তারা তাদের স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে কোটি কোটি অবৈধ টাকার মালিক বনে গেছে; এমনকি আওয়ামী বিরুধীদের সঙ্গে জোটও পাকিয়েছে। এদের সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বক্তব্যের এক পর্যায়ে হাবিব হাসান তুলে ধরেন ওয়ান ইলিভেন সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দু:সময়ের চিত্রগুলো এবং সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যাওয়া অভিমানী সেইসব ত্যাগী কর্মীদের দুর্বিষহ যাপিত দিনগুলোর কথা। প্রয়োজনে উদ্যোগ নিয়ে সেইসব অভিমানীদের খুঁজে বের করে দলীয় দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে আবার গতিশীল করার ব্যাপারে তিনি জোর দাবি জানান।
তবে ঢাকা-১৮ আসন এবং এর অন্তর্গত প্রায় প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রার্থীতার ক্ষেত্রে বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ বলে ভিন্ন কথা। যেমন- গেল জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থীতা ছিল মোট ৫৭ জন, যা এ যাবৎ কালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন; যে সকল আসনে অত্যাধিক প্রার্থী রয়েছে, বুঝতে হবে সেসব আসন নেতৃত্ব শূণ্য অবস্থায় আছে। অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে প্রতিটি থানা এবং ওয়ার্ডগুলোতেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীতার সংখ্যা ছিল অসংখ্য। এ নিয়ে প্রার্থীদের নাম ঘোষনার প্রতিটি মূহুর্তে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান রসিকতাও করেছন বেশ । সবচেয়ে বেশী প্রার্থীতা ছিল উত্তরা পূর্ব থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এর ক্ষেত্রে। দলীয় সভানেত্রীর কথা বিবেচনায় সর্বমোট ২৭ জন প্রার্থীতার এই বিশাল চেইন প্রমাণ করে এই থানায় সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বিশাল শূণ্যতা রয়েছে। তবে জাতীয় ও স্থানীয় আওয়ামী বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান নগর উত্তর আওয়ামী লীগের বলিষ্ঠ দুই নেতৃত্বের যুগোপযোগী উদ্যোগে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে এ সকল স্থানে এ ধরনের সংকটেরও অবসান ঘটবে শীঘ্রই।
রা:স:/জ:নি:/০০৭
পাঠকের মন্তব্য