ইতিহাস সংযোগ ডেস্ক / জনসংযোগ.কম / ০৯-০৭-২০২০
। শাহ্ আবু আব্দুল্লাহিল মান্নান ।
প্রশংসিত ফ্রেঞ্চ জেনারেল ও সম্রাট, নেপোলিয়ন ১৭৬৯ সালে কোর্সিকার Corsica অন্তর্গত আজাক্কিওতে (Ajaccio) জন্ম গ্রহন করেন। তার আসল নাম নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। নেপোলিয়নের জন্মের পনের মাস পুর্বে ফ্রেঞ্চ কোর্সিকা দখল করে নেয়। নেপোলিয়ন তার প্রাথমিক জীবনে কোর্সিকা Corsica জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করে নির্যাতিত হয়েছিলেন। এতৎসত্বেও ফ্রেঞ্চের মিলিটারী একাডেমীতে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১৭৮৫ সালে তিনি মিলিটারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ষোল বছর বয়সে গ্রাজুয়েট ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি সেকেন্ড লেফটেণেন্ট হিসেবে কর্মে যোগদান করেন।চার বছর পর ফ্রেঞ্চ বিপ্লব ফ্রেঞ্চকে লণ্ডভণ্ড করে ফেলে এবং কয়েক বছরের মধ্যে নতুন সরকার যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তির বিরুদ্ধে। ১৭৯৩ সালে প্রথম সুযোগেই তিনি নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে নিলেন তৌলন (Toulon) অবরোধের মাধ্যমে। (বৃটিশ নগরী তৌলন অধিকারের মধ্যদিয়ে) সেখানে তিনি মিলিটারী অফিসার ইন চার্জ ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি কোর্সিয়ান(Corsian) জাতীয়তাবাদ দর্শন ত্যাগ করেন এবং নিজেকে একজন ফ্রেঞ্চম্যান হিসেবে মনে করেন। তার বড় প্রাপ্তি ছিল তৌলন বিজয় করা এবং বিগ্রেডিয়ার জেনেরাল পদে (প্রমোশনে) উন্নতি লাভ করা। ১৭৯৬ সালে তাকে ফ্রেঞ্চের সেনাবাহিনীর ইতালির কম্যান্ডার ইন চীফ করা হয়। ১৭৯৬/৯৭ সালে একগুচ্ছ যুদ্ধে তিনি বিজয়ী হন। একজন হিরো বা বীর যোদ্ধা হিসেবে প্যারিসে ফিরে আসেন।
১৭৯৮ সালে মিশর অভিযান নেপোলিয়নের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়। অভিযানটি ছিল খুবই বিপদসংকটের মুখোমুখি। নেপোলিয়নের বাহিনী সফলতার সাথে অগ্রসয়মান। কিন্তু বৃটিশ নৌবাহিনীর প্রধান লর্ড নেলশনের নেতৃত্বে ফ্রেঞ্চ নৌবহরকে বিধ্বস্ত করে ফেলেন। এবং ১৭৯৯ সালে নেপোলিয়ন মিশর অভিযান পরিত্যাগ করেন এবং ফ্রেঞ্চে ফিরে আসেন।ফ্রেঞ্চে ফিরে এসে নেপোলিয়ন দেখতে পান যে জনগণ মনে রেখেছে ইতালীয়ান বিজয়ের কথা এবং মিশরের ব্যার্থতার কথা তারা কোন ক্রমেই স্মরণে আনেনি। নেপোলিয়নের ফিরে আসার একমাস পর বিষয়টিকে পূঁজি করে ক্যু দ্য এতাতে (Coup d’ etat) নেপোলিয়ন অংশ গ্রহণ করেন আব্বি সীয়াস (Abbe Sieyes) ও অন্যান্যদের সাথে। ক্যু-এর ফলে নতুন সরকার গঠিত হয় নেপোলিয়নের সাথে পরামর্শ করে প্রথম পরামর্শ সভায় বসে। যদিও এক বিশাল ও ব্যাপক সংবিধান গ্রহণ করে এবং তা অনুমোদিত হয় গণভোটে। ইহা সম্ভব হয়েছিল শুধুমাত্র মিলিটারী ডিক্টেটর নেপোলিয়নের কারণে। তিনি শীঘ্রই সকল ষড়যন্ত্র উৎখাত করে সফলতা লাভ করেন। নেপোলিয়ন এরূপে ক্ষমতার মসনদে দ্রুত গতিতে উপবিষ্ট হন যা ছিল অবিশ্বাস্য। ১৭৯৩ সালে আগস্ট মাসে তৌলন অধিকৃত হওয়ার আগে নেপোলিয়ন পরিপুর্ণভাবে ২৪ বছর ছোট কর্মকর্তা হিসেবেও অপরিচিত ছিলেন যেহেতু তিনি ফ্রেঞ্চে জন্ম গ্রহণ করেননি। ছয় বছর পরে নেপোলিয়ন যখন ত্রিশ বছর বয়সে ফ্রাঞ্চের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে গেলেন। আর এই অবস্থানটি ১৪ বছর স্থায়ী ছিল।
ক্ষমতায় এই দীর্ঘ সময় অধিষ্ঠিত থাকার সময় নেপোলিয়ন প্রশাসনের এক বিরাট সংশোধনের মাধ্যমে আইন আনুগভাবে পরিবর্তন আনয়ন করেন। উদাহরণ-স্বরূপ বলা যায় তিনি সংশোধন করেন অর্থনৈতিক বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং প্রতিষ্ঠিত করেন ব্যাংক ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ড কেন্দ্রীভূত করেন। যদিও এসব রদবদলের একটি তাৎপর্য ছিল এবং কোন কোন বিষয়ে ফ্রাঞ্চের উপর এক বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল এবং তার কিছুটা প্রভাব বিশ্বচরাচরেও পরিলক্ষিত হয়।
নেপোলিয়নের পুণর্গঠনের প্রভাব শুধু ফ্রাঞ্চের ভাগ্য নয় ফ্রাঞ্চের সীমানা পার হয়ে বহির্জগতে প্রবেশ করেছিলো এবং তা ছিল সিভিল কোড Civil Code বা নেপোলিয়ন কোড নামে বিশ্ববিখ্যাত। বহুল পদ্ধতিতে এই কোড ফ্রাঞ্চ বিপ্লবের আদর্শের প্রতিবিম্ব ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় এই কোড বা বিধান মোতাবেক কোন কোন জন্মের কোন সুযোগসুবিধা ছিলনা। আইনের চোখে সকলেই সমান। একই সাথে প্রাচীন ফ্রাঞ্চের আইন ও সামাজিক নিয়ম কাননের সাথে যথেষ্ট সংঘতিপূর্ণ রেখেই এ বিধান প্রণয়ন করা হচ্ছিল। সকল বিধান বা কোডকে আধুনিকায়ন, সুসংগঠিত ও সংক্ষেপে প্রশংসাসূচকভাবে লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং উপলদ্ধিতে সহজবদ্ধ ও সুন্দর। ফলে এই কোড বা বিধান শুধু ফ্রাঞ্চেই টিকসই নহে। আজকাল ফ্রাঞ্চের এই সিভিল কোড কঠোর ভাবে নেপোলিয়ন কোড হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। এই বিধান স্থানীয়ভাবে হয়ত কিছুটা রদবদল করেছে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে।নেপোলিয়নের কৌশল ছিল তিনি সদাসর্বদা ফ্রাঞ্চ বিপ্লবকে প্রতিহত করা। এতৎসত্বেও ১৮০৪ সালে তিনি নিজেকে ফ্রাঞ্চের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। অধিকন্তু তিনি তার তিন ভাইকে ইউরোপীয় তিন রাজ্যের সিংহাসনে বসাতে অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এসব কর্মকান্ড নিঃসন্দেহে ফ্রেঞ্চের রিপাবলিকানদের মনে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা মনে করেন নিশ্চিত ইহা ফ্রেঞ্চ বিপ্লবের পরিপন্থী ।এর ফলশ্রুতিতে নেপোলিয়নকে বৈদেশিক একগুচ্ছ যুদ্ধের মোকাবেলা করতে হয়েছিল।
১৮০২ সালে আমীনসে (Amiens) ইংরেজদের সাথে (সন্ধি) শান্তি চুক্তিতে সাক্ষর করেছিলেন এক দশকের যুদ্ধ যা চলমান ছিল তা প্রায় শেষ হয়েছিল। যাইহোক, পরবর্তী বছর শান্তিচুক্তি (সন্ধি) ভেঙ্গে যায় এবং ইংরেজ ও তাদের মিত্রদের সাথে দীর্ঘদিন কয়েক গুচ্ছ যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন। যদিও নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী কয়েকটি স্থলযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ডকে পরাভূত করতে পারেননি যতক্ষণ-না ইংল্যান্ডের নৌবাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছেন। নেপোলিয়নের দূর্ভাগ্য, ১৮০৫সালে অগ্নিপরীক্ষা ট্রাফালগারের(Trafajgar) এর যুদ্ধ ইংলিশ নৌবাহিনীর অবিশ্বাস্য বিজয়। ইংল্যান্ডের সমুদ্র বিজয় ও নিয়ন্ত্রন আর বিতর্কিত রইল না। যদিও নেপোলিয়নের বড় বিজয় ট্রাফাল্গারে(Trafalgar) যুদ্ধের ছয় সপ্তাহের পরের (অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ট্রেরলিজের Austerlitz যুদ্ধ) ঘটনা। সত্যি বলতে কি- নেপোলিয়নের নৌবাহিনীর বিপর্যয়ের ক্ষতিপুরণ আর কখনই হয়নি।
১৮০৮ সালে নেপোলিয়ন বোকার মত ফ্রাঞ্চকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যবিহীন ইবারিয়ান(Iberian peninsula) উপদ্বীপের দীর্ঘ যুদ্ধে জড়িয়ে পরেন। এই যুদ্ধে ফ্রেঞ্চ সেনাবাহিনী দীর্ঘ সময় অবরোধে আটকে পরেন। নেপোলিয়নের সিদ্ধান্ত ছিল মারাত্মক ভুল । যাইহোক রুশ অভিযানে যা ঘটে ছিল, ১৮০৭ সালে নেপোলিয়ন রাশিয়ান যারের (সম্রাট) সাথে দেখা করেছিলন এবং তিলসিত(Tilsit) সন্ধিতে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করেন।এবং সেই সন্ধিতে তারা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তারা বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু তাদের সেই মিত্রতা ক্রমান্বয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ১৮১২ সালের জুন মাসে নেপোলিয়ন রাশিয়ার গ্র্যান্ডি আর্মিতে(Grande Army) সেনা পরিচালনা করেন। ফলাফল সবার জানা। রাশিয়ান আর্মি নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে সজ্জিত যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে চায় কারন তিনি দ্রুত অভিযান চালাতে পরেন। সেপ্টেম্বরের মাধ্যে তিনি রাশিয়ার রাজধানী মস্কো দখল করেন এবং তখন রাশিয়ানরা নগরে আগুন ধরিয়ে নগরকে লন্ডবন্ড করে ফেলে। পাঁচ সপ্তাহ মস্কোতে অবস্থান করার পর মস্কোর শান্তি আলোচনা হতাশায় নিয়ে নেপোলিয়ান ফিরে আসেন কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গেছে।শীতকাল রাশিয়ানদের সম্মিলিত শক্তি এবং ফ্রেঞ্চ সেনাবাহিনীকে যথা সময়ে পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করতে ব্যার্থ হওয়াই নেপোলিয়নের সেনা বাহিনীর সরে যাওয়ার প্রধান কারণ ছিল। গ্রান্ডির আর্মীর (Grande Army) যুদ্ধে কম পক্ষে ১০% রাশিয়ান সৈনিক জীবিত ছিলেন। অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশ যেমন অস্ট্রিয়া ও প্রুশিয়া উপলদ্ধি করতে পারেন যে এখনই মুখ্যম সময় ফ্রেঞ্চের পরাধীনতার জোয়াল ঘাঁড় থেকে এখনই নামিয়ে ফেলতে হবে। তারা সম্মিলিতভাবে নেপোলিয়ানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং ১৮১৩ সালে লিপজিক (Leipzig) যুদ্ধে নেপোলিয়নকে ভীষণভাবে পরাস্ত করেন। পরের বছর নেপোলিয়ান পদত্যাগ করেন ও ইটালির ছোট দ্বীপ এলবাতে (Elba) নির্বাসিত জীবন যাপন করেন।
১৮১৫ সালে তিনি এলবা থেকে মুক্তি লাভ করে ফ্রান্সে ফিরে আসেন এবং দেশবাসি তাকে স্বাদর সম্ভাষণ জানান এবং ক্ষমতায় পুনর্বার অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু অন্যান্য ইউরোপীয়ান দেশ দ্রুত তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন এবং শতদিন পরে ক্ষমতা পুন:রুদ্ধার করে তিনি তার জীবনের শেষ পরাজিত যুদ্ধ ওয়াটেরলু (Waterloo) যুদ্ধের পর নেপোলিয়ন বৃটিশদের হাতে অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণে অবস্থিত ছোট্ট দ্বীপে সেন্ট হেলেনায় তাকে বন্ধী করা হয়। সেখানে তিনি ক্যান্সারে ১৮২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
নেপোলিয়নের সেনা জীবন এক বিস্ময়কর উপস্থাপনা যা প্রচলিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তার ট্যাকনিক্যাল প্রতিভা কৌশল বিদ্যুৎ চমকানোর মত। যদি তাকে বিচার করা হয় তাহলে তিনি সকল সময়ের জন্যে জেনারেলদের জেনারেল ছিলেন। গ্রান্ড স্ট্রাটেজির ক্ষেত্রে তিনি ঝুকে পরেছিলেন, যা মারাত্মক ভুল ছিল, যেমন মিশর ও রাশিয়া আক্রমণ করা তার কৌশলগত ভুল ও কুখ্যাত ছিল, যার ফলশ্রুতিতে রেংকে তাকে শ্রেষ্ঠ মিলিটারি জান্তা বলা যায়না। ইহা কি দ্বিতীয় অনুমান অসুন্দর বলা যাবে? আমি ভাবতেই রাজি নই। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় একজন জেনেরালের বৈশিস্ট তার মহত্ব, তার বিচক্ষনতা যা ভ্রান্ত আপদবিপদ থেকে দক্ষতার সাথে এড়িয়ে চলা। সেকেন্ড অনুমান খুবই কঠিন, একজন জেনারেলের পক্ষে যেমন মহামতি অ্যালেক্সান্ডার, চেঙ্গিস খাঁ এবং তৈমুর লং যাদের সেনাদল কখনই পরাজিত হয়নি কিন্তু নেপোলিয়ন জীবনের শেষার্ধে সকল বিদেশ বিজয় ছিল প্রমাণিত ভন্ডুল। ১৮১৫ সালের সর্বশেষ পরাজয়টি ফ্রাঞ্চের ভৌগলিক সীমা ১৭৮৯ সালের বিপ্লবের পুর্বে যাছিল তার চেয়ে কম নিয়েই থাকতে হল। নেপোলিয়নের আত্মাভিমান হিটলারের সাথে তুলনা করা যায় কিন্তু একটি নিষ্ঠুর পার্থক্য দুয়ের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। হিটলারকে যেখানে অনুপ্রাণিত করা হয়েছিলো লুকায়িত এক আদর্শ। নেপোলিয়ান সেখানে শুধু মাত্র একজন উচ্চাভিলাষী এবং তার ছিলনা কোন প্রকার বিশেষ কোন স্বার্থপরতা অথবা ভয়ানক গণহত্যা করা। নেপোলিয়নের শাসনামলে সামান্যতম হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সাথে তুলনা করা চলে না। নেপোলিয়নের বড় খ্যাতি ও প্রভাব সহজে ওভারেস্টিম্যাট করা ঠিক নহে। তার সংক্ষিপ্ত প্রভাব সত্যি সে এক বিশালতা, সম্ভবত অ্যালেক্সান্ডারের চেয়ে বৃহত্তর এবং হিটলারের চেয়ে অনেক অনেক কম। হিসাবে মোটামুটি বলা যায় যে নেপোলিয়নের যুদ্ধ বিগ্রহে কম পক্ষে পাঁচ লক্ষ ফ্রেঞ্চ সেনা মারা গিয়েছে। যাইহোক তুলনামুলকভাবে বলা যায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে কমপক্ষে জার্মান মারা যায় আশি লক্ষ বনি আদম। যেকোন মানেই নেপোলিয়নের কর্মকান্ড হিটলারের কর্মকান্ডের সাথে তুলনা করলে অনেক অনেক কম বিতর্কিত।
প্রভাব ও গুরুত্বের দিক দিয়ে নেপোলিয়ন হিটলারের চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তিত্ব বলে মনে হয় আবার অ্যালেক্সান্ডারের চেয়ে কম প্রভাবশালী। নেপোলিয়ন ফ্রাঞ্চের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় এক বিশাল পরিবর্তন এনেছিলেন এই বিশ্ব জনসংখ্যায় ফ্রাঞ্চ সত্তরভাগের একভাগ জনগণের মাঝে। যেকোন দফারফায় এই প্রশাসনিক পরিবর্তন একটি প্রত্যাশিত মন্তব্য ও আশাব্যাঞ্জক। কমবেশী ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ফ্রেঞ্চ জনমনে স্বতন্ত্রভাবে বিশাল টেকনোলজিক্যাল পরিবর্তন এনেছে প্রায় দু’শতক বছর ধরে।
বলা হয় যে নেপোলিয়নের যুগটাই ছিল পরিবর্তনের যুগ যার ফলে বিপ্লব সাধিত হয়েছিল এবং ফ্রাঞ্চের সংহতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মধ্যবিত্ত শ্রেনীলোকদের মাধ্যমে। ১৮১৫ সালের মধ্যে যখন শেষমেশ রাজতন্ত্র পুনর্বার প্রতিষ্ঠিত হলো আর এই পরিবর্তন ছিল খুবই ভাল প্রতিরোধ যা ফিরে এসে প্রাচীন শাসন ব্যবস্থার সামাজিক আদর্শের যে পরিবর্তন সেটা ছিল অকল্পনীয়। ১৭৯৯ সালে নেপোলিয়ন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে প্রশাসনিক যে পরিবর্তন এনেছিলেন তা ছিল খুবই গুরুত্বপুর্ন। সম্ভবত খুবই দেরী হয়েছিল (Status que ante) নেপোলিয়ন রাজতন্ত্রের রাজা হওয়ার উচ্চ অভিলাষী সত্বেও তার ফ্রেঞ্চ বিপ্লবের ভুমিকা দ্রুত ছড়ায়ে ছিল গোটা ইউরোপে।নেপোলিয়নের ব্যপকতা যদিও পরোক্ষ তা প্রতিফলিত হয়েছিল ল্যাটিন অ্যামেরিকার ইতিহাসে। তার স্প্যান আক্রমণ স্প্যানিশ সরকারকে এতোই দুর্বল করেছিল যে বেশ কয়েক বছর তার প্রতিক্রিয়ায় ল্যাটিন অ্যামেরিকার উপনিবেশিক দেশগুলোকে কন্ট্রোল করা তাদের পক্ষে কঠিন ছিল। এই সময়ে ডি ফেক্টো অটোনমাস কলোনিগুলোকে দেওয়াতে স্বাধীনতা আন্দোলন জোরদার শুরু হয়।
নেপোলিয়নের কর্মকান্ডের মধ্যে একটিই সম্ভাবত যথেষ্টই তাৎপর্য্যপুর্ণ, তা ছিল তার পরিকল্পনার অসংগতি। ১৮০৩ সালে নেপোলিয়ন আমেরিকার নিকট একটি অঞ্চল বিক্রয় করেছিলেন। তার উপলদ্ধতে ধরা পরেছিল ফ্রেঞ্চের অধিকৃত ঐ ভূখন্ডটি উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত তা বৃটিশের হাত থেকে রক্ষা করা খুবই কঠিন এবং আরও কারণ ছিল ক্যাশ টাকার অভাব। সম্ভবত লৌইসিয়ানা (Louisiana) ক্রয় বিক্রয়টি এবং তা দখল ছেড়ে দেওয়া ইতিহাসে খুব বড় একটি শান্তির উদ্যোগ ছিল। ফলশ্রুতিতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র একটি জাতি হিসেবে যা প্রায় একটি মহাদেশে রূপান্তরিত হয়েছিলো। ইহা বলা বড়ই কঠিন লৌইসিনিয়ান পার্চাইজ ছাড়া আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হতে পারতো কিনা। আজকের যে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চই এই বিশাল দেশ সৃষ্টি হতে পারতনা। সন্দেহ করার অবকাশ আছে যে আজকের যে যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ শক্তি তা লৌইসিনিয়ান পার্চাইজ ছাড়া অসম্ভব ?
নিশ্চই নেপোলিয়ন শুধু একা লৌইসিয়ানা পার্চাইজের জন্যে দায়ি নহে। আমেরিকা সরকারও পরিষ্কার একটি পার্ট প্লে করেছিলেন। ফ্রেঞ্চের অফারটি দরকষা ছিল যা আমেরিকানরা গ্রহণ করেছিলেন। যখন ফ্রেঞ্চ সরকার লৌইসিনিয়ান ভূখন্ডটি নেপোলিয়ন বনাপার্টির একক বিচার শালিশের মাধ্যমে বিক্রয় করেছিলেন।
jsongjugnews@gmail.com
fb.com - @jshongjog
পাঠকের মন্তব্য