। বিশেষ সাক্ষাৎকার/এফআরএসবি(ম:জে:)/প্রকাশ-জনসংযোগ নিউজ
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে স্মার্ট ময়মনসিংহ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন এফবিসিসিআই এর সহ সভাপতি ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কালের বাতিঘর আমিনুল হক শামীম (সিআইপি)। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ১১মার্চ প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ সফর ও স্মার্ট ময়মনসিংহ গঠনের বিষয়ে তিনি ফ্রন্টিয়ার রিপোর্টার্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ (FRSB), ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের কাছে বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। গত ৩১ জানুয়ারী রাজধানীর মহাখালীর নিজ কার্যালয়ে তিনি এ সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। উক্ত সাক্ষাৎকারে নির্ধারিত বিষয় ছাড়াও সরকার ও রাজনীতি এবং গণমাধ্যমের এপিঠ;ওপিঠ নিয়েও বেশ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় । ১১মার্চ ,২০২৩ এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ সফর উপলক্ষে সম্মানিত পাঠক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছিলো । জনসংযোগ পাঠক ফোরামের অনুরোধে সাক্ষাৎকারটি পূঁণরায় প্রকাশ করা হলো-
১। এফআরএসবি,(ম:জে:)- প্রথমত আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনার মূল্যবান সময় থেকে কিছুটা সময় আমাদেরকে দেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ সফরকে কেন্দ্র করে আপনাদের প্রস্তুতি ও চাওয়া পাওয়ার বিষয়ে কি ভাবছেন ?
আমিনুল হক শামীম- দেশের যেকোন স্থানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আগমন মানেই একটি স্থানীয় মহাউৎসব এমনকি উক্ত স্থানের মানুষের জন্য আশীর্বাদও বটে। চাওয়া পাওয়ার বিষয়টিও খুবই গুরুত্ব বহন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বদাই প্রস্তুত থাকেন দেওয়ার জন্য। তিনি সবসময়ই বলেন- তুমি চাবা আমি দিব, তবে আমরাই চাইতে জানিনা; আমাদের চাওয়ার লোকের অভাব আছে; তাই যা পাওয়ার কথা তা পাইনা। ধরুন নিজ থেকেই প্রধানমন্ত্রী বাজেট করেছেন দুটি ব্রিজ দিবেন কিন্তু আমরা আরও ছয়টি ব্রিজ চাইতে পারিনা। আমরা পাঁয়ে ধরে টেনে নিচে নামাতে পারি কিন্তু হাতে ধরে টেনে উপড়ে উঠাতে জানিনা। দুর্ণীতি ও দায়িত্ব পালনে অব্যবস্থাপনা থাকলে দায়িত্বশীল যেকারোর মন সংকীর্ণ হয়ে যায় আর সংকীর্ণ মন নিয়ে আর যাইহোক প্রধানমন্ত্রীর সাথে চাওয়া পাওয়া নিয়ে আলোচনা করা যায়না। এসকল কারনে দায়িত্বশীল থাকা স্বত্বেও অনেকেই তাঁর কাছে চাইতে অপারগ। তবে ময়মনসিংহবাসীর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু চেয়েছি বা তুলে ধরেছি যা এখনও অব্যহত আছে। তারমধ্যে- ১। ময়মনসিংহকে সমৃদ্ধশালী অর্থনৈতিক জোন হিসেবে বাস্তবায়ন, ২। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, ৩। একটি মানসম্মত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে পৃষ্ঠপোষকতা, ৪। ময়মনসিংহ বিভাগে একটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর নির্মাণ, ৫। ময়মনসিংহ শহরের যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, ৬। ময়মনসিংহ বিভাগের স্থলবন্দরসমূহে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু, এবং ৭। বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা-গাজীপুর রুটের সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন; বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
২। এফআরএসবি,(ম:জে:)- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের অভিযাত্রায় দ্রুত “স্মার্ট ময়মনসিংহ গঠনে আমাদের অপ্রতুলতা কোথায় ? এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
আমিনুল হক শামীম- স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোট চারটি বিষয়ে প্রধানত গুরুত্ব দিয়েছেন। ১. স্মার্ট গভর্নেন্স ২. স্মার্ট সিটিজেন ৩. স্মার্ট ইকোনমি ও ৪. স্মার্ট সোসাইটি। এই চারটি বিষয়ের পরিপূরক কিন্তু ময়মনসিংহে এখনও নেই। সবার আগে ময়মনসিংহবাসীকে শতভাগ সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে যা স্মার্ট হওয়ার প্রধান পূর্ব শর্ত বলা যেতে পারে । পাশাপাশি যথার্থ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, তাহলে ময়মনসিংহবাসী স্মার্ট হওয়ার প্রাথমিক স্তর অতিক্রম করতে পারবে। ময়মনসিংহ প্রাচীন শিক্ষা নগরী হলেও কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে এ জেলা এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। তাছাড়া আমরা এখনও যানজট মুক্ত হতে পারিনাই, মাদকমুক্ত হতে পারিনাই। ওভারব্রীজ ও ফ্লাইওভার সহ রিভারব্রীজের যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক ও সাংবাদিক মহলের বিভিন্ন মতাদর্শ সহ অন্যান্য শ্রেনী পেশাজীবীদের মাঝে নিয়মিত সমন্বয়হীনতা আমাদের উন্নয়নের পথে একটি বিরাট অন্তরায় বলা চলে। তাই স্মার্ট ময়মনসিংহ গঠনে সংশ্লিষ্টদের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি বলে আমি মনে করি। অনেকটাই সহনশীল মনোভাব নিয়ে যদি সবাই এক কাতারে দাঁড়াতে পারে তাহলে আমরা খুব দ্রুত আমাদের লক্ষ্যে পৌছাতে পারব। আর যদি সবাই মনে করে আমিই সবকিছু বা আমিই সবসময় প্রধান অতিথি হব; তাহলে ত হবেনা কিছুই। আমার যেখানে এক্সেস আছে সেখানে আমি বলব বা কাজ করব; একইভাবে অন্যদের যেখানে এক্সেস আছে তারা সেখানে বলবে বা কাজ করবে। মূল্যায়ন পেতে চাইলে অবমূল্যায়ন থেকে বিরত থাকতে হবে, অতিথি আসনের জন্য দাওয়াতের আশায় বসে না থেকে উদ্যোক্তা/আয়োজককে আরও উদ্যোগী হতে আন্তরিক সহযোগীতা করতে হবে, ব্যক্তিগত স্বার্থকে দূরে রেখে সর্বজনীন স্বার্থকে আগে দেখতে হবে। নয়ত যা যেভাবে আছে তাই থাকবে, অর্থাৎ আমাদের আপন মনোভাবকে স্মার্ট করতে হবে।
৩। এফআরএসবি,(ম:জে:)- যেহেতু উদ্যোক্তা/আয়োজককে আরও উদ্যোগী হতে আন্তরিক সহযোগীতা করার কথা বললেন, সেহেতু স্মার্ট ময়মনসিংহ গঠনের লক্ষ্যে একটি কার্যকরী উদ্যোগ; এফআরএসবি, ময়মনসিংহ জেলা শাখা নিতে চায়। যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সপ্তাহে একদিন সংসদে জবাবদিহি করতে পারেন তাহলে স্থানীয়ভাবে জেলা প্রশাসন সহ দায়িত্বশীল সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ/রাজনীতিবীদগণ কেন অন্তত মাসে একদিন হলেও বিভিন্ন বিষয়ে জেলা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে পারবেনা ? যদি এভাবে প্রতিদিন একজন করে বিশাল পরিসরে প্রতি মাসের ত্রিশ দিনে মোট ত্রিশ জন শীর্ষ দায়িত্বশীল ব্যক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় বা মতবিনিময় করে এবং তা প্রতিদিনের ধারাবাহিক হিসেবে নিয়মিত কোন টিভি চ্যানেলে প্রচার হয়, তাহলে স্থানীয় গণমাধ্যমও সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতায় আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা যেতে পারে। অর্থাৎ গতাণুগতিক সংবাদ সম্মেলন নয় বরং নিয়মিত স্থানীয়ভাবে সংবাদ মহা সম্মেলন তথা নিউজ সামিট (News Summit) আয়োজনের প্রস্তাব দিচ্ছি। এব্যাপারে আপনার মাধ্যমে আমরা কিভাবে সহযোগীতা পেতে পারি ?
আমিনুল হক শামীম- খুবই ভালো প্রস্তাব। আমার যতটুকু এক্সেস আছে ততটুকু বিবেচনায় এব্যাপারে আমি সর্বাত্নক সহযোগীতা করব। তবে এব্যাপারে এফআরএসবি, ময়মনসিংহ জেলা শাখা প্রস্তাবকের কৃতীত্ব অর্জন করলেও এককভাবে সফলতা অর্জন করতে পারবেনা। জেলা শহরে আরও বিভিন্ন প্রমিনেন্ট সাংবাদিক সংগঠন আছে । প্রত্যেক সংগঠন থেকে দুই/তিন জন করে নিয়ে একটি নির্বাহী আয়োজক কমিটি করে এই আয়োজন করলে তা যথার্থ হবে বলে আমি মনে করি। আপনাদের ভিতরেও সমন্বয়হীনতা বা পাল্টাপাল্টি প্রতিযোগীতা আছে। স্থানীয়ভাবে আমরা প্রতিনিয়ত তা লক্ষ্য করি। আপনাদেরকেও এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনাদের এই প্রস্তাবনা মানসম্মত তথা স্মার্টনেস আছে এখানে। তাই এব্যাপারে আপনারা যতটুকু চাইবেন আমি তার চেয়েও বেশী সহযোগীতা করব কিন্তু তার আগে আপনারাও এক কাতারে দাঁড়ান, সম্মিলিতভাবে আসুন। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে এব্যাপারে কথা বলব। আশাকরি তিনি অবশ্যই আন্তরিক হবেন।
৪। এফআরএসবি,(ম:জে:)- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ সফর নিয়ে আপনার অনুভূতি কি ?
আমিনুল হক শামীম- স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ময়মনসিংহ বিভাগের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা বিশেষ দৃষ্টিপাত করবেন, এটাই ময়মনসিংহবাসীর প্রত্যাশা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ১১ মার্চের ময়মনসিংহ পরিদর্শন সফল হোক, স্বার্থক হোক। আমি তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা।
৫। এফআরএসবি,(ম:জে:)- আপনার মূল্যবান সময় থেকে আমাদেরকে অনেকটুকু সময় দেওয়ার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আশাকরি আপনার উদ্যোগ ও চিন্তা চেতনা ময়মনসিংহবাসীকে স্মার্ট আলোয় আলোকিত করবে। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
আমিনুল হক শামীম- ময়মনসিংহবাসীর জন্য সবসময়ই আমার কিছু না কিছু সময় নিয়মিত বরাদ্দ থাকেই, এটা নতুন কিছু নয়। আমি চেষ্টা করছি তাদের জন্য আরও অনেক সময় দিতে, আরও বেশী ভাবতে ও দায়িত্বশীল হতে। আমি এব্যাপারে সকলের সহযোগীতা কামনা করছি। শুধু আমি আপনাদেরকে সময় দিয়েছি তা নয় বরং আপনারাও আপনাদের মূল্যবান সময় আমাকে দিয়ে আমার ভাবনাগুলোকে গণমাধ্যমে তুলে ধরছেন, এজন্য আপনাদেরকেও আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারাও ভালো থাকবেন।
www.frsbnews.com
11-03-2023/prnews1.com.bd
অনুলিখন- এম আনিছুর রহমান
পাঠকের মন্তব্য