শুভেচ্ছা সংযোগ ডেস্ক । জনসংযোগ নিউজ
কবিতার জন্য অমরত্বকে তাচ্ছিল্য করেছিলেন তিনি।
ভারতের লৌহ মানবী প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে নিয়ে লেখা নদীতীরে গল্পে কাল্পনিক সাক্ষাৎকার এ সুখ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন -
‘সুখের কথা চিন্তা করিনি। জীবনে যখনই কোনো সংকট এসেছে, তখনই ভেবেছি আমায় যেন কেউ হারাতে না পারে। কখনো তো হারিনি আমি। অনেক কিছুই অসম্পূর্ণ আছে। কিন্তুু হেরে যাইনি।’
একজন রাজনীতিবিদ এর কাছে সুখ মানেই হয়তো না হারা। কিন্তুু একজন ব্যক্তি ইন্দিরার কাছে সুখ কি?
নদীতীরে গল্পে ব্যক্তি ইন্দিরা নদীতীরে গেলেন কোনো গোপন কথা বলার জন্য। গোপন কথা শোনার নদী ছাড়া আর তো কেউ নেই। তাহলে ব্যক্তি ইন্দিরা গান্ধীর কাছে সুখ মানে গোপন কথা শোনার কেউ থাকা?
তা আর জানা সম্ভব হয় নাই।
তবে যিনি গল্পটি লিখেছেন তাঁকে বাংলা সাহিত্যের ‘গ্রান্ড মাষ্টার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদ এর বড় মেয়ে নোভার অতি পছন্দের লেখক এই গ্রান্ড মাস্টার সাহিত্যিক।
নোভার পছন্দের লেখককে নোভার বিয়েতে দাওয়াত করে হাজির করে মেয়েকে চমকিয়ে দিয়েছেন। আবার
হুমায়ূন আহমেদ এর লেখাকে প্রথম কলিকাতায় পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন গ্রান্ড মাস্টার লেখকই। হুমায়ূন আহমেদ এর প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে নিয়ে সাহিত্য সমালোচনা লিখেছেন তিনি। হুমায়ূন আহমেদ যাকে বাংলা সাহিত্যের গ্রান্ডমাষ্টার বলেছেন তিনি খুব ইচ্ছে করে সাহিত্যিক হওয়ার জীবন বেছে নিয়েছেন তা নয়। তাঁর শিক্ষক বাবা দুপুর বেলা ছেলেকে বাসায় ধরে রাখতে টেনিসনের কবিতা অনুবাদ করতে দিতেন। প্রথম কয়েকদিন অভিধান ঘেটে অনুবাদ করে বাবাকে দেখিয়েছেন। দেখলেন বাবা মুল কবিতার সাথে অনুবাদ খুব একটা মিলিয়ে দেখেননা, তখন নিজের লেখা কবিতা বাবাকে দেখিয়ে বুঝ দিতেন। বাবাকে বুঝ দেওয়া ছেলেটি আবার প্রেমে পড়লেন একটা মেয়ের। মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে লেখা ‘ একটি চিঠি ‘ শিরোনামে কবিতা পাঠিয়ে দিলেন পত্রিকা অফিসে। কবিতা ছাপা হয়ে তাঁর বাড়ির ঠিকানায় যখন চিঠি আসলো পত্রিকা অফিস থেকে তখন পরিবারের কেউই বিশ্বাস করেনি এটা মেয়েটির প্রেমে পড়া ছেলেটির লেখা। এমনকি ‘ কেউ কথা রাখেনি’ এর মতো বিশ্বাস করে নাই মেয়েটিও।
সেই সূচনা থেকে তার কলম থেকে সময়কে নায়ক করে আমরা পেয়েছি ‘ সেই সময়’ ‘ প্রথম আলো’ ‘ ও ‘ পূর্ব পশ্চিম’ এর মতো ইতিহাসের আলোয় বাংলার সমাজ, সংস্কৃতিকে তুলে আনা মাস্টারপিস উপন্যাসসমূহ। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ একা এবং কয়েকজন ‘ প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে।
প্রথম উপন্যাস ‘ আত্মপ্রকাশ ‘ প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে। তিনি নীললোহিত, সনাতন পাঠক, ‘নীল উপাধ্যায় ‘ছদ্মনামেও লিখতেন। সম্পাদনা করেছেন ‘ কৃত্তিবাস’ যা বাংলা সাহিত্যের জন্য বাঁকবদল সাহিত্য সাময়িকী।
তাঁর জনপ্রিয় শিশুতোষ সাহিত্য ‘ কাকাবাবু ‘ সিরিজ এখনো আন্দোলিত করে পাঠকদের, দর্শকদের।
তাঁর ‘ অরণ্যের দিনরাত্রি’ নিয়ে চলচ্চিত্র বানিয়েছেন সত্যাজিত রায়।
সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় তার হাত দিয়ে সোনা ফলিয়েছেন তিনি। ‘ তবে তার বড় পরিচয় তিনি কবি নীরার’ কবি, ‘কেউ কথা রাখেনি’ এর কবি।
‘কেউ কথা রাখেনি’ এর কবি নীরাকে নিয়ে লিখেছেন
‘ নীরা, তোমার মাথায় ঝরে পড়ুক
কুয়াশা মাখা শিউলি
তোমার জন্য শিস দিক একটি রাতপাখি
পৃথিবী থেকে যত সুন্দর যদি লুপ্ত হয়ে যায়
তবু,ওরে বালিকা,তোর জন্য আমি এই সব
রেখে যেতে চাই।’( নীরার জন্যঃ স্বর্গ নগরীর চাবি)।
নীরার জন্য স্বর্গ নগরীর চাবি রেখে তিনি চলে গেছেন কোন এক কবিতালোকে। কবিতালোকে চলে যাওয়া কবি শুধু কবিতার জন্য কবিতায় লিখেছেন-
‘শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়।
মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা, শুধু
কবিতার জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি।’
অমরত্ব তাচ্ছিল্য করা কবির নাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
আজ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। সুনীলকে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর ভাষায় বলতে হয়-
‘ আজ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন। এই ধরনের লেখকদের শুধু জন্মদিন থাকে। তাদের মৃত্যু হয়না বলে মৃত্যুূদিন থাকেনা’।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ৭ সেপেটম্বর বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
তথ্যসুত্রঃ (১)জন্মদিনের উপহার, কাঠপেন্সিল - হুমায়ূন আহমেদ।
(২) হুমায়ূন আহমেদ এর কলকাতা বিজয়- ইমদাদুল হক মিলন, কালের কন্ঠ।
(৩) অর্ধেক জীবনঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
(৪) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ঃ দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি ও কথাসাহিত্যিক।
(৫) ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর নেই- রেজা ঘটক।
(৬) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ঃ বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রঃ সুজয়েন্দ্র দাস,কালি ও কলম।
(৭) ছবিঃ অর্ন্তজাল।
Special courtesy : Zahirul islam (AHM) See less
শু:স:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য