সংযোগ খবর। ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর
মূলত: যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন ইন্দো-প্যাসিফিকের বিস্তৃত অঞ্চলে প্রভাব খাটানোর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং মি. মাক্রোঁ ফ্রান্সকে একটি বিকল্প হিসাবে সামনে দাঁড় করাতে চাইছে। ফ্রান্স তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে “শক্তিশালী” করতে এবং এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বা “নতুন সাম্রাজ্যবাদ” প্রতিরোধের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে সফর করছে। দেশটি তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার দিকে বেশী মনোযোগ দিচ্ছে ।
এ প্রসঙ্গে মি. মাক্রোঁ শেখ হাসিনাকে বলেন, ” ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নতুন সাম্রাজ্যবাদের মুখোমুখি”। এখন আমরা গণতান্ত্রিক নীতি এবং আইনের শাসনের উপর ভিত্তি করে একটি তৃতীয় উপায় প্রস্তাব করতে চাই –যেখানে আমাদের কোন অংশীদারকে খাটো করা হবে না বা তাদেরকে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হবে না।”
রবিবার নৈশভোজে মি. ম্যাক্রোঁর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেছেন,”কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের জন্য আপনার গুরুত্ব আরোপ মূলত আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।” “আমরা আপনাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশুদ্ধ বাতাসের নিঃশ্বাস হিসেবে দেখি। “
ফরাসি মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ”থালোস ইতোমধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাডার ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ করছে। একই প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে উৎক্ষেপণ করা বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তৈরি করেছিল। ২০২১ সালে শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্ট সই হয়। এবারে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট ফ্রান্স কেনার বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হল।
সেইসাথে সরকার বাংলাদেশ বিমানের জন্য তাদের যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং উড়োজাহাজ বহর থেকে সরে এসে ফরাসি এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি বিমান কেনার বিষয়েও চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর থেকে দেশটির সাথে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যেই চলতি বছরের শুরুতে ফ্রান্সের এয়ারবাস কোম্পানি থেকে দশটি উড়োজাহাজ কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।
ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের এই সফরে দুই দেশের নেতার উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট এবং বাংলাদেশের নগর অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরমধ্যে একটি হল ‘ইমপ্রুভিং আরবান গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রোগ্রাম’ বিষয়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং ফ্রান্স ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির মধ্যে ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি অ্যাগ্রিমেন্ট বা ঋণ চুক্তি। এবং অপরটি হল বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম বিষয়ে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের এবং ফ্রান্সের এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এর মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে একটি লেটার অব ইনটেন্ট চুক্তি।
মি. মাক্রোঁ তার সফরে বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি “অসাধারণ সাফল্য” অর্জন করেছে, বাংলাদেশ বিশ্ব মঞ্চে তার স্থান ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করছে”,। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জের মুখে থাকা বিশ্বের অষ্টম জনবহুল এই দেশটি তাদের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল রেখেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এই প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, যেসব খাতে ফ্রান্স শক্তিশালী সেসব খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে চায় দেশটি।
পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত সুরক্ষা অবকাঠামো বিনির্মাণে এবং বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনায় উন্নত ও বিশেষায়িত কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ফ্রান্স আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তথ্য প্রযুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেয়ার কথা জানিয়েছে ফ্রান্স। মি. মাক্রোঁ বলেন, “রাশিয়া যখন ইউরোপে প্রভাব বিস্তার করতে যুদ্ধ পরিচালনা করছে, এই অবস্থায় আমাদের দায়িত্ব দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুদের সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা এবং টেকসই বিকল্প প্রস্তাব করা। আমরা বাংলাদেশের সাথে এই পথে চলতে চাই।
(এফএফপি ও বিবিসি বাংলায় এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদকে বিশ্লেষণ পূর্বক প্রকাশ করা হল) –
অনুলিখন- এম আনিছুর রহমান
স:খ:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য