সংযোগ অর্থনীতি । সর্বজনীন পেনশন স্কীম
১৭ আগষ্ট,২০২৩ দেশে প্রথমবারের মত চালু হলো সর্বজনীন পেনশন স্কীম। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে এখন আছে মোট চারটি ধরণ - প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। একেক স্কিম একেক শ্রেণিকে লক্ষ্য করে তৈরি, তাই চাঁদার পরিমাণও একেক রকম। তবে এর মধ্যে প্রগতি স্কিমেই সবচেয়ে বেশি অ্যাকাউন্ট চালু হয়েছে, বলে জানান অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য নিযুক্ত হওয়া মি. মোস্তফা। প্রগতি স্কিমের মোট অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ছয় হাজার ১৭৬ টি, অর্থাৎ পেনশন স্কিমে মোট অ্যাকাউন্টের প্রায় অর্ধেক। এই স্কিমটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য, এক্ষেত্রে তিন ভাগে চাঁদার হার ভাগ করা হয়েছে। কেউ চাইলে মাসে দুই হাজার, তিন হাজার বা পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়ে এই স্কিমে অংশ নিতে পারবে। আবার প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের মালিকও প্রগতি স্কিমে অংশ গ্রহণ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে মোট চাঁদার অর্ধেক কর্মচারী এবং বাকি অর্ধেক প্রতিষ্ঠান বহন করবে। উদ্বোধনের সময় সরকার মোট ছয়টি স্কিমের কথা ঘোষণা করে। তবে আপাতত বাকি দুটি চালু করার কোন লক্ষ্য নেই বলে জানিয়েছেন গোলাম মোস্তফা।
১৬ই সেপ্টেম্বর সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, “এই স্কিম থেকে যদি ভালো পরিমাণ টাকা উঠে তাহলে আমরা এখান থেকে ঋণ করতে পারবো উন্নয়ন খাতের জন্য। ”তার এই বক্তব্য বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে মি. মোস্তফা মনে করেন এটা অর্থনীতির এক ধরণের ‘স্বাভাবিক মেকানিজম’। এক্ষেত্রে তিনি ট্রেজারি বন্ডের উদাহরণ দেন - “মনে করেন, একই রকমভাবে সরকারের কাছে পেনশন স্কিম হল জনগণের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ। ঘটনা কিন্তু এমন না যে আমার কাছে সরকার চাইলো যে দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ দাও। এটা বন্ডের মতো, আমি মালিক, টাকা সরকারের কাছে, দিনশেষে তারা আমাকে ফেরত দিচ্ছে।”
এই মূহুর্তে কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য হচ্ছে ১০ কোটি মানুষকে এ স্কিমের আওতায় আনা।
মি. মোস্তফা বলেন, “এটা যতক্ষণ না পূরণ হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে বলা যাবে না। আর আমরা ধারাবাহিকভাবে সেই পর্যায়ে যেতে চাই।”লক্ষ্য পূরণে এই মূহুর্তে পেনশন স্কিম সম্পর্কে মানুষকে জানানোটাকেই নিজেদের প্রধান কাজ বলছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। একইসাথে মানুষের মনে সংশয় দূর করতেও নানা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে সংস্থাটি। পেনশন সম্পর্কিত যে কোন তথ্যের জন্য সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘন্টার জন্য একটি কল সেন্টার চালু রাখছেন তারা। যেকোন মোবাইল নম্বর থেকে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে যেকোন বাংলাদেশি নাগরিক এই স্কিমের খুঁটিনাটি জেনে নিতে পারবেন।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলছে , দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সুবিধা দিতে পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
বিশেষ করে, গড় আয়ু বৃদ্ধির কারণে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। ফলে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা দেবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সকল শ্রেণী পেশার বাংলাদেশি নাগরিক এই স্কিমে অংশ নিতে পারবে। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অংশ হতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যক। তবে ব্যতিক্রম আছে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা চাইলে পাসপোর্ট দিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তার কপি জমা দিতে হবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের জন্য upension.gov.bd ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নাম্বার এবং ইমেইল দিয়ে কয়েকটি ধাপে নিবন্ধন করবেন। এসময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দরকার হবে। কেউ চাইলে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে নমিনি করতে পারবেন। মাসিক চাঁদা ছাড়াও কেউ চাইলে তিন মাস পরপর বা বছরে একবার পুরো চাঁদা দিয়ে দিতে পারবেন।নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে তার পরের এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা পরিশোধ করা যাবে। এরপর থেকে প্রতি দিনের জন্য এক শতাংশ বিলম্ব ফি যুক্ত হবে। কেউ টানা তিন কিস্তি পরিশোধ না করলে তার অ্যাকাউন্টটি স্থগিত হয়ে যাবে।
তবে কেউ যদি নিজেকে অসচ্ছল ঘোষণা করে তাহলে ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা না দিলেও অ্যাকাউন্টটি স্থগিত হবে না। অনলাইন এবং যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে চাঁদা পরিশোধ করা যাবে। আপাতত শুধুমাত্র সোনালী ব্যাংকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের হিসাব খোলা হয়েছে। কেউ চাইলে সরাসরি সোনালী ব্যাংকে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন ও চাঁদা দিতে পারবেন। যাদের বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে তারাও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তিনি পেনশন পাবেন টানা ১০ বছর চাঁদা দিয়ে যাওয়ার পর। অর্থাৎ স্কিম অনুযায়ী ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর হলেই তিনি সরকার থেকে পেনশন পেতে শুরু করবেন, তাকে আর চাঁদা দিতে হবে না। কিন্তু কেউ যদি ৫৫ বছর বয়সে এসে স্কিমে অংশ নেন তাহলে ৬৫ বছর বয়স থেকে তিনি পেনশন পেতে শুরু করবেন।
সংযোগ সূত্র- বিবিসি বাংলা/প্রকাশ-১৭/১০/২০২৩
অ:স:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য