সংযোগ খবর । রাজনীতি
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর অন্যতম আইনজীবী কায়সার কামাল। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন। কায়সার কামাল উল্লেখ করেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে রাজবন্দীদের মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা করানোর দৃষ্টান্ত রয়েছে।
বাংলাদেশে ৪৪ বছর আগে ১৯৭৯ সালে সাজাভোগের মধ্যে একজন রাজনীতিককে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। সেই ঘটনাটি ছিল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত তৎকালীন অবিভক্ত জাসদ নেতা আ স ম আবদুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মানি পাঠানো হয়েছিল। তিনি এখন জেএসডির সভাপতি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার ঘটনার পর নভেম্বরে সেনাবাহিনীতে পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান চলে। তখন জাসদের তৎপরতায় একটি অভ্যুত্থান হয়। কিন্তু সেই অভ্যুত্থানে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। তিনি ক্ষমতা নেওয়ার পর কর্নেল আবু তাহেরসহ জাসদের ১৭ জন নেতাকে সামরিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করেছিলেন। এর একজন অভিযুক্ত হিসেবে সামরিক আদালতে আ স ম আবদুর রবের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছিল। সেই সাজা ভোগ করার সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৯৭৯ সালের ১ মে আবদুর রবকে চিকিৎসার জন্য তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি পাঠানো হয়েছিল। এই ঘটনাকে এখন উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে।
বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি দেশের রাজনীতিতে নতুন ইস্যু হিসেবে সামনে এসেছে। খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন গত ২৫ সেপ্টেম্বর। এমন পটভূমিতে বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার আবেদনে ‘না’ বলে দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। গতকাল আইনগত মতামত দিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইন অনুযায়ী অনুমতি দেওয়ার সুযোগ সরকারের হাতে নেই। খালেদা জিয়ার পরিবারের সেই আবেদন নাকচ করে আইনমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আইনগত মতামত গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। বিএনপি এটিকে মানবাধিকারবিরোধী ও সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে বর্ণনা করেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সে প্রসঙ্গে ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশে চিকিৎসা নিতে হলে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে যেতে হবে এবং আদালতের অনুমতি নিতে হবে। শনিবার ভয়েস অব আমেরিকা উক্ত সাক্ষাৎকারটি প্রচার করে।
এদিকে বিএনপি নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া এখন বেশ অসুস্থ। ৭৮ বছর বয়সী গুরুতর অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার লিভার দেশে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। ফলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তার লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার কিডনি, হৃদযন্ত্র, ফুসফুসের জটিলতা বেড়েই চলেছে।
সংযোগ সূত্র- প্রথম আলো ও ইত্তেফাক /প্র:২।৩/১০/২৩/১০৯/স:স:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য