রফিকুল ইসলাম রনি
ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি এই সংগঠনের জন্ম হয়। উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ছাত্র সংগঠনটি গত বছর করোনাকালে মানবিক কাজে ব্যাপক প্রশংসা জুগিয়েছে দেশজুড়ে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির দাফন-সৎকার, খাদ্য সহায়তা, মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণ এবং শ্রমিক সংকটে কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়ে এ প্রশংসা পায় ছাত্রলীগ। কিন্ত সাংগঠনিক কাজে কোন অর্জন নেই সংগঠনটির।
সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নিষেধ’ থাকার পরও সম্মেলন ছাড়াই জেলা ও সাংগঠনিক ইউনিটে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কমিটি গঠনের অভিযোগ রয়েছে।
২০১৯ সালের ১ অক্টোবর চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে বহিষ্কার করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ও প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। গত বছর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনমিলনী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠাতে ভারমুক্ত করা হয় জয়-লেখককে। সম্মেলনের তারিখ থেকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইতোমধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ন হয়েছে সংগঠনটির। তবে জয়-লেখক পুর্ন দায়িত্বের পার করেছেন এক বছর। এই এক বছরে কোন জেলায় সম্মেলন করতে পারেনি তারা। এছাড়া জেলা ওয়ারী দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া হয়। কিন্তু সে দায়িত্ব পালণ করতে দেওয়া হয়নি। পদ থাকলেও নেতাদের নেই কোন সুনিদিষ্ট দায়িত্ব। দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি ইউনিটেরও সম্মেলন হয়নি, হয়নি কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংও। জেলা ও সাংগঠনিক ইউনিটে কমিটি গঠনে ‘সম্মেলন’ করার নিদের্শনা রয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সে নিদের্শনা উপেক্ষিত।
কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনগড়াভাবে জেলা ও ইউনিট কমিটি করছেন। এতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত ছাত্রনেতারা উপেক্ষিত থাকছেন। শুধু কমিটি গঠন নয়, সংগঠনের যে কোন সিদ্ধান্ত নেন তারা দু’জনেই। গত সম্মেলনের পর কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও সম্মেলন নিয়ে কোন আলোচনা নেই। জয়- লেখক সিন্ডিকেট করে দেখভাল করছেন সব কিছু। নেতাকর্মী দূরে থাক, গণমাধ্যম কর্মীদের ফোন না ধরাসহ নানা ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন বেশ কয়েক মাস।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, গত বছরে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য গণভবনে দেখা করতে যান সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এসময় ছাত্রলীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকন্যার কাছে দাবি করেন, ছাত্রলীগ যেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্ভর না হয়। সেজন্য সভাপতি-সম্পাদক যেন কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সমন্বয় করে, জেলা-উপজেলা সম্মেলন, প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই-বাছাই, কমিটি অনুমোদন এবং তৃণমূলে সাংগঠনিক সফর করেন। ছাত্রলীগের ওই নেতার বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়-লেখককে কার্যনির্বাহী কমিটির সিনিয়র নেতাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশ দেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধুকন্যার নির্দেশনা অমান্য করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিনিয়র নেতাদের সাথে সমন্বয় না করে ঢাকায় বসে প্রেস রিলিজে কমিটি গঠন এবং ভিত্তিহীন অভিযোগে বিভিন্ন ইউনিটের সভাপতি-সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিচ্ছেন ছাত্রলীগের সভাপতি-আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। ইতোমধ্যে ১২টি সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রেসরিলিজে গঠিত কমিটির দায়িত্ব পাওয়া এই সকল কমিটি অনুমোদনের আগে পদপ্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত, যোগ্যতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা আছে কিনা সে বিষয়ে কোনো সঠিক খোঁজখবর নিচ্ছেন না তারা। ফলে সংগঠনের নিয়মবহির্ভূত কর্মকান্ড জড়িত থেকেও কেউ কেউ দায়িত্বশীল পদপদবি বাগিয়ে নিচ্ছেন, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান বলেন, সম্মেলন ও সাংগঠনিক সফর ছাড়াই বিভিন্ন স্থানে কমিটি ঘোষণ করা হচ্ছে। ঘোষিত কমিটি সম্পার্কে সভাপতি-সম্পাদকের বাহিরে কার্যনির্বাহী সংসদের কেউ অবগত নয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিমাসে একবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মিটিং করার বিধান রয়েছে। অথচ বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এক বছরের অধিক সময় পার করেছে। দীর্ঘ এই সময়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি মিটিংও করতে পারেননি তারা। গত বছর করোনার সময় ছাত্রলীগ মানবিক কর্মসূচি পালন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।
বর্তমান দেশের অধিকাংশ জেলা, মহানগর এবং উপজেলা সহ বিভিন্ন ইউনিটের মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্রলীগের কমিটি। কোথাও কোথাও দশ থেকে বারো বছর ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সিটি ভোট, উপনির্বাচন এবং করোনা চলে আসে। সে সব নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছি। করোনায় ছাত্রলীগ অনেক মানবিক কাজ করেছে। সে কারণে সাংগঠনিক কর্মসূচি কিছুটা কম হয়েছে। সম্মেলন করে কমিটি না দিলেও সেখানে টাকার বিনিময়ে কিংবা অযোগ্য কাউকে নেতা বানানো হয়নি বলে দাবি তার।
তিনদিনের কর্মসূচি : সংগঠনটির ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ৭টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সকল সাংগঠনিক কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল আটটায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটা হবে। অন্যদিকে সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি প্রতিনিধি টিম শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পন, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। বিকাল চারটায় ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উক্ত আলােচনা সভা প্রতিটি জেলা, মহানগর ও উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে প্রজেক্টর এবং সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এর অন্তর্গত জেলা, মহানগর এবং সকল উপজেলার নেতাকর্মীকে যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার আহবান করা হয়েছে। এছাড়া ৬ জানুয়ারি সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সংলগ্ন স্বাধীনতা চত্বরে দুঃস্থদের মাঝে শীতবন্ত্র ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হবে। ৮ জানুয়ারি সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাশে বটতলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করা হবে।
সংগ্রহে- জনসংযোগ.কম / নিউজ ডেস্ক
jsongjugnews@gmail.com
fb.com - @jshongjog