মন্তব্য প্রতিবেদন / জনসংযোগ.কম / ২৬-০৪-২০২০
। মঈনুল হোসেন ।
করোনার ভয়ানক থাবায় স্থবির গোটা বিশ্ব, নির্বাক বিশ্ব দাম্ভিকতা, হতাশ বিশ্ব মানচিত্রের উন্নয়নশীল দেশগুলো, তবুও আশা নিরাশার দোলাচলে অস্থির বাঙ্গালীর মুখে রোদেলা হাসি ফুটিয়ে ভীত নয়নে আনন্দ অশ্রু ঝড়াতে ক্লান্তিহীন চেষ্টায় এখনও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আমাদের মাদার অব হিউমিনিটি । এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে আমি প্রথমেই বর্তমান বিশ্বের কিছু প্রেক্ষাপট তুলে ধরছি ।
যদি পুরো বিশ্বকে চারটি শ্রেণীতে বিভক্ত করি যেমন-
১. সর্বোচ্চ কোভিড আক্রান্ত দেশ,
২. সর্বোচ্চ সামরিক শক্তির দেশ,
৩.সর্বোচ্চ রাজনৈতিক শক্তির দেশ ও
৪. সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক শক্তির দেশ
তাহলে আমরা একথায় বলতে পারি উক্ত চারটি বিষয়েই বর্তমান বিশ্বে এক নাম্বার পজিশনে আছে যুক্তরাষ্ট্র তথা আমেরিকা । জাতিসংঘ থেকে শুরু করে WHO, FDA সহ বিশ্ব গণমাধ্যমেরও প্রধান সদর দপ্তরগুলোও আমেরিকাতেই অবস্থিত । এসকল প্রতিটি বিশ্ব সংস্থাই তাদের কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, শাষিত এমনকি নির্যাতিতও বটে । এর পরবর্তী সাড়িতে রাশিয়া, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানী, ইউকে, চীন,জাপান,ইরান,কোরিয়া এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতও তাদের সাথে জোড়ালো প্রতিযোগীতা করতে বর্তমানে অনেকটাই সক্ষম । যদি বিশ্বের হান্ড্রেট পাওয়ার প্রোফাইল বিবেচনা করি তাহলেও সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান নেই । তবে দেশটি সুজলা,সুফলা,শষ্য,শ্যামলা একথা সত্য, কবির ভাষায় এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবেনাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি । অর্থাৎ সকল দেশের রাণী এ দেশ, রাজা নয় । বর্তমান বিশ্বে দৃশ্যমান সেইসব কথিত রাজা দেশগুলো যারা করোনার ভয়াভহ থাবায় সকল চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে এখন চেয়ে আছে আকাশপানে । এদিক বিবেচনা করলে ওরকম রাজা দেশ হওয়ার চেয়ে এরকম রানী দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা বাঙ্গালী জাতি গর্বিত । এবার বলব গর্বিত বাঙ্গালীর অর্পিত স্বদেশপ্রেম ও স্ববিরোধী চেতনা নিয়ে ।
ছোট করে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই । কোভিড-১৯ পুথিবীর সকল সবল ও দূর্বল দেশকে এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে । সবাই লড়ছে এর থেকে মুক্তির আশায়, হয়েছে সবাই গৃহবন্ধী । চারিদিকে যখন ত্রাহি ত্রাহি রব, আমরা তখন ব্যস্ত প্রতিপক্ষের পা কেটে আনন্দ মিছিলে, নামাযে শারিরিক দুরত্ব বজায় রাখা নিয়ে তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে সংঘর্ষে বাইশ বছরের যুবক হত্যায়, এমনকি ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম সহ অসহায় মানুষের ত্রাণের চাল চুরি নিয়ে । চাল চুরি নিয়ে মৌন কষ্টের তীব্র যন্ত্রনায় ঘৃণায় অবশেষে মাদার অব হিউমিনিটি বলেই ফেললেন যে, আমি যদি অসহায়দের লাশ দাফনের জন্য কাফনের কাপর বিতরনের দায়িত্বও নেতাদেরকে দেই তারা সেই কাপড় চুরি করে পাঞ্জাবী বানাবে । আহারে বাঙ্গালী ! চেতনার তরে চরিত্রচিত্রণ, দুষেগুণে বাঙ্গালী হায় আমিও অভাজন ।
আমাদের সেন্স অব হিউমার এত ভাল যে, সংঘর্ষের সময় একজন অন্যজনকে বলছিল, কাছে আসবিনা, কুপ দে এক মিটার দূরে থেকে । এসব দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় দেশটি যদি হত হুমায়ুন আহমেদের হাবলঙ্গের বাজার অথবা সত্যজিত রায়ের হীরক রাজার দেশ তাহলেই মনে হয় ভাল হত । যাইহোক, ভাল‘র পাশাপাশি খারাপ থাকবেই, যদি খারাপ না থাকত তাহলে ভাল কখনই দৃশ্যমান হতনা, ভাল কখনই তার নিজস্ব আলোয় উজ্জল হতনা ; যেমন- অন্ধকার না থাকলে আলো হত মূল্যহীন । আশার কথা হচ্ছে, অতি ক্ষুদ্র সংখ্যক বঙ্গসন্তান এসব ঘৃণ্য কার্যে জড়িত, অন্যদিকে প্রায় সকলেই সচেতন ।
পরিশেষে পৃথিবীর ৫% মানুষের উদ্দেশ্যে বলব, যারা ৯৫% সম্পদ কুক্ষিগত করে রেখেছেন, এই মূহুর্তে তাদের হীনমানসীকতার ব্যাপক পরিবর্তন দরকার । ধরে নিন করোনা আপনাদের জন্য গ্রেট ডিজেষ্টার নয় বরং এটি আপনাদের জন্য গ্রেট কারেক্টর। কাদের জন্য রেখে যাবেন এসব ? করোনা ক্ষমতা, সম্পদ, ধনী,গরীব,সাদাকালো চিনেনা । আপনি মরে গেলে আপনার স্থান হবে গণকবরে বা চুল্লিতে, এমনকি আপনি মারা গেলে আপনার প্রিয় স্ত্রী-সন্তান,মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কেউ আপনার মুখ দর্শন করতেও আসবেনা বা চাইলেও আসতে পারবেনা : নিশ্চয়তাও নেই আপনার জানাযা আদৌ হবে কিনা । তাই আপনার অর্জিত সম্পদের বড় অংশ এই মহাবিপদে অসহায় মানুষদের কল্যাণে কাজে লাগান ; আপনার এই উৎসর্গ যদি স্বার্থপর মানুষ মনে নাও রাখে, সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই তা মনে রাখবেন । শুনেছি হাশরের ময়দানে কেউ কাউকে চিনবেনা, পূণ্যের হিসেবে বা স্ব-স্বার্থে কেউ কাউকে বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিবেনা, বিষয়গুলোকে মাঝে মাঝে হাস্যকর মনে হত কিন্তু করোনা অঙ্গুলি দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সৃষ্টিকর্তার এই বাণী ধ্রুব সত্য । বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী যদি পুথিবীতেই এমন হতে পারে তাহলে হাশরের ময়দানে অবশ্যই তাই হবে, একথা অন্তত এই মূহুর্ত থেকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । তাই সত্য যেমন ইহকাল, সত্য তেমন পরকাল, সত্য হে সৃষ্টিকর্তা, মহাসত্য তার একত্ববাদ ।
অবশেষে আমাদের এই রাণী দেশে আশার কথা এইযে, আমাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে আছেন আমাদের মাদার অব হিউমিনিটি, যিনি পরম করুণাময়ের উপর সর্বোচ্চ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলার মানুষকে বাঁচাতে । তিনিই পারবেন, কারন তাঁর মাধ্যমেই উপড়ওয়ালা বাঁচিয়েছেন প্রতিবেশী দেশের দশ লক্ষেরও বেশী অসহায় মানুষকে, যদিও তাদেরকে বর্তমানে অসহায় মনে হচ্ছেনা, তবুও তিনি এসবের জন্য বিচলিত নন, কারন তার এই উৎসর্গ স্বার্থপর মানুষ মনে না রাখলেও সৃষ্টিকর্তা ঠিকই মনে রাখবেন, এটাই তার বিশ্বাস, উদারতা ও ব্যক্তিত্ববোধ । তিনি অযথা কখনই কোন দেশকে হুমকি ধামকি দিচ্ছেননা বা প্রিয় কুকুর নিয়ে খেলাধুলাও করছেননা । আসুন আমরা সকলে মিলে তার দেয়া নির্দেশনা মেনে তাকে সাধ্যমত সহযোগীতা করি এই অপ্রত্যাশিত যুদ্ধ জয়ে ।
জয় হোক মনবতার ।
jsongjugnews@gmail.com
fb.com- @jshongjog