জানা অজানা সংযোগ । আধুনিক গাইনীকোলজী সৃষ্টির নেপথ্যে
জে. ম্যারিয়োন সিমস─ আধুনিক গাইনিকোলজির জনক─ তার সার্জিক্যাল পরীক্ষানিরীক্ষাগুলোর জন্য কিনে আনতেন কালো মহিলা দাসদেরকে, এবং তাদেরকে গিনিপিগের মতো ব্যবহার করতেন ল্যাবে।
তিনি দিনের পর দিন এই মহিলাদের উপরে জননাঙ্গের সার্জারি চালিয়ে গেছেন কোনো অ্যানেস্থেশিয়া ছাড়াই, কেননা তার মতে─ “কালো মেয়েদের ব্যথার অনুভূতি নেই।”
জে. ম্যারিয়োন সিমস ‘গাইনিকোলজির জনক’ অভিধাটি পেয়েছিলেন বিশেষত আলাবামার বিভিন্ন খামারে দাসী হিসেবে নিয়োজিত সেইসব নারীদের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে, যে-নারীদেরকে তাদের খামার-মালিকরা যৌননির্যাতন চালাতে গিয়ে প্রতিরোধের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ, এদেরকে তারা এই গিনিপিগের মতো ব্যবহারের কাজে দিয়ে দিতো তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য।
আনার্কা, উল্লিখিত নারীদের একজন, যিনি ছিলেন একজন আফ্রো-আমেরিকান দাসী, তাঁর এক পরিচিতকে আকুল কান্নায় তাঁকে ওই নরক থেকে উদ্ধার করার জন্য সাহায্য চেয়ে জানিয়েছিলেন, যে, তাঁকে নিয়মিত ওইসব ভয়ানক সার্জিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হতো হাতপা বেঁধে টেনেহিঁচড়ে, এরপর সিমস-এর ‘কাটাকুটির’ টেবিলটির উপরে চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে, চার হাতপা চারদিকে টেনে বেঁধে, কোনোরূপ ওষুধ দেওয়া ছাড়াই, অজ্ঞান না-করেই, পশু জবাইয়ের মতো তাঁর জননাঙ্গে কাটাকুটি করতেন ডাক্তার সিমস।
হিসেব করে নিশ্চিত হওয়া গেছে─ আনার্কার দেহে, ১৮৪৫ থেকে ১৮৪৯ পর্যন্ত, এই মাত্র ৪ বছরে, সর্বমোট ৩৪ বার ‘অপারেশন’ করেছেন সিমস। এবং এই অপারেশনগুলোই ডাক্তার সিমসকে আধুনিক গাইনিকোলজির বিভিন্ন সার্জারির পদ্ধতি ও নিয়ম তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলো।
পৃথিবীকে, একদিন না একদিন, দুখিনী আনার্কাকে এবং আনার্কার মতো অসংখ্য নাম না-জানা কালো নারী-দাসীকে, অবশ্যই নতশিরে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে স্বীকার করতে হবে যে, আনার্কারাই ‘গাইনিকোলজির জননী’ ।
কতো বীভৎস অমানবিকতার, কতো সমুদ্র অশ্রুর, বিনিময়ে, আমাদের আজকের আধুনিক জীবনের প্রাপ্তি! আমাদের কাছ থেকে সেইসব সত্য-ইতিহাস─ ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, সাফল্যের নেপথ্য ইতিহাস─ সুচতুরতায় লুকিয়ে রাখা হয়, চিরকাল।
দাস_লিঙ্গ_বর্ণ_ধর্ম_সভ্যতা
তথ্যসূত্র─ আফ্রিকান ভয়েস
(৬মে,২০২৪ তারিখে প্রকাশিত পূর্ব-পশ্চিম সম্পাদক, খুজেস্তা-নূর-ই নাহরিন এর টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত)
জা:অ:স:বি:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য