সংযোগ খবর । অপরাধ ও দূর্ণীতি
দুর্নীতির অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতি পদ হারানো ড. মতিউর রহমান দেশেই আছেন! গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাজধানীতে তিনি তার নিজ বাসায় অবস্থান করছেন বলে একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
সম্প্রতি ১৫ লাখ টাকায় ছেলের ছাগল কেনা নিয়ে গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠার পর মতিউরেরর বিরুদ্ধে একের পর এক সাগর চুরির ঘটনা বেরিয়ে আসছে। কিন্তু তারপরও তাকে এখনো কেন গ্রেফতার করা হয়নি, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মতিউরের মাধ্যমে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করছেন, স্বর্ণ চোরাচালান করেছেন তারা এখন মতিউরকে রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। মতিউরকে যারা রক্ষা করতে চান, তারা অনেক ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী। একাধিক ক্ষমতাধর সচিবও তাকে রক্ষা করতে চান, কারণ মতিউরকে দিয়ে অনেক সুবিধা ভোগ করেছেন, বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন। মতিউরের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের যে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি গত বছরের ছবি বলে একাধিক কর্মকর্তা জানান। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, মতিউর আখাউড়া দিয়ে পালিয়ে গেছে-এই তথ্য তারা জেনেছিলেন।
তবে আখাউড়া স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এই পাসপোর্ট দিয়ে এখান থেকে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের অপর একটি সংস্থার কর্মকর্তা বলেছেন, রাজধানী ঢাকায় তার নিজের বাড়িতে আছেন। মতিউর রহমান শুধু দেশেই আছেন তা নয়। তাকে সংযুক্তি দেয়ার একদিন পর সোমবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (আইআরডিতে) তিনি যোগদান করেছেন। তবে তিনি অসুস্থ থাকায় বাহক মারফত চিঠি দিয়ে তিনি যোগদান করেছেন বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। অসুস্থতার কথা বলে তিনি গত তিন দিন অফিস করেননি। মতিউর রহমান দেশে বিপুল অর্থ-সম্পদ করেছেন। একই সঙ্গে বিদেশে অর্থ পাচার করে কানাডা ও দুবাইয়ে বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন সম্পদ ক্রয় করেছেন। মতিউরের সম্পদ সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বলে একাধিক কর্মকর্তাও দাবি করেছেন। তিনি কাস্টমস এ চাকরি করেছে, তাও আবার ভালো জায়গায়।
যেখানে দৈনিক কয়েক কোটি টাকা পকেটে আসে। ঢাকার এয়ারপোর্ট, চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট, সিলেট এয়ারপোর্ট ও বেনাপোল স্থলবন্দরে চাকরি করার সময় স্বর্ণ চোরাচালান ও অবৈধ মালামাল পাচারকারীদের সঙ্গে তার ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তার পেছনে রয়েছে স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদার, হুন্ডি ব্যবসায়ী, ও অবৈধ মালামাল আনা নেওয়া যারা করে সেই সব বড় বড় ব্যবসায়ীরা। তারা এদেশের বড় বড় মাফিয়া। আমলাদের মধ্যে যারা খুবই শক্তিশালী, যারা নির্দেশনা দিলে মন্ত্রণালয়ে এক মিনিটে আদেশ জারি হয়ে যায়, এমন কয়েকজন আমলার সাথে মতিউরের গভীর সখ্যতা ছিল। ব্যাংক সেক্টরের একজন শীর্ষ ক্ষমতাধর কর্মকর্তাও মতিউরের কাছ থেকে বিপুল সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। তার মাধ্যমে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকা বানিয়েছেন। শেয়ারবাজারের একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির সঙ্গে মতিউরের সম্পর্কে ছিল, যারা হাজার হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সাথেও মতিউর জড়িত। ব্যাংকের পরিচালকও ছিলেন মতিউর। অর্থাৎ হাজার হাজার কোটি টাকা যেখানে বানানো যায়, সেখানেই মতিউর।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা আর অপরাধ-দুর্নীতি নিয়ে বলতে চাই না। বিরক্ত হয়ে গেছি। সর্বশেষ মতিউরের বিষয়ে দুর্নীতি খবর দেখে নিজেদের ঠিক রাখতে পারছি না, আমরা আসলে কোন দেশে বসবাস করছি। পত্র-পত্রিকায় মতিউর সম্পর্কে লিখছে। এতো বড় ক্রিমিনাল এই ব্যক্তি এখনো কেন গ্রেফতার হলো না? তাকে তাৎক্ষণিক ধরা উচিত ছিল। যারা দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা খাচ্ছে, আল্লাহ তাদের হেদায়েত করুক। এছাড়া আর কিছু আমাদের বলার নেই। দেশ স্বাধীন করতে বিভিন্ন পেশার মানুষ রক্ত দিয়েছে। এখন দুর্নীতিবাজরা রক্ত চুষে খাচ্ছে। মতিউর মহা দুর্নীতিবাজ হয়েও মহারাজার মতো আছেন। তার ভাব এমন যে, তার কিছুই হবে না। কিংবা কেউ কিছু করতেও পারবে না। কারণ তার বিচার করবে যারা, কেউ না কেউ তার অপকর্মের সাথে জড়িত। অর্থাৎ এটাই হলো তার বড় দুঃসাহস। নিজে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক, অন্যদেরও বানিয়েছেন।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, দেশে ছোট/বড় মতিউর রয়েছে অসংখ্য। নিয়োগ, বদলির নামে কোন কোন শীর্ষ কর্মকর্তার পিএরা শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে। একটি মন্ত্রণালয়ের উদাহরণ দিয়ে একাধিক কর্মকর্তা বলেন ওই মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব অবসরে গেছেন। অপর এক উপসচিবকে অনিয়মের কারণে অন্য জায়গায় বদলিও করা হয়েছিল। তাকে আবার এই মন্ত্রণালয়ে আনা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে চলছে ওই মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বদলির বাণিজ্য। এটা একটা বড় সিন্ডিকেট। ওই মন্ত্রণালয়ের সবার মুখে মুখে এই তথ্য পাওয়া যায়। পিএ এর দাপটে অনেক কর্মকর্তা ভয়েও কথা বলতে চায় না।
এই দেশে শত শত মতিউর তৈরি হয়ে আসছে। প্রশাসনে এই প্রথম একজন এতো বড় মতিউরকে শনাক্ত করা গেল। বাকিরা এখনো পর্দার অন্তরালে রয়ে গেছে। দুদক বলছে, অনুসন্ধান করছি। কেন মতিউরকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। দুর্নীতি, অনিয়ম তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই আছে। যারা তাদের প্রশ্রয় দিয়েছে, তারাই তাকে রক্ষা করার জন্য এখন মরিয়া। সাধারণ মানুষের দাবি, এই ধরনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিলে দুর্নীতি করার কেউ সাহস পাবে না। অপরাধ বিশেষজ্ঞদেরও একই অভিমত। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব।
সংযোগ সূত্র- দৈনিক ইত্তেফাক / প্রকাশ: ২৮-০৬-২০২৪।
সংগ্রহে : অপরাধ ও দূর্ণীতি সংযোগ বিভাগ, জনসংযোগ নিউজ/০১২/০৭৭
পাঠকের মন্তব্য