মন্তব্য প্রতিবেদন । জ.ই মামুন
কাল রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, আগামী ৭ আগস্ট কোটা সংস্কারের মামলা নিয়ে উচ্চ আদালত বসবে এবং তিনি আশাবাদী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সেদিন ইতিবাচক রায় পাবেন। কিন্তু তিনি আলোচনার কোনো প্রস্তাব দিলেন না। আবার আজ দুপুরে আইনমন্ত্রী বললেন, আগামী রোববার আদালত যাতে এই মামলার রায় দেন সেই ব্যবস্থা নিতে তিনি এটর্নি জেলারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সরকার শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি। প্রশ্ন হলো, প্রধানমন্ত্রী কাল রাতে কেন এই কথাগুলো বললেন না?
এদেশে তো রাতেও আদালত বসার নজির আছে। জরুরি পরিস্থিতি বলে একটা কথা আছে, সেটা কেন নীতি নির্ধারকরা বুঝলেন না। তরুণদের আন্দোলনকে কেন শুরু থেকেই ছোট করে দেখলেন? আন্দোলন ছিলো কোটার বিরুদ্ধে; সরকার, আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নয়। তাহলে কেন তাদেরকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করার জন্য নামানো হলো?
এতগুলো প্রাণ ঝরে যাবার পর কেন আলোচনার কথা বলা হলো, শুরুতেই কেন তাদেরকে আলোচনার জন্য ডাকা হলো না।
বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ভাষণে বলেছেন, রক্তের দাগ শুকায় নাই। রক্তের ওপর পারা দিয়ে তিনি আলোচনায় যেতে পারেন না। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত নির্বাচনের আগেও বিএনপির সাথে সংলাপের প্রসঙ্গে বলেছেন, খুনীদের সাথে কিসের আলোচনা? আন্দোলনকারীরা বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর এই দুই উক্তি কোট করে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
উপরন্তু, আলোচনার জন্য যে দুজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারা কি স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা রাখেন? যদি তাই হতো তাহলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যেদিন বললেন, কাল থেকে ঢাকায় কোনো ইঞ্জিন চালিত রিকশা চলবে না, তার পরদিনই প্রধানমন্ত্রী বললেন, না। ইঞ্জিন চালিত রিকশা চলবে। তার মানে মন্ত্রীদের কোনো সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা নেই। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। তাই কোনো আলোচনা করতে হলে সেটা খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই করতে হবে।
বাস্তবতা হলো, একটা দেশ, রাষ্ট্র, সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠানও যদি শতভাগ এক ব্যক্তি নির্ভর হয়ে পড়ে সেখানে ভুল সিদ্ধান্ত আসতে বাধ্য। কারণ কোনো মানুষই ভুল ত্রুটির উর্ধে নয়। শুধুমাত্র অনুগত, স্তাবক, সুবিধাভোগী এবং চাটুকারগোষ্ঠী দিয়ে একটা সরকার চলতে পারে না। সেভাবে চালাতে গেলে কি হয় তার উদাহরণ আজকের বাংলাদেশ।
এই আন্দোলন এখন আর কোটা সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখানে অনেক ক্ষমতালিপ্সু, সুবিধাবাদী ও সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে। আমি বলবো সরকারই কালক্ষেপণের মাধ্যমে তাদেরকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে গেয়েন্দা সংস্থাগুলোর কোনা ব্যর্থতা আছে কি না তাও চিহ্নিত করতে হবে। ছাত্রদের যেভাবে গুলি করে মারা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে তা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না। পুলিশ এবং সরকারি পেটোয়া বাহিনীর অতি উৎসাহীরা এজন্য দায়ী। অন্যদিকে সাধারণ ছাত্ররা এভাবে মানুষ হ্ত্যা করতে পারে না, পুলিশ বা আইন শৃংখলা বাহিনীর ওপর এমন বীভৎস হামলা করতে পারে না। এখানেও সেই তৃতীয় পক্ষ তৎপর বলেই মনে হয়।
আমি জানি না এই সঙ্কট কিভাবে কাটবে। তবে এখনো আশার শেষ ভরসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই। তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার ঘোষনা দিয়ে, দলীয বাহিনীকে নিরস্ত্র করে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে, সব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের ব্যবস্থা করে আলোচনার প্রস্তাব দিলে হয়ত পরিস্থিতি শান্ত হবে। এবং এই কাজটা তিনি যত দ্রুত করবেন, দেশের জন্য ততই মঙ্গল।
মন্তব্য প্রতিবেদক -
সিনিয়র সাংবাদিক, প্রধান বার্তা নির্বাহী, এটিএন বাংলা।
দৃ:আ:স:বি:/জ:নি:
(১৮জুলাই,২০২৪ তারিখে প্রকাশিত সম্মানিত প্রতিবেদকের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত)
পাঠকের মন্তব্য