অপরাধ ও দূর্ণীতি / জনসংযোগ.কম / ০৮-০৭-২০২০ /
। এম আনিছুর রহমান ।
বাংলাদেশে সরকারী/বেসরকারী যেকোন ব্যক্তি/প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অনিয়ম ও দূর্নীতি এটা নতুন কোন ব্যাপার নয়, এমনকি এতে হঠাৎ করে হতচকিত হওয়ারও কিছু নেই । পৃথিবী যেমন সূর্যের চারিদিকে ঘুরে ঠিক তেমনি দূর্নীতিও বাংলাদেশের চারিদিকে ঘুরে । যেদিন পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরাঘুরি বন্ধ করবে সেইদিন দূর্ণীতিও বাংলাদেশের চারিদিকে ঘুরাঘুরি বন্ধ করবে । দুর্নীতি এদেশে কখনই কমবেনা বরং দিনকেদিন আরও বৃদ্ধি পাবে তবে বর্তমান সরকার প্রধানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কারনে এদেশে দুর্নীতি অনেকটাই ছন্দ হারিয়ে কোভিড-১৯ এর মত রুপ পরিবর্তন করছে মাত্র কিন্তু নির্মুল হওয়ার কোন লক্ষণই নেই । পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে আজ অবধি পর্যন্ত কোন বৈশ্বিক মহামারির কারনে পুরো বিশ্ব একসাথে লকডাউন হয়ে গেছে এমন নজির নেই । পৃথিবীতে এমন ঘটনা এই প্রথম । অন্তত এমন একটি দু:সময়ে অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও এদেশের হর্তাকর্তাদের কিছুটা হলেও নমনীয় হওয়া উচিত ছিল । অথচ নমনীয়ত দূরের কথা বরং তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন । তাদের এহেন কর্মকান্ডের ফলে প্রকৃত স্বেচ্চাসেবী ও নিবেদিত দাতাদের এযাবৎকালের সমগ্র কর্মকান্ডই ম্লান হতে চলেছে । পুলিশের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির বিচ্ছিন্ন অভিযোগ এই দেশবাসীর সবসময়ই ছিল কিন্তু বৈশ্বিক এই মহামারিতে সেই পুলিশ বাহিনীও তাদের সেই চীরচেনা রুপ পাল্টিয়ে সততা ও কর্তব্যপরায়নতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যা আজ বাঙ্গালীর চোখে দৃশ্যমান । যদি পুলিশ তা পারে তবে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা কেন তা পারলনা ?
রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মি. সাহেদ এর দূর্নীতিও ত এদেশে নতুন কিছু নয় । তিনি কখনই আওয়ামীলীগের নিবেদিত কর্মী বা আওয়ামী বরপুত্র ছিলেননা । তিনি হচ্ছেন হাইব্রীড আওয়ামী লীগ, যাদের মূল্যায়ন বর্তমান আওয়ামী লীগ এ সর্বোচ্চ প্রশংসিত, এরা আওয়ামী লীগ এর সেইসব মান্যবর যারা দলের ত্যাগীদের জায়গা টাকার জোরে দখল করেছে, এরাই সেই হাইব্রীড আওয়ামী লীগ যাদের কাছে আওয়ামীলীগের চীরত্যাগী নেতাকর্মীরা পরাজিত হয়েছে । তিনি ছিলেন হাওয়া ভবনের অন্যতম প্রতিনিধি। জনাব তারেক সাহেবের নির্ভরযোগ্য প্রতিনিধি । দুবছর কারাজীবন কাটিয়ে তিনি জেল থেকে মুক্তি পেয়েই গড়ে তুলেছিলেন একটি এমএলএম কোম্পানি সহ আরও বহু চিটিংবাজী ও হায় হায় কোম্পানি । লক্ষ্ লক্ষ্ মানুষের টাকা আত্নসাতের প্রমাণিত ইতিহাস আছে তার । তিনি রিজেন্ট হসপিটাল গড়ে তুলেছিলেন এইত সেদিন ২০১৩ সালে উত্তরার বুকে । এই কয়েক বছরে এই হাসপাতালের বহু অনিয়মের কথা উত্তরার লোকেমুখে সর্বত্রই বিরাজ করত । শেষ পর্যন্ত এই কোভিড-১৯ এর টেষ্ট ও চিকিৎসা বিষয়ক দূর্নীতি তাকে আজ জনসন্মুখে এনেছে । এ জন্য ধন্যবাদ র্যাব মেজিষ্ট্রেট মি: সারোয়ার আলমকে ।
মি. সাহেদ এসকল বিবেচনায় অবশ্যই অপরাধী তবে কোভিড-১৯ বিষয় বিবেচনায় তিনি মহাঅপরাধী । আর তাকে এই অপরাধী থেকে মহাঅপরাধী হওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন স্বয়ং মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ; সেইসাথে অতীব দু:খজনক বিষয় এই যে, মি. সাহেদের সাথে সেই চুক্তিনামায় স্বাক্ষরকালীন সময়ে সেই টেবিলে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী । সেই চুক্তিক্ষণের ছবি বর্তমানে সকল জাতীয় মিডিয়া সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে অথচ মন্ত্রীমহোদয় বলছেন তিনি নাকি সাহেদ সাহেবকে চিনেননা । তিনি একইরকম ভাষ্য দিয়েছিলেন N-95 মাস্ক কেলেঙ্কারি নিয়ে জেএমআই এর এমডি সম্পর্কেও, এমনকি রংপুরের মিঠু ঠিকাদার সম্পর্কেও । প্রতিটি নেগেটিভ কর্মকান্ড করার সময় তিনি সবাইকে চিনেন কিন্তু নেগেটিভ যখন ফ্রন্টে চলে আসে তখন তিনি কাউকেই চিনতে পারেননা, ব্যাপারটি ন্যাক্কারজনক ও হাস্যকরও বটে । কর্মকালীন দায়িত্ব পালনে কিছু ভুলত্রুটি হতেই পারে, ধরে নিলাম মাননীয় মন্ত্রীর এগুলো কোন চারিত্রিক বা মানসিক দোষ ছিলনা বরং এই পদক্ষেপগুলো তার ভুল ছিল । বিষয়গুলো যখন সামনে চলে আসল তখন তার উচিৎ ছিল ভুল স্বীকার করে জাতীর কাছে ক্ষমা চাওয়া, তাহলে হয়ত অভাগা জাতী তাকে ক্ষমা করে দিতেও পারত কিন্তু তিনি বললেন “ চিনিনা “ । এতে তার নগ্ন ব্যক্তিত্বের বহি:প্রকাশই হয়েছে ভাল কিছু হয়নি মোটেও । উল্লেখ্য- অনেক ব্রান্ডেড হাসপাতাল আছে যারা দিনের পর দিন ধন্যা দিয়েও কোভিড টেষ্ট ও চিকিৎসা প্রদানের অনুমোদন পায়নি সেখানে অনিয়ন্ত্রিত ও জরাজীর্ণ এক হাসপাতালকে তারা না জেনে না চেনেই অনুমোদন দিয়েছে, এটা রুপকথার গল্পের মত বরং তারা সব জেনেশুনেই করেছে, এমনকি এই ড্রিলে অর্থ লগ্নির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছেনা । সব নাটকের অবসান হবে মি. সাহেদকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়ার পর । আমরা সেই নাটকের সংলাপ শ্রবনের অপেক্ষায় রইলাম । মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক সম্পর্কে দলীয় সুবাদে যতটুকু জানি - তিনি খুবই ভাল মানুষ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও তাকে তার সততার জন্য খুবই পছন্দ করেন এবং বিশ্বাস করেন বলেই তাকে এই গুরু দায়িত্ব দিয়েছিলেন । কিন্তু স্বয়ং মন্ত্রীমহোদয় করোনাকালীন প্রেক্ষাপটে নিজেই প্রমাণ করেছেন যে, সবকাজ সবাইকে দিয়ে হয়না, তিনি আরও প্রমান করেছেন মন্ত্রী হলেই ভাল প্রশাসক হওয়া যায়না, এমনকি তিনি এও প্রমাণ করেছেন - শুধু ভাল মানুষ হলেই হয়না, সাথে ভাল বুদ্ধিও থাকতে হয় নয়ত ভাল বুদ্ধি বিহীন ভাল মানুষগুলোও সভ্য সমাজের নিপীড়নের কারন হয়ে দাড়ায় । সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- তিনি বারবার প্রমাণ করেছেন তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বানানোটাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভুল স্বিদ্ধান্ত ছিল । তবে আশার কথা হচ্ছে এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই শীঘ্রই সঠিক স্বিদ্ধান্ত নিবেন ।
পরিশেষে বলতে হচ্ছে- রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সরাসরি অপরাধী হলেও এর দায় প্রধানত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের । রিজেন্ট হাসপাতাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনিয়ম ও দূর্নীতির একটি বাহক মাত্র । তাই ডিজি-হেল্থ এর উচিত এর দ্বায় নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করা ; যদিও ব্যর্থতার দ্বায় নিয়ে পদত্যাগ করার রেওয়াজ এদেশে নেই তবুও এই মহামারি থেকেই আবুল কালাম আজাদ সাহেবের মাধ্যমেই এই রেওয়াজ শুরু হোক, এই মর্মে আশাবাদ ব্যাক্ত করছি । যদি তিনি তা করেন তাহলেও স্বাস্থ্যখাতে শত অনিয়মের ধারক বাহক হওয়া স্বত্বেও এ বিষয়ে তিনি ইতিহাস হয়ে থাকবেন । স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং ডিজি-হেল্থ উভয়ের অপসারন এখন সময়ের দাবী, যদি এব্যাপারে জনগণের ভোট গ্রহণ হয় তাহলে ১৮ কোটি জনগণই এ ব্যাপারে রায় দিবে অর্থাৎ পুরো ১৮ কোটি ভোট-ই পড়বে, অন্তত এ ব্যাপারে ভোট দেয়ার জন্য সবাই বেড়িয়ে ভোট কেন্দ্রে আসবেই । ধন্যবাদ ।
jsongjugnews@gmail.com
fb.com - @jshongjog