বিশেষ সাক্ষাৎকার / জনসংযোগ নিউজ / ০৯-০৪-২০২০
বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রদানে- জনাব আহসান বাকের আল-ফুয়াদ, এসিষ্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইষ্টার্ণ ব্যাংক লি: । গ্রহণে- এম. আনিছুর রহমান, সম্পাদক - জনসংযোগ নিউজ । বিষয়- করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ,গ্রহণ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা ।
গত ০৯-০৪-২০২০ তারিখে মুঠোফোনের মাধ্যমে করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ,গ্রহণ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জনাব আহসান বাকের আল-ফুয়াদ জনসংযোগ.কম এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজ অভিব্যক্তি তুলে করেন । বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের সূত্র ধরেই তিনি “ ত্রাণ “ শব্দটি পরিবর্তন করে ভালবাসা বা উপহার বলার প্রস্তাবনা প্রদান করেন । বিশেষকরে এর ফলে মধ্যবিত্তরা সানন্দে তাদের প্রয়োজনের কথা জানাবেন এবং উপহার সামগ্রী অবশ্যই গ্রহণ করবেন, এ মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। এছাড়াও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ,গ্রহণ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও তিনি জনসংযোগ.কম এর সাথে একান্ত আলোচনা করেন । জনসংযোগ নিউজ পাঠকদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল-
(১) এম আনিছুর রহমান- শুরুতেই জানতে চাইব কেমন আছেন এই পরিস্থিতিতে ? কেমন কাটাচ্ছেন হোম-কোয়ারিন্টিন ? ইজি নাকি বরিং ?
আহসান বাকের- উদ্বেগ উৎকন্ঠা না থাকলে এই লম্বা ছুটিটা অবশ্যই প্রাণভরে উপভোগ করতাম, কারণ ব্যাংকারদের কপালে এত লম্বা ছুটি কল্পনাতীত । ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ দিনের বেশীই হয়ে গেল হোম-কোয়ারিন্টিন-এ আছি । প্রথমদিকে কিছুটা বরিং লেগেছিল কিন্তু দীর্ঘ যান্ত্রিক জীবনের এই পর্যায়ে এসে, বাধ্যগতভাবে ঘরবন্দী হয়ে, পরিবারকে সত্যিকার অর্থে অনুধাবন করতে পারলাম । বুঝতে পারলাম নিজ পরিবারকে দিনের পর দিন আসলে কতটা অবহেলায় অনাদরে রেখেছি ; আমরা এই অল্প কয়েকদিনেই ঘরবন্দী হয়ে হাপিয়ে উঠেছি, বরিং ফীল করছি, অথচ তারা বছরের পর বছর এই যান্ত্রিক জীবনের চার দেয়ালের মাঝে এভাবেই হাপিয়ে উঠে, বরিং হয়, তার খোঁজ আমরা কেউ রাখিনা, কারণ তারা মুখ ফুটে এসব কখনও বলেনা । আমরা শুধু মনে করি টাকা পয়সা, বাজার সদাই করে দিলেই সব দায়িত্ব শেষ । এছাড়াও যে তাদের প্রতি আমাদের একটা বিশাল দায়িত্ব আছে, কালের বিবর্তনে তা আমরা ভুলতেই বসেছিলাম ; করোনা আমাদের কারেকশন করে দিয়েছে । তাই বরিং নয় বরং আমি এই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি । এরকম একটা পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল আমাদের জন্য ।
(২) এম আনিছুর রহমান- এক-কথায় চমৎকার বলেছেন । আশাকরি সবাই আপনার মতই এভাবে ভাবতে শুরু করুক । এবার মূল বিষয়ে আসি- লক ডাউনে বিশ্ব অর্থনীতি সহ বাংলাদেশেও একটি বিরুপ প্রভাব পড়বে, এ ব্যাপারে আমরা সবাই জানি আর একজন ব্যাংকার হিসেবে এ বিষয়ে আপনি নিশ্চিত ; কি হতে যাচ্ছে দেশীয় অর্থনীতির পরবর্তী প্রেক্ষাপট ? এবং বর্তমানে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ ব্যক্তিগতভাবে যে যেভাবে পারছে দু:স্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছে, কিন্তু অসহায় হয়ে যাচ্ছে দিন দিন মধ্যবিত্ত শ্রেনীটি,তারা না পারছে চাইতে, না পারছে সইতে । তাদের কাছে কিভাবে সহজে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো যায়, এ ব্যাপারে আপনার সাজেশন কি এবং সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কতদিন এভাবে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব ?
আহসান বাকের- দেখুন অর্থনীতির বিরুপ প্রভাবের বিষয়টি শুধু বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়, পুরো বিশ্বই বর্তমানে এফেক্টেট, ফলে বিষয়টি সম্মিলিত বিশ্বের, তাই বাংলাদেশের একার এ ব্যাপারে উদ্বেগের তেমন কোন কারণ নেই, আর যার হাতে বাংলাদেশ বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে ; একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি বর্তমানে পুরো বিশ্বেই নন্দীত, এটা আমাদের দেশের জন্য অন্যতম একটি পজিটিভ দিক । যখন কোন একটি বিষয় বা মহামারী পুরো বিশ্বের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তখন সম্মিলিত বিশ্বই সবাই সবাইকে সহযোগীতা করে এগুলোর সমাধান করে থাকে, এমনকি পরবর্তীতে বিপর্যস্থ অর্থনীতিকেও সম্মিলিত চেষ্টায় সকলে মিলে সচল করে থাকে, তাই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে বরং করোনা মোকাবেলায় সরকারের ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে চলাটাই এই মূহুর্তে আমাদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত ।
এবার আসছি ত্রাণ বিষয়ে, এই করোনা মহামারিটা কিন্তু অন্যসব দুর্যোগের মত নয় বরং পুরোটাই ভিন্ন । এখানে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের সবাইকেই ঘরবন্ধী থাকতে হচ্ছে । অনেকের পকেটে টাকা থাকা স্বত্বেও প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে বাহিরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা । তাই “ত্রাণ” শব্দটি ব্যবহার না করে বরং ভালবাসা বা উপহার বলা যেতে পারে । ধরুন সরকারের নির্দেশনা মেনে সবাই ঘরে আছে, সেজন্য উপহার স্বরুপ আপনি তাদের বাসায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পাঠাতে পারেন, যেহেতু এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ প্রণোদণা বাজেট দিয়েছেন, সেহেতু এগুলোকে এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার বলা যেতে পারে । আপনি যদি তাদেরকে ত্রাণ দিতে যান, অত:পর আবার ছবি তুলে তা পত্রিকায় বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করে দেন, তাহলে তারা তা আরও গ্রহণ করবেনা, বিশেষকরে মধ্যবিত্তরা, আর উচ্চবিত্তরা-ত স্বয়ং দাতা, তাই তাদের কথা বাদই দিলাম । করোনা দুর্যোগটি এমন একটি নিদারুণ দুর্যোগ, যে দুর্যোগে মানুষ মানুষকে ভালবাসবে, সহযোগীতা করবে । এসময় একে অপরকে ভালবেসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উপহার দেওয়ার সময়, কখনই নিজের প্রচারণার স্বার্থে ছবি তুলে তাচ্ছিল্য করে ত্রাণ দেয়ার সময় নয় । অন্তত এই দুর্যোগের ক্ষেত্রে ত্রাণ শব্দটির ব্যবহার অত্যন্ত নিন্দনীয়, এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত ।
(৩) এম আনিছুর রহমান- আসলেই আমাদের এভাবে ভাবা উচিৎ, জনসংযোগের মাধ্যমে আপনার এই কথাগুলো যেন যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয় আমরা অবশ্যই সেই চেষ্টা করব । তবে এক্ষেত্রে প্রশ্নটি হচ্ছে- ধরুন এই উপহার সামগ্রীই তাদের কাছে সম্মানের সহিত কিভাবে পৌঁছানো যায় বলে আপনি মনে করেন ?
আহসান বাকের- প্রচলিত ধারায় যা হচ্ছে তাকে ত্রাণ বিতরণ বলে, গণজামায়েত করে লাইন ধরিয়ে এভাবেই ত্রাণ দেয়া হয়, কিন্তু উপহার সামগ্রী কখনও এভাবে দেওয়া হয়না, উপহার সামগ্রী নিয়ে উপহার প্রাপকের বাড়ী যেতে হয় বা সম্মানের সহিত বাহক মাধ্যম পাঠাতে হয় । অন্যদিকে যেহেতু করোনা বিষয়ে গণজামায়ে সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়ে গেছে সেহেতু ডোর টু ডোর ডেলিভারী ইজ বেষ্ট ওয়ে ।
(৪) এম আনিছুর রহমান- কিন্তু অনেকেই-ত না খেয়ে থাকবে তবুও বলবেনা বা হটলাইনে ফোনও দিবেনা, নিরবে না খেয়ে হাহাকার করবে, তাদেরকে আইডেন্টিফাই করা যাবে কিভাবে ?
আহসান বাকের- অতি মূল্যবান প্রশ্ন এটি । ঢাকা সহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে বাড়ীওয়ালা যারা আছেন, ধরেনিন তারা উচ্চবিত্ত, তাদের উপহার সামগ্রী দরকার নেই বা নেবেনা । কিন্তু প্রতিটি বাড়ীওয়ালাই কিন্তু তার ভাড়াটিয়াদের সামর্থ সম্মন্ধে অবগত । কে কে সময়মত ভাড়া দিতে পারে আর কে কে পারেনা তা বাড়ীওয়ালারাই ভাল জানেন এবং তাদের কাছে সকল ভাড়াটিয়াদের প্রফেশনাল ডাটাও থাকে । এভাবে ডোর টু ডোর যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও প্রত্যেক বাড়ীতে একজন বাড়ীওয়ালার সাথে যোগাযোগ করে তথ্য নিয়ে লিষ্ট করে আপনারা সংশ্লিষ্ট বাড়ীওয়ালাদের মাধ্যমে তাদের এক/একাধিক ভাড়াটিয়াদের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উপহার হিসেবে পাঠাতে পারেন । বাড়ীওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মাঝে এই নিবিড় বা প্রেকটিক্যাল সম্পর্কটা আছে যা থার্ড পার্সন এর সাথে না থাকাটাই স্বাভাবিক । শুধু বাড়ীওয়ালা আপনাকে বলবে তার বাসার জন্য কয়টা প্যাকেট লাগবে অত:পর তিনি নিজে তার ভাড়াটিয়াদের কাছে তা পৌছে দেবে । আশাকরি এভাবে এই সিষ্টেমটি একটিভ করা যেতে পারে । লকডাউনটি দীর্ঘ মেয়াদী হবে, এটা নিশ্চিত, হয়ত আর সপ্তাহখানেক পরেই মধ্যবিত্তরা শূন্যকোঠায় চলে যাবে । তাই দ্রুত উদ্যোগ নেয়া উচিত । অন্যদিকে নিজ নিজ লোকাল এড়িয়াতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি/ স্থানীয় দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ভোটের প্রয়োজনে হলেও সবার ডাটা জানে, তাদেরকে তারা সরাসরি সহযোগীতা করতে পারে ।
(৫) এম আনিছুর রহমান- শেষ প্রশ্নটি লক ডাউন প্রসঙ্গে, যেহেতু বললেন, লক ডাউন দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে, যদি তাই হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত কি চেন অব কমান্ড থাকবে ? এখনইত লোকজন দলে দলে বের হয়ে আসছে বাহিরে, বরং ইদানীং আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হতে দেখা যাচ্ছে , এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি ?
আহসান বাকের- যেহেতু দেশের নাম বাংলাদেশ আর জাতীর নাম বাঙ্গালী সেহেতু আমাদের কপালে হতভাগা তকমাটি-ত অনেক আগে থেকেই আছে । একটি কথা সত্য যে, শুধুমাত্র আমাদের কিছু নেতীবাচক নেচার এর জন্যই বিশ্ব খেকে আমরা এখনও শত বছর পিছিয়ে আছি । আমরা কি কখনও আমাদের নিজেদের নেচার চেঞ্জ করবনা ? এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কেন কঠোর হতে হবে ? এটা-ত কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, যে বিশৃঙ্খলা এড়াতে তাদেরকে কঠোর হতে হবে । এটা নিজেদের জীবনের বিষয় । নিজের জীবনের প্রতি কি নিজের ভালবাসা/মায়া নেই ? এটা কেমন আচরন আমাদের ? তাই বলছিলাম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেদের জীবনের রিক্স নিয়ে যতটুকু করছে বা দিচ্ছে এর চেয়ে বেশীকিছু তাদের কাছ থেকে পেতে চাইলে আমাদের
নিজেদের নেচারকে পাল্টাতে হবে নয়ত সব ব্যালেন্স করতে যেয়ে কঠোর তাদেরকে হতেই হবে ।
(৬) এম আনিছুর রহমান- আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য জনসংযোগ.কমের পক্ষ থেকে আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ।
আহসান বাকের- আপনাকেও ধন্যবাদ ।
Fb- prnews1.com.bd
Email- desk@prnews1.com / সা:স:বি:/জ:নি: