গণমাধ্যম সংযোগ / জনসংযোগ.কম / ১০-০৪-২০২০ / (করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে জনসংযোগ পাঠকদের জন্য চ্যানেল২৪ এর সিনিয়র সাংবাদিক কাইসার রহমানীর একটি ব্যাতিক্রমী লেখা )
। কাইসার রহমানী ।
কত কিছুই বিশ্বাস করিনি। আবার কত কিছুই বিশ্বাস করেছি। “সৃষ্টিকর্তা”- এটা আবার কোন জিনিস? সস্তা চা খেতে খেতে আড্ডায়, চ্যালেঞ্জ ছুড়েছি, তুমি আছো নাকি? সস্তা দুটো বই পড়ে ডারউইনের বাদর তত্ত্ব দিয়ে, নিজের শ্রেষ্ঠত্ব কতই না জাহির করেছি। ফ্রয়েডের স্বপ্নতত্ত্ব বিশ্লেষণ করে কিছুই নাই বলে, ইউনিক চিন্তার তকমা লাগিয়েছি।
” তওবার” দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। তওবা আবার কি? এটা একটা রাজনৈতিক বক্তব্য মনে করে লুটিয়ে পড়েছি হাসতে হাসতে ; রুপকথার গল্প মনে করছি সত্যকে। কিন্তু আজ কি দেখছি? কি হচ্ছে চারপাশে ? ডারউইন, ফ্রয়েড, ধর্মহীনতার প্রদীপ তীক্ষতা হারিয়ে মিউ মিউ করছে বর্ষায় ভেজা বিড়ালের মতো।
মসজিদগুলো দিন রাত খোলা, ইলেকট্রিসিটির অপচয় হচ্ছে ভেবে ওপথ মাড়ায়নি। আজ যখন সর্বনাশ , তখন ইচ্ছে হচ্ছে, একটু মসজিদে যাবো, যেতে পারছিনা, মসজিদগুলো বন্ধ। শত ইচ্ছা হলেও, এখন যেতে পারবনা মসজিদে। অথচ কত সুযোগ ছিল, সময় ছিল যাইনি। এখন বুঝতে পারছি, মসজিদ যদি বন্ধ হতে পারে, তওবার দরজা কেন বন্ধ হবেনা। মানুষ যদি মসজিদ বন্ধ করতে পারে, তবে এমন কোন কাজ আছে, যা সৃষ্টিকর্তা করতে পারবেনা? তিনি সবই পারেন।
কেয়ামতের ময়দানে ইয়া নফসি বলে মানুষ খুঁজবে আপনজনকে, কেউ কাউকে চিনবেনা। হাস্যকর মনে হয়েছিল ; মা সন্তানকে চিনবেনা, সন্তান মাকে চিনবেনা, এ হয় নাকি? কিন্তু ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কারণে, এখনই কেউ কাউকে চিনছেনা, কেউ কারো কবরে যাচ্ছেনা, আলিঙ্গন করছেনা. একা থাকছে আর লাশ পড়ে থাকছে রাস্তায়। পৃথিবীতেই যদি এটা সম্ভব হয়ে থাকে, তবে পরপারে তা কতটা সত্য হবে, মর্মে মর্মে বুঝছি তা। ছোট্ট সমস্যায়, আমরা কতই না আতংকিত। আর ওটা তো কেয়ামত…
হজ্ব বন্ধ। মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়েও তা এখন কেউ করতে পারবেনা। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। ক্ষমতাধররা আইসিইউতে ভর্তি। অনেকেই নিজেকে ঈশ্বর ভেবেছিল। তারা আজ কত নিরুপায় হয়ে আছে, নিউক্লিয়ার বোমা কোন কাজে আসছেনা আজ। শত শত বছর পৃথিবীকে শাষন করা ব্রিটিশদের প্রধানমন্ত্রী তুচ্ছ ভাইরাসের কাছে পরাজিত হয়ে মৃত্যুশয্যায়। আর আমরা নমরুদের মশা কিংবা আবাবিল পাখির পাথর নিয়ে কত হেসেছি।
এখন সবাই তাকিয়ে আছে, আকাশের দিকে। মুখে যাই বলুক, অন্তর আজ বলছে, খুব বেশি অপরাধ করে ফেলেছি সৃষ্টিকর্তার কাছে। এ বোধ জাগছে, নিরুপায় হয়ে।
আমাদের ব্যবহারে অভিমান করেছেন সৃষ্টিকর্তা, কষ্ট পেয়েছেন। আমরা ক্ষমা চাইলে, তিনি তার অভিমান ধরে রাখতে পারবেননা। তিনি আমাদের এতই ভালবাসেন যে, প্রতিরাতে শেষ আসমানে এসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করেন। তাঁর অপেক্ষার তীব্রতা এতটাই যে, তিনি আশা করেন, বান্দা তাঁর কাছে কিছু চাইবে, আর তিনি দিবেন উজাড় করে। এতটাই তিনি উদার, এতটাই তিনি দয়ালু।
মাবুদ, আমাদের পালনকর্তা, আমরা অনেক পাপ করে ফেলেছি। পাপের জোয়ারে গা ভাসিয়ে অস্বীকার করেছি তোমার নিয়ামতকে। ইয়া আল্লাহ, আমাদের মাফ কর। আমাদের ক্ষমা কর। তুমিই বলেছো, তুমি দয়ালু। জানি ক্ষমা করবেই আমাদের। আমাদের চোখের জল তুমি বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারবেনা। কারণ, তুমিই আমাদের স্রষ্টা। আমাদের কষ্ট তোমার বেশিক্ষণ ভাল লাগবেনা। তুমি যে দয়ালু…
লেখক: Kaisar Rahmani
-সাংবাদিক চ্যানেল-৯
jsongjugnews@gmail.com
fb.com- @jshongjog
পাঠকের মন্তব্য