সংযোগ প্রধানমন্ত্রী / জনসংযোগ.কম /০৩-০৪-২০২০
। এম আনিছুর রহমান ।
আমি কখনই চাইনি এভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে, আমি কখনই চাইনি মধ্যম আয়ের দেশ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলতে, আমি কখনই প্রশ্ন তুলতে চাইনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেশের প্রতি আণুগত্য ও দেশাত্ববোধ নিয়ে, আমি কখনই চাইনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কেউ কটাক্ষ করে তর্জনী প্রদর্শন করে গর্জে উঠুক, আমি কখনই দেখতে চাইনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন নিয়ে কেউ হাসি তামাসা করুক, আমি কখনও কল্পনাও করতে চাইনা বঙ্গবন্ধুর রক্তে গড়া সোনার বাংলা বাস্তবায়নের বদলে শেখ হাসিনার দ্বারা বাংলাদেশ ব্যার্থ রাষ্ট্রে পরিণত হউক, আমি কখনই বিশ্বাস করিনা বাঙ্গালী জাতির জনকের কন্যা বেঁচে থাকতেও কোন মহামারিতে অর্থ ও খাদ্য সংকটে বাঙ্গালী জাতীর প্রাণ অনাহারে ঝড়ে যাবে, এমনকি আমি কখনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কোন ব্যাপারে কোন পরামর্শ দেওয়ারও যোগ্যতা বহন করিনা কিন্তু তার দলের সক্রিয় সৈনিক হিসেবে তারই দেয়া মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অবলীলায় নির্ভয়ে গ্রহণ করতেই পারি, এ আমার অর্জিত ও প্রাপ্য অধিকার । সেই সূত্র ধরেই প্রথমেই তুলে ধরছি দেশে করোনা মহামারি নিয়ে রাষ্ট্রীয় নির্দেশ ও গৃহীত স্বিদ্ধান্তের বিপরীতে বর্তমানে ঘটে যাওয়া কিছু নন্দীত,নিন্দীত ও অবাঞ্চিত প্রেক্ষাপট ।
মূলত বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারের সূচনা হয় বৃটিশদের দ্বারা, কালের পরিক্রমায় বৃটিশ রাজ্যে এখন সূর্য অস্ত যায়, যা অর্ধ শতাব্দী আগেও যেতনা । সেই সময় বৃটিশদের এই ধরনের ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তরে অস্ত্র ছিল বটে তবে
তাদের ছল ও কুটবুদ্ধি ছিল লক্ষ্য করার মত । তবে সভ্যতার আধুনিকায়নের ফলে এখন আর ওসব কিছুরই প্রয়োজন হয়না, এখন শুধুমাত্র পরমাণু শক্তি যার যতবেশী তার বিশ্বে দাপটও ততবেশী, আর এই প্রতিযোগীতাটা মূলত ফার্ষ্ট ওয়ার্ল্ড এর দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ, কারন এই প্রতিযোগীতা করার ক্ষমতা বা সামর্থ তাদেরই আছে, বাংলাদেশ এর মত উন্নয়নশীল দেশগুলো এসব ব্যাপারে এখনও শত বছর পিছিয়ে আছে, তাই বিশ্ব কর্তাবাবুদের রেশারেশীর প্রভাব সহ্য করাই যেন এসব উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রধান কাজ ! উপায়ও নেই এ ছাড়া । যাইহোক, তাদেরই পরমাণু প্রতিযোগীতার এই কুফল হচ্ছে বর্তমানের এ্ই করোনা ভাইরাস কভিড-১৯, যা চীন থেকে যাত্রা শুরু করে ইউরোপ লন্ডভন্ড করে বর্তমানে বাংলাদেশ সহ গোটা এশিয়াতেই তান্ডব চালাচ্ছে । তবে একথা অনস্বীকার্যে সত্য যে, কভিড-১৯ কিছুটা সময় নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তার পূর্বেই বাংলাদেশ এই ভাইরাসের তান্ডব সম্পর্কে জানার জন্য কিছুটা হলেও সময় পেয়েছে, তাই যথাসময় দেশ লকডাউন এর ফলে শুরুতেই দেশটি যে কতবড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বেঁচে গেছে তা এই অভাগা বাঙ্গালী এত সহজেই বুঝবেনা, বুঝার দরকারও নেই, বাঙ্গালী এমন আরও অনেককিছুই বুঝার ধার ধারেনা, এ জন্যই তারা বীর বাঙ্গালী, তবে এটিই জননেত্রী শেখ হাসিনার করোনা মোকাবেলায় কোন গৃহীত পদক্ষেপের প্রথম সাফল্য । এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ ।
লক ডাউনে বাংলাদেশ, এখনও দুটি সপ্তাহও পার হয়নি, এরই মাঝে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের হাহাকার শুরু হয়ে গেছে, শুধু বাকী আছে মধ্যবিত্তদের হাহাকার যা হয়ত আর সপ্তাহখানেক পরেই শুরু হবে । মধ্যবিত্তদের কথিত লোকলাজ ও বাধ্যগত ধৈর্যশক্তি আছে বলে তাদের হাহাকারটা একটু দেরীতেই দৃশ্যমান হয়, কিন্তু উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের হাহাকার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হয় বরং নিম্নবিত্তদেরও আগে অর্থাৎ সবার আগে উচ্চবিত্তদের হাহাকারই দৃশ্যমান হয়, এই করোনা মহামারিতে বরং তা আরো দ্রুত হয়েছে কারণ উচ্চবিত্তের একটি শ্রেণীকে প্রণোদনা বাজেট দিয়েই কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবেলার যুদ্ধ যাত্রা শুরু করেছেন ! অন্যদিকে নিম্নবিত্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ দুচার দিন পরে শুরু হয়েছে, বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ যাবৎ এ কর্মসূচী ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থাৎ মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য তা এই বাংলার বুকে আবারও প্রমাণিত হয়েছে । কিন্তু কিছু প্রেক্ষাপট ভাবিয়ে তুলেছে- ইতিমধ্যেই কোথাও কোথাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে ত্রাণ বিতরণকালে ত্রাণের প্যাকেট কেড়ে নেয়ার দৃশ্য, এমনকি রাস্তায় ত্রাণের উচ্ছিষ্ট পরে থাকা চাল ডাল অনেক নিম্নবিত্তদের ঝাড়ু দিয়ে নিয়ে যেতেও দেখা যাচ্ছে ! প্রশ্ন হচ্ছে- একটি ঘোষিত মধ্যম আয়ের দেশের আপামর মানুষের কি অন্তত একটি সপ্তাহের খাদ্য সামগ্রী ষ্টকে থাকবেনা ? তাহলে মধ্যম আয়ের দেশের প্রকৃত অর্থ কি সেই প্রশ্ন রেখেই এবার যাচ্ছি মূল আলোচনায় ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
৭১-এ বাংলাদেশ নয় মাস অবরুদ্ধ ছিল, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ ছিল, তখনও মৃত্যুভয় ছিল,খাদ্য সংকটও ছিল, এমনকি দুর্ভিক্ষও ছিল, তবুও বাঙ্গালী নয় মাস যুদ্ধ করে বহুপ্রাণ ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে অবশেষে অর্জন করেছে স্বাধীনতা, জয় করেছে লাল সবুজের পতাকা । এরপর দেশে আরও অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে, সেখানেও বারবার জিতেছে বাঙ্গালী তবে সে-সকল যুদ্ধে একসাথে চলতে কোন সমস্যা ছিলনা, তাই যুদ্ধ জয়ে লড়াই করা গেছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কিন্তু এই করোনা যুদ্ধটি সব যুদ্ধের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন, এখানে আর যাইহোক কাঁধে কাঁধ মিলানো ত দূরের কথা হাতে হাত মিলানোরও সুযোগ নেই । পুরো বিশ্বের প্রেক্ষাপট যেখানে পাল্টে গেছে সেখানে চীরচেনা কিছু বিষয়ও আমাদের পাল্টানো উচিত ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বর্তমানে নি:স্ব্ন্দেহে প্রশংসনীয় কিন্তু চলমান ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীগুলো খুবই ভয়াভহ ও আত্নঘাতীর সামীল, কারণ এভাবে গণজামায়েত করে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীগুলো করোনা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহতার দিকেই নিয়ে যাচ্ছে । ইউরোপের প্রতিটি দেশ এমনকি উদ্ভাবক দেশ চীন সহ তারা প্রায় দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে এই করোনার সাথে যুদ্ধ করছে যা অধ্যবদী বিদ্যমান, সেখানে আমাদের দেশেত মাত্র যাত্রা শুরু, বিষয়টি এমন নয় যে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই এই সমস্যা কেটে যাবে । বিশেষকরে ত্রাণ বিতরণকালে ত্রাণদাতাদের ফটোসেশনগুলো আরও নিন্দনীয় ও কুরুচীপূর্ণ । এমনও দেখা যাচ্ছে, একজনকে মাত্র একটি কলা বিতরনেরও ফটোসেশন হচ্ছে তা আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্টও হচ্ছে, এহেন কার্যক্রমে ত্রাণ গ্রহীতারাও লজ্জিত হচ্ছে । কেউ কেউ টাকার বান্ডিল উন্মুক্ত রাজপথে ছুড়ে মারছে, আর হতদরিদ্রগুলো সেখানে হুমরি খেয়ে পড়ছে । ধরে নিলাম যা হচ্ছে তা ঠিকই হচ্ছে, কারণ ত্রাণগ্রহীতারা না হয় ত্রাণ পেল কিন্তু ত্রাণদাতারা কি পেল ? তারা ফটোসেশনের মাধ্যমে না হয় আপনার দৃষ্টিগোচর হল, তারা পরবর্তীতে হয় নমিনেশনের টিকিট পাবে, নয়ত দলে ভাল পোষ্ট পাবে,নয়ত ব্যাংক থেকে বড় কোন শিল্পলোন পাবে, অবশ্য যদি আপনি তাদের প্রতি সদয় হোন ত । আপনার এই সদয় দৃষ্টি কামনার জন্যই তাদের এত চেষ্টা, এত তৎপরতা, এত ক্যামেরা, এত কান্না, এত হাসি,এত সুখ দু:খের এইসব দিনরাত্রী । তাই এই বিষয়গুলো হাস্যকর হলেও তারা এটা করবেই, এটা তাদের অধিকার কারণ তারা দাতা বলে কথা । থাক- বাদদিলাম তাদের এই সকল লোক দেখানো কার্যের কথা, তবুও তারা এগিয়ে এসেছেন, এটাই অনেক কিছু । আসলে লেনদেনের মাঝে স্বার্থ না থাকলে তা ঠিক জমে উঠেনা । বরং স্বার্থ না থাকলে অনেকসময় ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গিও নেতীবাচক হয়ে যায় ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনি নিজেও স্বার্থের বাহিরে নন, আপনার চাওয়াটা বা স্বার্থটা হয়ত অন্য সবার চাইতে ভিন্ন, আপনার সকল উদারতা ও উদ্যোগ গ্রহণের পিছনেও
অবশ্যই আপনারও চাওয়া আছেে, আপনারও স্বার্থ আছে, আর তা হলো মানুষের ভালবাসা, আশারাখি আপনি কখনই বলবেননা যে, আমি মানুষের ভালবাসা চাইনা । তাই আপনি চান ভালবাসা আর তারা চায় ফটোসেশন, পক্ষান্তরে আপনি কর্তৃক প্রমোশন । তাই থাক-না চাওয়া পাওয়ার দৌড়াত্ব, তাতে দোষের কি !
কিন্তু এখানেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা হল দেশীয় জনগণের চীরচেনা অভিব্যক্তির বহি:প্রকাশ । দেশ উন্নত হবে, শিক্ষিতরা জ্ঞানী গুণী হবে, আর জ্ঞানী গুণীরা বুদ্ধিদীপ্ত হবে, দুরদর্শী হবে আর অন্যদিকে অশিক্ষিত/গরীবরা অন্তত চালাক হবেনা, এটা ত হতে পারেনা । একজন একাধিকবার ত্রাণ নিবে, ঘরে খাবার রেখেও ত্রাণের জন্য লাইনে দাাঁড়িয়ে থাকবে, আবার এই অতিরিক্ত ত্রাণ নিয়ে বাজারে বিক্রি করবে, এসব ক্রয়ের জন্যও তাদের একজন মহাজন থাকবে, এক এলাকা থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করে ঘরে রেখেই আবার তারা যাবে অন্য এলাকায় ত্রাণ আনতে, তাদের ঘরের চার/পাঁচজন সদস্য প্রতিদিন রুটিন করে একেকজন একেক লাইনে দাঁড়াবে, অত:পর দিনশেষে সবাই প্রচুর ত্রাণ নিয়ে ঘরে তুলবে, পরদিন আবারও একই কায়দায় লাইনে দাঁড়াবে, এমনকি এত ত্রাণ পেয়েও বলবে ত্রাণ পাইনি, না খেয়ে আছি,অত:পর এসব দেখবে মিডিয়া, তুলে ধরবে তা নিউজে, আর তখনই নেড়ে উঠবে আভ্যন্তরীন মানবাধিকার, উস্কানি দিবে সরকার বিরুধীরা, বলবে সমালোচনা নয়, বরং সরকারের ত্রুটি ধরিয়ে দিচ্ছি, এই আর কি ! ।
এই বিষয়গুলি কিন্তু প্রায়সমই ত্রাণদাতারা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চৌকস সদস্যরা ঠিকই ধরতে পারেন, তখন ত্রাণ এর বেগ কেড়ে নিলে বা লাঠি চার্জ করলে শুধু দেশীয় নয় বরং তা দেখে তখন জেগে উঠে বিশ্ব মানবাধিকার । আর এখানেই হিমশিম খায় সংশ্লিষ্ট ত্রাণদাতারা । ফলে এসবের জন্য সত্যিকার অর্থে অনেক দুর্বল হতদরিদ্ররা ত্রাণ পায়না কিন্তু তখন আমরা ও আমাদের মত জ্ঞানী গুনী বুদ্ধিদীপ্তরা তাদেরকেও এক কাতারে ফেলে তাড়িয়ে দেই বা বঞ্চিত করি ত্রাণ দেয়া থেকে, তখনই শুরু হয় ধরিত্রীর বুকে সত্যিকার দারীদ্রের আর্তনাথ, যা মূহুর্তে রাজার সিংহাসন কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট । আবার সরকারী ত্রাণ বন্টনের ক্ষেত্রে আজীবন দুর্নীতি হবেই, ভেড়ায় ক্ষেত খাবেই, এটা এই দেশ থেকে কখনই দূর হবেনা । পরিমাণে কমবে হয়ত অথবা সবই হবে একটু ভিন্নভাবে । বর্তমানে এদেশে এমন অনেক ফকির আছে যাদের ঢাকায় ও দেশগ্রামে নিজ বাড়ী গাড়ী সবই আছে, কিন্তু তারা ভিক্ষা করে, আমরা তাদের ভিক্ষা দেই , এমনকি তাদের এসোসিয়েশন পর্যন্তও আছে , তবুও তারা ভিক্ষুক । এইত গেল নিম্নবিত্ত অশিক্ষিতদের কথা আর যারা মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত তারা ত চাইতেই আসবেনা, তাদেরকে আপনি সহযোগীতা করবেন কিভাবে ? ওইসব ভিক্ষুকরাও মধ্যবিত্তদের চেয়ে অধিক ধনাঢ্য, এটাই এই দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট । আর দেশের রাঘব বোয়ালরা যে কত বড় মাপের এক একটি জীমসেনাপতি তা আপনিই সবচেয়ে ভাল জানেন, তাই তাদের কথা আর নাইবা বলি, তাদের বিষয়টা আপনার হাতেই ছেরে দিলাম ।
শেষকথা হচ্ছে - “ যেহেতু পুরো বিশ্বের প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে সেহেতু অন্তত এই করোনা মহামারি ঠেকাতে মাঝখানের সকল মিডিয়া বাদ দিয়ে দেশের প্রতিটি নাগরিককেই আপনি জীবনে একবারের জন্য হলেও মধ্যম আয়ের দেশের মধ্যবিত্ত নাগরিক ভাবুন । আপনি মনে করুন, অন্তত এই মূহুর্তে দেশে কোন উচ্চবিত্ত নেই , কোন নিম্নবিত্তও নেই, ষোল কোটি বাঙ্গালীর সবাই বর্তমানে একযোগে মধ্যবিত্ত,এই মুহুর্তে সবাই আপনার কাছে সমান, কেউ আপনাকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারবেনা কিন্তু সবারই লক ডাউনে আর্থিক সহযোগীতা প্রয়োজন । কোন মিডিয়া নয় সরাসরি দেশের যেকোন বৈধ নাগরিক শুধুমাত্র তার নিজ এনআইডি ব্যবহার করেই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব যেকোন ব্যাংকের যেকোন শাখা থেকে এই দুর্যোগভাতা উত্তোলন করতে পারবে । এক্ষেত্রে যদি ব্যাংক সীমিত করা হয় তাহলে ভীড় লেগে যাবে বরং ব্যাংকগুলোর সাথে আরও কোন প্রতিষ্ঠান যোগ করলে তা আরও গতিশীল হবে, জনসমাগম কম হবে, অতি দ্রুত সবাই টাকা উত্তোলন করতে পারবে । যদি কেউ সময়মত টাকা তুলতে নাও পারে তখন সে অন্যের কাছে টাকা ধার চাইলেও পাবে, কারণ তার হাতে বরাদ্ধ আছে অর্থাৎ তেলা মাথায় তেল দিতে কারও আপত্তি থাকবেনা । “
যেহেতু ব্যাংকগুলো সব লেনদেনহীন অবস্থায় আছে সেহেতু এই দুর্যোগ ভাতা লেনদেনেও ব্যাংকগুলো না হয় সরকারের কাছ থেকে কিছু পরিমাণ প্রফিট নিবে, আমি আগেই বলেছি লেনদেন-এ একটু স্বার্থ থাকা ভাল নয়ত ব্যাংকগুলো এত ধকল কেন নিবে ? বাকী থাকে শুধু লেনদেন এর ডিজিটাল পদ্ধতিটা কি হবে ? কিভাবে একজন নাগরিক তার নিজ এনআইডি দিয়ে একবারের বেশী টাকা তুলতে পারবেনা এবং ব্যাংকগুলোও তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ সরকারের কাছ থেকে কিভাবে ফেরত পাবে ? এই সমস্যা সমাধানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইটি উপদেষ্টা একাই যথেষ্ট । আমি মনে করি এই সফটওয়্যার বানাতে তার সর্বোাচ্চ এক ঘন্টা সময় লাগবে । দরকার নেই, এই দায়িত্ব এই মুহুর্তে অন্য কাওকে বা কোন প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার । নো রিক্স নো গেইন । যখন দেশের প্রতিটি নাগরিক নগদ অর্থের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যাবে তখন লক ডাউন মানতে তাদের আর কোন আপত্তি থাকবেনা, নয়ত টাকার অভাবে একটি শ্রেণী লক ডাউন ভেঙ্গে বাহিরে বের হয়ে দেশের বারটা বাজিয়ে দিবে তখন লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বাজেট করেও কোন লাভ হবেনা । তার প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র, ইটালী , ফ্রান্স সহ আরও অনেক দেশ । মনে রাখতে হবে , এই করোনা মোকাবেলায় কমপক্ষে দুই থেকে তিন মাস যুদ্ধ করতে হবে, বরং আরও বেশী হতে পারে ।
ধরাযাক, আমরা প্রথমে একমাস যুদ্ধ করব । একটি ফ্যামিলিতে কতজন মেম্বার আছে এই হিসাব করে ফ্যামিলি ওয়াইজ বরাদ্ধ দিতে গেলে আবারও সিস্টেমে গন্ডগোল দেখা দিবে, কারণ প্রত্যেক ফ্যামিলির কে কোথায় আছে তার কোন হদিস নেই, তাছাড়া ফ্যামিলি গুণনের কাজ শুরূ করলে এই ভাঙ্গা বছর শেষ হয়ে যাবে, ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যাবে অনেক মৃতরাও জীবিত হয়ে টাকা তুলে নিয়ে যাবে, তাই হিসাবটা সিঙ্গেল ওয়াইজই হতে হবে এবং নিজ নিজ এনআইডি নিয়ে নিজেকেই ব্যাংকে হাজির হতে হবে, আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণসহ শুধুমাত্র ফ্যামিলি মেম্বারদের মধ্যে যেকেউ টাকা উত্তোলন করতে পারবে । একটি সাধারণ হিসাব করলে দেখা যাবে একজন সিঙ্গেল মধ্যবিত্ত নাগরিক, মোটামুটিভাবে ৮-১০ হাজার টাকায় তার একমাসের খাবার, ওষধপত্র সহ প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলতে পারে । আমি আগেই বলেছি একমাসের জন্য দেশের সবাই মধ্যবিত্ত, তাই যদি প্রতি নাগরিককে একমাসের জন্য সর্বোচ্চ দশ হাজার টাকা অথবা সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা করেও জরুরী ভাতা বা দুর্যোগ ভাতা দেয়া হয় তাহলেও সর্বসাধারণের মাঝে মোটামোটি একটু স্বস্তি নেমে আসবে ।
এখানে দেশে ১৬ কোটি জনগনের মধ্যে অনেকেই প্রাপ্ত বয়স্ক নেই বা এখনও এনআইডি পায়নি আবার এমন অনেকেই আছেন এই টাকা তারা উত্তোলন করতে চাইবেননা কারন তাদের প্রচুর টাকা, আবার অনেকেই দেশের বাহিরে আছেন, অনেকেই আবার দেশে ফিরেও এসেছেন । সবমিলিয়ে ধরাযাক দেশের বর্তমান নাগরিক ১৬ কোটিই , তার মানে ১০ হাজার করে একমাসের জন্য প্রত্যেককে থোক বরাদ্ধ দিলে মোট প্রণোদনা বাজেট করতে হবে ১ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা । এরকম লক্ষ হাজার কোটি টাকার মালিক দেশে অনেক জন আছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী । শুধু আপনি এই মর্মে একটু আহ্বান করে দেখুন, মুহুর্তেই আপনার তহবিলে তা চলে আসবে । ব্যক্তি/কর্পোরেট দেশী বিদেশী সকল অনুদান একত্রিত হয়ে আপনার মাধ্যমে দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে তা সরাসরি নগদ অর্থ হিসেবে পৌঁছে যাবে, দরকার নেই কোন বিচ্ছিন্ন ত্রাণ/অনুদান প্রদানের, মানুষের শুধু প্রতিদিন চাল ডাল আর আলুরই দরকার হয়না, আরও অনেক প্রয়োজন আছে যা তারা নগদ টাকায় সহজেই ক্রয় করতে পারবে, অন্যদিকে ঘরে বাজার না থাকলেও যদি পকেটে নগদ টাকা থাকে সেক্ষেত্রে ক্ষুধা খুব একটা বিরক্তিকর হয়না ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনার দৃষ্টিগোচর হওয়ার ইচ্ছা নেই কার বলুন ? অত:পর স্বাভাবিক ত্রাণ তৎপরতাও চলমান থাকবে, যারা দিবে তারা নিজ নিজ এলাকায় হট লাইন চালু করে দিবে, কল পেয়ে ত্রাণদাতারা বাহক মারফত খাদ্য সামগ্রী তাদের বাড়ী বাড়ী পৌঁছে দিবে । কোন গণজামায়েত হবেনা। এবাবে সম্পূর্ণ লক ডাউন হয়ে যাক দেশ একমাসের জন্য, তারপরও এই দেশে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবে, মারাও যাবে, কিন্তু মহামারি হবেনা, আর একবার মহামরি হয়ে গেলে ষোল লক্ষ কোটি টাকা বাজেট করেও কোন লাভ হবেনা । সাজানো দেশ পিছিয়ে যাবে কমপক্ষে একশত বছর, অতল গহীনে হারিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ কর্মসূচী ।
বি:দ্র: - এরপরও যদি লক ডাউন ভেঙ্গে কোন নাগরিক বাহিরে চলে আসে তাহলে তা মান্যবর সেনাপ্রধান ও মাননীয় আইজিপি সাহেবের ব্যাপার, তারা যেন তা স্বাধীনভাবে দেখভাল করতে পারেন, আপনি শুধু এই ব্যাপারে তাদেরকে স্বাধীন করে দিবেন । দ্যান উইল বি ষ্টার্ষ্ট দেয়্যার ষ্টরি ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী , আপনাকে ধন্যবাদ ।
jsongjugnews@gmail.com
fb.com- @jshongjog
পাঠকের মন্তব্য