বিশেষ সাক্ষাৎকার । স্বাস্থ্য-প্রেক্ষাপট কভিট ১৯ । ২০-০৩-২০২০
জনাব জুয়েল আহমেদ খান, একজন সফল ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ । ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমেই মূলত তিনি রাজনীতি প্রাঙ্গনে প্রবেশ করেন । বর্তমানে তিনি নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি “বাংলাদেশ তথ্য ও সংস্কৃতি মৈত্রী পরিষদের” কার্যকরী উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন । বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া ও জননেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহধন্য এই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাম্প্রতিক করোনা মোকাবেলায় করনীয় কিছু বিষয় নিয়ে টেলি-কন্ফারেন্সের মাধ্যমে গত ২০-০৩-২০২০ তারিখে জনসংযোগ.কম-এ বিশেষ সাক্ষাৎকার প্রদান করেছেন । তিনি করোনা মোকাবেলায় বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং একইসাথে দেশীয় মূলধারার প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে করোনা বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বরং আতঙ্কিত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন । তিনি এ বিষয়ে জনসংযোগ.কম কর্তৃক কিছু প্রশ্নের ব্যতিক্রম উত্তর প্রদান করেছেন । জনসংযোগ.কম পাঠকদের জন্য তা নিম্নে তুলে ধরা হল – ( সাক্ষাৎকার গ্রহণে - এম আনিছুর রহমান, সম্পাদক- জনসংযোগ.কম )
(১) আনিছুর রহমান : যেখানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে সকল বিজ্ঞ ডাক্তারগণও করোনা বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, সেখানে আপনি কেন আতঙ্কিত হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ?
জুয়েল আহমেদ : তারা প্রত্যেকেই সঠিক পরামর্শই দিচ্ছেন, কিন্তু দেশীয় প্রেক্ষাপট-এ এই পরামর্শটি যথার্থ নয় এমনকি খোঁদ ভারতেও নয় । আপনারা জেনে থাকবেন যে, ভারতের রামদেবের মত একজন জ্ঞানীগুনী ব্যক্তিও করোনার প্রতিষেধক হিসেবে অতিরিক্ত গোমুত্র খেয়ে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন । বাংলাদেশের খুব বেশী হলে ১০-১৫% মানুষ সরকারী নির্দেশনা মেনে চলছেন, বাকী সবাই নির্দেশ মানা ত দূরে থাক বরং আরও উৎসুক হয়ে লক ডাউন হওয়া বিভিন্ন বাড়ী/প্রতিষ্ঠান দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন, কারও মৃত্যু ভয় নেই, এই প্রাণঘাতী ভাইরাস ধীরে ধীরে যে কত ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করছে এ বিষয়ে বেশীরভাগ বাঙ্গালীর কোন ভ্রক্ষেপই নেই, বরং সকল বাহিনীর সাথে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও মাঠে নেমেছে । যখন সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে তখন ঠিকই অনেকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে চলে এসেছে, কিন্তু আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শের দরুণ একটি বিশাল জনগোষ্ঠী আতঙ্কিত না হয়ে বরং ইদ আনন্দে মেতে উঠেছে, বেড়ানোর ধুম পড়ে গেছে, বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাপনাতেও, আবার দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ যারা আছেন তাদের বেশীরভাগকেই মিডিয়াতে ব্রিফকালীন সময় দেখা যাচ্ছে- দূরত্ব বজায় রাখা ত দূরের কথা বরং তারা নিজেরাই ভীড় জমিয়ে অপরকে দূরত্ব বজায় রাখতে বলছে । এমন আরও অনেক বিষয় আছে যা বীর বাঙ্গালীর অভ্যাসগত বিষয়, যা বলে শেষ করা যাবেনা । তাই অন্তত এই বীর বাঙ্গালীর জাতীয় কল্যাণার্থে এখনই করোনাকে আতঙ্কিত বিষয় হিসেবে ঘোষনা করে অন্তত একমাসের জন্য সারা বাংলায় ইমার্জেন্সি জারি করে দেয়া উচিত । সরকার শুধুমাত্র রাজস্ব ভর্তুকির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং অন্তত হতদরিদ্রদের নিশ্চিত জীবিকার তরে একমাসের সামগ্রিক খরচ প্রদানের জন্য জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে । আশা রাখি এতে করোনা এই দেশে আর যাইহোক মহামারি হবেনা ।
(২) আনিছুর রহমান : ভর্তুকির বিষয়টি কি শুধুই সরকারের ? দেশের বিত্তবান বা ভিবিন্ন শিল্পপতিদের এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ নয়কি ? তারা এখনও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ কেন ? এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি ?
জুয়েল আহমেদ : অবশ্যই এই দায় শুধু সরকারের একার নয়, তবে এ ব্যাপারে সরকার দায় নিতে বাধ্য । সরকার প্রধান ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে এক হাজার কোটি টাকা বাজেট ঘোষনাও দিয়েছেন । আর বেসরকারী উদ্যোগের ব্যাপারেও আমি অবশ্যই আশাবাদী, কারন দেশের প্রতিটি ক্রান্তিকালেই তাদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে, সুতরাং এই মহাকান্তিকালেও তারা এগিয়ে আসবেন এটাই স্বাভাবিক, তবে আমার মনে হয় এখনই তাদের এগিয়ে আসার উপযুক্ত সময় । যদি ছোট বড় ও মাঝারি মানের দেশের প্রত্যেক উদ্যোক্তা তার নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এক মাসের বেতন ফ্রি প্রদান করেন এবং প্রত্যেক হাউজঅনার তার অধিনস্থ প্রত্যেক ভাড়াটিয়ার এক মাসের ভাড়া মওকুফ করে দেন, তাহলে তাদের প্রত্যেকের এক মাসের হোম কোয়ারেন্টাইন সহজেই নিশ্চিত হয়ে যাবে এবং অন্যদিকে হতদরিদ্র ও সাধারন জনগণের জন্য সরকার ত আছেই । তাছাড়া বিদেশী অনুদানও আসবে এটাও নিশ্চিত কিন্তু এ সকল অনুদান ডিষ্ট্রিভিউশনের ব্যবস্থাপনার কার্যপ্রণালী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি ।
(৩) আনিছুর রহমান : দেশে এত দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ থাকতে এসকল দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকেই নিতে হবে কেন ?
জুয়েল আহমেদ : দেখুন এ বিষয়ে বলতে গেলে এখন অনেককিছুই বলতে হবে, এখন এই সকল বিষয়ে আলোচনা করার সময় নয় । ঠিক তেমনি সরকার বিরুধীদেরও এখন সরকারের সমালোচনা স্থগিত রেখে বরং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই মহাক্রান্তিকাল পাড়ি দেয়ার সময় । তবে একটি কথা না বললেই নয় যে, আমাদের এই দেশের এমন অনেক কিছুই আছে যা বিশ্ব দরবারে গর্ব করার মত, তবে এর মাঝে তিনটি বিষয় বাঙ্গালীর অহঙ্কার হিসেবে বর্তমানে দেশ ও বিশ্ব দরবারে প্রতীয়মান- ১. বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার ২. বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ৩. বাংলাদেশ ক্রিকেট । সুতরাং দেশের যেকোন ক্রান্তিকালে কোনপ্রকার এদিক সেদিক চিন্তাভাবনা না করে সরাসরি প্রথমেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগীতা নেয়া উচিত । যদি কোয়ারেন্টাইন এর ব্যবস্থাপনা শুরুতেই সেনাবাহিনীর হাতে থাকত তাহলে অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে থাকত সবকিছু । এই একটি পোশাকের সামনেই হুজুগে বাঙ্গালী একমাত্র ধরাশায়ী, তাই যেখানে মটিভেশনে কাজ হবেনা সেখানে ভীতি প্রদর্শন বাধ্যতামূলক, উদ্যেশ্য যদি সৎ হয় তাহলে ভীতি প্রদর্শন দোষের কিছু নয়, নিয়ন্ত্রনটাই মুখ্য বিষয়, আর এই ক্ষেত্রে অন্তত হুজুগে বাঙ্গালীর জন্য সেনাবাহিনীর কোন বিকল্প নেই ।
(৪) আনিছুর রহমান : বর্তমানে সবচেয়ে লক্ষনীয় বিষয়টি হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ষ্টক এর হিড়িক । এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি ?
জুয়েল আহমেদ : বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর ও হীনমন্যতার বহি:প্রকাশ বলেই আমি মনে করি । উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তদেরই এই কাজটি বেশী করতে দেখা যাচ্ছে, আর নিম্নবিত্তদের এ কাজ করার কোন সুযোগ নেই কারণ তারা দিনে আনে দিনে খায় । তাই এই প্রভাবটি কিন্তু সবশেষে যেয়ে পড়বে নিম্নবিত্তদের মাঝে । তারা শুধু করোনা ভিতিতে নয় বরং খেয়ে বেঁচে থাকার তাগিদেই ঘর থেকে বেড়িয়ে যাবেই, তখন সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়াটা খুব কঠিন কাজ হবে, হয়ত এখানে মানবতার তরে সেনাবাহিনীও ব্যার্থ হবে । মনে খুব কষ্ট নিয়েই বলতে হচ্ছে- বাজার ষ্টক এর হিড়িক ও ব্যবসায়ীদের খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা দেখে মনে হচ্ছে, কারও মনে হয় মৃত্যু হবেনা, খাবারগুলো আদৌ খেয়ে যেতে পারবে কিনা এ নিয়ে কারও কোন চিন্তা নেই । বরং এই একটি মাসে জীবনে অন্তত একবার কঠিনরুপে সিয়াম পালন করা যেতে পারেনা ? আমরা ত প্রতিবছরেই একবার একমাস রমজানে সিয়াম পালন করে জীবনভর অভ্যস্ত, তাহলে এ নিয়ে কেন এত চিন্তা ? বরং একটি মাস কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ডে শুধু কোন রকমে খেয়েদেয়ে রোজা রেখে, ঘরে বসে ইবাদত বন্দেগীতে মেতে থাকলে আল্লাহ রাব্বুল আলআমিন নিজেই আমাদের হেফাজত করবেন, ইনশাআল্লাহ । বিষয়টিকে এভাবে চিন্তা করলেই কিন্তু বাজার ষ্টক এর মত আজেবাজে বিষয় আর মাথায় আসবেনা ।ধর্মীয় দূষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করে ধরেই নিননা যে, করোনা আল্লাহ পাকের দূত হিসেবে সারা বিশ্বে পদার্পণ করেছে, সারা বিশ্বেই ব্যাভিচার, অন্যায়, অত্যাচার এর সীমারেখা ছাড়িয়েছে, মানবজাতী ভুলেই গেছে যে, মহান সৃষ্টিকর্তা বলে কেউ আছেন, বিশেষ করে নাস্তিকতায় ছেয়ে গেছে গোটা বিশ্ব । এমন সময় সারা বিশ্বকে আল্লাহপাক তার অস্তিত্বের জানান দিচ্ছেন মাত্র । অতএব, আমাদের সাবধান হয়ে যাওয়া উচিত ও সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করা উচিত । যদি আপনি নরমাল ইস্যু হিসাব করেন তাহলে দেখবেন, সারা বিশ্বে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ নরমালি মারা যাচ্ছে, যে হিসাবগুলো আমরা এভাবে সামনে তুলে আনিনা কখনও কারন সেটা নরমাল ইস্যু, সেই তুলনায় প্রতিদিন বিশ্বে কি খুব বেশী মানুষ মারা যাচ্ছে এই করোনা ভাইরাসে ? অবশ্যই না ? “ বরং কোয়ারেন্টাইনকে নেতিবাচক হিসেবে না দেখে জীবনে একবার হলেও কিছুদিনের জন্য ঘরবন্দী হও এবং এক আল্লাহ কে উপলব্ধি কর, বাজার ষ্টক নয়, অতি মুনাফায় ব্যবসা নয়, ক্ষমতার দাপটে অন্ধ হওয়া নয় বরং সিয়ামের মাধ্যমে আল্লাহপাকের নিকট ক্ষমা ভিক্ষা কর, অত:পর আবার বাহিরে বের হও, নতুন করে নিজেকে জান ও সৎভাবে পথ চল । আমার মনে হয় এই ভাবনাটিই করোনার একামাত্র ভ্যাকসিন ” ।
(৫) আনিছুর রহমান : আসলে আপনার এই বক্তব্যের পরে আর কোন প্রশ্ন বা কথা থাকেনা । আলোচনার ইতি টানতে হচ্ছে । সেইসাথে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই জন্য যে, আপনার দেয়া সাক্ষাৎকারটিই জনসংযোগ সাময়িকীর প্রথম সাক্ষাৎকার, তাই আপনি জনসংযোগ পরিবারের জন্য আজীবন স্বরণীয়ও বটে । আপনাকে ধন্যবাদ ।
জুয়েল আহমেদ : আজীবন স্বরনীয় হতে পেরে আমিও নিজেকে ধন্য মনে করছি । আমি জনসংযোগ সাময়িকীর দীর্ঘ সফলতা কামনা করছি । জনসংযোগকেও ধন্যবাদ ।
Fb- prnews1.com.bd
Email- desk@prnews1.com / সা:স:বি:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য