সংযোগ কলাম / জনসংযোগ .কম / ২১-০৭-২০২০
। এম আনিছুর রহমান ।
এই স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনার পূর্বে বলছি বাংলার জনগণের কথা , বলছি বঙ্গবন্ধুর কথা । যতদিন বঙ্গবন্ধু এই বাংলার বুকে বেঁচে ছিলেন ততদিন জনগণ বলতে বাংলার তৎকালীন সাতকোটি বাঙ্গালীকেই একযোগে বুঝানো হত অর্থাৎ তখন এদেশের জনগণ মানেই ছিল আওয়ামী জনগণ তথা বঙ্গবন্ধুর জনগণ । তাই তখনও এক কথায় “জনগণ” বলে যেকোন বক্তা তার বক্তব্য দিতে পারতেন । কালের পরিক্রমায় বহু বছর গড়িয়ে আরমাত্র কিছুদিন পরেই দেশে পালিত হবে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী অর্থাৎ ইতিমধ্যেই দেশমাতৃকার পেরিয়ে গেছে প্রায় পঞ্চাশ বছর । স্বাধীনতা পরবর্তী এই অর্ধশত বছরে পরিবর্তন হয়েছে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ জনমণের চিন্তাভাবনা ও চেতনারও । পঞ্চাশ বছর পূর্বের বাংলাদেশ আর বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে পার্থক্য আকাশ পাতাল , আর এর সিংহভাগ উন্নয়নের একমাত্র দাবীদ্বার দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের, একথা অনস্বীকার্যে সত্য । এই মহাসত্য ইতিহাসকে পরিবর্তন করে মহাঅসত্য এক নগ্ন ইতিহাসের জন্ম দেয়ার তৎপরতা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার পূর্বেই গোলাম আযমের হাত ধরে, পরবর্তীতে খন্দকার মুশতাক, খুনী জিয়াউর রহমান ও শ্বৈরশাসকের পর্যায়ক্রমিক নেতৃত্বে এই নগ্ন তৎপরতা আরও প্রসারিত হয় এবং তারা অনেকাংশে সফলও হয় । তাদের এই নগ্ন সফলতা কখনও সম্ভব হতনা যদি জনগণের একটি বৃহৎ অংশ তাদেরকে সাপোর্ট না দিত, অর্থাৎ এরাই সেইসব সুযোগ সন্ধানী লোভী নেতৃত্ব, যারা মুজিব নীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী জনগণের মাঝে সফলতার সহিত ফাটল ধরিয়ে বর্তমানের আঠার কোটি জনগণের একটি বৃহৎ অংশকে অবলীলায় হাত করে নিয়েছে আর তারাই বর্তমানে বিশ দলীয় জোট নামে পরিচিত এবং তাদের প্রধান কান্ডরী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল । তাই সেই একক জনগণ বর্তমানে চার প্রকার -(১) আওয়ামী জনগণ (২) জাতীয়তাবাদী জনগণ (৩) সাধারন জনগণ ও (৪) লোভী জনগণ । তাই নীতি, নিষ্ঠা ও উদারতার পাশাপাশি ভুল শুধু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দই করেনি, ভুল জনগণও করেছে ; বিক্রি শুধু কতিপয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দই হয়নি, বিক্রি জনগণের এক বিশাল অংশও হয়েছে আর এসকল কারনে ভুলের মাশুল শুধু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেরই নয়, বরং ভুল স্বিদ্ধান্ত নেয়া জনগণকেও দিতে হচ্ছে । অতএব ভুল স্বিদ্ধান্ত নেওয়া সেইসব জাতীয়তাবাদী ও লোভী জনগণের বর্তমান নির্মম ভাগ্যের জন্য দায়ী তারা নিজেরাই এবং তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করার দ্বায় একযোগে উপরোক্ত চার সুযোগ সন্ধানী নেতৃবৃন্দের, কখনই বঙ্গবন্ধু বা শেখ হাসিনার নয় । মনে রাখতে হবে এদেশে শুধু জাতীয় চার নেতাই নন বরং অজাতীয় চার নেতাও ছিলেন আর এর পাশাপাশি বর্তমানে দেশে অবস্থান করছে বিভাজিত চার প্রকারের জনগণও । রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা তাদের ভুলের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য কারন তারা জনগণের প্রতিনিধি মাত্র, কিন্তু জনগণ যদি ভুল করে তাহলে তাদের বিচার করার ক্ষমতা বিধাতা ব্যাতিত কোন রাজনৈতিক নেতার নেই এমনকি সরকারেরও না, কারন জনগণই রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস আর এটিই হচ্ছে তাদের একমাত্র দৈন্যতা । তাই এই দৈন্যতা ও জনগণের বিভাজনের বর্তমান সত্যতা একাগ্রচীত্তে মেনে নিয়ে সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিগণ যখন তাদের বক্তব্যে “জনগণের” কথা উল্লেখ করবেন তখন যেন তারা স্পষ্ট করে বলেন যে তারা আসলে বিভাজিত জনগণের কোন অংশের কথা বলছেন ; তাদের প্রতি এই আহ্বান ব্যাক্ত করে এবার যাচ্ছি মূল আলোচনায় ।
৭৫‘ এর ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মম হত্যাকান্ডের পর অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার একমাত্র ছোট বোন শেখ রেহানাকে দেশ ও বিদেশে সইতে হয়েছে বহু যন্ত্রনা, অবজ্ঞা আর অবহেলা যা কখনই তাদের প্রাপ্য ছিলনা । মৃত্যুকে পরোয়া না করে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি শক্ত হাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন এবং তিল তিল করে দলকে আবার পূণর্গঠীত করে বর্তমানে চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে অভাগা এই দেশকে বিশ্ব দরবারে সৌভাগ্যে পরিণত করেন । এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে নিজেকেই নিজের সাথে প্রতিক্ষণে কি-নিদারুণ যুদ্ধ করতে হয়েছে তা শুধু তিনি নিজেই জানেন আর জানেন বিধাতা । অথচ দল যখন বর্তমানে সফলতার চূঁড়ায় অবস্থান করছে তখন হঠাৎ করেই দলে বেড়ে গেছে হাইব্রীডদের অনুপ্রবেশ আর সিংহভাগ ত্যাগীদের ললাটে জুটেছে অবজ্ঞা আর অবহেলা । দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে একেবারে তৃণমুল পর্যন্ত হাইব্রীডদের পদচারণায় যেন উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে প্রতিটি আওয়ামী কার্যালয় । দলের যেকোন দূর্যোগকালে এমনকি ওয়ানইলেভেনের সময়ও যাদের ছায়া পর্যন্ত দেখা যায়নি দলে বা রাজপথে, আবার তাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা কোন দলীয় সভাস্থলে সিটিং হওয়া-ত দূরের কথা বরং চা-বিস্কুট টানারও সুযোগ পেতনা তাদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে বনে গেছেন কথিত বনেদী আওয়ামী নেতা আর সেইসব পোড় খাওয়া ত্যাগী নেতারা হয়ে গেছেন তাদের কর্মী বা হাস্যরসের পাত্র । দেশরত্ন সম্পর্কে ত্যাগীদের একটাই ভাষ্য আর তা হচ্ছে “শেখ হাসিনার স্বিদ্ধান্ত- চূড়ান্ত চূড়ান্ত” । তাই তারা মনে করেন শেখ হাসিনার দ্বারা যা হচ্ছে তা অবশ্যই দলের জন্য ইতিবাচকই হচ্ছে, হয়ত সরকার ও দলকে ব্যালেন্স করতে যেয়ে তাকে অনেক ছাড়ও দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত, তাই এসব ব্যাপারকে তারা ভালবেসে দলের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দিয়ে জননেত্রীর প্রতি আস্থায় অবিচল থাকছেন । কিন্তু একের পর এক এসব হাইব্রীডদের অনৈতিক ও বিতার্কিক কর্মকান্ড সত্যিই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে, বিশেষ করে সর্বশেষ এই করোনা মহাদুর্যোগকালেও করোনা ব্যবসায়ী রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যন সাহেদ করিমের দলীয় পদবী ব্যবহার সহ তার সার্বিক কর্মকান্ড আমাদের এবার সত্যিই হতাশ করে দিয়েছে । খোঁদ প্রধানমন্ত্রী সহ দলীয় হাইকমান্ড ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এমন কোন নেতৃবৃন্দ নেই যার সাথে তার নিয়মিত উঠাবসা নেই, শুধু তাই নয় এসব ব্যক্তিদের সাথে তার বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবিও বর্তমানে মিডিয়াতে প্রকাশিত । র্যাব মেজিষ্ট্রেট মি. সারোয়ার আলমের দূর্ধর্ষ তৎপরতায় এবার প্রকাশ্যে এই আওয়ামী হাইব্রীড নেতা । “ এসব দেখতে দেখতে মাঝে মাঝে মনে হয় দেশরত্নকে একটু ভুল বুঝি, আবার পরক্ষণেই মনে হয় দোষ-ত আমাদেরই, আমরাই তাকে ভুলভাল বুঝিয়ে দলে হাইব্রীড আমদানি করি ও ত্যাগীদের রপ্তানি করি আবার তা ফ্রন্টে এলে কিছু নাবুঝে তাকেই দোষারুপ করি । এহেন নিকৃষ্ট কর্মকান্ডের জন্য আমাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ’’ ।
* আমরা তিল তিল করে নেত্রীর সম্মূখে অনেক ভুলের পাহাড় গড়েছি । আমরা বিশাল অঙ্কের টাকা লেনদেন করে নেত্রীর সামনে এসব হাইব্রীডদের নিয়ে পরিচয় করিয়ে দেই আর তুলে ধরি জনপ্রিয় আওয়ামীলীগার হিসেবে, হাতে কলমে দেখিয়ে প্রমাণও করে দেই যে তিনি জনমনে বেশ জনপ্রিয় । মূলত: বিভাজিত সেই লোভী জনগণও টাকা খেয়ে তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ করে দেয় । অন্যদিকে ত্যাগী নেতারা টাকার অভাবে টাকার গড়মের কাছে পরাজিত হয়ে জনশূণ্যতায় ভূগে আর পরিশেষে তারা সত্যিকার অর্থেই জনপ্রিয়হীন হিসেবে প্রমাণিত হয় । আমরা টাকার নেশায় অন্ধ হয়ে ত্যাগী ও পরিক্ষীত নেতাদের জনপ্রধিনিধিত্বের নমিনেশন থেকে বঞ্চিত করে হাইব্রীডদের বিভিন্ন নির্বাচনে নমিনেশন দিয়ে নেত্রীর কাছে নিজেদের দায়িত্বশীলতার প্রমাণ দেই । পরবর্তীতে আবার তারাই নির্বাচিত হয়ে হারানো টাকা উঠানো সহ নিয়ন্ত্রণহীন প্রফিটের নেশায় বেপরোয়া হয়ে যায়, অত:পর একসময় চলে আসে ফ্রন্টে আর তখন হয় দেশরত্নের মানহানি । আমরা নির্বাচনের সময় ঘরে ঘরে যেয়ে ভোট চাইতে পারি আবার মহামারী/দুর্যোগ এলে বলি ঘরে ঘরে যাওয়া সম্ভব নয়, এত সময় কোথায় ? । আমরাই ভাইতন্ত্রবাদের মতাদর্শে গ্রুপিং করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে যাই আবার মাঝে মাঝে বিদ্রোহী জোয়ারে জয়ী হয়ে নেত্রীকে দেখিয়েও দেই আমরা বলবীর চীর উন্নত মমশির । আমরা নেত্রীর সামনে তার প্রসংশায় পঞ্চমুখ থাকি, এমনভাবে তৈলমর্দন করতে থাকি যে পারলে তার পরিহিত নীল শাড়ীকে লাল শাড়ী বানিয়ে দেই আর ভাবতে থাকি তিনি কিছুই বুঝেননি, শুধু ফুলেই যাচ্ছেন ; আবার তার সামনে থেকে বেড়িয়ে এসেই টেবিল চাপড়িয়ে শুরু করি তার সমালোচনা তখন আমাদের ভাবটা এমন হয় যেন আমরাই প্রধানমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রী আমাদের মত কেউ । আমরা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে রাজনীতিকেই রাজনীতি শিখিয়ে সেই ছাত্রলীগকে এই ছাত্রলীগ বানাই, এমনকি আমরা নেত্রীর কোন বৈধ অনুমোদন না নিয়েই একের পর এক আওয়ামী ভুঁইফোর সংগঠন করে দলের কথিত সম্মৃদ্ধি কামনা করি । আমরা অতি উৎসাহী হয়ে নেত্রীর প্রশংসা করতে যেয়ে তাকে নবী রাসুলগণের সাথেও তুলনা করে ফেলি আবার এর জন্য পরে ক্ষমাও চাই আবার অতিজ্ঞানী হয়ে মহানবী ও হজ্জ নিয়েও বিদেশে বসে বিরুপ মন্তব্য করে মুসলিম জনতার আন্দোলনের চাপে পড়ে মন্ত্রীত্ব ও নেতৃত্ব সব হারিয়ে সন্ন্যাসী হয়ে যাই । আমরা এতটাই অতি উৎসাহী যে বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষের লগো প্রিন্ট দিয়ে বাজারের ব্যাগও বানাই । যেখানে মন্ত্রী হওয়া-ত দুরের কথা বরং ইহ জনমে কোনদিন এমপি হওয়ার মতও জনমণে মাঠ গোছানো নেই সেখানে আমরা শুধুমাত্র নেত্রীর সুদৃষ্টির জন্য তা হয়ে বা মেয়াদ শেষে এমন ভাব দেখাই যেন তা আমাদেরই যোগ্যতা ছিল, নেত্রী আবার কে ? ভাবটা এমন হয় যেন আমরা ছাড়া আওয়ামীলীগই অচল অত:পর আমরা ভবের বাতাসে নড়ে আবারও করি দলবদল কারন আমরা আস্থায় কথিত অবিচল । রাজনৈতিক আলোচনার টেবিলে নেতার কানের কাছে গিয়ে বলি - ভাই আপনার চা-এ চিনি কয় কাপ দেব ? নেতা বলেন দে দুই চামচ । ফিটিং করে রাখা নিজস্ব পাইটুপাই তুলে ফেলে সেই ছবি । আমরা এতই দরিদ্র যে, সেই ছবি সঙ্গে সঙ্গে আপলোড করে দিয়ে ক্যাপসন দেই - “ কমিটি নিয়ে নেতার সাথে একান্ত আলোচনায় আমি “ এভাবেই হাইব্রীড লিডারদের পাশাপাশি হালের নতুন চমক ফেইবুক লিডার । কোন ব্যাপারনা চিনি দিয়ে চা-এর সেই ক্যাপসনের জন্য এসেও যায় কিছু হাইব্রীড পদবী প্রার্থীতার তদবীর, হয়েও যায় বেশ ইনকাম । আমরা একইভাবে টাকা খেয়ে দলীয় কমিটিতেও হাইব্রীড অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে থাকি । আমরাই ত্যাগীদের বঞ্চিত করে দলে ও সরকারে ব্যবসায়ী ও অবসর প্রাপ্তদের সম্মানের সহিত ছাড় দিয়ে যাচ্ছি । আমরা ছিন্নমূল থেকে আওয়ামী লীগকে ভাঙ্গিয়ে নিজের অবস্থান তৈরি করে অকৃতজ্ঞের মত মাইনাস-টু ফর্মুলা আঁকি । আমরাই গঠনতন্ত্রের বাহিরে গিয়ে জননেত্রীর অগোচরে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে শতশত উপকমিটির সদস্যের টিকিট দেই । আমরাই আবার দলীয় ও সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মিত প্রেসারে রাখি ও তাদেরকে অসৎ পথে ধাবিত হতে প্ররোচনা দিয়ে দ্বিমুখী আচরন প্রণয়নে বাধ্য করি ।
* আমরা দলের দু:সময়ে, আন্দোলনে, মিটিংয়ে, মিছিলে ত্যাগী ও পরীক্ষীত নেতাকর্মীদের সরাসরি ব্যবহার করে তাদেরকে বিপদে ও দীর্ঘ মামলা জটে ফেলে দেই অত:পর ক্ষমতালাভের পর সুসময়ে তাদেরকে রাখি অন্ধকারে বা ওয়েটিং লিষ্টে । তারা কোন তদবীর বা কর্মসংস্থানের জন্য এলে ফ্রি উপদেশ দিয়ে স্বান্তনার বাণী দিয়ে পাঠিয়ে দেই নিজ গৃহে । তাদের সাথে আমরা এমন ভাব দেখাই যেন আমরা নেতা নই বরং আমরা প্রত্যেকেই কাবা শরীফের ইমাম । আবার তারাই যদি নগদ টাকা সহ কোন তদবীর নিয়ে আসে তখন তাদের মাথায় তুলে নাচি অত:পর নেত্রীকে বুঝাই তিনি দলের ত্যাগী নেতা বা কর্মী, তাকে তুলে ধরি অন্য উচ্চতায়, মূলত তখন আমরা নয় বরং সেই টাকায় কথা বলে । আর এভাবেই চাকরী, ট্রান্সফার, টেন্ডার বা বিভিন্ন প্রজেক্ট পাশ হয়ে যায় । এভাবেই ত্যাগীদের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন হাইব্রীডের জন্য সাজানো তদবীর পাশ হয়ে যায় অথচ ত্যাগী বোকারা জানেইনা আমরা কিভাবে নেত্রীর কাছে তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছি । আমরা এভাবেই নেত্রীকে নিশ্চিত রাখি যে, ত্যাগীরা ভাল আছে অথচ বিষয়গুলো যখন নেত্রীর
সু-নজরে আসে তখন তার আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা হয় । আমরা নেতাকর্মী ভায়েরা এলে প্রচুর ব্যস্ততা দেখাই আবার হাইব্রীড নেত্রী আপুরা এলে পারলে ডাবল এসি চালিয়ে দেই আর সময় থাকে অফুরন্ত । আমরা বিশাল অঙ্কের টাকা কন্টাক্ট করে কোন হাইব্রীডকে গণভবনে নিয়ে যাই, পরিচয় করিয়ে দেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে পারলে তার সাথে একটি ছবিও তুলে দেই, এবার বেড়িয়ে এসে বাকি টাকা চেয়ে না পেয়ে উন্মুক্ত প্রকান্ড বাধিয়ে দেই অত:পর ধরাও খাই । আমরা সৎ ও নেত্রীর আদর্শে লালিত হয়েও অনেক সময় ভুলেই যাই মন্ত্রী হিসেবে কখন কোথায় কি বলা উচিৎ, না বুঝেই বলে ফেলি বেফাঁস কিছু আবার এর জন্য পরবর্তীতে ক্ষমাও চাই । আমরা এতটাই দু:সাহসী যে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বুঝাই সবই ঠিক আছে, পৃথিবীর সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আমাদের আছে অথচ করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসার অভাবে রাস্তায় রাস্তায় মানুষ মরে চিকিৎসার অভাবে এমনকি সাধারণ চিকিৎসাও বন্ধের পথে । আমরা সোজা পথে না গিয়ে বাঁকা পথে যাই বড় অঙ্কের কমিশন খাওয়ার লোভে, জনগণ মরলে মরুক তাতে আমাদের কি ? আমরা লোভের মোহে এতটাই বর্বর হয়ে গেছি যে, কোন পরীক্ষা নীরীক্ষা না করেই ভুয়া করোনার সার্টিফিকেট দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামাই ও বহি:বিশ্বে নতুন করে দেশকে বিস্ময়ের দুর্নীতির দেশ বানাই । আমরা এতবড় চাল চোর যে কোন সিষ্টেমই আমাদের থামাতে পারেনি । শেষ পর্যন্ত এই দায়িত্ব জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীদের হাত থেকে সরিয়ে প্রশাসনের হাতেই দিতে হয়েছে । আমরা এতই লোভী ও চালাক যে, ছিন্নমুলের সরাসরি টাকা পেতে একই বিকাশ নাম্বার একশতবার দিয়ে থাকি । আমরা মানসিকভাবে এতটাই হতদরিদ্র যে স্বচ্ছল হওয়া স্বত্বেও তৃণমুল ক্ষমতার জোরে নিজেকে স্বচ্ছল থেকে ছিন্নমুল বানিয়ে নিজের ও নিজ পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে কার্ড করে ১০ টাকা কেজির চাল উত্তোলন করে অন্য দোকানে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হই । শেষ পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আক্ষেপ করে বলেই ফেললেন যে, আমি যদি দরিদ্রদের কাফনের কাপড় কেনার দায়িত্ব তাদের দেই তাহলেও আমার নেতাকর্মীদের একটি অংশ তা চুরি করে কাফনের কাপড় দিয়ে পাঞ্জাবী বানিয়ে পড়বে । হৃদয় থেকে কতটুকু রক্তক্ষরণ হলে দেশরত্নের মুখ দিয়ে এমন কথা বেরুতে পারে তা বিবেচনা করার বোধ ক্ষমতাও আমাদের নেই ।
থাক এ পর্যন্তই । আমরা যদি আমাদের সম্পর্কে এভাবে বলতে থাকি তাহলে এই বলা শেষ হবেনা কখনও । বলার মত আরও বহুকিছু থাকলেও আশাকরি আর বলার দরকার নেই । কথায় কথায় দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দোষারুপ করাটা আমাদের একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে । আশারাখি নিজেদের সম্পর্কে এইটুকু জানার পরে আমরা আর কখনও এই দু:সাহস দেখাবনা । তারপরও যদি কেউ এরকম দু:সাহস দেখায় তাহলেও ভাবনার কিছু নেই কারন দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা নীলকন্ঠিও বটে । তবে রাজনীতির এই সাপলুডু খেলা বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন - “যারা একসময় ভালবেসে ফুলের মালা দিবে আবার তারাই আরেক সময় জুতার মালা দিবে, যারা একসময় নিন্দা করবে আবার তারাই আরেক সময় প্রসংশা করবে । রাজনীতি করতে গেলে এসব চিন্তা মাথায় নিয়েই রাজনীতি করতে হবে” । প্রশ্ন হচ্ছে- এসব হাইব্রীড নিধন ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন কি দলে আর কখনই হবেনা ? উত্তর- অবশ্যই হবে, তবে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে । যখন কোন প্রতিষ্ঠান সফলতার সর্বোচ্চ চূঁড়ায় অবস্থান করে তখন তার আর উপড়ে যাওয়ার রাস্তা থাকেনা তখন সেই প্রতিষ্ঠান ডিক্লাইন ষ্টেজে চলে যায় । তখন সফলতার ছোঁয়া দিয়েই আবার নতুন করে সাজাতে হয় যেমনটি সেজেছে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমানে সফলতার একেবারে শীর্ষে অবস্থান করছে তাই দলটি এখন খ্যাতির বিরম্বনায় আছে, এ ছাড়া অন্য কিছু নয় । তাই দলের গঠনতন্ত্রে ও নেতৃত্বে সাম্প্রতিক চেতনার আলোকে পরিবর্তন এনে দলটিকে বাঙ্গালীর অনুভূতির পাঠশালা বানাতে হবে । একটি পাঠশালায় ঠিক যেভাবে নিয়মিত টিচিং দেয়া হয় , যোগ্যতা অনুযায়ী প্রমোটেট হয়, ঠিক সেভাবে । এই অনুভূতির পাঠশালা শুধুমাত্র আওয়ামী জনগণ ও সাধারণ জনগণের ভাগ্য নির্মাণের জন্য সর্বদা নিবেদিত থাকবে । জাতীয়তাবাদী ও লোভী জনগণের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে এই পাঠশালায় কোন কার্যক্রম থাকবেনা কারন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে এই শিক্ষাটুকু পেয়েছে যে এদের জন্য শত ভেবেও কোন লাভ নেই ; এরা ১৫ই আগষ্ট তাদের ভাবীর জন্মদিন পালন করবেই চীরকাল । একইসাথে প্রত্যেকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে তাহলে দূর্নীতি কমে যাবে কিন্তু বন্ধ হবেনা । পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন দূর্ণীতি থাকবেই, এটা বন্ধ করার সাধ্য কারও নাই , তবে শিক্ষাটা এমন হতে হবে যেন আমাদেরকে তা না করতে হয় । এ কথা নিশ্চিত যে যদি রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে টাকা ইনকামের পথ শতভাগ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণও বেশীরভাগই কমে যাবে এটা এদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী যথার্থ সত্যকথা ।এমন হলে শুধুমাত্র টাইম পাসের কারনে হাতেগোনা কিছু সুখী মানুষ রাজনীতি করবে যারা সচ্ছল, বিত্তবান বা প্রতিষ্ঠিত । তাদের দ্বারা কখনই কোন রাজনৈতিক জনসভা , আন্দোলন, মিটিং, মিছিল, হরতাল, পিকেটিং কোনটাই হবেনা ।
শেষকথা হচ্ছে - হাইব্রীড নেতাদের নয় বরং মুজিব আদর্শের অনুভূতির শিক্ষকদেরকে সেই পাঠশালায় ইনপুট করতে হবে আর এই অনুভূতির শিক্ষকগুলোর বেশীরভাগই অবজ্ঞা ও অভিমানে লুকিয়ে আছে সাবেক ছাত্রলীগারদের মাঝে অর্থাৎ সাবেক ছাত্রলীগারদের যথার্থ অর্থে মূল্যায়ন করে চীর জাগ্রত করার পরামর্শ প্রদান করছি । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হউক আগামী দিনের বাঙ্গালীর অনুভূতির পাঠশালা ; আর এই পাঠশালার প্রধান শিক্ষক জননেত্রীর পরে কে হবেন তা আমাদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে যেন তিনি নিজেই তার জীবদ্দশাতেই ঘোষনা করে যান সেই আশাবাদ ব্যাক্ত করছি । তাহলে আমাদের মাঝে এ নিয়ে পরবর্তীতে আর কোন মতভেদ থাকবেনা কারণ আমাদের কাছে জননেত্রীর স্বিদ্ধান্ত তার মহাপ্রয়ানের পরও থাকবে চূড়ান্ত চূড়ান্ত । শুধুমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনাই নন বরং যেকোন বর্ষীয়ান নেতাই যদি তার জীবদ্দশাতেই নিজ মুখে তার নিজ আত্নছায়ার ঘোষনা দিয়ে তার অনুসারীদের কাছে তা সফল বাস্তবায়ন করে দেহত্যাগ করতে পারেন তাহলে তাদের মহাপ্রয়াণের পরেও তাদের নিজ নিজ অনুসারীদের মাঝে এ নিয়ে কখনও কোন মতবিরোধ থাকবেনা, যদিও এই বিষয়টি যেকোন বর্ষীয়ানের জন্য সমগ্র যাপিত রাজনৈতিক জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে তবুও তা করা উচিত কারন গুরুর যোগ্য শিষ্য কে তা শুধু গুরু নিজেই জানেন । নিজ আত্নছায়া ঘোষনার এই রেওয়াজ শুরুকরনটিই হোক অনুভূতির পাঠশালার প্রথম পদক্ষেপ ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা ।
ধন্যবাদ ।
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ তথ্য ও সংস্কৃতি মৈত্রী পরিষদ ।
jsongjugnews@gmail.com
fb.com - @jshongjog
পাঠকের মন্তব্য