শিশু সংযোগ/জনসংযোগ.কম/সূত্র-ইউনিসেফ/১৬-০১-২০২১
আপনার সন্তানের অনলাইন অভিজ্ঞতা ইতিবাচক এবং নিরাপদ রাখায় সহায়তা করতে ৫ উপায়-
কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় আপনার পরিবার যদি বাড়িতে আটকে থাকে তবে সম্ভবত আপনার শিশুরা অনলাইনে অনেক বেশি সময় ব্যয় করছে। স্কুল, বন্ধুবান্ধব এবং দাদা-দাদি ও নানা-নানির সঙ্গে আলাপচারিতা, এমনকি সঙ্গীতের পাঠ – অনেক কিছুই অনলাইনে স্থানান্তরিত হয়েছে।
অনলাইন সংযোগ থাকলে তা শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের ওপর এই নতুন (অস্থায়ী) পরিস্থিতির প্রভাব কমাতে সহায়তা করে এবং তাদের জীবন চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেয়। তবে এটি প্রতিটি বাবা-মায়ের জন্য নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জও তৈরি করে। ইন্টারনেটের সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিকটি এড়িয়ে কীভাবে আপনি সব ভালো দিকগুলোর সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করবেন? কোভিড-১৯ এর মতো স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলার সময় এই ভারসাম্য বজায় রাখা খুব সহজ নয়।
বাংলাদেশে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা’ শীর্ষক সমীক্ষার অংশ হিসেবে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১০-১৭ বছর বয়সী ১,২৮১ জন শিশুর ওপর একটি জরিপ চালানো হয়। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু তাদের বয়স ১১ বছর হওয়ার আগেই ডিজিটাল বিশ্বে প্রবেশ করতে শুরু করে। যদিও বেশি বয়সী শিশুরা কম বয়সী শিশুদের চেয়ে অধিক মাত্রায় সাইবার নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, তবে সার্বিকভাবে সব শিশুরাই ক্ষতিকর কনটেন্ট, যৌন হয়রানি এবং সাইবার নিপীড়নের আশংকা রয়েছে।
ক্রমবর্ধমান নেট-সংযুক্ত বিশ্বে এদেশের শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা অনলাইনে যেসব ঝুঁকি ও বিপদের মুখোমুখি হয় তা কমিয়ে আনতে ইউনিসেফের সহায়তায় সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগ “শিশুশের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট” নামে একটি কোর্স চালু করেছে যা সারা বাংলাদেশের শিশুদের অনলাইনে নিরাপদে থাকার জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে সহায়তা করবে এবং সাফল্যজনক ভাবে কোর্স সমাপ্তির পর সনদ প্রদান করবে।
৫ উপায়ে আপনি আপনার শিশুদের অনলাইনে নিরাপদ রাখতে সহায়তা করতে পারেন
১. যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্মুক্ত রাখার মাধ্যমে তাদের নিরাপদ রাখুন
আপনার শিশুরা কাদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করছে সে বিষয়ে জানতে তাদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন। সদয় ও সহায়ক মিথষ্ক্রিয়া বা যোগাযোগের গুরুত্ব যাতে তারা বোঝে সেটি নিশ্চিত করুন, যার অর্থ হচ্ছে- বৈষম্যমূলক বা অনুপযুক্ত যোগাযোগ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনার শিশুরা যদি এ রকম কোনো কিছুর মুখোমুখি হয়, তাহলে তারা যাতে বিষয়টি তৎক্ষণাৎ আপনাকে বা বড় কাউকে, যাকে তারা বিশ্বস্ত মনে করে, তাকে জানায় সে বিষয়ে উৎসাহিত করুন। আপনার শিশু অনলাইনের কার্যক্রম নিয়ে বিমর্ষ কিনা বা আপনার কাছে কোনো কিছু গোপন করছে কিনা অথবা তারা অনলাইনে উৎপীড়নের শিকার হচ্ছে সে বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখুন।
কীভাবে, কখন এবং কোথায় ডিভাইসগুলো (কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি) ব্যবহার করা যাবে সে সম্পর্কিত নিয়ম তৈরি করতে আপনার শিশুর সঙ্গে কাজ করুন।
২. তাদের সুরক্ষিত রাখতে প্রযুক্তি ব্যবহার করুন
আপনার শিশুর ডিভাইসে সর্বশেষ হালনাগাদ করা সফ্টওয়্যার ও অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম চলছে কিনা এবং প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা সেটিংস চালু আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন। ওয়েবক্যামগুলো যখন ব্যবহার হবে না তখন সেগুলো ঢেকে রাখুন। ছোট শিশুদের জন্য, নিরাপদ অনুসন্ধানসহ প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের মতো টুলগুলো অনলাইন অভিজ্ঞতাকে ইতিবাচক রাখতে সহায়ক হতে পারে।
অনলাইনে বিনামূল্যের শিক্ষা উপকরণ থেকে সতর্ক থাকুন। এই উপকরণগুলো ব্যবহার করার জন্য আপনার শিশুকে কখনোই নিজের কোনো ছবি বা পুরো নাম দেওয়া উচিত হবে না। তথ্য চুরি কমানোর জন্য গোপনীয়তা সেটিংস পরীক্ষা করে দেখুন। আপনার শিশুকে ব্যক্তিগত তথ্য, বিশেষ করে অপরিচিত কারো কাছে, গোপন রাখার বিষয়টি শিখতে সহায়তা করুন।
৩. অনলাইনে তাদের সঙ্গে সময় ব্যয় করুন
আপনার সন্তানের জন্য তার বন্ধু, পরিবার এবং আপনার সঙ্গে অনলাইনে নিরাপদ ও ইতিবাচক যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করুন। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এই সময়ে অন্যদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি “ভার্চুয়াল মিথস্ক্রিয়ায়” মহানুভবতা ও সহানুভূতির মডেল হওয়ার জন্য আপনার জন্য একটি দারুণ সুযোগ হতে পারে।
আপনার শিশুকে ভুল তথ্য এবং বয়স-অনুপযুক্ত সামগ্রী শনাক্ত করতে ও এড়াতে সহায়তা করুন, যা কোভিড-১৯ ভাইরাস সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিতে পারে। ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো বিশ্বাসযোগ্য সংস্থাগুলোর কাছে অনেক ডিজিটাল উপকরণ রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি ও আপনার শিশু একত্রে এই ভাইরাস সম্পর্কে শিখতে পারেন।
বয়স উপযোগী অ্যাপস, গেমস এবং অন্যান্য অনলাইন বিনোদন সামগ্রী শনাক্ত করতে আপনার শিশুর সঙ্গে সময় ব্যয় করুন।
৪. স্বাস্থ্যকর অনলাইন অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহ দিন
অনলাইনে এবং ভিডিও কলগুলোতে ভালো আচরণ প্রচার এবং পর্যবেক্ষণ করুন। আপনার শিশুদেরকে তাদের সহপাঠীদের প্রতি সদয় ও শ্রদ্ধাশীল হতে, পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে রুচিশীল হতে এবং শয়নকক্ষ থেকে ভিডিও কলে যোগদান এড়িয়ে চলতে উৎসাহিত করুন।
অনলাইনে উৎপীড়ন বা অনুপযুক্ত অনলাইন সামগ্রী সম্পর্কে অভিযোগ জানাতে স্কুলের নীতিমালা ও হেল্পলাইনের সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করুন।
শিশুরা অনলাইনে বেশি সময় ব্যয় করার কারণে তাদের অনেক বেশি বিজ্ঞাপনের সংস্পর্শে আসতে হতে পারে, যেসব বিজ্ঞাপনে অস্বাস্থ্যকর খাবার, লৈঙ্গিক ধারণাভিত্তিক বা বয়স অনুপযুক্ত উপাদানের প্রচারণা থাকতে পারে। তাদের অনলাইন বিজ্ঞাপনগুলো শনাক্ত করতে এবং আপনার দেখা কিছু নেতিবাচক বার্তাসহ ভুলগুলো একত্রে খুঁজে বের করার সুযোগটি ব্যবহার করতে সহায়তা করুন।
৫. শিশুদের মজা করতে এবং নিজেকে প্রকাশ করতে দিন
এই সংকটময় মুহূর্তে ঘরে বসে সময় কাটানো আপনার শিশুর জন্য বড় ধরনের সুযোগ হতে পারে, কেননা তারা তাদের কথার মাধ্যমে তাদের মতামত অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতে এবং যাদের সহায়তা প্রয়োজন তাদের সহায়তা করতে পারে।
সম্ভব হলে ঘরের বাইরে সময় কাটানোসহ অফলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে অনলাইন বিনোদনের সঙ্গে ভারসাম্য করার বিষয়টি মনে রাখবেন।
গ্রামীণফোন এবং টেলিনর গ্রুপের সাথে পার্টনারশীপে ইউনিসেফ একটি অ্যানিমেটেড পিএসএ তৈরি করেছে যার মাধ্যমে কোভিড-১৯-এর সময় কিশোর-কিশোরী ও পিতামাতাসহ শিশুদেরকে অনলাইনে নিরাপদ রাখার টিপস দেয়া হচ্ছে। অনলাইনে নিরাপদ থাকার টিপসগুলি অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের সাথে গঠনমূলকভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে এবং লকডাউনের সময় অনলাইনে নিরাপদ থাকার বিষয়গুলির নিয়ে দিকনির্দেশনা দিতে সহায়তা করবে। টিপসগুলো মূলত ইতিবাচক থাকতে, কিশোর-কিশোরীসহ শিশুদের জন্য প্রতিদিনের রুটিন তৈরি, অনলাইন ঝুঁকি হ্রাস এবং পারিবারিক সময়কে উৎসাহিত করতে জোর দিচ্ছে।
এ সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন - https://safeinternet.unicefbangladesh.org/
ইউনিসেফ অনলাইন থেকে সংগৃহীত / সংগ্রহে- শিশু সংযোগ ডেস্ক/ জনসংযোগ.কম
jsongjugnews@gmail.com
fb.com- @jshongjog
পাঠকের মন্তব্য