শিক্ষা সংযোগ/জনসংযোগ.কম/১৯-০১-২০২১
।এম আনিছুর রহমান ।
সংসারের কোন কাজেই যে হতভাগার বুদ্ধি খেলেনা, সে নিশ্চই ভাল বই লিখবে। কবি গুরুর এই কথাটি যথার্থ বলে আমি মনে করি। আমি বলছি সেই সব হতভাগাদের কথা, যাদের সংসারের শৃঙ্খলতা ভাল লাগেনা,পড়া লেখায় মন বসেনা,যাদের অতি খামখেয়ালির দরুণ তাদের প্রতি নিজ শিক্ষক,অভিবাবক তথা সমাজ অতিষ্ঠ, স্কুল ফাঁকি দেয়া যাদের নিত্যদিনের কাজ, বলছি সেইসব শিক্ষার্থীদের কথা- এসব কারণে যাদেরকে শিক্ষক,অভিবাবক তথা গোটা সমাজই অনেক সময় একযোগে বলে উঠে এই শিক্ষার্থীদের কোন ভবিষ্যত নেই, এদের দারা কিছুই হবেনা। অত:পর সবাই তাদের কাছ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়,তাদের কপালে তখন জোটে বেয়াদব,লাফাঙ্গা,ভবঘুরে,অকর্মার ঢেঁকি সহ আরও নানাবিধ আপত্তিকর ডিগ্রী। এরপর সেইসব আপত্তিকর ডিগ্রীধারীরা মোট দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে যায়-
(১) তাদের একটি অংশ মনে করে গোটা সমাজ যেহেতু আমাদের খারাপই মনে করে তাহলে আমরা আজ থেকে চূড়ান্ত খারাপ হয়ে যাব এবং পরবর্তীতে তাই হয়। দেখা যায় ধীরে ধীরে তারা সমাজের বিতর্কিত শ্রেণীতে পরিণত হয়,যাদের দারা পরবর্তীতে গোটা সমাজ স্থায়ীভাবে শোষিত হয়।
(২) তাদের মধ্যে অপর অংশটি মনে করে, কে কি ভাবল তথা অন্ধকার সমাজ কি ভাবল তা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই,তারা চলে তাদের আপন ধ্যান ধারনা নিয়ে,তারা যতই অবহেলিত হয় ততই তারা নিজ প্রতিভার দিকে আরও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। এভাবেই একদিন যারা ভাল খেলে তারা হয় বড় খেলোয়ার, যারা ভাল লিখে তারা হয় বড় লেখক, যারা ভাল বলে তারা হয় বড় বক্তা/রাজনীতিবিদ, যারা ভাল আঁকে তারা হয় বড় চিত্রকর, যারা ভাল গায় তারা হয় বড় শিল্পী। অর্থাৎ নিজ নিজ প্রতিভাকে নিজের মত করে বিকশিত করার জন্য তারা নিজ সমাজের সাথেই প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে আর এভাবেই তারা নশ্বর পৃথিবীতে অবিনশ্বর কীর্তি স্থাপন করে সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দেয় এবং সকলের কাছে তথা সেইসব শিক্ষক,অভিবাবক ও সমাজের কাছেই তারা তখন হিরো বনে যায়, এই সমাজই তখন তাদেরকে অনুসরন করে কারন তারা থাকে সংকল্প ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ,তাদের দারাই সমাজ পরিবর্তন হয়। তারা সাহসী,তারা অদম্য, এক কথায়- তারা নিজেকে ভালবাসে তাই তারা সফল হয়। ওপার বাংলার বিখ্যাত জীবনমুখী কন্ঠশিল্পী নচিকেতা তার সঙ্গীত পরিবেশনের এক পর্যায়ে বলেছিলেন- “একসময় পাড়ার অলিতে গলিতে যখন শীষ বাজিয়ে বেড়াতাম তখন পারার মুরুব্বীরা বলত ছেলেটি বেয়াদব, আর এখন প্রতিষ্ঠার মঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন সেই একই শীষ বাজাই তখন সেই মুরুব্বীরাই বলে- আহা ছেলেটি কি প্রতিভাবান!” এই হচ্ছে সেইসব হতভাগাদের ২য় অংশের প্রেক্ষাপট।
কিন্তু (১) নং অংশের যারা নিজেকে ভালবাসতে জানেনা বা কিভাবে নিজেকে ভালবাসতে হয় তার শিক্ষা তারা সঠিক সময় পায়না, ফলে সেই বিতর্কিত শ্রেণীতেই যাদের স্থায়ী বসবাস হয় সেইসব নির্বোধ হতভাগাদের জন্য দায়ী কারা ? আমি মনে করি তাদের এই বিতর্কিত পথে গমনের জন্য দায়ী সেইসব বিতর্কিত শিক্ষক,অভিবাবক ও কুসংস্কার এ নির্মিত সেই অন্ধকার সমাজ,যারা তাদের অল্প বিদ্যা ও স্বল্প ধৈর্যের কারনে দুরদর্শী না হয়ে নির্বোধের মত মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদেরই নিজ সন্তান/শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। যদি তারা তাদের নিজ সন্তান/শিক্ষার্থীদের অর্থাৎ সেইসব নির্বোধ হতভাগাদের সঠিক সময় যথার্থ সহযোগীতা করত তাহলে এই সমাজে কখনই বিতর্কিত শ্রেণীর সৃষ্টি হতনা।
অন্যদিকে (২) নং অংশের যারা সফল হয় তারাও তাদের স্বীকৃতি পায় সফলতা অর্জনের পরে,ফলে সফলতা অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত সেইসব অদম্য হতভাগাদেরকেও তাদেরই নিজ শিক্ষক/অভিবাবক সহ অন্ধকার সমাজের কাছ থেকে সইতে হয় নানা রকম বেদনা,অবহেলা,হাসি,ঠাট্রা ও যন্ত্রণা, কিন্তু কেন? এর সঠিক সমাধানের উপায় কি ? উত্তর হচ্ছে- এর কোন সঠিক সমাধানের উপায় নেই। কারন সকলেই একযোগে সমান জ্ঞানী.গুণী ও সঠিক বোধ সম্পন্ন হবেনা কখনই, তবে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরী অর্থাৎ সেইসব হতভাগাদের প্রতি নির্দয় না হয়ে সদয় হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও তাদের প্রতি সহযোগীতার হাত প্রসারিত করার জন্য সকল শিক্ষক/অভিবাবকবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। শুধু ভাল তথা মেধাবী শিক্ষার্থী/সন্তানদের প্রতিই মনোনিবেশ নয় বরং সেইসব নির্বোধ হতভাগাদের প্রতিও সমান দৃষ্টি স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাচ্ছি কারন সফল হওয়ার জন্য সীমাহীন বিষয় আছে শুধু বুঝতে হবে আমি কি ? কেন ? এবং কি হতে চাই ? যার উত্তর সঠিক সে অবশ্যই সফল হবে আর যার উত্তর সঠিক নয় সে নিজে ব্যার্থ হলেও অন্যের সফলতার সিঁড়ি হবে ।
jsongjognews@gmail.com / fb.com- @jshongjog
পাঠকের মন্তব্য