সংযোগ খবর-ট্যুরিজম/নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভ্রমণ/সূত্র- দৈনিক প্রথম আলো ও Dailyhunt- Bangalore, India/২১-০১-২০২১
নায়াগ্রা জলপ্রপাত পরিদর্শনের আকর্ষণীয়তার কারণ:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার আন্তর্জাতিক সীমান্তের মধ্যে অবস্থিত, নায়াগ্রা জলপ্রপাত আপনার জীবদ্দশায় ভ্রমণের অন্যতম চমত্কার জায়গা। নায়াগ্রা তিনটি জলপ্রপাত একত্রিত করে - আমেরিকান পতন, ব্রাইডাল পর্দা জলপ্রপাত এবং ঘোড়ার জুতার মতো জলপ্রপাত। ব্রাইডাল পর্দা পড়ে, এবং আমেরিকান জলপ্রপাত মার্কিন পার্শ্বে অবস্থিত, এবং ঘোড়াজুতা জলপ্রপাত অধিকাংশ কানাডিয়ান সীমার মধ্যে অবস্থিত। নায়াগ্রাসর্বোচ্চ উল্লম্ব পতন ১৬৫ ফুট হয়।
নায়াগ্রা উত্পাদন ৮৫০০০ ফুট/সে জল প্রবাহ হার। এটি বিশ্বের অন্য যে কোন জলপ্রপাতের তুলনায় সর্বোচ্চ জলের প্রবাহের হার। নায়াগ্রার একটি আকর্ষণীয় সবুজ রঙ আছে। এটা জলের সাথে রক ফ্লেভার মিশ্রিত কারণে হয়। শীতকালে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উপরে ও নীচে বরফ ব্লক গঠিত হবে । নায়াগ্রা জলপ্রপাতের প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড় সর্বোচ্চ ১২৫ ফুট গভীরতা আছে। এরো কার সার্ভিস পর্যটকদের জন্য নায়াগ্রা ঘূর্ণিঝড়একটি চমত্কার দৃশ্য প্রদান করবে।
নৌকা ভ্রমণ নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কার্যকলাপ মিস করবেন না। এটি একটি মজার ভ্রমণ ছাড়াও, আপনি একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের একটি চমত্কার দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। প্রতি সন্ধ্যায় নায়াগ্রা জলপ্রপাত নায়াগ্রা ফলস ইলুমিনেশন বোর্ড দ্বারা বিভিন্ন রঙে আলোকিত হয়। সূত্র- Dailyhunt- Bangalore, India/প্রকাশ-১২ অক্টোবর,২০২০
আমেরিকার তৃতীয় দরিদ্র শহরের নায়াগ্রা জলপ্রপাতে
সূত্র - দৈনিক প্রথম আলো /প্রকাশ- ৭ডিসেম্বর,২০২০/মানিজা রহমান
নতুন নতুন শহর দেখার জন্য আমরা নিউইয়র্ক সিটি থেকে সড়কপথে রওনা হয়ে প্রথমে গেলাম বাফেলোতে। নিউইয়র্ক স্টেটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বাফেলো নায়াগ্রা জলপ্রপাতের জন্য বিখ্যাত। নায়াগ্রা জলপ্রপাত নিউইয়র্ক স্টেট তো বটেই, পুরো আমেরিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি অন্যতম দর্শনীয় কেন্দ্র।
আমেরিকা ও কানাডার সীমান্তে নায়াগ্রা নদীতে এই জলপ্রপাত অবস্থিত। নায়াগ্রা স্টেট পার্কে গিয়ে দেখলাম, করোনা মহামারির মধ্যেও মানুষের ঢল নেমেছে। টিকিটের জন্য প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। আমরা যখন ফেরিতে চড়লাম, দেখলাম ওপাশ দিয়ে কানাডীয়রা আরেকটি ফেরিতে চড়েছে। উভয় ফেরি অতিক্রমের সময় যাত্রীরা হাত নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানাল। ফেরি যখন জলপ্রপাতের মধ্যে পৌঁছাল, তখন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হবে সবার। নুহ (আ.)–এর (বাইবেলে নোয়াহ নবী) সময়ে যেভাবে সারা দুনিয়া পানিতে ডুবে গিয়েছিল, তেমন মনে হলো আমার।
নায়াগ্রার মতো দ্রষ্টব্যস্থান থাকার পরেও বাফেলো আমেরিকার তৃতীয় দরিদ্র শহর। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে মিশিগানের শহর ডেট্রয়েট ও ওহাইওর ক্লিভল্যান্ড। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্ক শহর থেকে বাঙালিরা দলে দলে বাফেলোতে গিয়ে বাড়ি কিনছে। এই মহামারির সময়ে দশ হাজারের বেশি বাংলাদেশি নিউইয়র্ক সিটি থেকে বাফেলোতে গেছে বলে জানা গেছে।
নিউইয়র্ক স্টেটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ও পশ্চিম নিউইয়র্কের বৃহত্তম শহর হলো বাফেলো। ২০১৮ সালে শহরটির জনসংখ্যা ছিল ২৫৬,৩০৪ জন। শহরটি ইরি কাউন্টির অন্তর্ভুক্ত। কানাডার সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ও ভ্রমণের প্রধান প্রবেশদ্বার হলো বাফেলো নায়াগ্রা অঞ্চল। বাফেলো অঞ্চলটি ১৭ শতকের আগে আমেরিকান ইরোকাইস উপজাতি অধ্যুষিত ছিল। পরে এটি ফরাসিরা দখল করে উপনিবেশ তৈরি করে। ইরি খাল, ইরি হ্রদ এবং রেল পরিবহনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে এই শহরটিতে অভিবাসন উনিশ ও বিশ শতকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বিশ শতকে বাফেলোর অর্থনীতি বিকশিত হয় ইস্পাত, শস্য ও অটোমোবাইল শিল্পের জন্য। পরে স্বাস্থ্যসেবা, গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়।
বাফেলোর ১৬ মাইল দূরে অবস্থিত নায়াগ্রা জলপ্রপাত দক্ষিণে নায়াগ্রা নদীর তীরে ইরি হ্রদের পূর্ব দিকে অবস্থিত। এই শহরটিকে ‘দ্য সিটি অব লাইট’ ডাকনামে ডাকা হয়। এই শহরটির পরিকল্পনা ও বিন্যাসের কাজ করেন জোসেফ এলিকোট। উদ্যান ও স্থাপত্যকর্মের নকশা করেন ল ওলমেস্টেড। এ শহরের দুটি খেলার দল বাফেলো বিলস ও বাফেলো সাবার্স পুরো আমেরিকায় বিখ্যাত।
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট লেক অঞ্চলের বেশির ভাগ প্রাক্তন শিল্প শহরের মতো বাফেলো শহরতলীকরণ ও তার শিল্পভিত্তিক ক্ষতি হ্রাস করে তৈরি অর্থনৈতিক হতাশা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। ১৯৫০ সালে শহরটির জনসংখ্যা শীর্ষে পৌঁছেছিল। এর আগে ১৯০০ সালে আমেরিকার অষ্টম বৃহত্তম শহর থেকে আমেরিকার ১৫ তম বৃহত্তম শহরে নেমে এসেছিল এর অবস্থান। ২০১০ সালে আদমশুমারিতে বাফেলোর জনসংখ্যার ৪৫.৮ শতাংশ ছিল শ্বেতাঙ্গ, ৩৮.৬ শতাংশ ভাগ আফ্রিকান আমেরিকান, ১০.৫ শতাংশ হিস্পানিক বা ল্যাটিনো, ৩.২ শতাংশ এশিয়ান, ০.৮ শতাংশ ইন্ডিয়ান আমেরিকান ও আলাস্কা নেটিভ। ২০০৩ সালের পর থেকে বর্মি শরণার্থীদের সংখ্যা ক্রমে বেড়ে চলেছে এ শহরে। এর বেশির ভাগ ক্যারেন জাতিগোষ্ঠীর।
নিউইয়র্ক সিটি থেকে ৩৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাফেলোকে বলা হয় আমেরিকার অন্যতম পরিকল্পিত শহর। বাফেলো শহর পানি দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর উত্তরে নায়াগ্রা ফলস, দক্ষিণে বাফেলো নদী ও পশ্চিমে ইরি ক্যানেল। আগেই বলেছি, এই শহরের নকশা করেন বিশিষ্ট নগর–পরিকল্পনাবিদ জোসেফ এলকট। তিনি ওয়াশিংটন সিটির নকশাকারী আন্দ্রে এলকটের ভাই। তাই দুই শহরের নকশায় বেশ মিল আছে। এ শহরের উদ্যান ও স্থাপত্যকর্মের নকশাকারী ফ্রেডরিক ল ওলমেস্টেড ‘ফাদার অব ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচার’ হিসেবে পরিচিত। তিনি একটি পার্কের মধ্যে পুরো শহরটিকে সৃষ্টি করেছেন। পার্কে ঢোকার আগে কোনো প্রবেশপথ নেই। শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঢোকা যায়। ৫২ বর্গমাইল আয়তনের এই শহরে প্রায় তিন লাখ লোক বসবাস করে। শহরে কোনো ট্রাফিক জ্যাম নেই। তাই বাফেলো সিটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগে।
এবার আসা যাক নায়াগ্রা জলপ্রপাতের বর্ণনায়। ‘ওনগুইহারা’ শব্দ থেকে নায়াগ্রা কথাটির উৎপত্তি। যার অর্থ জলরাশির বজ্রধ্বনি। অনুমান করা হয়, আজ থেকে প্রায় দশ হাজার বছর আগে এই জলপ্রপাতকে প্রথম চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই জলপ্রপাত সম্পর্কে প্রথম লিখিত বক্তব্য পাওয়া যায় কোনো আমেরিকান নয় বরং এক ইউরোপিয়ানের কাছ থেকে। ইউরোপীয় ব্যক্তিটির নাম ফাদার লুইস হেনেপিন। এই ফরাসি যাজক তাঁর ‘আ নিউ ডিসকভারি’ নামের বইয়ে প্রথম এর বর্ণনা করেন।
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের তিন ভাগের এক ভাগ আমেরিকায়। তার নাম আমেরিকান ফলস। বাকি দুই ভাগ কানাডায়। যার নাম কানাডিয়ান ফলস। এই জলপ্রপাতের আকার অনেকটা ঘোড়ার খুরের মতো বাঁকা। এটি মূলত তিনটি জলপ্রপাতের সমষ্টি। সবচেয়ে বড় জলপ্রপাতটির নাম হর্সশু ফলস বা কানাডা ফলস। এটি প্রায় ১৬৭ ফুট উঁচু থেকে ২৬০০ ফুট চওড়া পানির স্রোত নিয়ে নিচে আছড়ে পড়ে। বলা হয়, নায়াগ্রা জলপ্রপাতের ৯০ ভাগ পানি এই ফলস দিয়েই পতিত হয়। এর পরের ফলসটির নাম আমেরিকান ফলস। এটি প্রায় ৭০ ফুট উঁচু এবং ১৬০০ ফুট চওড়া। অন্যটির নাম ব্রাইডর ভেইল ফলস।
নায়াগ্রা নদীটি প্রায় ১২০০ বছরের পুরোনো। এরও আগে ১৮০০ বছর পূর্বে ওন্টারিওর দক্ষিণে প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার বরফে ঢাকা ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আর নিয়মিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পরিবর্তনের ফলে গলতে শুরু করে বরফ। আর গ্রেট লেক বেসিনে প্রচুর পানি জমতে থাকে। লেক ইরি, নায়াগ্রা নদী এবং লেক ওন্টারিও থেকে আসা পানি মিলে এক বিশাল জলপ্রপাতের সৃষ্টি করে।
শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, নায়াগ্রার পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয় জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে। প্রতি মিনিটে নায়াগ্রা জলপ্রপাত ৬০ লাখ ঘনফুটের বেশি জল প্রবাহিত করে। যার গড় পরিমাণ হলো ৪০ লাখ ঘনফুট। নায়াগ্রা সমগ্র নিউইয়র্ক এবং ওন্টারিওর জলবিদ্যুৎ শক্তির এক অন্যতম প্রধান উৎস। অন্যান্য জলপ্রপাতের চেয়ে নায়াগ্রার স্রোত অনেক বেশি। নায়াগ্রা জলপ্রপাতের স্রোতের শব্দ এতটাই তীব্র যে অন্য কোনো শব্দ স্রোতের শব্দের কারণে কানে পৌঁছায় না। তবে আমেরিকায় জলপ্রপাতটি পেছন থেকে দেখতে হয়। কানাডায় সরাসরি সামনে থেকে সম্পূর্ণ জলপ্রপাত ভালোভাবে দেখা যায়। রংধনু দেখতে আকাশের দিকে তাকাতে হয় না এখানে। মুগ্ধ পর্যটকের দৃষ্টির খুব কাছেই জলপ্রপাতের জলরাশিতে রংধনু যেন নিজে এসে ধরা দেয়। পোলার ভার্টেক্স বা মেরু প্রবণ ঘূর্ণাবর্তের কারণে ২০১৪ সালে নায়াগ্রা জলপ্রপাতটি আংশিকভাবে হিমায়িত হয়ে নিথর হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া ১৮৪৮ সালের মার্চ মাসে বরফের কারণে নায়াগ্রা জলপ্রপাত বন্ধ হয়ে যায়। ৪০ ঘণ্টা কোনো পানি পড়েনি। ফলে জলবিদ্যুৎ কারখানার চাকা বন্ধ হয়ে যায়।
আমেরিকার নায়াগ্রা জলপ্রপাত বিখ্যাত এক পর্যটনকেন্দ্র। পর্যটকদের কাছে এটি ভয়ংকর সুন্দর একটা জায়গা। মূলত, অষ্টাদশ শতক থেকে এটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। এখানে প্রতিবছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন পর্যটক আসেন। এই মনোরম ও প্রাণবন্ত জলপ্রপাতটি পরিদর্শনের উপযুক্ত সময় হলো বসন্ত ও গ্রীষ্মকাল। জলপ্রপাতের পাশাপাশি এখানে পর্যটকেরা ঘুরে আসতে পারেন প্রজাপতি ভান্ডারে, যেখানে দুই হাজারের বেশি প্রজাতির প্রজাপতির দেখা মিলবে। আরও যেতে পারেন নায়াগ্রা অ্যাকোরিয়াম, নায়াগ্রা সায়েন্স মিউজিয়াম, ওয়ার্লপুল স্টেট পার্ক, ডেভিল’স হোল স্টেট পার্ক, নায়াগ্রা অ্যাডভেঞ্চার থিয়েটার ও হাইড পার্কে।
সংগ্রহে- ট্যুরিজম এন্ড ট্রাভেল ডেস্ক/জনসংযোগ নিউজ
Email- desk@prnews1.com / jonosongjognews@gmail.com / fb- prnews1.com.bd
পাঠকের মন্তব্য