লাইফষ্টাইল ও পরামর্শ-(ফিচার)/জনসংযোগ.কম/২১-০১-২০২১
। তাহমিনা মিলি ।
ভাবিয়ে তুলে দাম্পত্য জীবনের বা প্রেম-ভালবাসার বর্তমান সমাজের বেশীরভাগ প্রেক্ষাপট; মূলত আমাদের সমাজ, আমাদের প্রজন্ম কোনদিকে যাচ্ছে তা অনুধাবন করলে ঘা শিউরে উঠে। আমরা যাদের কোলে জন্ম নিয়েছি, যাদের ছায়ায় বড় হয়েছি, তাদের মাঝে বা তাদের প্রজন্মের মাঝে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া যা কখনই দেখিনি বা কল্পনাও করিনি তা এখন এই প্রজন্মের মাঝে দেখছি। যতই দিন যাচ্ছে তা আরও উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, নিয়ন্ত্রনের কোন লক্ষণই নেই। আমি মনে করি এর প্রধান কারণ ভুল পদক্ষেপ বা ভুল শাসন। সময়ের প্রেক্ষাপটে যদি সবই পাল্টায় তবে শাসন ও ভালবাসার ধরনও পাল্টানো উচিত। ধরাযাক আমাদের মুরুব্বীদের কথা- তাদের মধ্যে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যেত মুরুব্বী পুরুষগণ তাদের সহধর্মীনীদের একরকম কড়া শাসনেই রাখতেন সবসময়, একটা দাপট লক্ষ করা যেত তাদের মধ্যে আবার অতি সামান্য কিছু ক্ষেত্রে মুরুব্বী সহধর্মীনীদেরকেও দেখা যেত তারা তাদের স্বামীদেরকেও কড়া শাসনে রাখতেন ঠিকই কিন্তু এই কড়া শাসনের আড়ালেই লুকিয়ে থাকত তাদের পরম ভালবাসা; তার প্রমাণ হল জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের দাম্পত্ত জীবনে অঘটন তথা ডিভোর্স হতনা অন্তত বা এই বিষয়টি তারা কখনো চিন্তাও করেনি। অপরদিকে এটাও সত্যি যে, নারীদের অধিকার তখন ততটা না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে অবলা নারীরা তাদের ডিক্টেটর স্বামীদের অবহেলা বা ক্রোধ নীরবে সয়ে যেত কিন্তু ঘরভাঙ্গার কথা কখনো চিন্তাও করতেননা। তাদের নৈতিক চরিত্রের অধ:পতন কখনও হতনা তাই তাদের মাঝে আর যাইহোক সন্দেহ বিষয়টি খুব একটা বিরাজ করতনা। পরকীয়া তখনও ছিল কিন্তু তৎকালীন কঠোর সমাজিক ব্যবস্থার জন্য তা ততটুকু তৎপর ছিলনা যা আজকের আধুনিক ও নারীর অধিকার আদায়ের প্রগতিশীল এই সমাজ ব্যবস্থায় লক্ষ করা যাচ্ছে অহরহ।
বর্তমানে ছেলেমেয়ে উভয়েই সমানবেগে তালে তাল মিলিয়ে মূল সম্পর্কের আড়ালে অন্তত একটি হলেও বিকল্প সম্পর্ক রাখছেই বা রাখার জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেই। এদিক দিয়ে ছেলেরা একটু বেশীই এগিয়ে আছে কারন তাদের বাহিরে অবাধ বিচরণে তেমন কোন বাধা নেই কিন্তু যতই সরকার সমান অধিকার দিক-না কেন এখনও নারীদের বাহিরে অবাধ বিচরণের ততটা সুযোগ নেই, তাই হয়ত এদিকে থেকে মেয়েরা অনেকটাই পিছিয়ে আছে এখনও। কিন্তু মেয়েরা যতটুকুই এ বিষয়ে এগিয়েছে ততটুকুই ছেলেদের বিপথে যাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। যদি মেয়েরা এই বিষয়কে কখনও প্রশ্রয় না দিত বা সাপোর্ট না করত তাহলে ছেলেরা পরকীয়ার চিন্তা মাথাতেই নিতে পারতনা কারণ মাঠে এ ধরনের মেয়েই থাকতনা ফলে তারা পরকীয়ার সম্পর্কে জড়াত কাদের সাথে? ছেলে টু ছেলে ? সেটার-ত অন্য অর্থ মিন করে।
যাইহোক, বিবাহিত বা এঙ্গেষ্ড জেনেও যে সকল মেয়েরা সে সকল ছেলেদের সাথে এ-ধরনের সম্পর্কে জড়ায় মূলত সে সকল মেয়েরাই অন্য মেয়েদের ঘর ভাঙ্গার জন্য প্রধানত দায়ী বলে আমি মনে করি। অন্যদিকে ছেলেদের কথা আর কি বলব!! তাদের জন্য খোলা পৃথিবীটাই একটি স্বাধীন ফসলের মাঠ, হাটে-মাঠে-ঘাটে-পথে-প্রান্তরে এমনকি দেশ থেকে দেশান্তরে যখন যেখানে যাবে সেখানেই তারা বীজ বপন করবেই। এই অমোঘ পৃথিবীতে এটা তাদের একটি প্রধান দায়িত্বও বলা চলে। এই গুরু দায়িত্ব থেকে যে সকল মেয়েরা তাদেরকে গোটা পৃথিবীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে শুধুমাত্র নিজেদের করে নিজেদের প্রতি একমাত্র দায়িত্বশীল বানাতে চাইবে তাদের জীবনের বারটা বাজবেই। কথাটি হাস্যকর বা বিভ্রান্তিকর হলেও এটাই সত্য, তাই এদিক দিয়ে বিবেচনা করে বর্তমান ছেলেদেরকে সম্পূর্ণটা পাওয়ার চিন্তা বর্তমান মেয়েদের না করাই শ্রেয়। খুব বেশী হলে ছেলেদেরকে বেশী অর্ধেকটা পাওয়ার চিন্তা করে বাকীটুকু তাদের প্রাপ্য স্বাধীনতার কথা বিবেচনা করে এক অহর্ণিশ অধিকার বলে তাদেরকে খোলামনে গিফট করে দেওয়া উচিত মেয়েদের। মেয়েদের উচিত ছেলেদের সেই স্বাধীকার পথচলায় কখনও কোন বাধা না দেয়া কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব? কখনই না কারন মেয়েরা আর যাইহোক স্বামীর বা ভালবাসার মানুষের ভাগ অন্য মেয়েকে কখনই দিবেনা, মেয়েরা কখনই সতীন আমদানী করতে রাজী নয়। তাহলে এই সমস্যা উত্তোরনের উপায় কি ? আছে কিছু উপায়।
যদি বলি ছেলেদের খারাপ হওয়ার পেছনে মেয়েরাই মদদ দেয় বেশী তাহলে এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে ? ধরাযাক- সব মেয়ে গুলো যার যার অবস্থান থেকে যদি শক্ত হয় তাহলে অনেক ছেলে ভাল হতে পারে, একের পর এক খারাপের রাস্তা যদি বন্ধ হয়ে যায় তখন নিরুপায় হয়ে ছেলেরা ভাল থাকতে শুরু করে দেয় । নিজের বউ রেখে অনেক মেয়েদের সাথে সম্পর্কে জড়ায় কিংবা অবিবাহিত ছেলেরা একই সময়ে অনেক মেয়েদের সাথে সম্পর্কে জড়ায় । এসব ছেলেদের জন্য বহু মেয়ের ক্ষতি হয়ে যায়, কারো কারো পরিবারও ভেঙ্গে যায় বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । একটা ছেলে কি ভাবেনা কখনও যে সে ভবিষ্যতে সম্ভাবনা একজন মেয়ের বাবা? সে কি ভাবেনা তার মা বোন তার খুব নিকটে আছে? সে কি কোনদিন তার মায়ের বা বোনের কষ্ট দেখেনি? তার মা যখন বলে তোর বাবা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে তখন তার বাবার উপর কত রাগ হয়! কিন্তু এইটুকু বুঝেনা সে কত মেয়ের জীবনকে অতিষ্ট করেছে? কি লাভ এইসব করে? দিন শেষে একজন বিশ্বস্ত মানুষ সবার চাই; বুকে হাত দিয়ে এই কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা । ছেলেদের একটা স্লোগান আছে তারা বলে- ছেলেরা একটু এরকমই। আসলে না, এটা তাদের অস্থির মগজের এক কথিত স্বস্তির চিন্তা মাত্র, প্রকৃতপক্ষে তারাও মানুষ তাদেরও মনুষ্যত্ব আছে, মুল্যবোধ আছে তারা সব বুঝে তারপরও এই কথাটা বলে; ছেলেরা-ত এমনই!
একটা সহজ সুন্দর সম্পর্ক খুব সহজভাবে এগিয়ে নেয়া যায় কিন্তু একটা অবৈধ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে কত চুরি কত কষ্ট করতে হয় সেটা ছেলেরা ভাল করেই জানে। যতবড় চাকরী বা যতই ধনী হউক না কেন; কেউ কেউ তাদের এসব টাকা বা চাকরী নিয়ে হাসাহাসিও করে।যদি সম্মানটাই এত সহজে নষ্ট হয়ে যায় তবে কি লাভ হবে চাকরী বা ব্যবসা করে টাকার মালিক হয়ে? জীবনে সব কিছুতো সম্মানের জন্যেই করা হয় কিন্তু আড়ালে যদি তারা একজন নৈতিক চরিত্রহীন হয়ে থাকে তাহলে মানুষের কাছে খারাপ গল্প হয়ে থাকা ছাড়া আর বিশেষ কোন লাভ হবে কি ? তবে একথাও সত্য যে দোষী ছেলেদের দোষ ধরে তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো যেতেই পারে কিন্তু দোষী মেয়েরা যদি ছেলেদের দোষ সামনে এনে নিজেদের দোষকে আড়াল করার চেষ্টা করে তবে সেই মেয়েরা শুধু নিজের ঘরই নয় বরং গোটা সভ্য সমাজের জন্যও অনিষ্টের কারন হয়ে দাড়ায়।
বিষয় ভিত্তিক এসব মায়াঁজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে সমস্ত নেতীবাচক চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে ইতিবাচক বিষয়ে ভাবতে হবে যদি ভালবাসা অক্ষুন্ন থাকে আর যদি ভালোবাসাই না থাকে তবে হাইকোর্ট বা জজকোর্ট করেও কোন লাভ নেই। মনের মানুষের প্রতি ভালবাসার পাশাপাশি সমবেদনাও থাকতেও হবে। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন আনতে হবে ভালবাসার রুপরেখাতেও, এমনকি ভীন্নতা আনতে হবে লাইফষ্টাইলেও। যেহেতু মেয়েরাই ঘরের মানুষ তাই ঘর রক্ষার তাগিদে এসব ব্যাপারে প্রথমেই এগিয়ে আসতে মেয়েদেরকেই।
একথা অনস্বীকার্যে সত্য যে, ছেলেদের জন্মই হয় অপরের জন্যে, নিজেদের জন্যে নয়। প্রতিটি সংসারে ছেলেরাই হয় আয়ের প্রধান উৎস। তারা দিনরাত পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা উপার্জন করে কিন্তু নিজের জন্য তার কতটুকুই বা ব্যয় করতে পারে? নিজ পরিবারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিবাহত্তোর জীবনে যখন নিজ স্ত্রী-সন্তানদের দায়িত্ব তাদের কাঁধে পড়ে তখন তারা এমনিতেই কোণঠাসা হয়ে যায়। তখন চারিদিকে শুধু দাও দাও আর দাও। এটা নেই, সেটা নেই, শুধু নেই নেই আর নেই। তারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু দিচ্ছে তার কোন কৃতজ্ঞতাই নেই, কিন্তু না দিতে পারার ব্যর্থতার দায়ে তাদেরকে শুলে তুলতে তিল পরিমাণ ছাড় দেয়না কেউই, অথচ তারা প্রত্যেকেই তার সবচেয়ে আপনজন। বিষয়টি ছেলেদের জন্য সত্যিই খুব পেইনফুল এমনকি এ কথাগুলো শেয়ার করার জন্যও তারা কাউকেই খুঁজে পায়না। ছেলেদের ভিত্তি এতই শুউচ্চ শির যে তারা এসব ঠুনকো কারনে নিজেদের কখনও গুটিয়ে নেয়না বা ক্লান্ত হয়ে যায়না কারন এটাই তাদের পবিত্র দায়িত্ব তাই। এসবের সাথে যখন তাদের ভালবাসার মানুষটিও নিজ চাহিদার তীব্র কষাঘাতে তাকে জর্জরিত করে ফেলে, যখন না পাওয়ার কথাই সবসময় তার সামনে তুলে ধরে, কথায় কথায় এ নিয়ে ঝগড়া করে, অপমান অপদস্থ করে তখনও ছেলেদের ভিত এতটুকু নড়েনা। সবশেষে যখন চাহিদার রণতরীনী তার ভালবাসার স্পর্শ থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নেয় তখন ছেলেরা সত্যিই পরাজিত হয়ে যায়, কষ্টের তীব্র দাহে তাদের অন্তর ছিঁড়ে যায়, আর্তচিৎকার করে কাঁদতে থাকে, কিন্তু এ কান্না তারা কাউকে দেখাতেও পারেনা।
এভাবে যখন দিনের পর দিন চলতে থাকে তখনই ছেলেদের মনে আস্তে আস্তে পরকীয়ার বীজ রোপন হতে থাকে, এক সময় সত্যিই তারা পরভালবাসায় আসক্ত হয়ে যায় আর জড়িয়ে যায় পরকীয়ায়। এছাড়াও ছেলেদের পরকীয়ায় জড়ানোর আরেকটি অন্যতম কারন হচ্ছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা রোজগার। অতিরিক্ত টাকা বা অগনিত টাকা যে ছেলের হাতে থাকবে সে ছেলের একাধিক সম্পর্ক থাকবেই কারন টাকা খরচ করবে কোথায়? তারা টাকার জোরে সবার মৌলিক চাহিদা সহ অতিরিক্ত বা সকল যৌগিক চাহিদাও মিটিয়ে দেয় ফলে সকলের চাহিদার মুখ বন্ধ হয়ে যায় এমনকি সবকিছু জানা স্বত্বেও টাকাওয়ালা ছেলেদের কেউ কিছুই বলতে পারেনা বা বলতেও চায়না কারন স্বার্থ তখন তা করতে বাধা দেয়। তবে এক্ষেত্রে দাম্পত্ত সম্পর্কটা স্বার্থের সম্পর্ক হয়ে যায় যেখানে আর যাইহোক ভালোবাসা থাকেনা। আর সেইসব ছেলেদের যাদের নৈতিক চরিত্রটাই থাকে প্রশ্নবিদ্ধ, যাদের জন্মটাই হয় কোন পাপীষ্ঠ বিষ্ঠা থেকে তারা বারংবার পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হবেই। কোন ফর্মুলাই তাদের জন্য ভ্যাক্সিন হিসেবে কাজ করবেনা এমনকি প্রকাশ্য দিবালোকে জুতো পেটা করলেওনা। শুধরানোর বৃথা কোন চেষ্টা না করে এই একটি ক্ষেত্রে সকল মেয়েদের উচিত এ সকল ছেলেদের সময় থাকতেই গুডবাই জানানো।
শেষ করছি এসব বিষয় থেকে পরিত্রাণের লক্ষে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদেরকেই প্রথমে এগিয়ে আসার ব্যাপারে। বুদ্ধীমতি মেয়েরা আপন ভালবাসা দিয়ে তার ভালবাসার মানুষের কর্ম ও মেধাকে মূল্যায়ন ও পরম সহযোগীতা করে তাকে জীবনের প্রতি আরও গতিশীল করে এক সময় সফল করে তুলে আর এভাবেই এক সময় নিজের সফল স্বামীকে রাজা বানিয়ে নিজে হয়ে যায় রানী। অন্যদিকে বুদ্ধীহীন বা অহংকারী মেয়েরা অসহযোগীতা করে, ছল বা ভালবাসার অভিনয় করে বা চাহিদার সমুদ্রে ডুবে গিয়ে নিজের স্বামীকেই গোলাম বানিয়ে নিজে হয় গোলামের স্ত্রী। প্রশ্ন হচ্ছে- মেয়ে তুমি কি হতে চাও? রানী নাকি গোলামের স্ত্রী?
যারা গোলামের স্ত্রী হতে চায় তাদের জন্য কিছুই বলার নেই আমার তবে যারা রানী হতে চায় তারা যেন নিজের ভালবাসার মানুষের জন্য ত্যাগ কারার মানসিকতা রাখে। তারা যেন তার ভালোবাসার মানুষের আয়ের চেয়ে বেশী চাহিদা না রাখে, তারা শুধু বাহিরে বের হলেই সাজগোজ না করে যেন নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য ঘরেও প্রতিদিন নতুন করে নতুনভাবে সাজে, তারা যেন সবসময় ভালোবাসা নেয়ার চেয়ে দেয়ার ক্ষেত্রেই এগিয়ে থাকে, তাদের মাঝে সবসময় যেন ভালোবাসা দেয়া-নেয়ার প্রতিযোগীতা ছাড়া আর কোন প্রতিযোগীতা না থাকে, তারা যেন তার ভালোবাসার মানুষকে একমাত্র আয়ের উৎস না ভেবে নিজের সামর্থ বা যোগ্যতা ভেদে নিজেও সংসারের জন্য সহযোগীতার হাত প্রসারিত রাখে সবসময়, তারা যেন তাদের নিজের স্বামীর দোষকে চার দেয়ালের বাহিরে না এনে ঘরের মাঝেই ভালোবাসার পরশে শুধরিয়ে দেয় সেগুলো, তারা যেন তাদের নিজ স্বামীর সক্ষমতার চেয়ে অক্ষমতাকেই বেশী ভালোবাসে, তারা যেন তাদের সাংসারিক যাপিত জীবনের বিষয়গুলো নিয়ে নিজের মায়ের চেয়ে নিজের বাবার সাথেই বেশী বেশী আলোচনা করে আর শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা মায়ের মতই শ্রদ্ধা করে, তারা যেন তাদের ভালোবাসার মানুষের প্রতিটি সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করে সমব্যথীত হয়, তারা যেন কখনই বেপরোয়া শাসনকর্তী না হয় কারন ছেলেরা কখনই মেয়েদের বেপরোয়া শাসন পছন্দ করেনা; তারা সবসময় মেয়েদেরকে নারীসূলভ আচরণে দেখতেই ভালোবাসে পুরুষসূলভ আচরণে নয়। ছেলেরা একমাত্র মেয়েদের আপন ভালোবাসার কাছেই খুব সহজেই পরাজিত হয়, ভালোবাসার মানুষের অফুরন্ত ভালোবাসা ও দ্বিধাহীন সহযোগীতায় ছেলেরা অজেয় হয়ে উঠে এবং সফল হয়। সত্যিকারের ভালোবাসা পেলে কোন সভ্য ছেলে কখনই অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকায়না, তাকাতে পারেনা বরং কোন ছেলে যদি কোন মেয়ের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পায় সেই ছেলে তখন সেই মেয়েকে তার চেয়েও বেশী সহযোগীতা করে যেন ভালোবাসা টিকে থাকে।
এবার বলতেই হচ্ছে- দাম্পত্ত জীবনকে স্বার্থক করে তুলতে হলে একজনকে ভালোবাসতে হবে আর অন্যজনকে ভালোবাসা টিকিয়ে রাখতে অপরকে সহযোগীতা করতে হবে। একসঙ্গে দুজনেই কখনও ভালোবাসতে পারেনা, এটা ভুল ও আত্নঘাতী পদক্ষেপ। তাই স্বিদ্ধান্ত নিতে হবে কে ভালোবাসবে আর কে সহযোগীতা করবে। এই একটি স্বিদ্ধান্ত যে যুগল সঠিক সময় নিতে পারবে তারাই হবে রাজা রানী আর যারা নিতে পারবেনা তারা হবে ……………. থাক আর বলবনা।
কিন্তু বলতে হবে শেষ একটি কথা; যা ছেলেদের জানা খুবই জরুরী নয়ত ছেলেদের চোখ খুলবেনা আর মেয়েদের না বলা কথাগুলো বলি বলি বলে আর বলাও হবেনা। বিয়ের পর মেয়েরা তার রক্তের সম্পর্কের সবচেয়ে আপনজনদের ছেড়ে চলে আসে শশুরবাড়ী এটা বিধির বিধান যা মানতে তারা বাধ্য !! এটা ছেলেদের তৈরী জাগতিক ফর্মুলা নয় যা মেয়েরা নিরুপায় হয়ে মানতে বাধ্য হয়। এটা অবলা,সবলা,পরাক্রমশালী,বিত্তবান বা অসহায় যেকোন নারীর জন্যই এই একই নিয়ম প্রযোজ্য। তাই ছেলেদের উদ্দেশ্যে বলছি- দাম্পত্য জীবনে ভুল বুঝাবুঝি হতেই পারে, ঝগড়াও হতে পারে এমনকি সাময়িক সেপারেশনও হতে পারে, আবার এসব প্রসঙ্গে আপনাদের মুখ দিয়ে নানান কু-কথা আসতেই পারে। কিন্তু কখনও আপনারটা খায়, আপনারটা পরে, আপনার বাড়ী থাকে, তাই বাসার পরিচারিকাদের মত আপনি যা বলবেন আপনার স্ত্রীকে তাই করতে হবে, নয়ত বলবেন বাপের বাড়ী চলে যাও বা কথায় কথায় ডিভোর্স দেওয়ার হুমকি দিবেন বা পুরুষত্বের শক্তি দিয়ে অত্যাচার করবেন বা গালীবাজ হলে গালী দিবেন। বলছি- এ ধরনের দাম্ভিক মনোভাব কখনই নিজের অন্তরে পুষবেননা তাহলে আপনার স্ত্রী আপনাকে জাতহীন ছোটলোক ভাববে।
যদি এধরনের মানসিকতা আপনার থাকে আর আপনার স্ত্রী বিত্তশালী পরিবারের হয় তাহলে চটকানাটা সরাসরি খেয়ে যাবেন আর যদি আপনার স্ত্রী গরীব বা মধ্যবিত্ত বা অসহায় পরিবারের হয় তাহলে আপনাকে হয়ত সরাসরি চটকানা দিতে পারবেনা কিন্তু পরোক্ষ চটকানা খেয়ে যাবেন অর্থাৎ এই কথাগুলো যখন কোন মেয়ে তার নিজ স্বামীর মুখে কখনও শুনে সেদিন থেকেই সে তার স্বামীকে আজীবনের জন্য জাতহীন ছোটলোকই মনে করে; সে যত বড় শিক্ষিত বা বিত্তশালীই হউক না কেন। আপনি হয়ত ভাবছেন যে কথায় কথায় এসব বলার পরেও আপনার অবলা স্ত্রী আপনাকে কিছুই বলেনা কিন্তু আপনার দাম্ভিক মানসিকতার জন্য আপনি অনুধাবনই করতে পারবেননা যে সেই কথাগুলো বলার পর থেকেই আপনি তার কাছে স্রেফ একটা ছোটলোক ছাড়া আর কিছুইনা।
এ ধরনের মানসিকতা যে স্বামী বা ছেলের থাকে সে কখনও নিজেও সুখী হতে পারেনা এবং অপরকেও সুখী করতে পারেনা। সত্যি বলতে কি- কোন মেয়ে যখন তার স্বামীর মুখ থেকে এই ধরনের কথাগুলো শুনে ফেলে তখন সারা জীবনের জন্য সে তার চতুর্পাশে ছোট হয়ে যায় বা বিষয়টি নারীকূলের সবচেয়ে সেনসেটিভ জায়গায় আঘাত করে ফলে তারা এই বিষয়টি কখনই সহ্য বা হজম করতে পারেনা এবং এটা সহ্য করা উচিতও নয়। যারা এটা সহ্য করে তারা বাধ্য হয়েই করে আর জীবনের এরকম প্রতিটি বাধ্যগত বিষয়-ই ভালোবাসার পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তাই ভালোবাসতে বাধ্য না করে আপনার স্ত্রীকে জয় করুন যেন সে তার আপন মন দিয়ে ভালোবাসতে পারে আপনাকে। মনে রাখবেন- মেয়েরা স্বামীর ঘরে কখনই ফ্রি খায়না এমনকি ফ্রি থাকেওনা। যে বিধাতা এই বিধান করেছেন তিনি এত বড় অবিচারক নন যে তিনি মায়ের জাতকে পৃথিবীর বুকে এভাবে তাচ্ছিল্য করে পাঠিয়েছেন।
ভেবে দেখুন আপনার কিছু রোজগারের বিপরীতে আপনার স্ত্রী আপনার ঘর দেখভাল করে, আপনার সন্তান ধারন সহ লালন পালন করে এমনকি নিজো চাহিদার সলিল সমাধিতে পুষ্প অঞ্জালি দিয়ে ঘরের যাবতীয় নোংরা কাজগুলো করেও সে প্রাণবন্ত থাকে! অত:পর আপনাকে ভালোবাসার আঁচলেও বাধে। তার বিনিময়ে আপনি রোজগার করেন আর তাকে ভাত কাপড় দেন, এইত ? যদি মুর্খ হয়ে থাকেন তাহলে অংক কষে হিসাব করে দেখুন কে কার কাছে কতটুকু ঋণী ? আর যদি বিবেকবান ও জ্ঞানী হয়ে থাকেন তাহলে এসব হিসেব না করে ভাবুন এটাই একজনের প্রতি আরেকজনের অধিকার যেখানে কেউ কাউকে ছোট করার কোন বিষয় নেই। আরেকটি কথা- মেয়েদেরকে দয়া করার জন্য স্বয়ং বিধাতাই আছেন উপরে, তাই মেয়েদের প্রতি পুরুষকূলের আন্তরিক হলেই চলবে, নিজেদেরকে মেয়েদের বিধাতা ভেবে দয়াবান বা সদয় হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, তাহলে ইহকাল ও পরকাল উভয় স্থানেই বিপত্তি আরও বাড়বে বই কমবেনা।
প্রিয় পাঠক, এবার যবনিকা টানবই আর দীর্ঘ করবনা। আসলে এমন একটি সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে বলছি যার কোন কূল কিনারাই নেই তবুও কূল খুঁজে বের করতেই হবে কারন মহা সমুদ্রেরও কূল আছে। এবার মেয়েদের বলছি বা আমাকে আমিই বলছি- চলুন আমরাই ছেলেদের প্রতি দয়াবান হই এবং ভালোবাসা ও সহযোগীতা দুটোই তাদের দেই। ছেলেরা হয়ত জানেনা- যে বিধাতা মেয়েদের প্রতি দয়াবান হওয়ার ক্ষমতা পুরুষকূলকে না দিলেও পুরুষকূলকে দয়া করার কিছুটা ক্ষমতা হলেও বিধাতা কিন্তু মেয়েদের দিয়েছেন, কারন মেয়েদের আসল নাম- ‘মা’ । ধন্যবাদ সবাইকে।
লেখিকা-
মাষ্টার্স বর্ষ – সমাজ কল্যাণ অনুষদ, ফেনী গভ: কলেজ, চট্রগ্রাম ।
————————————————–
লেখিকার প্রেরণকৃত লেখা ও তথ্য বিবেচনা পূর্বক বিষয়টিকে ফিচার আকারে জনসংযোগ.কমের লাইফষ্টাইল ও পরামর্শ বিভাগ খেকে প্রকাশ করা হল-
jsongjug@gmail.com
fb.com- @jshongjog
পাঠকের মন্তব্য