ধর্ম ও জীবন/জনসংযোগ প্রতিবেদন- জনসংযোগ নিউজ/হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী (রহ:/২৩-০১-২০২১
। এম আনিছুর রহমান।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
রুহানী জগতের খাঁটি প্রজ্ঞাদাতা হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী (রহ:) এর জন্মসাল সম্মদ্ধে সুসাহিত্যিক লেখকদের মাঝে বেশ মত পরিলক্ষিত হলেও জন্মতারিখ সম্মদ্ধে সকলের মতামত এক ও অভিন্ন। তাদের মধ্যে সিয়ারুল আকতাবের লেখকের মতে সত্যের অগ্রনায়ক হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ(রহ:) এর জন্ম হয় ৫৩৭ হিজরী/১১৩৮ খ্রিষ্টাব্দে এবং সাজিনাতুন আসফিয়ার লেখক উল্লেখ করেছেন যে আলেম কূলের শিরমনি হিজরী ৫৩০ সনে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের উভয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী খাজা গরীবে নেওয়াজের জন্মসালের মধ্যে সাত বছরের পার্থক্য থাকলেও তারা উভয়েই জন্ম তারিখ তথা ১৪ই রজব সোমবারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এছাড়াও আরও বহু লেখকের বহু গ্রন্থে জন্মসাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও জন্ম তারিখ নিয়ে কোন মতভেদ লক্ষ করা যায়নি। তিনি সিস্তানের গনজর পল্লীতে তথা পারস্যের শকস্থান রাজ্যের চিশতীতে তথা পবিত্র আরবের কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেনন। তিনি মঈন আল দীন হাসান সিজ্জী, মঈন আল দীন চিশতী,শেখ মঈন আল দীন সহ আরও বহু নামে পরিচিত ছিলেন। তার পিতার নাম সৈয়দ খাজা গিয়াস উদ্দীন এবং মাতার নাম উম্মুল ওয়ারা মাহেনূর। তিনি পিতার দিক দিয়ে শের-ই-খোদা হযরত আলীর চশতুর্দশতম এবং মাতার দিক থেকে হযরত মা-ফাতেমার দ্বাদশতম বংশধর ছিলেন। জন্মের পর নবজাতকের নাম মঈনুদ্দীন রাখা হলেও তার পিতামাতা উভয়েই তাকে হাসান নামে ডাকতেন তাই ইতিহাস বেক্তারা হাসান শব্দটিকে তার আসল নামের সাথে যুক্ত করে তার নামকে মঈনুদ্দীন হাসান বলে উল্লেখ করেছেন।
বাল্যকাল
ইতিহাস পাঠে জানা যায় সত্যের নায়ক খাজা গরীবে নেওয়াজ শৈশব হতেই তার মার্জিত গতিবিধি ও সুন্দর আচার আচরন দারা প্রমানিত হত যে, এই শিশু অদূর ভবিষ্যতে এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে এক মহৎ কার্য সম্পাদন করবেন। তার বাল্যকালের ঘটনাগুলোও ছিল বিস্ময়কর ও অত্যাশ্চর্য। তার বয়স যখন মাত্র তিন-চার তখনই তিনি গরীব অসহায় ও মিসকিনদের কথা ও কাজের মাধ্যমে সাহায্য বা সহযোগীতা করতেন। তার বয়স যখন সাত বছরে উপনীত হয় তখন থেকেই তিনি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন এবং তখন থেকেই নিয়মিত রোজা রাখতেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও জিকিরের মজলিসে যোগ দিতেন। মাত্র সাত বছর বয়সেই তিনি কোরআনের হাফেজ হয়েছিলেন।
ছাত্রজীবন ও অধ্যাবসায়
তিনি পারস্যে বেড়ে উঠেন। পনেরো বছর বয়সে তার পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার পিতার কাছ থেকে একটি বাতচক্র (উইন্ডমিল) ও একটি ফলের বাগান উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন। কিংবদন্তী অনুসারে, একদিন তিনি তার ফলবাগানে জল দিচ্ছিলেন তখন তার ফলবাগানে আসেন বিখ্যাত সুফি- শেখ ইব্রাহীম কুন্দুজী (কুন্দুজী নামটি জন্মস্থান কুন্দুজ থেকে এসেছে)। যুবক মঈনুদ্দীন তটস্থ হয়ে যান এবং কুন্দুজীকে কিছু ফল দিয়ে আপ্যায়ন করেন। এর প্রতিদান স্বরূপ কুন্দুজী মঈনুদ্দীনকে এক টুকরা রুটি দেন ও তা খেতে বলেন। এরপর তিনি তার সম্পত্তি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গরীবদের মাঝে বিতরণ করে দেন। অত:পর তিনি বিশ্বের সকল মায়া ত্যাগ করে জ্ঞানার্জন ও উচ্চ শিক্ষার জন্য বুখারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
সেই সময় সমরকন্দ ও বোখারা ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত ছিল। বড় বড় মোহাদ্দেস, ফকীহ,দার্শনিক ও ইসলামিক চিন্তাশীল পন্ডিতগণ সেখানে বাস করতেন। খাজা সাহেব প্রথমে কোরআন শরীফ হেফজ করলেন অত:পর তাফসীর,হাদিস,ফেকাহ,ওসুল মানতেক ইত্যাদি বিষয় অধ্যয়ন করলেন। সাধারণ মানুষের চেয়ে তার স্মৃতিশক্তি ছিল আরও প্রখর। তিনি কোরআন শরীফ হেফজ করতে মাত্র গুটি কয়েকদিন সময় নিয়েছিলেন। বিশেষত: তার পেছনে কোন আকর্ষণ ছিলনা বলেই তিনি একনিষ্ঠভাবে অধ্যয়ন ও সাধনা করতে পারতেন ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি প্রচুর দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যাহেরী বিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করেও তার তৃষ্ণাতুর মনের জ্ঞান পিপাসা নিবৃত্ত হলনা। আধ্যাত্বিক জগতের বিশেষ জ্ঞান অর্জনের আকাঙ্খা তাঁকে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলতে দিলনা তাই তিনি বোখারা পরিত্যাগ করে আবারও নিরুদ্দেশের পথে রওনা হলেন।
শিষ্যত্ব গ্রহণ
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন। সেখানে চিশতীয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ সুফি সাধক খাজা উসমান হারুনীর নিকট মুরীদ হন/শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার সেবায় ২০ বছর একাগ্রভাবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে উসমান হারুনী তাকে খিলাফত বা সুফি প্রতিনিধিত্ব প্রদান করেন। খাজা উসমান হারুণী (বহ:)এর কৃচ্ছ সাধনার ধারা ছিল বিস্ময়েরও বিস্ময় যা শুনলে অবাক হতে হয়। কথিত আছে সত্তর বছর বয়স যাবত তিনি কখনও শয়ন করেন নাই। প্রত্যহ দিবারাত্রে তিনি দুইবার করে কোরআন খতম করতেন। কখনও কখনও তিন দিন অন্তর আবার কখনও কখনও পাঁচ-সাত দিন অন্তর তিনটি অঙ্গুলিতে যে পরিমাণ খাদ্য উঠত এইরুপ তিন চারটি লোকমা আহার করতেন। তিনি পানীয়ও তেমন পান করতেননা, খুব বেশী হলে সপ্তাহে একদিন মাত্র এক ঢোক পানি পান করতেন। এইভাবে অকল্পনীয় কৃচ্ছ সাধনার দ্বারা তিনি রহানী ক্ষমতা এমনভাবে বৃদ্ধি করেছিলেন যার ফলে তিনি স্বীয় যমানার সর্বশ্রেষ্ঠ ওলী-আল্লাহ রুপে পরিগণিত হয়েছিলেন। হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ দুনিয়ার নানাস্থানে যোগ্য মাশায়েখ খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে হযরত উসমান হারুণী (বহ:)এর মত ব্যক্তিকে লাভ করে তার কাছেই দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী বহু দেশ ভ্রমণ করেন। তৎকালীন বিভিন্ন জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, দার্শনিকসহ অসংখ্য সুফি সাধকের সাথে সাক্ষাত করেন বলে নানা গ্রন্থে তথ্য পাওয়া যায়। তিনি ইরাকের বাগদাদে আবদুল কাদির জিলানীর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। তার জীবনীতে বর্ণিত আছে যে, এ সময় আব্দুল কাদির জিলানী তাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব শায়েক শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীকে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো। তিনি আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোর পরে দিল্লী হয়ে আনা সাগরের তীরে আজমীরে বসতি স্থাপন করেন।
আনা সাগরের তীরে অবস্থান, ধর্ম প্রচার,
পৃথ্বিরাজ,শিহাবুদ্দীন মুহাম্মদ ঘোরী ও আজমীর শরীফ
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে কিংবদন্তিতুল্য একজন ঐতিহাসিক সুফি ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বীয় পীর উসমান হারুনীর নির্দেশে ভারতে আগমন করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং তারই মাধ্যমে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। তার বিখ্যাত একটি গ্রন্থ হল “আনিসুল আরওয়াহ“।
সপ্তম শতকে অজয় পাল চৌহানের হাতে গড়ে ওঠে আজমীর শহর। কারো মতে আজমের নামেই শহরের নামকরণ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন অজয় মেরু পর্বত থেকেই আজমের নাম হয়েছে। পূর্বের অজয় মেরুর দূর্গটিরনাম এখন তারাগড় দূর্গ। ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে পৃথ্বিরাজ চৌহাননকে হারিয়ে গজনীর শিহাবুদ্দীন মোহাম্মদ ঘোরী আজমীর দখল করেন। সেই থেকে শুরু হয় ক্ষমতা দখলের লড়াই।
ইতিহাস বিশ্লেষনে জানা যায় গজনী বংশের পতনের সাথে সাথে ঘোরী বংশের অভ্যুদয় হতে থাকে। ঘোরী বংশের তরুণ যুবক শিহাবুদ্দীন মোহাম্মদ ঘোরী ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও বিচক্ষণ যোদ্ধা। তিনি সবসময়ই তার মনের মধ্যে ভারত আক্রমণ করে তখনকার রাজপুত অত্যাচারী রাজা পৃথ্বিরাজ কে পরাজিত করে সেখানে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার ইচ্ছে পুষছিলেন। তিনি কোন তোয়াক্কা না করে সামান্য কিছু সৈন্য নিয়েই পৃথ্বিরাজ কে আক্রমণ করেন। ধুর্ত পৃথ্বিরাজ ঘোরীর সাহস ও যুদ্ধ নৈপূন্যের সমস্ত বিষয়েই অবগত ছিলেন বিধায তিনি সম্মিলিত ভারত বাহিনী গঠন করে সবসময়ই ঘোরীর আক্রমনের জবাবের জন্য প্রস্তুত ছিলেন তাই প্রথম দফায় পৃথ্বিরাজের সাথে ঘোরীর শোচনীয় পরাজয় ঘটে। ঘোরী এই পরাজয়ের গ্লানী তার হৃদয় থেকে মুছতে পারেননি কখনও। একদিন হঠাৎ তিনি এব্যাপারে স্বপ্নে নির্দেশ পেলেন ফলে অদম্য ঘোরী আবারও ভারত আক্রমণ করেন এবং সামান্য সৈন্য বাহিনী ও দূর্বল যুদ্ধ সরঞ্ঝাম নিয়েই শক্তিশালী পৃথ্বিরাজকে পরজিত করে নিজ হাতে তাকে হত্যা করেন।
বর্ণিত আছে হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ যেদিন পৃথ্বিরাজকে অভিশাপ দিয়েছিলেন ঠিক সেইদিনই মোহাম্মদ ঘোরী স্বপ্নে পৃথ্বিরাজকে আক্রমণের নির্দেশ পেয়েছিলেন। পৃথ্বিরাজের রাখালদের উৎপীড়নে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আনা সাগরের তীরবর্তী ঝর্ণার কাছে আস্তানা স্থাপন করেন। সাগরের দুই তীরে বহু সংখ্যক মন্দির ছিল এবং প্রায় তিন শতাধিক পূজারী এখানে নিয়মিত পূজা করত। সাধককূলের শিরমনির আযানের ধ্বনি শুনে পূজারীরা রাজা পৃথ্বিরাজকে নালিশ করল। তৎক্ষণাৎ পৃথ্বিরাজ তার রাজকীয় সৈন্য পাঠাল খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী কে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। রাজার বাহিনী তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করছিল কিন্তু তিনি আল্লাহর ধ্যাণে মগ্ন থাকায় সেগুলো শুনতে পাননি। রাজ সৈন্যবাহিনী যখন এগুতে থাকল তখন হযরত খাজা তাদেরকে এগুতে নিষেধ করলেন কিন্তু তারা নিষেধ অমান্য করে এগুতেই লাগল। সাধককূলের শিরমনি তখন তাদের দিকে এক মুঠো ধুলো নিক্ষেপ করলেন। সঙ্গে সঙ্গে সেসব সৈন্যদের মাঝে কেউ অন্ধ, কেউ বধির, কেউ খঞ্চ আবার কেউ কেউ মাতাল হয়ে গেলেন। পৃথ্বিরাজ একথা শুনে হযরত খাজাকে যাদুকর আখ্যা দেন এবং তার রাজ্যের বিখ্যাত দুই যাদুকর রামদেব ও অজয় পালকে তলব করেন এবং তাদেরকে খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:)কাছে প্রেরণ করেন। তারা সেখানে পৌঁছামাত্রই গরীবে নেওয়াজ তার ধ্যান ভংগ করে তাদের প্রতি এক জ্যোতির্ময় দৃষ্টি স্থাপন করেন। রামদেব ও অজয় পাল এতে মুগ্ধ হয়ে উভয়েই ইসলাম গ্রহণ করেন। এর পরবর্তীতে হযরত চিশতী রাজা পৃথ্বিরাজকে ইসলাম গ্রহণের বার্তা দিয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। এতে পৃথ্বিরাজ ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। এটিই ছিল পৃথ্বিরাজকে অভিশাপ দেওয়ার প্রথম কারন।
দ্বিতীয়ত- পৃথ্বিরাজ তখন খাজা মঈনুদ্দীনের এক ভক্ত রাজ-কর্মচারীকে চাকরী থেকে বরখাস্ত করেছিল। এ কথা শুনে তিনি পৃথ্বিরাজকে এক টুকরো কাগজে লিখে পাঠান ‘‘ আমি তোমাকে জীবিত অবস্থায় মুসলিম সৈন্যদের হাতে সোপর্দ করলাম এবং সেইদিনই শাহাবুদ্দীন মোহাম্মদ ঘোরী পৃথ্বিরাজকে আক্রমণের স্বপ্ন দেখেন ও তাকে পরাজিত করে হত্যা করেন এবং খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর দেয়া অভিশাপ সত্য প্রমাণিত হয়। এছাড়াও তার জীবদ্দশায় এমন বহু অলৌকিক ঘটনা তিনি দেখিয়েছেন এবং ভারত বর্যে ইসলাম স্থাপন করে আজও চীরস্বরণীয় হয়ে আছেন এবং কালের সূর্যাস্ত পর্যন্তও থাকবেন।
১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তৈমুর লঙ ভারত আক্রমন করে অবাধে লুটতরাজ, খুন-জখমের বন্যা বইয়ে দিয়ে অত্যাচারের রোলার চালিয়ে চলে যাবার পর রানা কুম্ভ কিছুদিন আজমীরের রাজা হন। কিন্তু ১৪৭০ থেকে ১৫৩১ পর্যন্ত আজমের মলোয়ার সুলতানদের দখলে থাকে। ১৫৫৬ সালে আজমের একটি দূর্গও গড়ে তোলেন। তবে তিনি স্বয়ং এখানে আসেন ১৫৬১ তে এবং এখানে তার কীর্তি তুলে ধরেন নানা দূর্গ, মসজিদ ও স্থাপত্য শিল্পকলার মাধ্যমে। তার সেই সব স্থাপত্যের নিদর্শন আজও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
সম্রাট আকবরের ধর্মগগুরু খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে মহম্মদ ঘোরীর সঙ্গে ভারতে আসেন। তিনি মক্কা হয়ে মদীনায় যাওয়ার পথে আল্লাহর নির্দেশ পান যে, তাকে ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্মের মহাত্ত প্রচার করতে হবে। তিনি তখন ভারতে আসেন। এই আজমীরেই আস্তানা করে বিভিন্ন স্থানে ইসলাম ধর্মের প্রচার করতে থাকেন। ১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ৯৪ বছর বয়সে এই আজমীরেতেই তার জীবনাবসান হয়। এখানেই তাকে সমমাধিস্থ করা হয়। তার এই সমাধিস্থলের নামই হচ্ছে আজমীর শরিফ।
ইতিহাস পাঠে জানা যায় খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:) এর তিন পূত্র ও এক কণ্যা ছিল এবং তারা প্রত্যেকেই কামালিয়াতেই শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। তার প্রথম স্ত্রীর নাম ছিল বিবি আমাতুলাহ এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ছিল বিবি ইসমত। তার সন্তানগণ যথাক্রমে- ১. আবু শায়েখ খাজা ফখরুদ্দীন ২. খাজা শায়েখ হুচ্ছাম উদ্দীন ৩. আবুল খায়ের খাজা গিয়াসউদ্দীন এবং একমাত্র কন্যার নাম ছিল হাফেজ জামিলা। তাদের মধ্যে জেষ্ঠ পুত্র খাজা ফখরুদ্দীন এর মাধ্যমে তার বংশবিস্তার হয়।
উল্লেখ্য- দ্বিতীয় পূত্র হযরত খাজা শায়েখ হুচ্ছাম উদ্দীনই হলেন হযরত খাজা শরফুদ্দীন চিশতী (রহ:) যিনি ওলি বাংলা তথা এই বাংলার দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলেন এবং এখানেই ইসলাম প্রচার ও কায়েম করেছিলেন। তার রওজাটিই ঢাকার বুকে হাইকোর্ট মাজার নামে পরিচিত।
[ বি:দ্র: - জনসংযোগ.কমের ‘‘ধর্ম ও জীবন’’ বিভাগের পরবর্তী প্রতিবেদনটি থাকছে ওলি বাংলা হযরত খাজা শরফুদ্দীন চিশতী (রা:) এর জীবনী ও আদর্শের উপড়। অপেক্ষায় থাকুন- ]
সম্পাদক ও প্রকাশক- দৈনিক জনসংযোগ.কম
—————————————
এক নজরে আজমীর শরীফ যাওয়ার নির্দেশনা-
আজমীর যেতে প্রথমে যেতে হবে কলকাতা। শহরটির শিয়ালদহ স্টেশন থেকে সরাসরি আজমীরের ট্রেন পাওয়া যায়। এর মধ্যে অনন্যা এক্সপ্রেস উল্লেখযোগ্য। এই ট্রেনে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩৪ ঘণ্টা। এছাড়াও শিয়ালদহ স্টেশন থেকে আজমীর সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসে যেতে পারেন, সময় লাগবে ২৭ ঘন্টা ৪০ মিনিট। ভাড়া এসি থ্রী-টায়ার ২৮০০ রুপি, রাত ১১টা ০৫ মিনিটে ছেড়ে যায়।। ক্ষেত্রবিশেষে সময় বেশিও লাগতে পারে। ট্রেনটি আজমীরের রেল স্টেশনে নামিয়ে দেয়ার পর মাজার সড়কে যেতে অটো রিকশায় ৩০ রুপি, রিকশায় ২০ রুপি লাগবে। এছাড়াও জয়পুর থেকে প্রাইভেট গাড়ী ভাড়া করে যেতে পারেন। সময় লাগবে ২ ঘণ্টা। তবে বিমানে যাতায়াত করলে প্রথমে দিল্লী যেতে পারেন এরপর দিল্লী থেকে টেক্সি যোগে আজমীর পৌঁছাতে সর্বোচ্চ দুই ঘন্টা লাগতে পারে।
হোটেলে থাকতে হলে কিছুটা সমস্যা পড়তে হতে পারে। কারণ বিদেশি হলেই সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনা মতো একটি অনলাইন ফরম পূরণ করতে হয় যা ‘‘C’’ ফরম নামে পরিচিত। এই পদ্ধতি যদি কোনো হোটেলে না থাকে তাহলে বিদেশিদের এসব হোটেল কর্তৃপক্ষ রাখতে চাইবে না। মাজার রোড থেকে সোজা বের হয়ে একদম শেষ প্রান্তে বাম দিকে কয়েক পা ফেললেই চোখে পড়বে রিগালসহ বহু হোটেল। বাংলাদেশিরা কেউ আজমীরে এলে সাশ্রয়ী ও বেশি দামে দু’ধরনের কক্ষই পাবেন। ১৫০০ রুপি থেকে শুরু করে ৪৫০০ রুপিতে এসি স্যুইট রুমও মিলবে।
তথ্যসূত্র- [ মাওলানা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দকী রচিত গ্রন্থ- “খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:)’’থেকে শীর্ষভাগ তথ্য ] এবং দৈনিক আগামীর সময় ও উইকিপিডিয়া।
Email- desk@prnews1.com
fb.com- @prnews1.com.bd
◆◆◆
ভিশন অব জনসংযোগ নিউজ
বিস্তারিত > https://www.jonosongjognews.com/753
পাঠকের মন্তব্য