সংযোগ খবর-জাতীয়/জনসংযোগ.কম/সূত্র-দৈনিক যায়যায়দিন/প্রকাশ-২৩জানুয়ারি,২০২০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে ঘর দিতে পারার চেয়ে বড় কোনো উৎসব আর কিছুই হতে পারে না। সবার জন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করাই হবে মুজিব বর্ষের লক্ষ্য, যাতে দেশের প্রত্যেক মানুষ উন্নত জীবন যাপন করতে পারেন।’
প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার সকালে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে অনুষ্ঠানে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয়। সরকার মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য ১ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বাড়িগুলো নির্মাণ করেছে। একই সঙ্গে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ প্রকল্প মুজিব বর্ষ উদযাপনকালে ২১টি জেলায় ৩৬টি উপজেলায় ৪৪টি প্রকল্পের অধীনে ৭৪৩টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রাম, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুর গ্রাম, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা উপকারভোগীদের মধ্যে বাড়ির চাবি ও দলিল হস্তান্তর করেন। পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ‘এভাবেই মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পুরো বাংলাদেশের গৃহহীনদের নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া হবে, যাতে দেশের একটি লোকও গৃহহীন না থাকে, যাতে তারা উন্নত জীবন যাপন করতে পারেন, আমরা সে ব্যবস্থা করে দেব। যাঁদের থাকার ঘর নেই, ঠিকানা নেই, আমরা তাঁদের যেভাবেই হোক, একটা ঠিকানা করে দেব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুজিব বর্ষের অনেক কর্মসূচি আমাদের ছিল। সেগুলো আমরা করোনার কারণে করতে পারিনি। তবে, করোনা একদিকে আশীর্বাদও হয়েছে। কারণ, আমরা এই একটি কাজের দিকেই (গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়া) নজর দিতে পেরেছি। আজকে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও সীমিত আকারে আমরা করে দিচ্ছি এবং একটা ঠিকানা আমি সব মানুষের জন্য করে দেব। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, যখন এই মানুষগুলো ঘরে থাকবেন, তখন আমার বাবা এবং মা—যাঁরা সারাটা জীবন এ দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, তাঁদের আত্মা শান্তি পাবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তাঁদের আত্মাটা অন্তত শান্তি পাবে। কারণ, এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই ছিল আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একমাত্র লক্ষ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমি সবচেয়ে খুশি যে এত অল্প সময়ে এতগুলো পরিবারকে আমরা একটা ঠিকানা দিতে পেরেছি। এই শীতের মধ্যে তারা থাকতে পারবে। কেননা, আমাদের যাঁরা শরণার্থী (রোহিঙ্গা), তাঁদের জন্যও আমরা ভাসানচরে ঘর করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী এই স্বল্প সময়ে সফলভাবে গৃহনির্মাণ ও কাগজপত্র তৈরির মতো জটিল কাজ ঠিকাদার নিয়োগ না দিয়ে সম্পন্ন করতে পারায় জেলা প্রশাসন, তার দপ্তর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘এই গৃহায়ণ প্রকল্পে কোনো শ্রেণি বাদ যাচ্ছে না, বেদে শ্রেণিকেও আমরা ঘর করে দিয়েছি। হিজড়াদের স্বীকৃতি দিয়েছি এবং তাঁদেরও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দলিত বা হরিজন শ্রেণির জন্য উচ্চমানের ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। চা–শ্রমিকদের জন্য করে দিয়েছি। এভাবে প্রতিটি শ্রেণির মানুষের পুনর্বাসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০১–০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ’৯৭–পরবর্তী সময়ে চালু করা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, ২০০১–০৮ পর্যন্ত সময় বাংলাদেশের জন্য একটি অন্ধকার যুগ ছিল। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্যের কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। সে সময়ে বিরোধী দলে থাকলেও বিনা কারণে কারাবন্দী হওয়ার স্মৃতিচারণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্দী হয়ে গেলাম আমি। তারপরও আমি আশা ছাড়িনি, আল্লাহ একদিন সময় দেবে এবং এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারব।’
গণভবনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) এবং সারা দেশের ৪৯২টি উপজেলা প্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিল। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে। অনুষ্ঠানে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়।
যাযাদি/ এস
———————-
jsongjugnews@gmail.com / fb.com _ @jshongjog
পাঠকের মন্তব্য