ফিচার-রাজনীতি / বাংলাদেশ ছাত্রলীগ / জনসংযোগ.কম / ২৫-০৭-২০২০
। এম আনিছুর রহমান ।
[১] ১৩ই জুলাই,২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৭ তম জাতীয় সম্মেলনকে উপলক্ষ করে গত ৭ই জুলাই,২০১১ তারিখে আয়োজন করা হয়েছিল “ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অতীত ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যত করণীয় “ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক । উক্ত সম্মেলনে বদিউজ্জামান জামান সোহাগ সভাপতি ও সিদ্দিকী নাজমুল আলম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন । এক ঘন্টার টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণের লক্ষ নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এই আয়োজনটি করেছিল আমার স্বত্তাধিকারী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান- আই কন্টাক্ট মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন (Eye Contact media & communication) । অনুষ্ঠানটির সভাস্থল ও শুটিং স্পট ছিল বাংলাদেশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জ । সেদিন ভিআইপি লাউঞ্জ এর স্বাভাবিক ডিজাইনে পরিবর্তন এনে শুধুমাত্র এই বৈঠকের জন্য আরও ভিন্নরুপে প্রস্তুত করা হয়েছিল এই ভ্যেণুকে । উক্ত বৈঠকে বক্তা বা আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মানিত মোট বিশ জন সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে । মূল উপস্থাপক ছিলেন দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক ও বর্তমানে জনপ্রিয় টিভি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শ্রী শ্যামল দত্ত এবং অনুষ্ঠান বিশ্লেষক হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য জনাব আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক স্যার এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কিংবদন্তী সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম জনাব আব্দুর রাজ্জাক সাহেবকে । অনুষ্ঠানের শুটিং পরিচালনা প্যানেলের উপদেষ্টা ছিলেন বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক জনাব কাজী জাফর সিদ্দিকী এবং প্যানেল পরিচালক ছিলেন বিটিভির সাবেক নির্বাহী প্রযোজক জনাব বদরুজ্জামান ।
[২] অনুষ্ঠানটির বিশেষ তত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন বিটিভির প্রোগ্রাম অফিসার জনাব মমতাজ আবেদীন মোহন এবং মূল আয়োজক ও নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে আমি ছিলাম প্রধান সমন্বয়ক। উক্ত অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিজস্ব কোন উদ্যোগ বা আয়োজন ছিলনা। মূলত: এটি ছিল প্যাকেজ প্রোগ্রামের আওতায় একটি বেসরকারী অনুষ্ঠান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণের একটি স্বাভাবিক কার্যক্রম । অনুষ্ঠানটির প্রাথমিক পরিকল্পনা ও শুটিং ব্যবস্থাপনার আয়োজন থেকে শুরু করে অসমাপ্ত শুটিং কার্যক্রম পর্যন্ত ঘটে যাওয়া কিছু অব্যক্ত চিত্র তুলে ধরার প্রয়াসে এবং অতীতের ভুলত্রুটি সংশোধন পূর্বক অনুষ্ঠানটি যেন পূঁণরায় আয়োজনে সংশ্লিষ্টদের সার্বিক সহযোগীতা পাওয়া যায়, মূলত: সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি আমার এই অব্যক্ত অভিব্যক্তি তুলে ধরছি ।
[৩] এই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের ব্যাপারে আমি প্রথম পরিকল্পনা করি ২০০৬ সালের ৪ঠা জানুয়ারী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলন সমাপ্তি ঘোষনার পরে, যখন নতুন নিয়মের কারনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে আমাদের বিদায় চূড়ান্ত হয়ে গেল । আমি তখন ঢাকা মহানগর উত্তরের বৃহত্তর উত্তরা থানা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলাম এবং ডিসিসির ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম । সেই সূত্রেই আমি ২০০৬ সালের ৪ঠা জানুয়ারী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৬তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীও ছিলাম, আমার প্রার্থীতা ফরম নাম্বার ছিল ২২৪ ।
[৪] আমাদের প্রাণপ্রিয় অভিবাবক জননেত্রী শেখ হাসিনার চূড়ান্ত স্বিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষে সেদিন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউটের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জনাব জাহাঙ্গীর কবির নানক ভাইয়ের এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক নির্দেশণার পর অন্যান্য সবার মত আমিও স্ব-ঘোষনার মাধ্যমে আমার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করি । ঢাকা উত্তরার লোকাল ছাত্র রাজনীতিতে পদার্পণ সহ আমাকে তখন সার্বিক সহযোগীতা করতেন আমার শ্রদ্ধেয় বড়ভাই জনাব মহি উদ্দিন মহি, যিনি সেই সময় বৃহত্তর উত্তরা থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন এবং বর্তমানে তিনি উত্তরা পূর্ব থানা আওয়ামী লীগ এর দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দলীয় দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে সব সময় সাহসী সহযোগীতা ও আন্তরিকতায় ছিলেন বৃহত্তর উত্তরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব আতিকুর রহমান মিলন ভাই, যিনি বর্তমানে উত্তরার উত্তরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলীয় দায়িত্ব পালন করছেন ।
[৫] সেই সম্মেলনে মহি ভাইও সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন এবং তিনিও তখন তার প্রার্থীতা একইভাবে প্রত্যাহার করে নেন । উল্লেখ্য- মহি ভাইকে সভাপতি করে দেশের ইতিহাসে কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কোন ছাত্রলীগ কমিটি হয় । ২০০১-এ তখন উত্তরার এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সেই কমিটি অনুমোদন দেন বাহাদুর-অজয় পরিষদ । আমি ছিলাম সেই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক । তবে তখনও আমাদের বয়স কিছুদিন হলেও ছিল, যদি আমরা প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে নির্বাচন করতাম তাহলে উভয়েই অন্তত (১০০+) ভোট হলেও ঢাকা মহানগর সহ সারাদেশ থেকে পেতাম, এইটুকু গ্রাউন্ড তখন আমাদের ছিল ।
[৬] তখন জোট সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিটি দলীয় আন্দোলনেও আমাদের নিয়মিত উপস্থিতি ছিল কিন্তু আমরা ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবেই খুশী মনেই বিদায় নিয়েছিলাম । তখন নেত্রীর স্বিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত স্বাগত জানিয়ে আমরা নিজেদেরকে নিজেরাই অটো সাজেসন দিলাম যে, ছাত্রলীগ থেকে বিদায় নেয়ার পূর্বে আমরা ২৬তম সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রার্থী হয়েছিলাম, এটাই বা কম কিসের !! তাই বিদায় বেলায় আমাদের কোন দু:খ ছিলনা কারন যতই তর্ক বিতর্ক থাকনা কেন ছাত্রলীগ থেকে দু:খ নিয়ে বিদায় নেয়া যাবেনা, মূলত এই অটো সাজেসনের জন্য আমরা খুশী মনেই বিদায় নিয়েছিলাম এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিয়ে জাতীয়ভাবে কোন ইতিহাস রচনা করব, এই মর্মে শপথ নিলাম । আমাদের উভয়কে প্রার্থীতা নিশ্চিতকরন সহ নির্বাচন সংক্রান্ত সকল বিষয়ে সবচেয়ে বেশী সহযোগীতা করেছিলেন জননেত্রীর একান্ত স্নেহভাজন জনাব মাহাবুব হাসান কাবুল ভাই, যিনি বাংলাদেশ যুবমহিলা লীগের সভাপতি মিসেস নাজমা আক্তার আপার বড় ভাই ।
[৭] আমরা উভয়েই তাদের একান্ত স্নেহভাজন ছিলাম এবং এখনও আছি । সেইদিন কাবুল ভাই বললেন মন খারাপের কিছু নেই, চল আমার সাথে । তিনি তৎক্ষণাৎ আমাদের নিয়ে সোজা চলে গেলেন সুধা সদনে এবং জননেত্রীর একেবারে সামনে নিয়ে বসিয়ে দিলেন এবং পরিচয় করিয়ে দিলেন নিজের ভাই হিসেবে । সেইদিনই প্রথম জননেত্রীর একেবারে কাছে বসে তার মূল্যবান কথাগুলো শুনতে পারার সৌভাগ্য হয়েছিল, এ জন্য আমরা সারা জীবনই কাবুল ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ । সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে আমাদের মনে আর কোন দু:খই রইলনা, আমরা আনন্দচিত্তেই ছাত্রলীগ থেকে বিদায় নিলাম এবং বিজয়ী রিপন-রোটন পরিষদে পোষ্ট পাওয়ার জন্যও আর কোন তদবীর বা চেষ্টা করিনি অর্থাৎ ছাত্রলীগ থেকে এ পর্যন্ত প্রাপ্তিতেই আমরা আমাদের নিজেদের ধন্য মনে করে আগামীর চিন্তায় মগ্ন হয়েছিলাম।
[৮] ক্ষমতাসীন জোট সরকার সেই সময় নানাভাবে স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করার পাঁয়তারা করছিল, এই বিষয়টিই তখন আমাদের একমাত্র আলোচনার ও ক্ষোভের বিষয় ছিল । তখন হঠাৎ-ই মনে হল আমরা বঙ্গবন্ধুর একটি কথাকে জাতীয়ভাবে কাজে লাগাতে পারি । তিনি বলেছিলেন “ ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙ্গালীর ইতিহাস “ সেই সূত্রমতে আমরা যাদি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান ও সকল সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে (যারা এখনও বেঁচে আছেন) এক টেবিলে বসাতে পারি এবং যদি সেই বৈঠকে উপস্থিত সবাই সমস্বরে স্বাধীনতার সকল বিষয়ে একসাথে একমত হয়ে তথ্য প্রদান করে আলোচনা করেন তাহলে এটিই হবে দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের চূড়ান্ত ও নির্ভূল ডকুমেন্টারী যা আর বিকৃত করার কোন অপসন কোন বিকৃতকারীর হাতে থাকবেনা এবং দেশের আপামর জনগনের কাছে তা সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত হবে । অতি ছাত্রজীবন থেকেই মিডিয়ার প্রতি আগ্রহ ছিল বিধায় এ জগতে তখন থেকেই মোটামুটি যোগাযোগ ছিল । আমি তখন বেশ কয়েকজন টিভি অনুষ্ঠান নির্মাণকারীর সাথে এ ব্যাপারে কথা বললাম কিন্তু চরমভাবে ব্যার্থ হলাম কারন ক্ষমতাসীন জোট সরকারের আমলে এই অনুষ্ঠান কোনভাবেই বিটিভিতে প্রচার করা সম্ভব নয়। তাছাড়া বিরুধীদলের এ সকল রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন পাওয়াও খুবই ডিফিকাল্ট হবে।
[৯] অন্যদিকে কোন বেসরকারী চ্যানেল এই ধরনের রাজনৈতিক অনুষ্ঠান প্রচার করবেনা, এটা করলে একমাত্র বিটিভি থেকেই নির্মাণ ও প্রচার করতে হবে। যদি আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে হবে, এর পূর্বে কোনভাবেই কোন নির্মাতাই এই আয়োজন বাস্তবায়ন করার পদক্ষেপ নিবেননা । অত:পর সেখানেই সমাপ্তি ঘটল এই পরিকল্পনার । নেহাত ছাত্রজীবনে এর চেয়ে বেশী কিছু করার ক্ষমতা বা সামর্থ আমার বা আমাদের ছিলনা তখন । এরপর এল ১/১১ এর দু:সহ প্রেক্ষাপট, অনেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল অনেকখানে । অনেকেই জীবনের প্রয়োজনে প্রবেশ করল চাকরিতে । আমিও তখন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় জয়েন করি তার পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচীতেও থাকি কারন ঢাকায় জীবিকা নির্বাহেরও একটি বিষয় আছে যা এড়িয়ে চলা সম্ভব নয় । অযাচিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমল শেষে দেশে যখন আবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করল তখন নতুন দিগন্ত শুরু হল এদেশে । ছেড়ে দিলাম চাকরি এবং নিজেই প্রতিষ্ঠা করলাম আই কন্টাক্ট মিডিয়া নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট হাউজ ।
[১০] পর পর তিন বছরে বেশ কয়েকটি মিউজিক কনসার্ট সহ আয়োজন করলাম আরও কিছু বাণিজ্যিক ইভেন্ট । ২০১১ সালের জুন এ যখন ছাত্রলীগের ২৭তম সম্মেলন এর দলীয় ঘোষনা এল তখনই মাথায় আবার চেপে বসল সেই অনুষ্ঠান আয়োজন ও নির্মাণের ভাবনা । এবার আর অন্য কোন নির্মাতার কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই কারন আমার নিজেরই গড়ে উঠেছে প্রোডাকশন হাউজ । যেইকথা সেই কাজ, আমি আমার সত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান আই কন্টাক্ট মিডিয়ার পক্ষ থেকেই তখন বিটিভিতে এ ব্যাপারে প্রস্তাবনা দিলাম । সবশুনে তৎকালীন মহাপরিচালক জনাব আবু জাফর সিদ্দিকী সাহেব আমাকে যথেষ্ট সহযোগীতা করলেন এ ব্যাপারে। তিনি অনুষ্ঠানটি ধারনকৃত না করে সরাসরি (LIVE) করার প্রস্তাব দিয়ে আমাকে এ ব্যাপারে অনুমোদন দিয়ে দিলেন ।
[১১] শ্যুটিং তারিখ নির্ধারণ হল ৭ই জুলাই ২০১১ এবং ২৭তম সম্মেলন এর তারিখ ছিল ১৩ই জুলাই,২০১১ । যেহেতু এটি একটি জাতীয় ইস্যু তাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জকেই এর শুটিং ভ্যেণু হিসেবে বুকিং দিয়ে অতিথি আমন্ত্রণ ও উপস্থাপক নির্ধারণ সহ অন্যান্য সকল কাজে মনযোগী হলাম । অনুষ্ঠান নির্মাণ সহ প্রচার ব্যবস্থাপনায় স্পন্সর/বিজ্ঞাপনের অর্ডারও ছিল অশানুরুপ । এবার আমন্ত্রিত অতিথিদের লিষ্ট করতে যেয়ে পড়ে গেলাম চরম বিপাকে । কারন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে থাকলেও ইতিমধ্যে অনেকেই চলে গেছেন দলীয় সহ জননেত্রীর মতাদর্শের বাহিরে। অনেকেই ১/১১ এর পক্ষে আবার অনেকেই আছেন যারা সরাসরি পোষ্টেট হয়ে গেছেন বিএনপিতে ।
[১২] সরাসরি রাজনীতিতে জড়িত বলে ফরমাল লিষ্ট আমি মেক করতে পেরেছিলাম কিন্তু যাদেরকে আমন্ত্রণ করাটা ঠিক হবেনা তাদেরকে আমন্ত্রণ না করার মত দু:সাহসও দেখাতে পারছিনা, আমি তখন পড়ে গেছি এক মহাসংকটে । আমি এও বুঝতে পারছিলাম, এ ব্যাপারে সম্মানিত নেতৃবৃন্দের কাউকেই সহযোগীতা করার প্রয়াসে প্রশ্ন করা যাবেনা যে, কোন কোন নেতাকে আমন্ত্রণ করা ঠিক হবেনা । তখন বিটিভির এ ব্যাপারে দায়িত্বরত কর্মকর্তাবৃন্দ সহ আমি ও আমার প্রোডাকশন হাউজের প্রত্যেকেই একটু থেমে যাই এবং জরুরী মিটিং এ বসি । আমরা এই মর্মে স্বিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, যে সকল নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রন করলে কোন বিতর্ক হবেনা আগে আমরা তাদেরকে আমন্ত্রণ জানাই এরপর একবার শুরু হয়ে গেলে অবশ্যই তারা আমাদেরকে এ ব্যাপারে নিজ থেকেই প্রত্যেকে সহযোগীতা করবেন। এভাবেই আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সাহস ও বিশ্বাসের ভিত তৈরী করলাম।
[১৩] এরপর আর কালক্ষেপন না করে সেদিন রাতেই আমন্ত্রণ পত্র তৈরি করে দ্রুত পৌঁছে দিলাম প্রত্যেকের ঠিকানায় । আমাকে এ সকল ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী সহযোগীতা করেছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক জনাব কেএম ওয়াহিদুর রহমান । ওয়াহিদ ভাই লিয়াকত-বাবু পরিষদের সময় থেকেই নিয়মিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়াও এ সকল ব্যাপারে আমাকে বিশেষ সহযোগীতা করেছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী সুমন আহমেদ এবং আমার প্রধান অনুষ্ঠান সহযোগী প্রয়াত এনামুল হক মুন্না । আমন্ত্রণপত্র গুলো প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের ফুল ডকুমেন্টস সহ বুকলেট আকারে প্রেরণ করা হয় যেন প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান আয়োজনের পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রত্যেকেই অবগত হতে পারেন । ২০জুন,২০১১ তারিখের মধ্যে এই কাজগুলো শেষ করা হয় ।
[১৪] বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মোট ২০ জন সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রাথমিক পর্যায়ে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয় । এরই মধ্যে এ বিষয়ে তৎক্ষণাৎ পুরো ছাত্রলীগ অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায় । বিশেষ করে ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ কিংবদন্তী জনাব আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব বাহালুল মজনুন চুন্নু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুর রহমান, সাবেক সভাপতি জনাব মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব অসীম কুমার উকিল, সাবেক সভাপতি জনাব এনামুল হক শামীম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব ইসহাক আলী খান পান্না, সাবেক সভাপতি জনাব বাহাদুর বেপারী এবং সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব রফিকুল ইসলাম কোতয়াল সহ তাদের প্রত্যেকের সাথে এ বিষয়ে আমার নিয়মিত মুঠোফোনে যোগাযোগ অব্যহত থাকে । তারা প্রত্যেকেই এই ব্যাপারে আমাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছিলেন, সহযোগীতাও করেছিলেন ।
[১৫] তাদের মধ্যে জনাব আব্দুর রাজ্জাক, জনাব একেএম এনামুল হক শামীম, জনাব মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী এবং জনাব রফিকুল ইসলাম কোতয়াল এই চার জনের সার্বিক সহযোগীতা ছিল উল্লেখ করার মত । উল্লেখ্য, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে ২৬তম সম্মেলনে সেই ছাত্রলীগ পরবর্তীতে এই ছাত্রলীগ হয়েছিল, যাদের ত্যাগের মাধ্যমে জননেত্রীর স্বিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বাস্তবায়ন হয়েছিল, তাদেরও কিছু বলার থাকতে পারে, এই ভেবে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন স্বরুপ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ব্যতিতও আরো ছয়জন জন সাবেক ছাত্রনেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যারা সে সময় শীর্ষ নেতৃত্বের হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন । তারা হলেন- ১. জনাব রফিকুল ইসলাম কোতয়াল, ২. জনাব আমিনুল ইসলাম আমিন, ৩. প্রয়াত জনাব মাহবুবুল হক শাকিল, ৪. জনাব বললরাম পোদ্দার, ৫. জনাব সাইফুজ্জামান শেখর এবং ৬. জনাব শাহজাদা মহিউদ্দিন ।
[১৬] এ ব্যাপারে একটি কথা না বললেই নয় যে, যেখানে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ করা হচ্ছে সেখানে অন্যান্য পদবীপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানোটা আদৌ যুক্তিযুক্ত হবে কিনা এ বিষয়েও কাউকে সহযোগীতা করার প্রয়াসে প্রশ্ন করে আমরা বিব্রত করিনি । এটা স্পষ্ট যে যদি অন্যান্য নেতৃবৃন্দ আমন্ত্রিত হয় তাহলেত তারা ছাড়াও আরো বহু হেভীওয়েট নেতৃবৃন্দ আছেন, তারা নয় কেন ? তবে এ প্রশ্নের উত্তর ছিল এই; যে তারাই ফাইনালি এই ছাত্রলীগ গঠনে নিজেদের প্রাপ্য পজিশন ত্যাগ করেছিলেন, তাই তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল । তবে আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা সফল হতে যাচ্ছিলাম । কারন প্রত্যেকেই তাদের একান্ত সহযোগীতার হাত প্রসারিত করতে লাগলেন । ধীরে ধীরে অনুষ্ঠানটি একটি ফরমেটে আসতে শুরু করেছিল । বিশেষকরে রাজ্জাক ভাই, শামীম ভাই ও রফিক ভাইয়ের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ।
[১৭] হঠাৎ ২৪ জুন দুপুর বেলায় আমাকে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি জনাব সুলতান মোহাম্মদ মনসূর ভাই ফোন দিয়ে সন্ধায় তাঁর বাসায় দেখা করতে বললেন; আমি যথাসময় তার বাসায় গেলাম । আমি তাঁকেও আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছিলাম কারন তিনি এখন যুক্তফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষের এমপি হলেও তখন তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চলমান সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন । তিনি আমাকে দেখেই গর্জে উঠলেন , বললেন এ কাজ তোমাকে দিয়ে কারা করাচ্ছেন তা আমি জানি । আমি সাবলীল ভাবেই বললাম- লিডার এই অনুষ্ঠানের ইতিহাস অনেক আগের ইতিহাস, একটি আবেগ থেকে তৈরি হয় ২০০৬ সালে যা আপনার জানা নেই, আমাকে দিয়ে এই অনুষ্ঠান কেউ করাচ্ছেননা । আমি সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী হলেও বর্তমানে আমি পেশায় একজন অুনষ্ঠান আয়োজক,নির্মাতা ও সংবাদকর্মী। আমি চাইলে এই ইনভেষ্টমেন্ট দিয়ে একটি নাটক বা একটি টেলিফিল্ম বানিয়েও প্রফিট করতে পারতাম । ছাত্রলীগকে নিয়ে এ অনুষ্ঠান করতে এসেছি তার পেছনে অনেক আবেগ ও ভালবাসা আছে । অনুরোধ করছি এমনকিছু বলে আমাকে থমকে দিবেননা যেন অনুষ্ঠানটিই বন্ধ হয়ে যায় ।
[১৮] তিনি আমাকে বললেন , আমাকে রাজনীতি শিখিওনা । আমি চুপ হয়ে রইলাম, আর কিছু বললামনা । তিনি আমাকে তার মোবাইল ফোনটি দিয়ে বললেন, কথা বল । আমি সালাম দিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাস থেকে বললেন- আমি নূরে আলম সিদ্দিকী বলছি । তুমি এখনই ওয়ালসো টাওয়ারে চলে আস, আমার শ্পেশাল লিফট এর দায়িত্বে থাকা লিফটম্যানকে তোমার কথা বলে রাখছি । সে তোমাকে আমার অফিসরুমে নিয়ে আসবে । আমি বললাম, ওকে লিডার এখনই আসছি । উল্লেখ্য- জনাব নূরে আলম সিদ্দিকী ভাই স্বাধীন বাংলা ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন, বর্তমানে তিনি দেশের একজন স্বনামধন্য বিজনেসম্যান ।
[১৯] সুলতান মনসুর ভাইয়ের কাছ থেকে বিনয়ের সহিত বিদায় নিয়ে আমি সোজা চলে গেলাম ওয়ালসো টাওয়ারে । কথামতো আমাকে তার রুমে নিয়ে যাওয়া হল । কুশলাদি বিনিময়ের পর তিনি আমাকে বললেন, এটা কি বেসরকারী উদ্যোগে বিটিভির প্যাকেজ অনুষ্ঠান ? আমি বললাম জ্বি লিডার । তিনি আমার এই অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়ে টোটাল বিষয়টিই খুব মনযোগ সহকারে শুনলেন, এরপর বললেন – আমি খুব খুশি হয়েছি ছাত্রলীগকে নিয়ে তোমার ভালবাসা ও উদ্যোগ বিষয়ে । আমরাও যে যখন যেখানেই থাকিনা কেন এই একটি বিষয়ে আমরা প্রত্যেকেই এক সারিতে দাঁড়িয়ে যাই সব সময় আর তা হলো- বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
[২০] যদি ছাত্রলীগের সকল সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ এক টেবিলে বসে সকল বিষয়ে একমত হন তাহলে অবশ্যই বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসের সবচেয়ে নির্ভূল ডকুমেন্টারী তৈরি হবে এ কথা আমিও বিশ্বাস করি কিন্তু তোমার আমন্ত্রণে আমি সহ অনেক অনেক হেভী ওয়েট সিনিয়র নেতৃবৃন্দ নেই । তাদেরকে ছাড়া ছাত্রলীগের ইতিহাস কিভাবে হবে ? আমাকে বলতে পারবে কি ?
[২১] কোন উত্তর দিতে পারবনা জেনেও মূলত: এই প্রশ্নের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম, আমি জানতাম সুলতান মনসুর ভাইয়ের বাসাতেই হয়ত এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে কিন্তু সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম নূরে আলম ভাইয়ের অফিসে এসে । আমি তাঁর এই ভয়ানক প্রশ্নে তখন ভীত হয়ে চুপ করে বসে আছি, কারন এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়ার যোগ্যতা আমার নেই। পাছে কোন কথায় যদি বেয়াদবী হয়ে যায়, তাই চুপ করে বসে আছি আর ভাবছি কি বলব ? বা কি বলা যায় ? । সেখানে তখন আরও কয়েকজন সাবেক সিনিয়র ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দও ছিলেন।
[২২] আশ্চর্যের বিষয় হলো- কিছুক্ষন চুপ থেকে তিনি হঠাৎ করেই মুচকি হেসে ফেললেন, আমাকে অনেকটাই সহজ করে দিলেন; বললেন- থাক্, তোমাকে কিছু বলতে হবেনা। কে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে তাকে দেখার ও কথা বলার দরকার ছিল, তাই কথা বললাম । তুমি অনেক কিছু ভুল করেছ এটা সত্যি কিন্তু এ ব্যাপারে তোমার উদ্দেশ্য সৎ, আমি এইটুকু বুঝতে পেরেছি। সবাই সব উদ্যোগ নিতে পারেনা, ভুলভাবে হলেও তুমি নিয়েছ, এ জন্য আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি । তুমি আজকে যাও আমি দেখছি তোমাকে কিভাবে সহযোগীতা করা যায় ।
[২৩] অত:পর আমি তার অফিস থেকে বেড়িয়ে সোজা চলে গেলাম রাজ্জাক ভাইয়ের বাসায় । সেদিন রাতে রাজ্জাক ভাইয়ের সাথে দেখা করার সিডিউল আগে থেকেই নেয়া ছিল । আমি ভাইয়ের সঙ্গে তখন দেখা করে অনুষ্ঠানের সার্বিক বিষয় তুলে ধরলাম । বিশেষকরে আমি তাঁকে বলললাম - প্রচার ও অনুষ্ঠান শুটিং সহ যাবতীয় সবকিছু আমি দেখভাল করছি কিন্তু আমন্ত্রিত অতিথিদের চূড়ান্ত লিষ্ট তৈরি ও তাদের আসন বিন্যাসের ব্যাপারে আপনাকে সরাসরি সহযোগীতা আমাকে করতেই হবে লিডার নয়ত আমি একটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে যাব। ইতিমধ্যে অনেকটা পড়েও গেছি যা সামাল দেয়ার যোগ্যতা বা সামর্থ কোনটাই আমার নেই । কাওকে না কাওকে এই বিষয়গুলো আমাকে জানাতেই হবে, সহযোগীতা ও পরামর্শ নিতেই হবে, নয়ত সময় থাকতে আমাকে এই আয়োজন ক্লোজ করে দিতে হবে । তাই আমি আপনাকেই জানালাম ।
[২৪] আমি এখন কি করব লিডার ? অনুষ্ঠান কার্যক্রম অব্যহত রাখব নাকি ক্লোজ করে দিব ? আমার কথা শুনে তিনি বলেছিলেন- “ ছাত্রলীগের রক্ত যাদের মধ্যে আছে, ভীরুতা তাদেরকে মানায়না । উদ্দেশ্য যদি সৎ থাকে তাহলে ঘাবড়ানোর কি আছে ? হয়ত তোমার আয়োজনে কোথাও ভুল হচ্ছে, হতেই পারে কিন্তু অপরাধের ত কিছু দেখছিনা । তুমি তোমার কাজ করে যাও এবং যথাসময় যথারীতি সবকিছু প্রস্তুত কর এবং এরপর দেখ কারা কারা আসে । আমি অবশ্যই আসব, তোমাকে কথা দিলাম । যদি সবাই আসে তাহলে সেদিনই বৈঠক হবে আর যদি সবাই নাও আসে তাহলে যারা যারা আসবে আমি তাদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তীতে কিভাবে এই অনুষ্ঠানকে আরও ভালোভাবে করা যায়, সে ব্যাপারে উপস্থিত সবাইকে নিয়েই স্বিদ্ধান্ত নিব ।
কিন্তু সে পর্যন্ত এজ-এ অর্গানাইজার তোমাকে বা তোমাদেরকেই সময়োপযোগী স্বিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে “ বাকীটা আমার মাথায় রইল, দেখছি কি করা যায় । রাতে ভাত না খেয়ে যেওনা, শরীরটা আজকে ভালনা, শুতে যাব। ভাল থেক, যোগাযোগ রেখ । এই বলে তিনি চলে গেলেন ড্রয়িং রুম থেকে । আমি যা বুঝার বুঝে গেলাম ।
[২৫] সে রাতে রাজ্জাক ভাইয়ের বাসা থেকে বের হবার পর আমার মাথায় শুধু একটাই চিন্তাছিল- যে ৭ই জুলাই ২০১১, বৈঠক হউক বা না-হউক অন্তত সেই দিন এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ভাল একটি স্বিদ্ধান্ত হবেই এ ব্যাপারে দৃঢ়চিত্তে আশাবাদ ব্যক্ত করা যায় । আমি আর ডানে বামে না তাকিয়ে সময়মত শ্যুটিং প্যানেল সহ ভ্যেণু প্রস্তুতের দিকেই মন দিলাম এবং আমন্ত্রিত সবার সাথে নিয়মিত ফলোআপ করতে থাকলাম । প্রত্যেক আমন্ত্রিত অতিথি/নেতৃবৃন্দের সাথে নিয়মিত ফলোআপ থেকে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে গেল । তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- জনাব আব্দুর রাজ্জাক ভাই, জনাব তোফায়েল আহমেদ ভাই ও জনাব ওবায়দুল কাদের ভাই এই তিন মহারথির ৭ই জুলাই বৈঠকে উপস্থিতির ব্যাপারে নিশ্চিতকরনের বিষয়টি ।
[২৬] আমি সবাইকেই রাজ্জাক ভাইয়ের উপস্থিতি নিশ্চিন্তকরনের বিষয়টি জানালাম কিন্তু তখনও জনাব তোফায়েল ভাই ও জনাব কাদের ভাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি । যদি তারা শেষ পর্যন্ত উপস্থিত না হন তাহলে বৈঠক হবেনা, এটা নিশ্চিত কারন এই বর্ষীয়ান তিন নেতার উপস্থিতি ছাড়া এই বৈঠক কখনও যৌক্তিক হবেনা; এই বিষয়টি আমাকে মোটামুটি সবাই স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন । অন্যদিকে অনেকেই জানতে চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি ছাড়াও আরো কয়েকজন নেতৃবৃন্দ আমন্ত্রিত হয়েছেন এর পেছনে যৌক্তিক কারন কি ? আমি তখন বিষয়টি তুলে ধরলাম সবার কাছে । যাইহোক- এভাবেই অবশেষে এল সেই মহেন্দ্রক্ষণ ৭ই জুলাই ২০১১। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জ ও বিটিভির শ্যুটিং প্যানেল সম্পূর্ণ প্রস্তুত । সেদিন আবার বিএনপি জোট হরতাল ডেকেছিল তবুও আমরা প্রস্তুত ছিলাম । হরতালের মধ্যেই যে যেভাবে পেরেছিলাম চলে এসেছিলাম মূল ভ্যেণুতে ।
[২৭] বিটিভির ডিজি মহোদয় সহ অন্যান্য যারা দায়িত্বে ছিলেন এবং আয়োজক ও শ্যুটিং প্যানেলের সবাই জানতেন যে সেদিনই বৈঠক হচ্ছে । যদি অতিথিরা সবাই চলে আসেন তাহলে এক ঘন্টার অনুষ্ঠানে সকল বক্তার বক্তব্য কভারেজ হবেনা তাই তখন বিটিভির এক ঘন্টার চাঙ্ক তিন ঘন্টা করা হল। ডিজি মহোদয় এ ব্যবস্থা করেছিলেন ।
[২৮] আমি কোথাও কোন স্পট রাখিনি, একেবারে ক্যাটারিং সহ চাঙ্ক ও শ্যুটিং প্যানেলের সকল পেমেন্ট অনুষ্ঠান শুরুর আগেই পে করে দিয়েছিলাম এবং বড় অন্কের একটি লসের জন্যও একাকীই প্রস্তুত ছিলাম কারন যদি অনুষ্ঠান না হয় তাহলে যেন কারিগরি সংশ্লিষ্ট কারও অর্থনৈতিক লসের দায় নিতে না হয় সেজন্যই এই ব্যবস্থা করেছিলাম । অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু ও অতিথিগণ হেভীওয়েট পারসন ছিলেন তাই আমি চাইনি এ সকল লসের দায় নিয়ে তাদের মধ্যে কোন আলোচনা/সমালোচনা হউক । বৈঠক হবেনা সেদিন এ ব্যাপারে একটি আশঙ্কা আমার মাঝে ছিল কিন্তু একটি ভাল স্বিদ্ধান্ত হবে এটাই আশাবাদ ছিল; অর্থাৎ এই একই সেটআপ আমাকে দ্বিতীয়বার করতে হতে পারে । এই বিষয়টি শুধু আমার মাঝেই ছিল, আমি কাউকে তা প্রকাশ করিনি এবং কারও উপড় কোন দায় চাপার অপশনও রাখিনি ।
[২৯] বৈঠক বিকাল চারটায় শুরু হবে কিন্তু রিপোর্টিং ছিল বেলা তিনটায় । এরই মধ্যে বেলা ৩:০৫ মিনিটে চলে এলেন অনুষ্ঠানের পূর্ব নির্ধারিত প্রধান সঞ্চালক, দৈনিক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্রী শ্যামল দত্ত । চলে এলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব বাহালুল মজনুন চুন্নু ভাই । এর কিছুক্ষণ পরেই চলে এলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনাব নজরুল ইসলাম বাবু ভাই । এরই মধ্যে রাজ্জাক ভাইয়ের ব্যাপারে মুঠোফোনে কথা বলে নিশ্চিত হলাম যে তিনি গুলশান-২ চত্তর ক্রস করেছেন । চমকে দিলেন ঢাবি উপাচার্য জনাব আ.আ.ম.স আরেফীন সিদ্দিকী স্যার । আমরা তাকে অভ্যর্থনা দিয়ে মূল ভ্যেণুতে নিয়ে আসছিলাম ঠিক এমন সময় চুন্নু ভাই দৌড়ে এসে তার সেলফোনটা আমাকে দিয়ে বললেন রাজ্জাক ভাই কথা বলবেন, কথা বল ।
[৩০] আমি সালাম দিয়ে হ্যালো বলতেই তিনি বললেন আমি কাকলী মোর পর্যন্ত চলে এসেছিলাম বাট আমার শরীরটা খুবই খারাপ লাগতেছে, আমি নি:শ্বাস নিতে পারছিনা, আমাকে এক্ষুণি বাসায় যেয়ে নেবুলাইজার নিতে হবে । যদি স্বাভাবিক হতে পারি তাহলে অপেক্ষা কর আমি আসছি আর যদি আসতে না পারি তাহলে আজকে বাদ দাও আমি পরে এই অনুষ্ঠান করে দিচ্ছি । তুমি শুরু থেকে আজকের এই পর্যন্ত যে অনুষ্ঠানটিকে নিয়ে আসতে পেরেছ এই জন্য তোমাকে ধন্যবাদ । তোমাকে আর কিছু করতে হবেনা এখন আমাদের কিছু কারার সময় । রাখি ভাই, আমি আর কথা বলতে পাচ্ছিনা ।আমি বললাম ওকে লিডার আপনি বাসায় যেয়ে রেষ্ট নিন । আমি উপস্থিত সবাইকে বলে অনুষ্ঠান পোষ্টপন্ড করে দিচ্ছি, তাছাড়া এই ব্যাপারে আমার মোটামুটি একটি প্রস্তুতি নেয়াই আছে । সালাম লিডার থ্যাঙ্ক ইউ এন্ড টেক কেয়ার প্লিজ ।
[৩১] মূল ভ্যেণুতে প্রবেশ করে আরেফীন স্যার সহ উপস্থিত সবাইকে বিষয়টি জানালাম । অবশ্য রাজ্জাক ভাই তখন প্রায়ই অসুস্থ হয়ে যেতেন, তিনি সে সময় নিজ শরীরে ক্যান্সার বহন করছিলেন এবং নিয়মিত চেকআপের মধ্যেই থাকতেন, বিষয়টি সবাই জানতেন । ৭ই জুলাই বৈঠক নাও হতে পারে এ ব্যাপারে আমি সন্দিহান থাকলেও রাজ্জাক ভাই পৌঁছানোর পর ভাল একটি স্বিদ্ধান্ত হবে এই ব্যাপারে আমি অবশ্যই আশাবাদী ছিলাম। অবশেষে রাজ্জাক ভাইয়ের হঠাৎ অসুস্থতা সেই আশাতেও ভাঙ্গন ধরাল ।
[৩২] যাইহোক- সবশুনে জনাব নজরুল ইসলাম বাবু ভাই আয়োজনটির সেটআপ, ডেকোরেশন ও বিষয়বস্তু স্ব-চোখে দেখে খুবই প্রশংসা করলেন এবং আমাকে বললেন যা যেভাবে আছে এভাবেই থাক্ । আগামীকাল সকাল পর্যন্ত ভেণ্যু এভাবেই রাখ । আজকে সংসদের মূলতুবি অধিবেশন, সবাই আসবেন আজকে সংসদে, তুমি সন্ধ্যার পর পর চলে আস সংসদে, আমি পাশ পাঠিয়ে দিচ্ছি। দেখি সবার সাথে আলোচনা করে কি করা যায় ।
[৩৩] বাবু ভাই এর সেই সময় সেই আশা জাগানিয়া বাণীতে আবারও তখন আনন্দে ভরিয়া উঠেছিল ভারাক্রান্ত সেই মন । বাবু ভাই সহ সবাই তখন চলে গেলেন। সবাইকে বিদায় দিয়ে প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষকে জানালাম আমার আগামীকাল সকালের সিফটেও ভিআইপি লাউঞ্জ লাগবে এবং বিষয়ের তাৎপর্যও তুলে ধরলাম তাদের কাছে । তারা জানালেন একটি মহিলা সংঘঠনের বুকিং আছে সকালে, এখন এই মূহুর্তে কিভাবে তাদেরকে বলব ক্যান্সেলের ব্যাপারে ?
[৩৪] শুরু হলো আরেক সমস্যা, আমি যদি বিষয়টি সেই মূহুর্তে সমাধান করে না যাই তাহলে এর কিছুক্ষণ পরে প্রেসক্লাব এ্যাডমিন অফিস বন্ধ হয়ে যাবে এবং পরদিন সকালে একই সময় দুই অনুষ্ঠান নিয়ে একটা প্রকান্ড বেধে যাবে । আমি তখন কিভাবে সেই সমস্যার সমাধান করেছিলাম তা আর এখানে নাইবা বললাম। শুধু তাই নয় পরদিন বিকেলের শিফটেও আরেকটি সংগঠনের অনুষ্ঠান ছিল সেটাকেও ভর্তুকি দিয়ে বাতিল করিয়েছিলাম কারন যদি সকালের বিষয়টি বিকেলে গড়ায় তাহলেও আরেকটি প্রকান্ড ঘটবে । আমাকে তখন ফুল শ্যুটিং প্যানেল সহ সব ক্ষেত্রেই রি-পেমেন্ট করতে হয়েছে আর সেইদিন পর্যন্ত সকল ইনভেষ্টম্যান্ট লসের খাতায় চলে গেছে । সব মিটিয়ে যথাসময় চলে গেলাম সংসদ ভবনে ।
[৩৫] এ সময় কেএম ওয়াহিদ ভাই ছিলেন আমার সাথে । বাবু ভাই আমাদেরকে ক্যাবিনেট ক্যান্টিনে নিয়ে গেলেন। সেখানে মোটামুটি সবাই ছিলেন । অনেক্ষণ আলোচনার পরে স্বিদ্ধান্ত হলো যে- এই অনুষ্ঠান হয়ত পরে কোন সময় করা যাবে কিন্তু মূলত: দুটি কারনে পরদিন সকালে আর করা যাচ্ছেনা। এক- সংসদের সেদিন মূলতবি অধিবেশন থাকায় সবাই রাতেই চলে যাবেন নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় । দুই- যেহেতু রাজ্জাক ভাই বিষয়টির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন সেহেতু তাকে ছাড়া এই বৈঠক কখনই হতে পারেনা । তবে যদি রাজ্জাকভাই পরদিন সকালে আসার মত অবস্থায় থাকতেন তাহলে সংসদ মুলতবি হলেও সবাই থাকতেন কিন্তু তাও সম্ভব নয় কারন ইতিমধ্যে খবর এসেছে রাজ্জাকভাইয়ের অবস্থা ভাল নয় । সেদিনই রাত তিনটার ফ্লাইটে তাকে প্রথমে চেন্নাই ও পরে লন্ডনে নেয়া হবে । সুতরাং আর কোন কথা নয় দেন এভরিথিং ইজ প্যাক-আপ ।
[৩৬] তখন কাজ একটাই অসুস্থ রাজ্জাক ভাইকে দেখতে যাওয়া । গাড়ী চলতে লাগল কিন্তু প্রচন্ড জ্যাম ছিল সেদিন, গুলশান-২ এ পৌঁছতে বেজে গেল রাত সাড়ে এগারোটা । আমি ভয়ে ভয়ে রাজ্জাক ভাইয়ের নাম্বারে ফোন দিলাম, পিক করতেই বললাম, লিডার আপনাকে শুধু একটু দেখতে এসেছি, প্রচন্ড জ্যাম ছিল তাই লেট হয়ে গেছে পৌঁছাতে । তিনি বললেন উপরে আস । কিছুক্ষন পরে অসুস্থ শরীরেই তিনি আস্তে আস্তে ড্রইংরুমে এলেন। হয়ত নিয়তি জানত যে, সেই দেখাই ছিল ভাইয়ের সাথে আমার জীবনের শেষ দেখা তাই হয়ত তিনি সেদিন এতরাতে দেখেও রেগে যাননি । আমি তখন অনুষ্ঠানের মূল ভ্যেণু ডেকোরেশন এবং যারা যারা এসেছিলেন তাদের সকল ষ্টীল ফটোগ্রাফী পিন্ট করে নিয়ে তাঁকে দেখালাম এবং বললাম- লিডার এই ছিল আমার ভুলে ভরা এক অসমাপ্ত আয়োজনের চিত্র ।
[৩৭] তিনি সব দেখে বললেন- চিন্তার কিছু নাই, আমি চিকিৎসা শেষে ফিরে এই অনুষ্ঠান নিজে উদ্যোগ নিয়ে করে দিব । আর যদি আল্লাহ বাঁচিয়ে না রাখেন তাহলে দোয়া করে গেলাম, তোমার এই উদ্যোগ একদিন সফল হবেই। কেউ না কেউ তোমাকে এ ব্যাপারে সহযোগীতা করবেই, ভিন্ন মতাদর্শ থাকলেও এই একটি সংগঠনের বেলায় আমরা সবাই এক ও অভিন্ন । অহন যাওগা, শরীলডা বালানা , দোয়া কইর । এই বলে তিনি চলে গেলেন ।
[৩৮] এরপর লন্ডনে দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসা শেষে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে । এই দীর্ঘ তিন মাস পর্যন্তই আমি এই অনুষ্ঠানটি পূঁণরায় আয়োজনের ব্যাপারে বিরামহীন আশাবাদী ছিলাম এবং রাজ্জাক ভাইয়ের অপেক্ষায় ছিলাম । এরপর আমি আর এই বিষয় নিয়ে আগ্রহ দেখাইনি বা পূঁণরায় আয়োজনের ব্যাপারে অদ্যবধি কোন উদ্দ্যোগ নেইনি ।
[৩৯] উল্লেখ্য- পরবর্তীতে পূঁণরায় অনুষ্ঠান হতেও পারে সেদিক লক্ষ্য রেখে আমি ১৩ই জুলাই ফুল টিভি ক্যামেরা সেট নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৭তম সম্মেলন কভার করতে চলে যাই বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে । এক পর্যায়ে দেখতে পাই বিদায়ী ছাত্রলীগ সভাপতি জনাব মাহমুদ হাসান রিপন ষ্টেজের একপাশে বসে কিছু পেপার্সে চোখ বুলাচ্ছিলেন । আমি তখন তাকে গিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য সম্মেলনের পরে সিডিউল চাইলাম ।
[৪০] তিনি তৎক্ষণাৎ রেগে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমাকে বললেন, আপনি কি করছেন এগুলো ? আপনি ত ছাত্রলীগের স্বরযন্ত্রকারী । তার এ-কথায় আমি মোটেও বিচলিত হইনি কারন তিনি অনেক কিছুই জানতেননা এই বিষয়ে। তাই আউট অব সিন থেকে তার যা ভাল মনে হয়েছে তিনি তাই বলেছেন, এটা তার ব্যাপার, হয়ত সবকিছু জানলে এভাবে বলতেননা । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- এই টোটাল বিষয়ে কোথায় এমন কি ঘটেছিল যার জন্য আমাকে তার ছাত্রলীগের স্বরযন্ত্রকারী মনে হয়েছিল ? এর উত্তরটি পেলে আমি আমার নিজেকে হয়ত সংশোধন করতে পারতাম । এই ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিয়ে আমার অসমাপ্ত আয়োজনের এক অব্যক্ত চিত্র ।
————————————————————–
অব্যক্ত চিত্র ব্যক্ত করার উদ্দেশ্য :
যতই দিন যাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে । ইদানিং অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তিরাও টক-শোতে মধ্যরাতের সুশীল সেজে স্বাধীনতার ইতিহাসের নতুন নতুন অধ্যায় রচনা করছেন । অনেক লেখকও আজকাল এই চেষ্টা চালাচ্ছেন ফলে স্কুল কলেজের পাঠ্য বইয়ের মাঝেও বাঙ্গালী ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানো হচ্ছে, এমনকি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মাঝেও অনেকে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে ঘায়ে মুজিব কোট পড়ে ওদেরই জয়গান গাইছেন । এভাবে চলতে থাকলে অতিদ্রুত বাঙ্গালীর ইতিহাস বিকৃত হয়েই যাবে । গত দুই দশকে একে একে চলে গেছেন অনেক কিংবদন্তী ছাত্রলীগ নেতা, বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকজন ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বেঁচে আছেন । বিশেষকরে কিংবদন্তী ছাত্রলীগ নেতা জনাব তোফায়েল আহমেদ ভাই ও জনাব ওবায়দুল কাদের ভাই এখনও বেঁচে আছেন । যদি তারাও হঠাৎ পরপারে চলে যান তাহলে স্বাধীনতার চূড়ান্ত ও নির্ভুল ডকুমেন্টারী তৈরির আর কোন অপসন আমাদের হাতে থাকবেনা ফলে নতুন ও ভবিষ্যত প্রজন্মের বিচ্ছিন্ন ইতিহাসই জানতে ও পড়তে হবে । যদি সকল ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এক টেবিলে বসে সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিটি তথ্য প্রদান করেন তবেই তা হবে বাঙ্গালীর সঠিক স্বাধীনতার ইতিহাস কারন “ ছাত্রলীগের ইতিহাস – বাঙ্গালীর ইতিহাস “ । তাই অতিদ্রুত এ বিষয়ে সংশোধিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান নীতি নির্ধারকগণের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ।
ধন্যবাদ ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা । জয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ।
জ:প্র:/ফিচার/রাজনীতি/বাংলাদেশ ছাত্রলীগ/০০৩
jonosongjognews@gmail.com / desk@prnews1.com / fb.com- @prnews1.com.bd / Twitter - jonosongjognews