সংযোগ প্রধানমন্ত্রী-আল জাজিরা রিপোর্ট/মন্তব্য প্রতিবেদন - জনসংযোগ.কম/০৪-০২-২০২১
। এম আনিছুর রহমান ।
[১] বাঙ্গালীকে স্বাধীন বাংলার পতাকা উপহার দিলেন বঙ্গবন্ধু কিন্তু স্বাধীনতা ভোগ করছে বাঙ্গালী আর তার দাম দিতে হল বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে রইলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বিনির্মাণের দায়িত্ব নিলেন তিনি। শতভাগ দেশপ্রেম ও সততায় মহিয়ান হওয়া স্বত্তেও সেই থেকে শুরু হল বাঙ্গালীর কাছে পরীক্ষা দেওয়া; যে তিনিও বঙ্গবন্ধুর মতই দেশকে ভালোবাসেন, এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে তিনিও বদ্ধ পরিকর। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর সেই বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সৈনিকদের প্রায় শতভাগই তাকে অসহযোগীতাই করলেন তবুও তিনি একাই পথ চলেছেন এবং নিজের মত করে সেই পথকে মুজিব আদর্শ দিয়ে পূণ:নির্মাণ করেছেন। আবার তখন থেকেই শেখ হাসিনার সেই তৈরি পথেই হাটছেন তারা; যারা শেখ হাসিনার পাশ থেকে ছিলেন তখন দূরে। এখন আর পথের চিন্তা নেই কারন পথ তৈরি হয়ে গেছে, এবার পথের খুঁটিনাটি ধরার পালা। এখানে পানি জমে কেন ? ওখানে গর্ত কেন? সেখানটা বাঁকা কেন? পিচ ঢালা হবে কবে? ইত্যাদি ইত্যাদি ।
[২] নীলকন্ঠী শেখ হাসিনা এ সকল প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে গর্ত ভরলেন, বাঁকা কে সোজা করলেন এমনকি পিচ ঢালাইও করলেন। তিনি একবারের জন্যও তাদেরকে প্রশ্ন করে স্বরণ করিয়ে দেননি যে, তোমাদের-ত পথই ছিলনা এখন পথ পেয়ে পথেরই দোষ ধরছ কেন ? নীলকন্ঠীরা বোধ হয় এমনি হয়। কিন্তু উচিত ছিল প্রতিটি অর্জনের মূহুর্তে একবারের জন্য হলেও সর্ব বাঙ্গালী সহ দলীয় নেতাকর্মীদের স্বরণ করিয়ে দেওয়া, যে তোমরা কোথায় ছিলে? তোমরা কার আলোয় আলোকিত ? এখন কোথায় আছ ? আর কিভাবে এই অবস্থায় এলে?
[৩] দলীয় নেতাকর্মীদের একবারের জন্য হলেও প্রশ্ন করে স্বরণ করিয়ে দেওয়া দরকার ছিল- যে ৭৫-এ তোমাদের কি করা উচিত ছিল আর তোমরা কি করেছিলে? প্রশ্ন করা উচিত ছিল- আমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরও তোমরা তখন কিসের ভয়ে আমার প্রতি এত অসহযোগী ছিলে? তাদের আরও তীব্র ভাবে প্রশ্ন করা উচিত ছিল- কেন ওয়ান-ইলিভেন হলো ? আর তোমরা থাকতে আমাকে কেন এতগুলো দিন জেলে থাকতে হলো? গর্জে কেন উঠনি তোমরা সেদিন? প্রতিটি হাইব্রীডকে শোকজ করে কলার ধরে প্রশ্ন করা উচিত ছিল- যে তোরা কিভাবে দলে প্রবেশ করলি? তোদের পিছনে কারা ? কিন্তু তিনি তা করেননি আদৌ, কারন নীলকন্ঠীরা মনে হয় এমনি হয়।
[৪] শরীক দলের নন্দ গোপালদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে প্রশ্ন করা উচিত ছিল- যে আপনারা যা পেয়েছেন তা নিজ যোগ্যতার মাপকাঠি দ্বারা এই বাংলার মাটিতে আদৌ পাওয়ার কথা ছিল কিনা? শুধু তাই নয় দলের পরিক্ষিত ত্যাগী কর্মীদের নিরবে হটিয়ে যে সকল সুবিধাভূগীরা ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ ও অপব্যবহার করে দলকে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছে তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় তুলে জবাবদিহিতার রোষানলে ফেলে প্রশ্ন করা উচিত ছিল- যে এত বড় স্পর্ধা তোদের হল কি করে ? তাদেরকে আদেশ করা উচিত ছিল- আমার দলের হারানো সম্মান ফিরিয়ে দে, ফিরিয়ে দে আমার সেই ত্যাগী কর্মীদের আর চিরতরে বেরিয়ে যা আমার সামনে থেকে; কিন্তু তিনি তা করেননি কারন নীলকন্ঠীরা মনে হয় এমনি হয়।
[৫] আর কিছু দিন পরেই পালিত হবে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী। কিন্তু এখনও জননেত্রীকে প্রায় বক্তব্যেই বারংবার বলে প্রমাণ করতে হয় যে বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার জনক, বাঙ্গালীর ইতিহাসের মহানায়ক। তাকে এখনও বার বার প্রমাণ করতে হয়- যে দেশ মাতৃকার কল্যাণের জন্যই স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হয়েছে; কিন্তু কেন ?.. বেশী কিছু দায়িত্ব না হোক অন্তত এই একটি বিষয় দেশব্যাপী চিরস্থায়ী প্রতিস্থাপন করার দায়িত্ব-ত সর্বজনীন বাঙ্গালীর কিন্তু কেন এখনও বাঙ্গালীর একাংশের মাঝে মতভেদ এ বিষয় নিয়ে?.. দলমত নির্বিশেষে অন্তত বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে হলেও কেন এখনও সর্ব বাঙ্গালী এক কাতারে দাঁড়াতে পারেনা?.. তিনি এ প্রশ্ন করে আজ অবধি সেই একাংশের বাঙ্গালীকে বিব্রত করেননি; কারন নীলকন্ঠীরা মনে হয় এমনি হয়।
[৬] শত সংগ্রাম করে সর্বস্ব হারিয়ে এ বয়সে এখনও সংগ্রাম করে যাচ্ছেন বাঙ্গালীর অধিকার আদায় করতে; আবার এই বাঙ্গালীই ঠুনকো গুজবে কান দিয়ে তাকে প্রায়ই ভুল বুঝে আবার পরবর্তীতে সঠিকটা জেনে স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসে। তিনি এ নিয়ে কখনও প্রশ্ন করেননি- হে বীর বাঙ্গালী তোমরা কেন এখনও প্রায়ই বীর থেকে হয়ে যাও হুজুগে বাঙ্গালী ? গুজবে কান দিয়ে বাঙ্গালীর একাংশ তাকে মাঝে মাঝে ভুল বুঝলেও তিনি নিজে কখনও তাদেরকে ভুল বুঝেননি এবং কখনও তা করবেনওনা কারন তিনি বাঙ্গালীর সঠিক সীমাবদ্ধতাটা অনুধাবন করতে পারেন তাই। এমনকি তিনি এ নিয়ে নিজো মনে কখনো বেদনাও অনুভব করেননা কারন নীলকন্ঠীরা মনে হয় এমনি হয়।
[৭] ২১ আগষ্ট সহ কোটালিপাড়ার বোমা হামলা বা ওয়ান ইলেভেনের মত নেক্কারজনক ঘটনাগুলোকেও তিনি প্রতিহিংসায় রুপ দেননি। তিনি চাইলেই ক্ষমতার দাপটে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারতেন স্বাধীনতার বিরুদ্ধের অপশক্তি বা আওয়ামী লীগ বিরুধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কিন্তু তিনি তাও করেননি। বরং সেই স্বাধীনতা বিরুধীরা তার মহানুভবতা ও উদারতার সুযোগ নিয়ে তারই বিরুদ্ধে চালিয়ে যাচ্ছে অবিরাম অপপ্রচার যা এবার তিল তিল করে তালে রুপান্তরিত হয়েছে। তারা দেশ সীমানা ছাড়িয়ে এবার মিশে গেছে আন্তর্জাতিক ক্যু-চক্রের সাথে আর এরই সর্বশেষ সংযোজন হল আল-জাজিরার কথিত রিপোর্ট। হয়ত তিনি এবারও পরীক্ষা দেবেন এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেকে আবারও দেশপ্রেমিক হিসেবে প্রমাণ করবেন। তাই প্রশ্ন এবার করতেই হচ্ছে বীর বাঙ্গালীর প্রতি- আর কত পরীক্ষা দেবেন শেখ হাসিনা ? আর কতবার নীলকন্ঠী হবেন শেখ হাসিনা ?
[৮] শেষ কথা হচ্ছে- এবার আর শেখ হাসিনাকে নয় বরং এবার শেখ হাসিনার কাছে বাঙ্গালীর পরীক্ষা দেবার সময়, স্বয়ং বাঙ্গালীর নীলকন্ঠী হওয়ার সময়। সর্ব বাঙ্গালীর এখনই মুখ্যম সময় আবার গর্জে উঠার। শেখ হাসিনা নয়, এবার আল-জাজিরার রিপোর্টের ব্যাখ্যা দিয়ে পরীক্ষা দিবে সর্ব বাঙ্গালী। “ জাগো বাঙ্গালী আবার জাগো, দেশ রক্ষায় জাগো – নয়ত বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনাকেও হারিয়ে আবার তোমরা মর” ।
———————————————-
জ:প্র:/মন্তব্য প্রতিবেদন/০১০
jsongjugnews@gmail.com / fb.com- @jshongjog / Twitter - jonosongjognews
পাঠকের মন্তব্য