জনসংযোগ প্রতিবেদন/অল দ্য প্রাইম মিনিষ্টার’স ম্যান - পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট/১০ফেব্রুয়ারী,২০২১
। এম আনিছুর রহমান ।
[১] সবার চোখ এখন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দিকে। আল জাজিরার রিপোর্টে এবার মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা গেল; যেভাবে গিয়েছিল “অল দ্য প্রেসিডেন্ট`স ম্যান” রিপোর্টের জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনের ক্ষমতা। অল দ্য প্রেসিডেন্ট`স ম্যান রিপোর্টটিকে ইনেভেষ্টিগেটিভ রিপোর্টের জনক বলা হয় যা সমগ্র বিশ্বে আজও বিখ্যাত। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই নয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাংবাদিকতা বিভাগে গবেষণার জন্য পাঠ্যভূক্ত করা হয়েছে এই রিপোর্টকে; কারন এই রিপোর্টটি ছিল শিক্ষনীয়, তথ্যবহুল, বিশ্বব্যপী আলোচিত, সমাদৃত ও ফলাফল প্রাপ্ত অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নিক্সন পদত্যাগ করেছিলেন। এরই নকল আদলে এবার আল জাজিরা তৈরী করল ‘অল দ্য প্রাইম মিনিষ্টার`স ম্যান’। সস্তায় আমদানিকৃত নকল হেডলাইনটিই রিপোর্টার হিসেবে ডেভিড বার্গম্যানের আন্তর্জাতিক মানের অপ্রতুলতা প্রকাশ করেছে। অন্য কোন নাম দেয়া উচিত ছিল। ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন কেউ নন। তিনি এক সময় নিয়মিত বাংলাদেশে থাকতেন। তিনি নিউএইজ ও বিডি নিউজ টুয়েন্টিফোর.কমে কর্মরত ছিলেন। সাংবাদিকতার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করায় ও উশৃঙ্খল জীবন যাপনের জন্য দেশের মূল ধারার গণমাধ্যমে অযোগ্য হয়ে পড়েন তিনি। ফলে দেশীয় এই দুইটি গণমাধ্যম থেকে একই কারনে বিতারিত হতে হয় তাকে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- ডেভিড বার্গম্যান গণফোরাম সভাপতি ও বিএনপি জোটের প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল হোসেনের জামাতা। এই একটি পরিচয়ের পর আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই যে তিনি শেখ হাসিনা বিরোধী শক্তির কতটুকু কাছের মানুষ হতে পারেন।
[২] দেশের পরিকল্পনা মন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন- আল জাজিরা কেন বাংলাদেশকেই বেছে নিল? এই প্রশ্নের বিপরীতে পাল্টা প্রশ্ন হল- বাংলাদেশকে বেছে নেবে না ত কি ইউরোপ আমেরিকাকে বেছে নেবে ? আদৌ আছে কি সেই সাধ্য আল জাজিরার? তবে এ কথাও সত্য যে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিন এর দূর্ণীতি বিষয়ক দুইটি প্রতিবেদনই বিশ্বের নজর কেড়েছিল এবং ফলাফলও এসেছিল। আল জাজিরার সেই দুইটি প্রতিবেদনের জন্য উভয়েই পদত্যাগ করেছিলেন এবং অদ্যবধি জেলে আছেন। প্রতিটি দেশেই ফরমালের পাশাপাশি ইনফরমাল বা বিতর্কিত গণমাধ্যম আছে ও থাকবেই; যেগুলো মাঝে মাঝে সরকার প্রধানের সাথেও সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। যেমন: দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম আলো বা ডেইলী ষ্টার পড়েননা। এমন আরও অনেক বিশিষ্ট ও অবশিষ্ট ব্যক্তিগণ আছেন তারাও এই দুইটি জাতীয় দৈনিক পড়েননা। অন্যদিকে দেশের ৯৫ভাগ মানুষই এই দুইটি দৈনিক নিয়মিত পড়েন বা কিছুক্ষণের জন্য হলেও চোখ বুলান। এর প্রধান কারন হল- এই দুইটি দৈনিকই সাংঘর্ষিক সংবাদ পরিবেশনে অদ্বিতীয় ও অনঢ়। তাই তারা পাঠক মনকে বিকর্ষিতভাবে হলেও আকর্ষিত করে কৌতুহলী করে তুলে প্রচন্ড রকমে। যদি এই দুইটি জাতীয় দৈনিক দেশে না থাকত তাহলে হয়ত দেশের সংবাদ পরিবেশনের বিষয়টি একঘেঁয়ে হয়ে যেত। এই দুইটি জাতীয় দৈনিক দেশে আছে বলেই দেশে প্রায়শই নিত্য নতুন নিউজ ওয়েভ লক্ষ্য করা যায়। এদিক থেকে এ দুটি পত্রিকাকে ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে। ঠিক তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও একইভাবে ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে আল জাজিরাকে যারা বিবিসি বা সিএনএন কে তাদের কার্য পরিধিকে আরোও প্রসার করে ইয়েলো জার্নালিজম রুখতে অতি মনযোগী হতে বাধ্য করেছে।
[৩] মূলত: পাঠকগণ খবর দেখতে পড়ে ডেইলী ষ্টার ও প্রথম আলো আর জানার জন্য জ্বালায় নিজের আলো ও খবরের রস খুঁজে অন্যত্র যখন যেখানে লাগে ভালো; কিন্তু চোখ এই দুইটি পত্রিকায় থাকবেই। এখানেই তাদের স্বার্থকতা। স্বার্থকতার নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। স্বার্থক তার স্বার্থের ধরন অনুযায়ী সফল হলে সেটাই তার স্বার্থকতা বলে বিবেচিত হয়। তাই দেশে জাতীয়ভাবে আমাদের আছে ডেইলী ষ্টার ও প্রথম আলো এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের আছে আল জাজিরা। দেশের প্রধানমন্ত্রী যেমন প্রথম আলো ও ডেইলী ষ্টার পড়েননা ঠিক তেমনি ইউরোপ আমেরিকার বহু প্রধানমন্ত্রী ও বিশিষ্টজনরাও আল জাজিরা দেখেননা কিন্তু কৌতুহলী চোখ আল জাজিরার দিকে থাকবেই। তাই বিবিসি, সিএনএন বা রয়টার্স আন্তর্জাতিক মহলে যেমন সুস্থ সাংবাদিকতার পথিকৃত ঠিক তেমনি আল জাজিরা বিতর্কিত সাংবাদিকতার অগ্রদূত; বলা যেতে পারে ওয়ার্ল্ড লিডার অব ইয়েলো জার্নালিজম।
[৪] ফুটেজ ভিত্তিক কিছু কিছু ক্ষেত্রে তথ্য প্রমাণের জন্য জনসম্মুখে আল জাজিরার রিপোর্টের ব্যাক্ষা দিতে সেনাপ্রধান বাধ্য হলেও এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বাধ্য নন বরং প্রধানমন্ত্রীর কাছেও এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যাক্ষা দিতে সেনাপ্রধান বাধ্য হবেন । যারা এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যাক্ষা চাইছেন তারা তাদের জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেচনার দারিদ্রতা প্রকাশ করছেন মাত্র । এটি চ্যানেল ওয়ান এর সম্প্রচার বন্ধের প্রতিবাদে তারেক রহমান, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও কথিত সাংবাদিক সামি আহমেদের সম্মিলিত দীর্ঘ ক্যু- প্রচেষ্টায় আল জাজিরার মাধ্যমে বর্তমান সরকারের প্রতি একটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রতিশোধ মাত্র। যারা নিয়মিত মিডিয়াতে আছেন ও চ্যানেল ওয়ানে যাতায়াত করতেন বা মিডিয়া বিষয়ক সু-সম্পর্ক সেই চ্যানেলটির সাথে রেখেছিলেন তাদের আর যাইহোক মি. সামী আহমেদকে চিনতে বেশীক্ষণ লাগবেনা । তিনি তারেক রহমান সাহেবের খাস প্রতিনিধি কিন্তু তার সাথে বর্তমান সেনাপ্রধানের এত গভীর যোগাযোগের পেছনের রহস্য কি ? কিভাবে পরিচয় ঘটল তাদের সাথে ? তা অবশ্য ভাবনার বিষয়।
[৫] এ বিষয়ে একটি ধারনা পাওয়া গেছে সম্প্রতি প্রচারিত নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চীফ মি. তাসনিম খলিলের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল এর একটি সাক্ষাৎকারে যেখানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন স্বয়ং সামি আহমেদ ; (লিংক- youtube/Newzbd/aljajeera/Tasneemkhalil.)। সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ সাহেবের সাথে আপনার পরিচয় হলো কিভাবে? । নেত্র নিউজ এডিটরের এই প্রশ্নের জবাবে সামি আহমেদ জানান; ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন বিজিবি প্রধান ও বর্তমান আর্মি চীফ জনাব আজিজ আহমেদ হাঙ্গেরীর বুদাপেষ্টে একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে বাংলাদেশের কোন হাইকমিশন ছিলনা বিধায় মি. সামির পরিচিত কোন একজন তাকে ফোন দিয়ে জেনারেল আজিজ সাহেবকে রিসিপশন সহ যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতে অনুরোধ করেন এবং তার অনুরোধে মি. সামির এই দায়িত্ব পালন করতে যেয়েই জেনারেল আজিজ সাহেবের সাথে তার পরিচিতির শুভ সূচনা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে তাদের মাঝে ঘনিষ্ঠতা হয় ও ব্যবসা বাণিজ্য সহ আহমেদ পরিবারের অন্যান্য ভাইদের হাঙ্গেরীতে সেটআপ সহ দেখভালের দায়িত্ব নেন তিনি। প্রশ্ন হচ্ছে- সামির সেই পরিচিত একজনটা কে ? এই বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি এমনকি মি. তাসনিম খলিল এ বিষয়ে তাকে পাল্টা কোন প্রশ্নও করেননি। আমাদের অতিস্বত্তর জানা দরকার সেই পরিচিত একজনের সঠিক পরিচয় কি? তাহলে আমরা জানতে পারব যে জেনারেল আজিজ আহমেদ কোন স্বরযন্ত্রের শিকার ? নাকি সামির সাথে তার আরো আগে থেকেই গভীর সম্পর্ক ছিল!! বিষয়টি উদঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
[৬] সবচেয়ে গুতুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি বেড়িয়ে এসেছে এই সাক্ষাৎকারে তা হলো- মি. সামি দীর্ঘদিন জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিস ও আনিস আহমেদের সাথে সংঘবদ্ধভাবে চলাচলের পরে জানতে পারেন যে তারা ভয়ানক সন্ত্রাসী ও দেশ সহ ইন্টারপোলের মোষ্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল। বিষয়টি জানার পর সামি তাদের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে উদ্যত হন। সামির দেয়া তথ্যসূত্রে- তিনি দেশকে ভালোবাসেন ও তাদের ফ্যামিলির আর্মি ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল বিধায় তিনি দেশকে বাঁচাতে একজন নি:স্বার্থ দেশ প্রেমিক হিসেবে এই ক্রিমিনাল চক্রের আসল পরিচয় নিউজের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তুলে আনার ব্যাপারে স্বিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং আল জাজিরার স্বরণাপন্ন হন। অর্থাৎ তিনি এই বিষয়টি নিয়ে যখন আল জাজিরার কাছে যান তখন তিনি আল জাজিরার স্থায়ী বা অস্থায়ী কোন সংবাদ প্রতিনিধি ছিলেননা। আরোও স্পষ্টভাবে বলা যায় শুরুতে আল জাজিরার কাছে সামি নিজের তৈরী একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি নিয়ে গিয়েছিলেন যেভাবে আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলোতেও বিভিন্ন কর্পোরেট হাউস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি আসে। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান থাকে যারা ইন-হাউসে নিয়মিত বিজ্ঞাপন বা ডোনেট করে থাকেন। এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইন-হাউস একটু বেশিই সেবা দিয়ে থাকে।
[৭] এ প্রসঙ্গে মি. তাসনিম খলিল সামিকে পরবর্তী প্রশ্ন করেন- বিশ্বে এত এত চ্যানেল থাকতে আপনি আল জাজিরার কাছে কেন গেলেন? এ বিষয়ে সামীর এক কথায় স্পষ্ট উত্তর ছিল- আল জাজিরা ছাড়া অন্য কোন চ্যানেল তথা বিবিসি বা সিএনএন এই বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রচার করবেনা তাই তিনি আল জাজিরার কাছে যান। মি. সামির এই বক্তব্যে এইটুকু স্পষ্ট যে, ‘অল দ্য প্রাইম মিনিষ্টার`স ম্যান’ প্রতিবেদনটি আল জাজিরার পূর্ব পরিকল্পিত ইন-হাউস কোন মেটার ছিলনা অর্থাৎ সামির দেয়া তথ্য সম্বলিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির উপর ভিত্তি করেই আল জাজিরা এই প্রতিবেদনটির নির্মাণ শুরু করে। এমনকি এই বিষয়ের জন্য গণমাধ্যমের স্বাভাবিক নিয়ম নীতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সামীকে তৎক্ষণাৎ আল জাজিরায় ভাড়াটে প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সামির দেয়া তথ্যসূত্রেই এখানে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, আল জাজিরায় নিয়োগ প্রাপ্তির পরে তিনি এ বিষয়ে তেমন কোন গোপন ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারেননি কারন এরই মধ্যে আহমেদ গ্রুপের সাথে তার যোগাযোগ মোটামুটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি এও বলেছেন যে জেনারেল আজিজ সাহেব তাকে থ্রেড দিয়ে ইমেলও পাঠিয়েছিলেন। অত:পর তাদের মধ্যে আর কোন ভালো সম্পর্ক ত দূরের কথা মোটামুটি সম্পর্কও থাকতে পারেনা।
[৮] সুতরাং সামির দেয়া বেশীরভাগ গোপন ভিডিও ফুটেজগুলো আল জাজিরায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি হিসেবে দেওয়ার আগে থেকেই আহমেদ গংয়ের সাথে তার পরিকল্পিত মুভমেন্ট চলছিল যা আহমেদ গংয়ের অজানা ছিল। পরিচয়ের ছয় মাস পরে হারিসের কার্যকলাপ দেখতে দেখতে সামি তাদেরকে চিনেছেন তা নয় বরং আরো বহু আগে থেকেই অন্য অনেকের চেয়ে সামি ভালো করেই জানতেন আহমেদ পরিবারের কালো অধ্যায়ের বিষয়ে। দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে দেশে বিদেশে একযোগে আলোচিত আহমেদ পরিবারের কালো অধ্যায়ের গল্প দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের অশিক্ষিত মুর্খরাও জানে বিস্তারিত। এমনকি জোসেফকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমা ঘোষণা করে মুক্তিদানের বিষয়টিও দেশে ব্যাপক আলোচিত। সেখানে তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের অতি ঘনিষ্ঠ ও এক সময়ে চ্যানেল ওয়ান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তখন দেশীয় মিডিয়ায় আর এখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় দাপটে বেড়ানো মি. সামি নিজে আহমেদ পরিবারকে একেবারেই চিনতেন না বা জানতেন না এই বিষয়টি নিতান্তই হাস্যকর। সে সময় দেশের অভ্যন্তরে বিদেশী শিল্পীদের নিয়ে ইভেন্ট আয়োজনের বিষয়ে সামি ছিলেন অন্যতম। আসলে সম্পূর্ণ বিয়টিই সামি গংদের পূর্ব পরিকল্পিত। তাই সামির সেই পরিচিত এক জনের পরিচয় জানা অতীব জরুরী যিনি এই পরিকল্পনায় সামির নেপথ্যে গ্রন্থনা ও পরিকল্পনায় এবং আল জাজিরায় সামির দেয়া এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে ইয়েলো জার্নালিজম ষ্টোরী আকারে নির্মাণ ও প্রচারের ডোনার হিসেবে রয়েছেন এখনও পর্দার আড়ালে।
[৯] কথিত প্রতিবেদনটি আল জাজিরায় প্রচার হওয়ার পরে মি. সামি প্রথম ভার্চুয়ালি প্রকাশ্যে আসেন নেত্র নিউজ এডিটরের নেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। উভয়ের মাঝে সূসম্পর্কও দীর্ঘ দিনের। এই সাক্ষাৎকারের গঠন শৈলীই প্রমাণ করেছে যে তাদের এই আলোচনাটাও ছিল আফটার রিহার্সাল প্রেজেন্টেশন। (লিংক-youtube.com/Newzbd/aljajeera/TasneemKhalil)। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের উপস্থাপনায় একটি টক’শোর মাধ্যমে। ৫ফেব্রুয়ারী,২০২১ তারিখে ইউটিউবে পোষ্ট হওয়া সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত আলোচক ছিলেন নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চীফ মি. তাসনিম খলিল ও সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান।(লিংক-youtube.com/DWKhaledmohiuddinjanteychay)। এই টকশো‘তে খালেদ মুহিউদ্দীনের এক প্রশ্নের জবাবে মি. খলিল স্বীকার করেছেন যে তিনি নিজে থেকেই “অল দ্য প্রাইম মিনিষ্টার`স ম্যান’’ প্রতিবেদন তৈরীতে বেশকিছু অফিসিয়াল তথ্য আল জাজিরাকে গোপনে প্রেরণ করেছেন এবং খালিদ মুহিউদ্দিনের এ সংক্রান্ত বিষয়ে এক প্রশ্নের বিপরীতে সিক্রেট অব জার্নালিজম এর অযুহাতে তিনি এ প্রসঙ্গে খোলামেলা কথা বলতে অনীহাও প্রকাশ করেন। সামির সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় মি. খলিল ছিলেন প্রাণবন্ত কারন তা রিহার্সাল করা ছিল; কিন্তু খালেদ মুহিউদ্দীনের অনুষ্ঠানে রিহার্সাল না থাকায় তিনি বিভিন্ন সময় আল জাজিরার পক্ষে কাউন্টার দিতে গিয়ে ছন্দ হারাতে থাকেন এমনকি এক সময়ের সহকর্মী বস্ মি. নাঈমুল ইসলাম খানকেও সাংবাদিকতা শেখাচ্ছিলেন বা আমাদের সময় পত্রিকা নিয়ে কটাক্ষ করছিলেন যেখানে তিনি এক সময় নাঈমুল ইসলাম খানের অধীনে দৈনিক আমাদের সময়ে কর্মরত ছিলেন। শুধু নেত্র নিউজ এডিটরই নন বিশেষ করে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, তৃতীয় মাত্রা উপস্থাপক জিল্লুর রহমান, সহ আরো অনেকেই সেই আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজ প্রতিষ্ঠালগ্নে তারা সবাই জনাব নাঈমুল ইসলাম খানের অধীনে সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। তাই দেশের সংবাদপত্র জগতে জনাব নাঈমুল ইসলাম খানকে সম্পাদকদেরও সম্পাদক বলা হয়। এ কারনে দেশের সংবাদপত্র জগতে তার একটি কথা বা মতবাদের বিশেষ গুরুত্ব থাকে সবসময়।
[১০] জনাব নাঈমুল ইসলাম খানের মতে আল জাজিরার এই প্রতিবেদনটি কোনভাবেই ইনভেষ্টিগেটিভ রিপোর্টের আওতায় পড়েনা। এটি অত্যন্ত নীচুমানের একটি হলুদ সাংবাদিকতা মাত্র। ইনভেষ্টিগেটিভ রিপোর্টের প্রধান শর্তই হলো সম্পূর্ণ অজানা বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রদান করত: সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দাখিল করা। জনাব নাঈমুল ইসলাম খান বলেন এই রিপোর্টে শুধুমাত্র হারিস ও আনিসের বিদেশে অবস্থানের বিষয় ও সেনাকুঞ্জের বিয়ের অনুষ্ঠানে দুই ভাইয়ের উপস্থিতির বিষয়টি অজানা বা নতুন তথ্য ছিল। এছাড়া অন্যান্য সকল তথ্যই ছিল পুরোনো যা এই দেশে মিডিয়া থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বেশ আলোচিত দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে। এমনকি মহামান্য রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমার মাধ্যমে জোসেফের মুক্তির বিষয়টিও দেশীয় গণমাধ্যমে বেশ আলোচিত ও সমালোচিতও ছিল। তবে বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত ছবিগুলোকেও তার সঠিক মনে হয়নি; এগুলো ফটোশপে এডিট হতেও পারে; এই মর্মে তিনি নিশ্চিত না হলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন।
[১১] অন্যদিকে ডেইলী ষ্টার সম্পাদক জনাব মাহফুজ আনাম যিনি সবসময়ই আওয়ামী বিরুধী কথা বলেন, সুযোগ পেলেই শেখ হাসিনার সমালোচনা করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননা সেই মাহফুজ আনাম সাহেবও আল জাজিরার এই রিপোর্টের মান ও দারিদ্রতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই বিষয়টিও জনাব নাঈমুল ইসলাম খান এই টক’শোর মাধ্যমে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। কিন্তু এ সকল বিষয়কে নেত্র নিউজ এডিটর পাত্তাই দেননি বরং তিনি আল জাজিরার পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন অনুষ্ঠানের পুরোটা সময়। তিনি এক সেকেন্ডের জন্যও আল জাজিরা ও সামির পক্ষপাতিত্ব থেকে সরে আসতে চাননি। এক পর্যায়ে খালিদ মুহিউদ্দীন তাকে মহামান্য ও মাননীয় উপাধির ভুল প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে অপব্যাক্ষা দেওয়ার বিষয়টি নেত্র নিউজ এডিটরের দৃষ্টিগোচর করলে অবশেষে তিনি এ বিষয়ে আল জাজিরার তথ্যগত ভুল ছিল বলে স্বীকার করতে বাধ্য হন এবং এ ক্ষেত্রে আল জাজিরার আরেকটু সতর্ক থাকা উচিত ছিল বলেও মনে করেন তিনি। একইসাথে তাসনিম খলিল জনাব মাহফুজ আনামের প্রতি সহমর্মিতাও প্রকাশ করেন কারন তিনি এক সময় ডেইলী ষ্টারে সরাসরি মাহফুজ আনামের অধীনেও কর্মরত ছিলেন । এ সময় তিনি জনাব মাহফুজ আনামের নামেও বিরুপ মন্তব্য করেন; যে মাহফুজ আনাম চাইলেও এ ধরনের প্রতিবেদন ডেইলী ষ্টারে ছাপাতে পারবেননা কারন এ দেশে নাকি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই। তাই মাহফুজ আনামও আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে যা বলা উচিত তা না বলে উল্টোটা বলেছেন। জনাব তাসনিম খলিল এক সময় সিএনএন এর বাংলাদেশ প্রতিনিধিও ছিলেন।
. বিএনপির পক্ষপাতিত্ব ও রাষ্ট্রবিরোধী সংবাদ পরিবেশনের জন্য তাসনিম খলিল ও সিনিয়র সাংবাদিক কনক সারোয়ার এর উপর তৎকালীন কেয়ারটেকার সরকারের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর তাসনিম খলিল চলে যান সুইডেনে এবং সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন নেত্র নিউজ নামে একটি অনলাইন নিউজ। অন্যদিকে কনক সারোয়ার ইউরোপে পাড়ি জমিয়ে গড়ে তুলেন কনক সারোয়ার নিউজ এবং চ্যানেল ওয়ান বন্ধের পর সামি আহমেদ স্থায়ীভাবে পাড়ি দেন হাঙ্গেরীতে। অবশ্য বাংলাদেশ আর্মি থেকে আনফিট হয়ে চাকরি হারানোর পর থেকেই সামি আহমেদ হাঙ্গেরী চলে যান কিন্তু বাংলাদেশে তার নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল; বিশেষকরে চ্যানেল ওয়ান প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে। প্যারোলে মুক্তির পর থেকে তারেক রহমান সাহেব আছেন লন্ডনে কিন্তু অত্যন্ত সু-সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেকের মালা গাঁথা এক বিনি সুঁতোতে। খালিদ মুহিউদ্দীনের এই টক’শোর মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে মি. তাসনিম খলিলই সামিকে আল জাজিরায় এসব কথিত তথ্য নিয়ে প্রবেশ করতে প্রধানত সহযোগীতা করেন। অর্থাৎ সামির নেপথ্যের অন্যতম একজন হচ্ছেন দেশ বিতারিত সাংবাদিক তাসনিম খলিল, এ কথা এখন স্পষ্টতই প্রমাণিত। তাহলে তাসনিম খলিলের নেপথ্যে কে বা কারা ? এক্ষেত্রে দেশ থেকে পলাতক সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্ণেল শহীদ উদ্দিনের কিছু বক্তব্য ৫৪ ধারা মোতাবেক বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
[১২] চ্যানেল আইয়ের টু দ্য পয়েন্ট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাবেক বিচারপতি জনাব মানিক মিয়ার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ‘‘অল দ্য প্রাইম মিনিষ্টার`স ম্যান” এর নেপথ্যে আছেন- জেনারেল ইব্রাহিম, জেনারেল হাসান সোহরাওয়ার্দি, মেজর দেলোয়ার, কর্ণেল শহীদ উদ্দিন, সাংবাদিক কনক সারোয়ার ও মেজর জিয়া সহ আরো অনেকেই যারা বিভিন্ন অপরাধে ইউরোপ আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশে পলাতক রয়েছেন । তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন কর্ণেল শহীদ উদ্দিন। গত ২৬মে,২০১৯ তারিখে প্রকাশিত ইংল্যান্ডের জাতীয় দৈনিক দ্য সানডে টাইমস এ কর্ণেল শহীদ উদ্দিন বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ত্র ব্যবসা ও জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি শহীদ উদ্দিন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ইংল্যান্ডের টোরি পার্টির ফান্ডে ২০ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছেন। এতে আরও বলা হয়েছে- ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে বরখাস্ত এ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদে মদদ দেয়া, অস্ত্র ব্যবসা, প্রতারণা ও অর্থ পাচারের একাধিক মামলা রয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তার ঢাকার বাসায় অভিযান চালিয়ে জিহাদি বই, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম পুলিশ।
. পলাতক শহীদ উদ্দিনের বিষয়ে বাংলাদেশের আদালতকে পুলিশ লিখিতভাবে জানিয়েছে, ২০১৮ সালে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে বিস্ফোরক, অস্ত্র, আল-কায়েদার সম্পৃক্ত জিহাদি বই এবং জাল মুদ্রা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, শহীদ উদ্দিনের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫০টি বিস্ফোরক দ্রব্য, ২টি বন্দুক, ২টি শটগান, ৭টি জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। বাকি বইগুলো বাংলাদেশে তথাকথিত খলিফার সম্পর্কিত লেখা। তবে রাজনৈতিক অনুদানের বিষয়ে দ্যা সানডে টাইমস এর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শহীদ উদ্দিন খান। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষার প্রসারের আড়ালে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে ৫৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে। দ্য সানডে টাইমস এর এই নিউজটি গুরুত্ব দিয়ে ২৭মে,২০১৯ তারিখে প্রকাশ করে জাগোনিউজ২৪.কম।
[১৩] গত ২০ডিসেম্বর,২০২০ তারিখে কর্ণেল শহীদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দূর্ণীতি বিষয়ক আরও অনেক তথ্য প্রকাশ করে দৈনিক প্রথম আলো। সেই প্রতিবেদেনে বলা হয়- অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭৪ লাখ ১৩ হাজার ৯৮৬ টাকার আয়ের তথ্য গোপন করে আয়কর ফাঁকির অপরাধ করেছেন। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শহীদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে ৯ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ৬০০ টাকা আয়ের তথ্য গোপন করে আয়কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শহীদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৭ লাখ ১৪ হাজার ২২১ টাকা আয়ের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এই মামলায় ১১ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে গত ১০ নভেম্বর,২০২০ তারিখে অস্ত্র মামলায় অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শহীদ উদ্দিন খান সহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার আরেকটি আদালত।
[১৪] এবার আল জাজিরার এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বহুদিন পরে আবারও সেই কনক সারোয়ারের অনুষ্ঠানেই টক’শোর মাধ্যমে ভার্চুয়ালি প্রকাশ্যে আসেন কর্ণেল শহীদ উদ্দিন। তার মনে প্রাণে ছিল বেশ উচ্ছাস ও প্রশান্তির হাসি। তিনি বেশ চাঙ্গা মনোভাব নিয়েই বলেছেন দেশ নাকি আবার জেগে উঠেছে অর্থাৎ তিনি এই বিষয়ে তাদের জয় হয়েছে বলেই স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন এবং সাংবাদিক কনক সারোয়ারও তার সাথে একই মত পোষণ করেন। এখানে দুজনকেই দেখা গেছে বেশ খোশ মেজাজে আছেন। একই বিষয় নিয়ে কনক সারোয়ারের সাথে আরেকটি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছিলেন দেশের আরেকজন জ্ঞানী,গুণী ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব ড. তাজ হাশমী। তিনিও মণে প্রাণে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ বিরোধী।(লিংক-youtube/kanaksarwarnews)। ড. তাজ হাসমীর মতে আল জাজিরা বর্তমান বিশ্বের এক নাম্বার নিউজ চ্যানেল যা নাকি আন্তর্জাতিক মহলে বিবিসি বাংলার চেয়েও গ্রহণযোগ্য এবং এটিই নাকি তার সবচেয়ে প্রিয় চ্যানেল। ড. তাজ হাশমী সেই বিনি সুতায় গাঁথা মালার আরেকটি “জিয়া ফুল”। তাদের সবার মত ড. তাজেরও মনে হয়েছে আল জাজিরার প্রতিবেদনটি ছিল যথার্থ ও নির্ভুল।
[১৫] এবার যাওয়া যাক কর্ণেল শহীদ উদ্দিন ও জেনারেল আজিজ আহমেদ এই দুই বন্ধুর ফোন কনভার্সেশনে যেখানে জেনারেল আজিজ আহমেদ গুম ও ক্রসফায়ার সম্পর্কিত বিষয়ে কর্ণেল জিয়া ও কর্ণেল জু্বায়ের সাহেবকে অভিযুক্ত করে কর্ণেল শহীদ উদ্দিনের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কের ভিত্তিতে মত বিনিময় করেছেন। জনাব কনক সারোয়ার সেই ফোনালাপ রেকর্ডিংটি এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই সরাসরি কর্ণেল শহীদ উদ্দিনকে শুনিয়েছিলেন। এখানে এইটুকু স্পষ্ট যে, প্রধানমন্ত্রীর সাথে জেনারেল আজিজ আহমেদের অন্যান্য বিষয় সহ কর্ণেল শহীদ উদ্দিন কে নিয়েও একটি আলোচনা হয়েছিল যেখানে কর্ণেল শহীদ উদ্দিন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বিরুপ প্রতিক্রিয়ামূলক বক্তব্য ছিল; যা তিনি বন্ধুর সাথে পরবর্তীতে ফোনালাপের মাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন। যদিও সরকারের একজন দায়িত্বশীল উধ্বর্তন অফিসার হিসেবে এই ধরনের ফোনালাপ করাটা ফরমাল ছিলনা তবুও তিনি বন্ধুত্বের খাতিরে তা করেছিলেন। এখানে কর্ণেল শহীদ উদ্দিন একদিকে যেমন ব্যবসায়িক বিষয়ে সহযোগীতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দীকিকে ধন্যবাদ দিয়েছেন অন্যদিকে এত অপরাধ থাকা স্বত্বেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে পূঁণরায় চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
. জোসেফ ছিলেন বেসরকারী অপরাধী আর কর্ণেল শহীদ ছিলেন সরকারী অপরাধী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুজনকেই বিশেষ ক্ষমা করেছেন শুধরানোর জন্য। যদি জোসেফকে ক্ষমা করে প্রধানমন্ত্রী অপরাধ করে থাকেন তাহলে কর্ণেল শহীদ উদ্দিনকে ক্ষমা করে চাকরি ফিরিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি অপরাধ করেননি? নতুন আইন তৈরী করে দেশে ইতিহাস সৃষ্টি করে বেগম জিয়াকে জামিনে মুক্তি দিয়ে তিনি কি অপরাধ করেননি ? আল জাজিরার এই রিপোর্টের বিপক্ষে যারা বলছেন তারা যদি শেখ হাসিনার দালাল হন তাহলে এর পক্ষে যারা বলছেন ও নেপথ্যে আছেন তারা কার দালাল ? এ সকল বিষয় আল জাজিরায় কেন আসেনি এখনও? এই প্রশ্নগুলো রইল কর্ণেল শহীদ উদ্দিন সহ সাংবাদিক কনক সারোয়ার, মি. তাসনিম খলিল ও মি. ডেভিড বার্গম্যানের কাছে।
[১৬] অপরদিকে যখন জেনারেল তারেক সিদ্দিকী তাকে ব্যবসায়িক ও চাকরিভিত্তিক সহযোগীতা করেছিলেন তখন জেনারেল তারেক সিদ্দিকী তার কাছে ভাল ছিলেন এবং তার ধন্যবাদও পেয়েছেন কিন্তু যখন তার রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধের বিপরীতে জেনারেল তারেক তাকে কোন প্রকার সহযোগীতা করলেননা তখন জেনারেল তারেক সিদ্দিকী হয়ে গেলেন খুনী ও দুষ্ট প্রকৃতির অফিসার। মোরাল অব দ্যা ষ্টরী হলো- কর্ণেল শহীদ উদ্দিন সেই মেজর ডালিমদেরই উত্তরসূরী আরেক ‘জিয়া ফুল’ যা শেখ হাসিনা সময়মত বুঝে ফেলে তাকে প্রশ্রয় দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন আর এজন্যই এখন তিনি মণে প্রাণে শেখ হাসিনার পতন কামনা করেন ও আল জাজিরাকে সাপোর্ট করে চলেছেন। তিনি বন্ধুত্বের সুযোগের সদ্ব্যবহার করে জেনারেল আজিজ আহমেদকেও বিভিন্নভাবে ভুল পথেও পরিচালিত করেছেন এবং এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সেনা প্রধান হওয়ার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে সাংবাদিক কনক সারোয়ার বলেছেন- বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে হত্যার পর থেকেই নাকি শেখ হাসিনার বাংলাদেশ আর্মি সম্পর্কে এলার্জি আছে। যার জন্য তিনি জেনারেল আজিজের মত অযোগ্য সেনাপ্রধান নিয়োগ দিয়ে ও সুবিধা বঞ্চিত করে বাংলাদেশ আর্মিকে সবসময় দূর্বল করে রাখেন এবং ভারতীয় শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ আর্মির মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে আর্মিকে হেয় করে রাখেন। আশাকরি কোন এক সময় বাংলাদেশ আর্মি সাংবাদিক কনক সারোয়ারকে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে বাধ্য করবেন এবং শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আর্মির জন্য কতটুকু নিবেদিত আছেন সে প্রশ্নের জবাবও বাংলাদেশ আর্মির পক্ষ থেকেই দেওয়া হবে।
[১৭] এবার তুলে ধরছি আল জাজিরার সেই প্রতিবেদনের বিপরীতে বাংলাদেশ এডিটরস গিল্ডের পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য যা গত ৭ফেব্রুয়ারী,২০২১ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল-
. কাতারভিত্তিক আল–জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়েছে বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সাংবাদিকতার নীতি–নৈতিকতা না মেনে।
. গণমাধ্যমের সম্পাদকদের একটি সংগঠন এডিটরস গিল্ড এ কথা মনে করে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এডিটরস গিল্ডের পক্ষে বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু।
. বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আল–জাজিরার প্রতিবেদনটি সম্পাদকদের বৃহত্তম সংগঠন এডিটরস গিল্ডের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পুরো বিষয় একটি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, অথচ শিরোনাম করা হয়েছে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত বিশেষ . কিছু অভিযোগের বয়ান দিতে গিয়ে প্রমাণহীনভাবে ‘প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ টার্মটা ব্যবহার করা মন্দ সাংবাদিকতা বলে দাবি করছে এডিটরস গিল্ড। সংগঠনটি মনে করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নির্মিত ও পক্ষপাতদুষ্ট একটি তথ্যচিত্র কোনোভাবেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত হতে পারে না। পুরো ডকুমেন্টারির ভিত্তি হলো একজন মানুষের কিছু অনানুষ্ঠানিক ও আড্ডার আলাপ, যার কোনো গ্রহণযোগ্য প্রমাণ এতে উপস্থাপিত হয়নি।
. এডিটরস গিল্ড বলছে, হাঙ্গেরি ও ফ্রান্সে মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরোর বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এর উৎস দেখানো হয়নি। কেবল মুখের কথাতেই বলা হয়েছে সরকারের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে বিরাট অর্থ লেনদেনের কথা। এসব অভিযোগের সমর্থনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কোনো প্রশাসনিক বক্তব্যও আল-জাজিরা দেয়নি। সামিকে ‘জীবননাশের হুমকি’ দেওয়া ই–মেইলের অরিজিনাল পেজ ছিল না। ফলে এর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে। হাঙ্গেরি, ফ্রান্স বা মালয়েশিয়ার বিচরণকারী হিসেবে যাঁদের দেখানো হয়েছে এবং তাঁদের পাসপোর্ট জালিয়াতি, অন্য কাগজ জালিয়াতি, অর্থ পাচার, ইত্যাদি অপরাধের যে বর্ণনা রয়েছে, এসব বিষয়ে সেসব দেশের সরকারের দিক থেকে কারও কোনো বক্তব্য না থাকায় এডিটরস গিল্ড এই তথ্য চিত্রের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। পুরোটা সময় গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও দেখানো হয়েছে। এটি একটি মানসম্পন্ন সংবাদমাধ্যম করতে পারে না। যাদের বিরুদ্ধে এত কিছু, তাদের বক্তব্য না থাকায় এটি সম্পূর্ণ সাংবাদিকতা পরিপন্থী কাজ হয়েছে। দীর্ঘ দুই বছরের অনুসন্ধানের পর ‘তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি’ বলাটা অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে এডিটরস গিল্ড।
. বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্পাই ওয়্যার কেনার বিষয়টি সরকারের নিজস্ব নীতি এবং সেটিও যে সত্যিই ইসরায়েলি কোম্পানি থেকে কেনা হয়েছে, তার প্রমাণ নেই তথ্যচিত্রে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলে একধরনের সাংবাদিকতার মতোই এখানে দুজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার কথা বলে তাঁদের ছবি ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এগুলো নিছক চাতুর্য ছাড়া আর কিছু নয়। এক ঘণ্টার তথ্যচিত্রে একজন অন্যতম সাক্ষাৎকারদাতা বাংলাদেশের আদালত কর্তৃক দণ্ডিত। এডিটরস গিল্ড যৌক্তিক প্রমাণ দিয়ে সাংবাদিকতার স্বার্থে যেকোনো সংবাদ বা অনুষ্ঠানকে স্বাগত জানায়। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো কিছু প্রচারিত হলে তা প্রকারান্তরে গণতন্ত্র ও সাংবাদিকতা উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।
[১৮] শুধুমাত্র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান বা সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনই নন বাংলাদেশ এডিটরস গিল্ডের সকল সম্পাদকই মনে করেন আল জাজিরার এই প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। নাঈমুল ইসলাম খান নিজেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার ছাত্র বলে বিষয়টি বিশ্লেষন করেছেন বলে সাংবাদিক কনক সারোয়ার তার অনুষ্ঠানে কর্ণেল শহীদ উদ্দিনের সাথে মতবিনিময়কালে বলেছেন যে নাঈমুল ইসলাম খান নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করছেন। সাংবাদিক কনক সারোয়ারের কাছে প্রশ্ন হচ্ছে- তিনি এই মন্তব্য করে নিজেকে কি প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন? তিনি কি নাঈমুল ইসলাম খান বা এডিটরস গিল্ডের সম্পাদকদের চেয়েও বড় কিছু হয়ে গেছেন? আল জাজিরার এই প্রতিবেদন শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদেরকেই নয় প্রশ্নবিদ্ধ করেছে গণমাধ্যমকেও, মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও আর সে জন্যই শুধু রাজনৈতিক ব্যক্তি বা সরকার পক্ষই নয় প্রতিবাদ আসছে দেশী বিদেশী সাংবাদিকদের পক্ষ থেকেও। এখানে কেউ কাউকে জাহির করছেননা। সামগ্রিক পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে- শেখ হাসিনা বিরোধী সকল ক্যু-চক্রিরাই এই বিষয়ে এক কাতারে এক কাফেলায় দাঁড়িয়ে আছেন।
. সবশেষে আল জাজিরার এই কথিত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে জাতিসংঘ। সূত্র- মাননীয় তথ্য মন্ত্রী- ড. হাসান মাহমুদ (এম,পি)
. অন্যদিকে বিশ্ব বিতর্কিত চ্যানেল আল জাজিরা ও নেত্র নিউজ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অর্থনৈতিক ও পাবলিসিটির ফায়দা নিয়েছে মাত্র। আল জাজিরা বিতর্কিত গণমাধ্যম হিসেবেই বিশ্বে আলোচিত ও সমালোচিত। বিবিসি বা সিএনএন এর মত ব্রান্ড ইমেজ গঠন সম্ভব নয় বলেই তারা বিতার্কিক পন্থা বেছে নিয়েছেন। এটি বিজনেস স্ট্র্যাটেজির একটি নেগেটিভ সাইট যা অতি দ্রুত ব্যবসায়িক প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখে। বিষয়টি যাদের অজানা তারা ভুল করতেই পারেন কিন্তু যাদের জানা আছে তারা শুধু ভুল নয় বরং আল জাজিরাকে সাপোর্ট করে অপরাধ করছেন ও করাচ্ছেন। নিজের ভাইদের প্রতি সহমর্মিতা ছাড়া পুরো প্রতিবেদনে এমনকিছু প্রমাণ হয়নি যে জেনারেল আজিজ আহমেদ রাষ্ট্রদ্রোহী কোন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন কোন কনভার্সেশন নেই যেখানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে অনৈতিক কোন বক্তব্য বা অর্ডার দিয়েছেন। এরা প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়েছেন অধিকার বলে। কারন আহমেদ পরিবার এক সময় সত্যিই আওয়ামী লীগের দু:সময়ে পাশে ছিল। এভাবে এক সময় জোসেফ বা হারিসরা যখন প্রফেসনালী অন্ধকার জগতে চলে যায় তখন থেকেই শেখ হাসিনার আশ্রয় প্রশ্রয়ের দরজা তাদের জন্য বন্ধ হয়ে যায় যা অদ্যবধি বিদ্যমান আছে; কিন্তু তারা শেখ হাসিনার নাম ভাঙ্গানোটা এখনো অব্যাহত রেখেছে। যেহেতু এখন বিষয়টি শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে সেহেতু এবার তিনি এ বিষয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবেন। আল জাজিরা এই দিক থেকে শেখ হাসিনার একটি উপকার করেছেন হয়ত।
[১৯] কোন দাগী আসামীর যখন সকল আইনী পথ বন্ধ হয়ে যায় তখন একমাত্র পথ থাকে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া । যখন কোন আসামী এ ধরনের ক্ষমা চায় তখন তার অপরাধ স্বীকার করেই চায়। অনেক অপরাধী জানে তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাবেনা তবুও চায়। গণ হারে না হলেও অন্তত লাখে একটি হলেও মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সাংবিধানিক এই ক্ষমতাটি ব্যবহার করে আইনটি চলমান রাখতে হয়। এখানে জোসেফের পক্ষে কেউ একবারের জন্যও সাফাই গাইছেনা যে সে অপরাধী নয়; কিন্তু সে অরাধের দায়ে দেড় যুগেরও বেশী সময় কারা ভোগ করেছে। এখন এইটুকু ক্ষমা সে চাইতেই পারে আর মহামান্য রাষ্ট্রপতি চাইলে তাকে ক্ষমা করতেই পারেন। দেশে বিদেশে এমন অহরহ হচ্ছেও। এমনত নয় যে মাত্র দেড় মাস কারাভোগের পরেই রাষ্ট্রপতি তাকে ক্ষমা করে মুক্তি দিয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি জনাব আব্দুল হামিদের প্রতি আজো পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগের আঙ্গুল তুলতে পারেনি। তিনি সরকারী ও বিরোধী উভয় দলেরই নির্ধিদায় সম্মানের পাত্র ছিলেন, আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। সেই নির্ভেজাল মানুষটিকেও এই ন্যাক্কার জনক বিষয়ে যুক্ত করে তার মানহানি করা হচ্ছে। বিষয়টি রাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগজনক।
[২০] এরচেয়েও আরো ভয়ানক উদ্বেগের বিষয় রয়েছে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে অর্থাৎ দলে অনুপ্রবেশকারীরা এবং দলের বাহিরে বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ থেকে বিতারিতরা। বিএনপি চক্রের তেমন কোন ক্ষমতাই নেই আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার; যদি-না অনুপ্রবেশকারী ও বিতারিতরা বিএনপিকে সহযোগীতা না করে। জীবনের বহু বছর দলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বিধায় তারা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরের অনেক দূর্বলতা জানে যেগুলোকে পুঁজি করে তারা বিএনপি জোটকে দিনকে দিন শক্তি যোগাচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বর্তমান নীতিনির্ধারকরা দলের ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করে বা সুবিধা বঞ্চিত করে দলে অনুপ্রবেশকারী ও বিতারিতদেরকে অধিক আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে দিনকে দিন দলকে অনেকটাই দূর্বল করে দিচ্ছেন। শুধুমাত্র শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আছেন এই একটি বিষয় নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা ছাড়া বর্তমানে দলের ত্যাগী নেতা কর্মীদের গর্ব করার মত আর বিশেষ কিছু নেই বললেই চলে। আল জাজিরার এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আওয়ামী লীগকে পূণর্গঠিত করে আবার সেই চিরচেনা রুপে ফিরিয়ে আনা অতীব জরুরী নয়ত আল জাজিরা ভুল করতে করতে এক দিন-না একদিন সঠিকটা করে ফেলতে সক্ষম হয়ে যাবে। অন্তত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিএনপি জোট ও আল জাজিরা যৌথভাবে সবসময় একটিভ থাকবেই। বিষয়টি আওয়ামী লীগ পন্থী সকল নেতৃবৃন্দ, ভিআইপি ও মান্যবরদের সবসময় মাথায় রেখে দেশ বিদেশে মুভমেন্ট করা উচিত।
[২১] প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গানো সহ এ ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটানোর জন্য এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোদ সেনাপ্রধানের জবাবদিহি বাধ্যতামূলক। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত সেনাপ্রধান এ বিষয়ে সরাসরি মতবিনিময় না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত এই বিষয়টির সঠিক কোন ব্যাক্ষা আসবেনা। তাই দেশের স্বার্থে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মান সম্মানের দিক বিবেচনা করে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের উচিত অচিরেই এ বিষয়ে ব্যাক্ষা প্রদান করা। নিজেরা নিজেদের সাক্ষাৎকার নিয়ে সাজানো বয়ান না দিয়ে আল জাজিরার এই প্রতিবেদনের নেপথ্যের চার প্রধান কারিগর তথা- ১. ডেভিড বার্গম্যান ২. নেত্র নিউজ এডিটর তাসনিম খলিল ৩. সাংবাদিক কনক সারোয়ার ও ৪. আল জাজিরার ভাড়াটে সাংবাদিক সামি আহমেদকে কে সরাসরি কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ এডিটরস গিল্ডের সঙ্গে একসাথে বা পর্যায়ক্রমে জবাবদিহি করা উচিত। একইসাথে ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলম ও সাংবাদিক ইলিয়াসকেও এ বিষয়ে ক্রস এক্সাম এর আওতায় আনা উচিত। খতিয়ে দেখা উচিত আল জাজিরার পেছনে এই বিশাল অঙ্কের অর্থ যোগানের মদদ দাতা হিসেবে তারেক রহমান, সাকা চৌধুরীর পরিবার ও মীর কাশেম আলীর পরিবারের ভূমিকা কতটুকু!! বিশেষভাবে খোঁজ নেওয়া উচিত এ বিষয়ের সন্দেহাতীত কার্যকরী মাষ্টার মাইন্ড ড. কামাল হোসেনের বিষয়ে; যিনি তার জামাতা ডেভিড বার্গম্যানকে হাতিয়ার হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছেন এই বিষয়ে।
[২২] ভুল শুধু রাজনীতিবিদরাই করবেন সাংবাদিকদের ভুল হবেনা বা জবাবিদিহি শুধু রাজনীতিবিদরাই করবেন, সাংবাদিকদের কোন জবাবদিহি থাকবেনা তা হতে পারেনা। সাংবাদিকতা শুধু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কর্মীরাই জানেন আর দেশের জাতীয় সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা জানেননা তা হতে পারেনা। আল জাজিরার এই হলুদ সাংবাদিকতা নিয়ে সরকার বা রাজনীতিবিদদের চেয়ে দেশী বিদেশী সাংবাদিকরাই লজ্জিত হয়েছেন সবচেয়ে বেশী। তাই দেশের সাংবাদিকদেরই এবার প্রমাণ করা উচিত যে শুধু আল জাজিরাতেই নয় বাংলাদেশও বিচক্ষণ ও আন্তর্জাতিক মানের সাংবাদিকগণ আছেন। শুধু তাই নয়, এবার তারেক রহমান বা বেগম জিয়া বা দেশের আরও স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতাকাল ও বর্তমান গতিবিধি নিয়ে ‘অল দ্য ফরমার প্রাইম মিনিষ্টার`স ম্যান’ প্রতিবেদন তৈরী করে আল জাজিরার প্রমাণ করা উচিত যে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিষ্টার`স ম্যান’ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিলনা।
[২৩] ‘অল দ্য প্রাইম মিনিষ্টার`স ম্যান’ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রচুর তথ্যগত ভুল আছে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবেও ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে কারণ এর নেপথ্যে আওয়ামী লীগ বিরুধী সকল ক্যু-চক্রিদেরকেই এক সাড়িতে দেখা যাচ্ছে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের কোন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সাংবাদিক নেই, এটিই সবচেয়ে বড় লক্ষণীয় বিষয়। তাই আন্তর্জাতিক মানের হলুদ সাংবাদিকতা হলেও আল জাজিরার এই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা সরকার প্রধানের জন্য একটি লেসন অবশ্যই হতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং ইতিমধ্যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও দেশের সাংবাদিকদের সুযোগ সুবিধার প্রতি যথেষ্ট মনযোগী হলেও তিনি এখন পর্যন্তও দেশের অভ্যন্তরে কোন আন্তর্জাতিক মানের গণমাধ্যম তৈরীতে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। এই একটি কারনে আন্তর্জাতিক বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে যখন তখন নিজেদের খেয়াল খুশি মত ডার্ক-প্লে করে দেশীয় সংবাদকর্মীদের হেয় করার চেষ্টা করে। দেশে আন্তর্জাতিক মানের বহু সিনিয়র সাংবাদিক থাকার পরেও শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মানের একটি গণমাধ্যমের অভাবে তারা তাদের অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্যু-চক্র থেকে প্রটেক্ট করতে পারছেনা এমনকি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অন্ধকার মহলকেও তুলে ধরতে পারছেনা। শুধু তাই নয় দেশের অধিকাংশ মিডিয়া উদ্যোক্তাদের উদাসীনতা ও অতি ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির জন্য দেশের বেশীরভাগ সাংবাদিকই প্রায় সবসময়ই থাকে নানা রকম জৈবিক হয়রানিতে। ফলে অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা থাকার পরেও তারা সম্মূখে অগ্রসর হয় ধীর গতিতে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এবার সময় হয়েছে আসছে বাজেটে ন্যূনতম এক হাজার কোটি টাকা বাজেট ঘোষণা করে (PPP) এর আওতায় দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের গণমাধ্যম গড়ে তুলে আল জাজিরার হলুদ সাংবাদিকতার উপযুক্ত জবাব দিয়ে দেশীয় সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলা। নাম দেওয়া যেতে পারে “চ্যানেল ডিজিটাল বাংলাদেশ”(CDB). আশাকরা যেতে পারে এই উদ্যোগই হবে আল জাজিরার সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে সঠিক ব্যাক্ষা প্রদান করা সহ উপযুক্ত জবাব দেয়া। শুধু তাই নয় ভবিষ্যতে আল জাজিরা সহ অন্য যেকোন দেশী বিদেশী হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে রুখে দাঁড়াবে এই আন্তর্জাতিক চ্যানেল।
জ:/প্র:/১০-০২-২০২১
বি:দ্র:- গত ৩০জানুয়ারী,২০২১ তারিখে দেশীয় সাংবাদিকদের জৈবিক হয়রানি প্রসঙ্গে জনসংযোগ নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এই প্রতিবেদনে দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার বর্তমান প্রেক্ষাপটের সঠিক ও সত্য তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
(শিরোনাম- গণমাধ্যম, গণমানুষের প্রধান সেবা শিল্প-উদ্যোক্তাদের প্রধান আয়ের উৎস নয়) নিউজ লিংক- https://www.jonosongjognews.com/620 )
প্রস্তাবিত প্রতিবেদনটি পড়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছে।
——————————————————————
ধন্যবাদান্তে
এম আনিছুর রহমান
এডিটর-ইন-চীফ
জনসংযোগ নিউজ.কম
jsongjugnews@gmail.com / fb.com- @jshongjog / Twitter- jonosongjognews / 01798288069
পাঠকের মন্তব্য