মন্বব্য প্রতিবেদন /জনসংযোগ নিউজ / মুক্তিযোদ্ধা ভাতা / ৩০-০৩-২০২১
। ফারুক হোসাইন ।
আমার বয়স থেকে উপলদ্ধি করি ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধটি যদি ওই সময় না হয়ে ১৯৯৬ থেকে ২০২০ এর মাঝের কোন এক সময় হতো তাহলে কি আমি যুদ্ধ করতাম ? প্রশ্ন একটি মুক্তিযুদ্ধ করতে পারতাম কিনা? সদুত্তরের বেলায় বহু উত্তর নিজো মনকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দেয়। আমি কি বন্দুকের গুলি খাবো ? নাকি আমার হাত বা পা বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে মারা হবে? নাকি আমারই চোখের সামনে কলিজার টুকরা বোনকে পালাক্রমে কিছু নরপিশাচ ধর্ষণ করছে, নিরুপায় হয়ে আমাকে তা সহ্য করতে হবে? নাকি আমার এক বন্ধুর সুন্দরী রূপসী বোন বা স্ত্রী-কে তুলে দেব ঐ নরপিশাচদের হাতে? নাকি নিজেকে বা নিজের পরিবারকে বাঁচানোর জন্য ঐ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর নিকট রাজাকারের খাতায় নাম লিখাবো নিজের? উত্তরগুলো দোল খায় মনে। অতি সহজেই আমরা তৈরী করা একটি সোনার বাংলা পেয়েছি। একটি পুর্ণাঙ্গ লাল সবুজের দেশ পেয়েছি। আমাদের মতো সৌভাগ্যবান জাতী এই পৃথিবীতে নেই। সৌভাগ্যবান না বললেই নয় যেখানে ৩০ লক্ষ বা তার অধিক লোক শহীদ হয়েছেন, লক্ষ লক্ষ মা বোনকে ধর্ষিতা হতে হয়েছে।
আমরা মুক্তিযুদ্ধ করি নাই এমনকি দেখিও নাই। মাঝখানে আমরা এই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিরাই বিভ্রাট সৃষ্টি করছি। নিজের মাঝে কেন উদ্দীপনা জাগাতে পারি না? কেন মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রশ্ন? গঠনমূলক তালিকা হয়নি কেন? হলেও ভুলে ভরা কেন? সঠিক যাচাই বাছাই হয়নি কেন? আমার কাছে বিষয়টি অতি সহজ লাগে। একটি বাড়ীতে, একটি গ্রামে, একটি ইউনিয়নে, একটি থানাতে, একটি জেলাতে কত জন মুক্তিযোদ্ধা আছে ; এভাবে পুরো বাংলাদেশের হিসাব মোলানো খুব একটা কঠিন কাজ নয়। ১৯৯৬-২০২০ অনেক বছর কেন হয় নাই? সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার পরেও কেন হয়নি তা? অথচ আওয়ামী লীগকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল বলা হয়। তবে এ কথা চীরসত্য যে মুক্তিযুদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রেখেছে।
আমরা যারা সরকারে আছি মুক্তিযুদ্ধ ভাতা কিভাবে দিবো বা কোন প্রক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধা ভাতা দিলে কালের সুর্যাস্ত পর্যন্ত তা ফরমাল বলে বিবেচিত হবে সে বিষয়ে আমাদের তো ফিলিংস তথা বোধই নেই। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষের দল বটে কিন্তু সরকারের সকলেই তো মুক্তিযোদ্ধা নয় বা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারেরও কেউ নয়। মিশ্রণ, যদি নাই হবে তাহলে এতো দেরী হবে কেন? সরকার দুই টার্ম শেষ করে তৃতীয় টার্মের মাঝামাঝি। মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা এই বুঝি হলো বা আবারো নতুন করে পর্যবেক্ষণ ও যাচাই বাছাই করে সঠিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। আবার এই যাচাই বাছাইয়ের সময়ের মাঝে অনেক মুক্তিযোদ্ধা বুকের ভিতর হাহাকার নিয়ে এই দুনিয়া থেকেই চিরতরে বিদায় নিয়েছে।
এক ডিসেম্বর থেকে আরেক ডিসেম্বর শুধুই বিজয় উল্লাস। ডিসেম্বর টু ডিসেম্বর মাঝের সময় টুকুতে তালিকাভুক্ত ছাড়া যে সকল মুক্তিযোদ্ধা আছে তারা অপেক্ষায় আছে এই বার বুঝি তার নামটি তালিকাভুক্ত হবে। তাদের স্ত্রী সন্তানও আশায় বুক বাঁধে এই বার বুঝি তাদের পরিবারের সু-দিন ফিরবে। কিন্তু ফিরবে কিভাবে? মিছিল করেছি শহীদ জিয়ার, খালেদা জিয়ার দলত যুদ্ধপরাধী দল, জামায়াত শিবিরও অন্য কোন মতাদর্শের। তাদের ভিতরের অনেক লোক সরকারে বহমান। ফিলিংস কাজ করেনা তাদের। অন্যদিকে যাদের ফিলিংস কাজ করে সেই বীর মহাবীরদের অনেকেই দলের বাহিরে আর তাদের মধ্যে এখনও যারা দলে আছেন তারা নব্য বা হাইব্রীডদের ভীড়ে একরকম কোণঠাসা হয়েই আছেন ।
বর্তমানে নব্যদের গলার আওয়াজ পুরোনো বা ত্যাগীদের চেয়ে অনেক অনেক বেগবান; তাছাড়া পুরোনোদের সংখ্যাও কমে গেছে অনেক। চায়ের দোকানে মুক্তিযোদ্ধা বসে আছে। টাকা নেই, হঠাৎ কেউ একজন দোকানদার কে বললেন মুক্তিযোদ্ধা কাহাকে এক কাপ চা দাও। চাচাও নয় বা কাকাও নয়,বলে কাহা। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় বীর মহাবীর যারা আছেন তাদের প্রত্যেককে মনে প্রাণে শ্রদ্ধার সহিত বলছি- যেসব মুক্তিযোদ্ধা এখনও বাংলার আনাচে কানাচে অবহেলিত ভাবে পড়ে আছে তাদেরকে দ্রুত সনাক্ত করে পৃথিবী থেকে বিদায়ের শেষ বেলায় অন্তত মিনিমাম প্রাপ্য সম্মানটুকু হলেও তাদেরকে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন প্লিজ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অতি শ্রদ্ধার সহিত বলছি, আপনার চেয়ে সৌভাগ্যবান এবং গর্বিত সন্তান এই পৃথিবীতে দ্বিতীয় খুঁজলে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। বাবা স্বপ্ন দেখেছেন কিন্তু বেশীরভাগই পূরণ করতে পারেননি। আপনি একে একে বাবার স্বপ্ন পূরণ করে চলেছেন। আপনার বাবার ৭ই মার্চের ভাষণের প্রতিফলনই আজকের বাংলাদেশ। সাতকোটি মানুষের একজন তিনি, যার কথা ও আহ্বানের উপড় ভিত্তি করে ত্রিশ লক্ষাধিক শহীদ শুধু মৃত্যুবরণই করেছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন লাখো লাখো মুক্তিযোদ্ধা । এই প্রথম হওয়ার যোগ্যতা আল্লাহ পাক সবাইকে দেন না। অবশ্যই দেন যুগের পরে পরবর্তী প্রজন্মে যা ইতিহাস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি তারই সন্তান।
মাঝে মাঝে দুই চারজনের সাথে শেয়ার করি এবং এনজয়ও করি। এই কণ্যার বাবা ছিলেন এক ইতিহাস। আর এই কণ্যা আরেক ইতিহাস। এক্কেবারে চোখের ভেলকিতে পুরো পদ্মা সেতুটি যেভাবে সফল করে ফেললেন তা সত্যিই বিশ্বের বিস্ময়। এও বলি যে, পুরো দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষ যদি শেখ হাসিনার এই এক পদ্মা সেতুর অবদান এর কথা ভুলে যায় তবে তারাই হবে জাতীয় বেইমান। পুরো বাংলাদেশের টাকা হাসিনা এই পদ্মা সেতুতেই ঢেলেছেন। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষরে হাসিনা আর কি দিবেন? নব্য যারা আছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, শুধু নিতে নয় দিতেও শিখুন। রাজনীতি বা দলকে ভোগের সামগ্রী না বানিয়ে আপাদমস্তক দলকে ভালবাসতে শিখুন; কারন সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটই বার বার বলে দিচ্ছে যে, পুরোনো বা ত্যাগীরা নয় বরং আপনারাই এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত কান্ডারী, তাই আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো জরুরী।
সংক্ষিপ্তভাবে ঝিনাইদাহ জেলার শৈলকুপা থানার অন্তর্গত একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের গল্প বলছি। কমান্ডার অজিৎ কুমার মন্ডলের নেতৃত্বে ৭-৮ জনের একটি টিম ছিল জসিম ভাইদের বাড়িতে। বিকালে বের হওয়ার প্রস্তুত্তি নিচ্ছিল। ঠিক এমন সময় গোয়েন্দা এসে খবর দিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এসে পড়েছে। তখনি তাড়াহুড়া করে সবাই বের হয়ে যায়। কিন্তু একজন বাথরুমে থাকার কারনে বের হতে বিলম্ব হয়। সে এসে দেখে তার অস্ত্র নেই। মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর খা এর মা এসে বলে বাবা সবাই বের হয়ে গেছে; তুমিও তাড়াতাড়ি বের হয়ে পড়ো। বাড়ীর পূর্ব দিকের ব্রিজ পার হয়ে দুই পাশে পাট ক্ষেতের মাঝ দিয়ে চিকন রাস্তা গেছে। কিছুদূর যাওয়ার পরে দেখবে আম বাগান আছে ওখানে গেলেই তাদেরকে পাবে। তাড়াহুড়া করে সে বেড়িয়ে যায়।
এমন সময় মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর খান এর মা ঐ ঘরে ঢুকে দেখতে পায় বিছানার কোনায় রাইফেলের গুলির প্যাডি। তখন ঐ বুদ্ধিমতী মা তার ছয় নাম্বার সন্তানকে কাছে পায়। ক্লাশ টু-তে পড়ুয়া জসিম উদ্দিন কে মা তখন পাটের ব্যাগের ভিতর গুলির প্যাডিটা সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়ে বলে বাবা এই রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গেলে তোমার ভাইদের পাবে। জসিম ভাইয়ের দুই ভাই মুক্তিযোদ্ধা ছিল, তারা এখনও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পায়। ঠিক মায়ের কথা মতো ৮-৯ বছরের এই শিশুটি কোন ভয়কে তোয়াক্কা না করে পাটক্ষেত বরাবর এগিয়ে যায়। তখন সন্ধ্যা হলেই বড় বড় শিয়ালের হাঁক ডাক ছিল পাট ক্ষেতে। মায়ের এক বারও মনে পড়েনি তার এই ছোট্ট সন্তানটিকে শিয়াল আক্রমণ করতে পারে। এক দিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অন্যদিকে শিয়ালের হাঁক ডাক। ছোট্ট শিশু জসিমের নেই কোন ভয়; এগিয়ে চলছে মায়ের কথা মতো। কতোদুর এগিয়ে যেতেই জসিম ভাইকে দেখতে পায় মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর খান এবং দলনেতা অজিৎ কুমার মন্ডল তারাও এগিয়ে আসছিল ভুলে ফেলে যাওয়া গুলির প্যাডিটা নেওয়ার উদ্দেশ্যে। জসিম ভাইকে দেখতে পেয়ে তারা বুঝতে পেরেছিল তাদের গুলির প্যাডি এখানেই আছে। ঠিক তাই হলো।
গুলি পাওয়ার পরে ঐ ব্যাগে তারা দুজন পাটের পাতা ভেঙ্গে ব্যাগ ভর্তি করে জসিম ভাইকে বললো, এবার যাও। এই ব্যাগে পাটের পাতা দেওয়ার উদ্দেশ্ই ছিল; পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যেন বুঝতে পারে এগুলো ছাগলের খাদ্য। জসিম ভাইয়ের বয়স এখনও ৬০ হয়নি তবে তাকে দেখলে মনে হয় ৭০ ছুঁই ছুঁই। সে বর্তমানে একজন শ্রমিক। দারিদ্রতার ভারে তার বয়সটা একটু বেশী দেখা যায়। আমি নতুন প্রজন্ম হিসেবে ঘুরে ফিরে দেখছি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বেশীরভাগ লোকজনই গরীব তথা দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করছে। কারণ ৭৫ এর পর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কেউ মাথা উঁচু করে চলতে পারেনি। তাদের প্রতি আলাদা নজর ছিল। যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিল তাদেরকে সামাজিক ভাবে পাগল সাজানো হয়েছিল আর তাদের ফ্যামিলিকে মৌন নির্যাতন করা হতো। যদি বাঁচতে চাও কাজ করে খাও, বেশি বাড়লে ঝামেলায় পড়বে,মূলত তখনকার দৃশ্যপট-ই ছিল এমন। এই দূর্দশাটা হতো না যদি বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট না ঘটতো। আমাদের শেখ সাব (সাহেব) বেঁচে থাকলে কবেই আমাদের অভাব দুর হয়ে যেত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শ্রদ্ধাভরে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- আপনি শেখ সাবের মেয়ে, আমাদের কাছে আপনি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। আমরা শেখ সাব কে দেখিনি। শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই বলতে পারে শেখ সাব কে ছিলেন। যাইহোক, বলতে চাচ্ছিলাম মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। গড় আয়ুর হিসেবেও মৃত্যুর দিকে বেশী চলে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্ম বললে ভুল হবে; হয়তো ১০-১৫ বছর বা তারও কিছু অধিক সময় পরে দেশে একজনও মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি হওয়া স্বত্বেও এখনও কেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজাকারের নাম মুক্তিযোদ্ধার খাতায় বা মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের খাতায়? তাই আর কোন যোজন বিয়োজন নয় এবার একটি সঠিক ও স্থায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা জরুরী। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এটিই হোক আমাদের প্রধান উদ্যোগ।
সবশেষে বলতে পারি বাংলাদেশ সত্যিই সোনার বাংলাদেশ। কোন কিছুই অভাব নেই এ দেশে; অভাব শুধু একটু সৎ মানষিকতার। এখনও যেই সব বীর মহাবীররা বেঁচে আছেন সরকারী সহ বিরোধী দলেও। আবার কিছু কিছু দলে দেখা যায়- এক একজন বীর একটি দল নিয়ে একাই বসে আছেন, শুধুই অভিমান করে। কেন জানি মনে হয় এখন আর অভিমান বা রাগ করার সময় নয়। আপনারা এখনও বেঁচে আছেন। আপনারা বেঁচে থাকা অবস্থায়ই কত উলট পালট হচ্ছে; সূতরাং আপনাদের মৃত্যুর পরে কি হবে !! শুধু একটু উপলব্ধি করুন । আমরা যারা নতুন প্রজন্ম আছি; সেই আমরাই কতো বীরকেই নব্য রাজাকার বলি। এমনকি আপনরারাই অন্য বীরদের কাছে নালিশ করেন- দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে ভাই? আক্ষেপের সুরে বলেন; এই জন্যই কি দেশটি স্বাধীন করেছিলাম ! বিচারক বলেন কি আর করবো ভাই, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ এই দৃশ্য দেখতে হতোনা । বঙ্গবন্ধুকে বিক্রি করে আর কত দিন ? আপনারাই বঙ্গবন্ধুর উত্তরসুরী, তাই এখনও সময় আছে দয়া করে দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে একটি দক্ষ বোর্ড গঠন এর মাধ্যমে সঠিক মুক্তিযোদ্ধার একটি গেজেট বের করুন এবং তাদের সঠিক মূল্যায়ন করার পাশাপাশি তাদের পরিবারকেও বিশেষ সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করুন। কেননা আপনারাও জানেন আপনার জন্য বাবা মা ভাই বোন কি অবদান রেখেছিলেন?। সেই হিসেবে তাদের একটা হক থেকে যায়। যদি ভাগ্যক্রমে আপনাদের উত্তরসুরীদের হাতে দায়িত্ব পরে যায় তাহলে কিন্তু জগা খিচুরীর অবস্থা পরিগণিত হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি শেখ সাহেবের বেটি। শেখ সাহেবের কথাতেই দেশটি স্বাধীন হয়েছিল, এটা আপনার গর্ব। তাছাড়া বাংলাদেশে টাকার অভাব নেই। এক জিনিসের দাম কেজি প্রতি ১/২ টাকা বাড়লে অনেক টাকা হয় সেখানে কেজি প্রতি ৩০/৪০ টাকা বাড়ানো হয়। আর যে পরিমাণে অপচয় হচ্ছে এক বারের কাজ তিন বার করে কাজ হচ্ছে। শুধু খরচের খাত দেখানোর জন্যই এগুলো হয়, যার কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু সঠিক মানসিকতার। সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধারা যেটুকু সুযোগ সুবিধা পেয়েছে তা শুধুই আপনার কারণে। তবে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায় যা এখনও অমিমাংসিত, যেমন-
১) প্রথমত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে সরাসরি মুক্তিযোদ্ধারা, তাদের মৃত্যুর পর তাদের সন্তানেরা কিন্তু একাধিক সন্তান থাকলে কোন সন্তান ?
২) সন্তানের মৃত্যুর পর পাবে তাদের নাতী/নাতনীরা কিন্তু একাধিক নাতী/নাতনী থাকলে কোন নাতী/নাতনী ?
৩) ভাতার ওয়ারিশনামা বন্টন হবে কিভাবে? লক্ষণীয় যে, বেশীরভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের পরলোক গমণের কারনে তাদের মধ্যকার বেশীরভাগ পরিবারের মধ্যেই বর্তমানে ভাতার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কোন্দল দৃশ্যমান। এর স্থায়ী সমাধান কি?
৪) মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদান কত সাল পর্যন্ত চলবে? যদি তা কালের সূর্যাস্ত পর্যন্ত চলে তবে এই ভাতা প্রদানের মহা ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? এবং কিভাবে তা চীরস্থায়ীরুপে চলমান থাকবে? কারন শেখ হাসিনা চীরদিন বেঁচে থাকবেননা। উদাহরণ স্বরুপ- আলফ্রেড নবেল তার ডিনামাইট আবিস্কারের পরবর্তীতে পুরস্কার স্বরুপ যে অর্থ পেয়েছিলেন তার লভ্যাংশ দিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ মর্যাদার পুরস্কার দেওয়া হয় এবং তা পৃথিবী ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত চলমান থাকবেই; তার গ্যারান্টি আছে। কিন্তু ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য শেখ হাসিনা বা শেখ সাহেব ত আর বিদেশ বা দেশ থেকে আলফ্রেড নবেলের মত এমন কোন অর্থ পুরস্কার পাননি, যেখান থেকে এই ভাতা দেওয়া হচ্ছে এবং তা চীরকাল বহমান থাকবে। এই ভাতা প্রদান হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগার তথা আমজনতার টাকা থেকে। সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাগণ এমনকি তাদের সন্তানাদির ক্ষেত্রে আমজনতার কোন দ্বিমত না থাকলেও তাদের নাতী/নাতনী ও পরবর্তীতে তাদের সন্তান/নাতী/পুতি/থুতিদের ক্ষেত্রে আমজনতার অবজেকশন এক সময় আসতেই পারে। চাকরীর ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই “কোটা আন্দোলন” এর একটি ইঙ্গিতও দিয়েছে যা মুদ্রার এক পিঠে বর্তমানে অযৌক্তিক মনে হলেও ভবিষ্যতে কিন্তু এই বিষয়টিই সেই সময়ের আমজনতার কাছে যৌক্তিক বলেই গণ্য হবে। এর কার্যকরী স্থায়ী সমাধান কি?
৫) ধরেই নিলাম স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারগুলো পারিবারিকভাবে স্বাবলম্বী হয়নি কিন্তু স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতেও কি তারা দেশের অন্যান্য সাধারণ মানুষের মত স্বাবলম্বী হতে পারবেনা? যদি শতবর্ষেও না পারে তবে কত শতবর্ষে পারবে ? বা কত পুরুষ পর্যন্ত এই ভাতা তারা পাবে? যদি শেখ হাসিনার পরে অন্য মতাদর্শের কোন সরকার ক্ষমতায় এসে এই ভাতা পুরো বা আংশিক বন্ধ করে দেয় বা এক কথায় শেখ হাসিনার এই বিশেষ অবদানকে অবমূল্যায়ন করে বিনষ্ট করে তাহলে বীর বাঙ্গালী কি তা তখন মেনে নেবে? অন্যদিকে সেই বীর বাঙ্গালী কি তখন এই বীর বাঙ্গালীর মানসিকতার আমজনতা থাকবে?
৬) এ সকল প্রসঙ্গে শেষ যে কথাটি বলা যায় তা হলো- যদি শেখ হাসিনা আলফ্রেড নবেলের মত কোন বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ এমন কোন পরিমাণ অর্থ পুরস্কার কখনও পেয়ে যান তাহলে তিনি এই ভাতা প্রদানটি নিশ্চিন্তে চীরস্থায়ী করে যেতে পারবেন, এই মানসিকতা তার আছে। যদি তা না হয় তাহলে আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরের আমজনতা তাদের টাকা থেকে এই ভাতা প্রদানে অস্বীকৃতি জানাতেও পারে এমনকি চাকরীর কোটার ক্ষেত্রেও এবং তা কার্যকরী হতেও পারে বা হবেই। তাই মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও কোটা পদ্ধতি স্বাধীনতার শতবর্ষ পর্যন্ত কার্যকরী থাকবে এরপর তা বিলুপ্ত ঘোষনা করা হবে এই মর্মে জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে একটি স্থায়ী বিল পাশ করতে পারেন।
তাই জননেত্রী শেখ হাসিনার গঠনমূলক সর্বশেষ নির্দেশের মাধ্যমে সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক ও স্থায়ী তালিকাভুক্তির মাধ্যমে তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়নের পাশাপাশি তাদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকেও সমান বা আনুপাতিক হারে সহযোগীতা করার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবী হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষকরে: মুক্তিযোদ্ধা ভাতা একক উত্তরাধীকার না হয়ে মুক্তিযোদ্ধার পারিবারিক উত্তরাধিকার ভাতা হওয়া উচিত । এ মর্মে একটি বিশেষ পারিবারিক উত্তরাধিকার বন্টনামা আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। তাহলে জসিম ভাইদের মতো লোকেরা অন্তত একটু হলেও আর্থিক সহযোগীতা পাবে যা অধিকার বলেই তাদের পাওয়া উচিত। ধন্যবাদ ।
লেখক-
সিনিয়র অফিসার, ওপেক্স এন্ড সিনহা টেক্সটাইল,ঢাকা
………………………………………………………….
ম:প্র:/জ:নি:/৩০মে২০২১
jonosongjognews@gmail.com
পাঠকের মন্তব্য