। কায়সার রহমানী।
দিনশেষে বেশিরভাগ অংশের মন্তব্য দেখে যা পাওয়া গেল, যারা মিডিয়ার তাদের চরিত্র খারাপ হয়। বাজে পোশাক পরেন, রাত বিরাতে পার্টি করে বেড়ান। তাদের ধর্ষণ করা অতটা অপরাধ নয়। যারাই অভিনয়, সংগীত সর্বোপরী সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত তারা অশিক্ষিত, চরিত্রহীন, মেয়েরা ভাড়া খাটেন, ছেলেরা মদ খান- মেয়েদের কাছে যান, এদের কোন সভ্য পরিবার নেই, ধর্ম কর্ম কেউ করেনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
একথা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই, বিশেষকরে যারা চলচ্চিত্র, নাটকের সঙ্গে জড়িত মানুষের একটা বড় অংশ নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন তাদের। সস্তা মনে করেন। এ ধরণের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সাধারণ মানুষকে আসলে দোষ দেয়া যাবেনা। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে যারা শিল্পীদের নেতিবাচক ভাবে দেখেন, তাদের শিল্পী ও শিল্প সম্পর্ক সঠিক ধারণা দেয়া হয়নি। রাষ্ট্র কেন জানি শিল্পী ও সংস্কৃতি নিয়ে বরাবরই উদাসীন।
শিল্পী হতে হলে কি পরিমানে পড়াশোনা করা লাগে কারোরই ধারণা নেই। অনেকেই মনে করেন ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে গেলেই সব হয়ে যায়। এ রকম ধারণা হওয়াই স্বাভাবিক। নাট্যকলা বিষয় থাকলেও এখনো কোন স্কুল ও কলেজে বিভাগটি খোলা হয়নি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা, চলচ্চিত্র বিভাগ চালু থাকলেও স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে এ বিষয়টি একেবারেই অনুপস্থিত। সুতরাং শিল্পীরা যে শিক্ষিত এ কথা বিশ্বাস করার প্রয়োজন অনুভব করেনা কেউ।
কতজন জানেন যে, বিখ্যাত মঞ্চ নাটক নির্দেশক সৈয়দ জামিল আহমেদ ইন্ডিয়ার বিখ্যাত ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা ( এনএসডি) থেকে পড়াশোনা করছেন। শিক্ষকতা করেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এনএসডি থেকে পড়াশোনা করে ঢাবিতে শিক্ষকতা করেন আরেক সুখ্যাত মঞ্চ নাটক নির্দেশক ড. ইসরাফীল শাহীন। অভিনেতা ও নির্দেশক আশীষ খন্দকারও এনএসডিতে পড়াশোনা করেছেন। তেমনি শ্রদ্ধেয় তারিক আনাম খান, মামুনুর রশীদ, রামেন্দু মজুমদার, আতাউর রহমান, ফেরদৌসী মজুমদার, আফজাল আহমেদ উচ্চ শিক্ষিত।
চিত্রনায়ক আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়েছেন। পরবর্তীতে পাকিস্তানের করাচিতে তিনি পড়াশোনা করেছেন। ইলিয়াস কাঞ্চনও স্নাতক সম্পন্ন। অভিনেতা ও পরিচালক সোহেল রানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ডাবল মাস্টার্স করেছেন তিনি। ছাত্র রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন। প্রয়াত খ্যাতিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অভিনেত্রী অপি করিম বুয়েট থেকে স্থাপত্য বিদ্যায় স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। জাকিয়া বারী মম নাট্যকলায় স্নাতক শেষ করে উচ্চতর পড়াশোনা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুমাইয়া শিমু পিএইচডি করছেন। অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, প্রাণ রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা থেকে পড়াশোনা করেছেন অভিনেত্রী বন্যা মীর্জা, ছন্দা।
চিত্রনায়ক-প্রযোজক অনন্ত জলিলের দাবি- যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করেছেন তিনি। নায়িকা শাবনূর অস্ট্রেলিয়ায় চলচ্চিত্র বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন বলে জানা যায়। শান্ত-মারিয়ম থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সোহানা সাবা। খল অভিনেতা মিশা সওদাগর ব্যবস্থাপনায় পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একই প্রতিষ্ঠানের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। সিনিয়র অভিনেত্রী ওয়াহিদা মল্লিক জলি, রহমত আলী এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স করেছেন অভিনেত্রী রুনা খান। ফিল্ম স্টাডিজের ওপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছেন স্বাগতা। চিত্রনায়ক রিয়াজের কলেজ জীবন শুরু হয় যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে এইচএসসিতে ভর্তির মাধ্যমে। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স একাডেমিতে ১৯৯১ সালের জুন পর্যন্ত অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি সম্পূর্ণ করেন। অভিনেত্রী আফসানা মিমি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যাইহোক শিল্পীদের শিক্ষার বিকল্প নেই। এমন অনেক উচ্চ শিক্ষিত শিল্পীর উদাহরণ দেয়া যাবে।
যেহেতু স্কুল কলেজগুলোতে দৃশ্যমান নাটক ও চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা নেই, তাই অনেকেই মনে করেন শিল্পী হতে হলে পড়াশোনা লাগেনা। এরা সস্তা। জেনারেল লাইন থেকে এসব বিষয়ের সিলেবাস যে কত কঠিন, কত যে পড়তে হয় তা অনেকেই জানেননা।
যারা পড়াশোনা করেন তাদের একটা সমাজ থাকে, তারা ধর্ম কর্ম করেন, সুন্দর পরিবার আছে এ কথা কখনো বুঝানো হয়নি সাধারণদের। দেশের হর্তা কর্তারাই যখন বলেন নাটক- ফাটক, তখন সাধারণ মানুষ একে সস্তা ভাববেন এটাই স্বাভাবিক।
লেখক -
সিনিয়র রিপোর্টার - অপরাজেয় বাংলা
ফরমার রিপোর্টার - চ্যানেল 9 ও দেশ টিভি।
( লেখকের এফবি পেজ থেকে সংগূহীত )
গ:স:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য