। রকিব লিখন।
আমার মনে হয় ‘মৃত্যু পরবর্তী জীবন’ ও ‘কনসেপ্ট অব গড’ থিওরিতে কোনোপ্রকার ধর্মীয় কিতাবাদির রেফারেন্স ব্যতীত ব্যাখ্যাগুলির মধ্যে Dr. Wayne Dyer এর এই ব্যাখাটিই অল দ্য বেষ্ট….
Dr. Wayne Dyer এর লেখা ‘Your Sacred Self’ বইটা পড়তে গিয়ে একটি জায়গায় থমকে গেলাম। বইয়ের একটি কাল্পনিক কথোপকথন পড়ে আমার এত ভালো লাগলো যে, আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম। পরকালে অবিশ্বাসীদের গালে এমন নীরব চপেটাঘাত, সত্যিই অবাক না হয়ে পারা যায় না। সংলাপটির বাংলা অর্থ করলে মোটামুটি এরকম দাঁড়ায়-
‘একটি মাতৃগর্ভে জমজ দুই শিশুর মধ্যে কথা হচ্ছে। তাদের প্রথমজন দ্বিতীয়জনকে জিজ্ঞেস করলো,- ‘তুমি কি প্রসব পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করো?”
দ্বিতীয়জন বললো,- ‘অবশ্যই করি। নিশ্চয় প্রসব পরবর্তী জীবন বলে কিছু আছে। হয়তো প্রসব পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতির জন্যই আজ আমরা এখানে।”
প্রথমজন বললো,- ‘আরে বোকা! প্রসব পরবর্তী জীবন বলে কিছুই নেই। তোমার সেই কাল্পনিক জগত কেমন হতে পারে বলতো দেখি?”
দ্বিতীয়জন বললো,- ‘আমি ঠিক জানি না। তবে হতে পারে সেখানে এখানের (মাতৃগর্ভ) তুলনায় আলো অনেক বেশি হবে। হতে পারে সেখানে আমরা আমাদের পা দিয়ে হাঁটতে পারবো। আমাদের মুখ দিয়ে নিজেরাই খাদ্য গ্রহন করতে পারবো। হয়তো সেই জগতে আমাদের অন্যান্য ইন্দ্রিয় থাকবে যা আমরা এখন কল্পনা করতে পারছিনা।”
প্রথমজন বললো,- ‘এটা নিছক কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়। পা দিয়ে হাঁটাহাঁটি? অসম্ভব। মুখ দিয়ে খাদ্য গ্রহণ? অলীক কল্পনা। আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় পুষ্টি আসে এই নাড়ির মাধ্যমে। কিন্ত নাড়ির এই স্বল্প দৈর্ঘ্য কখনোই প্রসব পরবর্তী জীবনের পক্ষে যুক্তি হতে পারে না। প্রসব পরবর্তী জীবন বলে আদৌ কিছু নেই। এটা বাতুলতা।”
দ্বিতীয়জন বললো,- ‘আমি মনে করি প্রসব পরবর্তী জীবন বলে কিছু আছে এবং সেটা এই মাতৃগর্ভের জীবনের চেয়ে ভিন্ন। হতে পারে সেখানে বাঁচার জন্যে আমাদের এই নাড়ির দরকার হবেনা।”
প্রথমজন উত্তর দিলো,- ‘হাদারাম! প্রসব পরবর্তী জীবন বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে সেই জীবন থেকে কখনো কেউ এই জীবনে ফেরত আসে না কেনো? আসলে প্রসবের পরের জীবন বলতে কিছুই নেই। প্রসব হচ্ছে জীবনের শেষ। এরপর আর কিছু নেই। আছে কেবল অন্ধকার আর শূন্যতা।”
‘আমি ঠিক জানি না।’- দ্বিতীয়জন বললো।
সে আরো বললো,- ‘হতে পারে সে জগতে আমাদের সাথে আমাদের মায়ের দেখা হবে। মা হয়তো সে জগতে আমাদের দেখাশুনা করবেন।”
প্রথমজন হাসতে লাগলো, আর বললো,- ‘ মা? তুমি ‘মা’ তে বিশ্বাস করো? এটা সত্যিই হাস্যকর! যদি মা বলে কেউ থেকে থাকে, তাহলে সে এখন কোথায়?”
দ্বিতীয়জন বললো,- ‘সে আমাদের চারপাশে বিরাজমান। সে আমাদের ঘিরে আছে। আমরা তার মাঝে বেঁচে আছি। তাকে ছাড়া এই জগত অসম্ভব। এই পৃথিবী অসম্ভব।”
প্রথমজন বললো,- ‘যেহেতু আমরা মা বলে কাউকে দেখিনা, অনুভব করিনা। সুতরাং, এর যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা এই যে, আসলে মা বলে কেউ নেই।”
দ্বিতীয়জন মুচকি হেসে বললো,- ‘মাঝে মাঝে যখন তুমি নীরব থাকো, তখন মনোযোগ সহকারে যদি খেয়াল করো তাহলে তুমি তার উপস্থিতি টের পাবে। তুমি তার কন্ঠ শুনতে পাবে। বুঝতে পারবে তিনি তাঁর দরদভরা মধুর কণ্ঠে উপর থেকে আমাদের ডাকছেন…
courtesy : Md. Rashed Chowdhury.
কবি রকিব লিখনের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত
পাঠকের মন্তব্য