। এ্যাড. তারানা হালিম।
সবসময়ের মত একটি সত্য ঘটনা দিয়েই লেখা শুরু করি। আমি তখন প্রতিমন্ত্রী ।পূজা উপলক্ষ্যে একটি বড় পূজা মন্ডপে একটি অনুষ্ঠান হবে।সেদিন আমি রোজা ছিলাম। অফিস থেকে সোজা ওখানে গিয়েছিলাম।আমি কফি ,ফল সব “খাবো না” বলেছি দেখে অফিসে আমার দফতরের সবাই বুঝেই নিয়েছিল আমি রোজা। নফল রোযা প্রায়ই রাখি। তাই ওরাও বুঝে গেছে। এটা লিখছি এ কারণে যে আমি বিশ্বাস করি ধর্ম-চর্চ্চা লোক দেখানোর কোন বিষয় নয়। আজও হয়তো লিখতাম না তবে লেখাটা খুবই প্রাসঙ্গিক তাই প্রকাশ করতে বাধ্য হলাম।
একপাশে বিশাল পূজা মন্ডপ আর অন্য পাশের স্টেজে আমরা। আযান শুনলাম। রোজা ভাঙতে হবে। কাউকে অস্থির না করে ভাবলাম বাসায় ফেরার পথে কোথাও গাড়ি থামিয়ে ইফতার করে নেব গাড়ির ভেতর।
আমি আসলে ভাবিনি এত সময় লাগবে অনুষ্ঠানটিতে। এদিকে আওয়াজ কানে আসলো - আমার PS, APS একটু অস্থির-“অনেকক্ষণ হয়ে গেল।স্যার তো রোজা।” আমি ওদের উপর মনে মনে বিরক্ত হলাম। বলার দরকার ছিল না। বিব্রত ,নিতান্ত ভালো মানুষ পুরোহিত অস্হির হয়ে উঠলেন। বললেন-“ দিদি একটু দোকান থেকে কিছু আনিয়ে দেই । আপনি রোজা আছেন জানলে ব্যবস্থা রাখতাম। আমি খুব লজ্জিত।”
আমি বিষয়টি সহজ করে দিয়ে বললাম-“ঐ থালায় কিছু নাড়ু আর ফল আছে ,আপনাদের ধর্মে নিষেধ না থাকলে আমাকে ওখান থেকে একটু ফল আর নাড়ু দেন আমি রোজাটা ভাঙি।”
এভাবেই সেদিন একজন রোজাদার রোজা ভেঙেছিল।
আজ যারা দেখলেন একজন মুসলমান, হিন্দু দেবতার পায়ে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার মত জঘণ্য পাপ করলো -মুসলমান বলে কি তার পাপ কমে গেল ? না। আবার হিন্দু মুসলমান ২ জনে মিলে যে গুজব ছড়ালো তখন কিন্তু চোরে চোরে মাস্তুতো ভাইয়ের মত, এখানে কিন্তু ধর্ম কোন বাঁধা হয়নি ।
আমার ইসলাম ধর্মকে তা হলে এখানে কে অপমান করলো ? করলো সেই মুসলমান যার সব কুকীর্তি CCTV ফুটেজে আছে।
বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই সরকার ও জনগণকে অবহিত করতে হয়। সেই সময়ের মধ্যে নিজেরাই Judge,jury আর Executioner হয়ে হিন্দু বাড়ি জ্বালালেন,লুঠ করলেন,তাদের ঘর ছাড়া করলেন। সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্পে নিজের দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টায় লিপ্ত হলেন। যদি কেউ ভাবেন এতে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল হলো তবে ভুল ভাববেন। এতে মানুষ হিসেবে আমরা ছোট হলাম বিদেশী রাষ্ট্রের কাছে। নিজ দেশকে যারা ছোট করেন তারা নিজেরা মোটেও বড় নন।
আমার ধর্ম আমার কাছে প্রিয় অবশ্যই ,কিন্তু তা আমাকে অন্যের ধর্মকে ছোট করার অধিকার দেয় না, একইভাবে অন্য কাউকে আমার ধর্মকে ছোট করার অধিকার রাখে না। এই পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধই তো মানবতাবোধ। ইসলামতো সেই মানবতার শিক্ষাই দিয়েছে।
যারা নিরপরাধ হিন্দুদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়েছেন, লুঠ করেছেন তারা আমাকে এমন একটি ইসলামের আয়াতের কথা জানান- যেখানে মানুষকে অত্যাচার (তা সে যে ধর্মেরই হোক ) করাকে পাপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।
আমার ধর্মের অপমান যেমন আমি মানবো না তেমনি অন্য ধর্মের অপমান ও মানবো না। এটাই ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু কোন কিছুই অন্যায়কে বৈধ করে না। কোন ধর্মই করে না। যারা নিরপরাধ মানুষদের ঘর বাড়ি পুড়িয়েছেন তার জন্যও কিন্তু পরকালে তাদের জবাব দিতে হবে।
হয়তো ভাবতে পারেন এত দেরিতে কেন লিখলেন? কারণ আমি আসল ঘটনাটি জেনেই লিখতে চেয়েছি। অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়তে চাইনি।
দেশটি এ দেশের সকল নাগরিকের, তার ধর্ম যাই হোক না কেন : এটাই সত্য। এ সত্যই চিরন্তন। সব চক্রান্তের বিপরীতে এই সত্যই টিকে থাকবে।
লেখক -
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ও
সভাপতি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।
জ:নি: / ধ:স:
(লেখকের এফবি পেইজ থেকে সংগৃহীত)
পাঠকের মন্তব্য