। ডা. ফারহানা সুলতানা।
হিলিং এইড হাসপাতাল, হেমায়েতপুর, সাভার
ডায়েটিং শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত, কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে আমরা জেনে না জেনে কতোরকম ডায়েট যে করি তার হিসাব নেই।এতে বেশিরভাগ সময় আমরা নিজেদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে থাকি।আসলে উপরওয়ালা খুব যত্ন নিয়ে, অনেক হিসেবকষে আমাদের এই শরীরকে পরিপূর্ণ রূপ দিয়েছেন।এই হিসাবের আর কতোটুকুইবা আমরা জানতে পেরেছি বা জানতে চেষ্টা করেছি!যতোটুকু জানি ততোটুকু বুঝে কাজ করাই আমাদের জন্য উপকারী।
এখন আসি আসল কথায়! আমাদের শারীরিক চাহিদা, ক্ষুধা , কর্মশক্তি এসবের বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের শরীর থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন হরমোন! কিছু হরমোন যেমন ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরণ যা মেয়েদের মাসিক ঋতুচক্রের সাথে কমবেশি নিঃসরণ হয় তা পরোক্ষভাবে মেয়েদের ওজন নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে মেয়েদের ঋতুচক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে এসব হরমোনের মাত্রা হ্রাস বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে মেয়েদের কর্মক্ষমতা, ক্ষুধা ইত্যাদিও হ্রাস বৃদ্ধি পায়।
তাই আমরা যদি জানি যে আমাদের ক্ষুধা বা খাওয়ার প্রবণতা কখন এবং কেন বৃদ্ধি বা হ্রাস পায় তাহলে ওই সময়গুলোতে আমরা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজেই নিজের ওজন স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি।
আমাদের সকলের জানা এবং বুঝার সুবিধার্থে ঋতুচক্রের এই সময়কে আমরা তিনভাগে ভাগ করতে পারি!
১। মাসিকের প্রথম দিন থেকে ৪র্থ দিন: এই সময় মেয়েদের শারীরিক কর্মক্ষমতা থাকে সবচেয়ে কম, তাই খাবার প্রবণতাও থাকে কম, তাই এসময় স্ট্রেস্ফুল কাজ না করে হালকা ব্যায়াম, হাটা, বা যোগব্যায়াম করা উচিত।খাবার আয়রন সমৃদ্ধ হতে হবে এবং এসময় বিভিন্ন ফলমূল ও তরল খাবার বেশি খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। একবেলা কার্বজাতীয় খাবার এসময় খাওয়া যায়।
২। মাসিকের ৫ম দিন থেকে ১৫ তম দিন: এসময় শারীরিক কর্মক্ষমতা ও ক্ষুধা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে তাই শরীর চর্চার তীব্রতা ও ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে হবে। এসময় কার্বের পরিমান ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে হবে এবং প্রোটিন জাতীয় খাবারের পরিমান বাড়িয়ে দিয়ে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৩। মাসিকের ১৬ তম দিন থেকে ২৮ তম দিন: এ সময় মেয়েদের শারীরিক কর্মক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে এবং সেই সাথে খাবারের প্রতি আগ্রহ ও চাহিদাও বাড়তে থাকে।ঘনঘন খাবার খেতে ইচ্ছে হয়, শর্করা ও চর্বিজাতীয় খাবারের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়।তাই এই দিনগুলোতে শরীরচর্চার ফ্রিকোয়েন্সি ও তীব্রতা আরো বাড়াতে হবে এবং খাবারে ক্যালোরির পরিমানও কিছুটা বাড়াতে হবে তবেঁ ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সেই ক্যালরিগুলো যেনো স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন বাদাম, ওলিভওয়েল, এভোক্যাডো এবং প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন চিকেন, বড় মাছ, সয়া, ইত্যাদি থেকে আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ চক্রের শেষের চারদিন কিছুটা ডার্কচকোলেট খাওয়া আপনার অতিরিক্ত ক্ষুধা মেটাতে সাহায্য করতে পারে।
আসলে খাওয়া ও ব্যায়াম করার জন্য “আপনার শরীরের কথা শুনুন ” পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর। যদি আপনার ক্ষুধা বেড়ে যায় তবে তা স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে পূরণের চেষ্টা করুন এবং যখন আপনার অতিরিক্ত শক্তি থাকে তখন শরীরচর্চার পরিমানও বাড়িয়ে দিন।আমাদের দেহ ও হরমোনের সংকেত যদি আমরা বুঝতে পারি তাহলে আমাদের সুস্থ্য থাকা আরো সহজ হবে!
জ:নি:/সা:স:
পাঠকের মন্তব্য