। ট্যুরিজম এন্ড ট্রাভেলস ডেস্ক - জনসংযোগ নিউজ।
কাঞ্চনজঙ্ঘা মূলত হিমালয় পর্বতমালার পর্বতশৃঙ্গ। মাউন্ট এভারেস্ট ও কেটু’র পরে এটি পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ যার উচ্চতা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট। কাঞ্চনযঙ্ঘা দেখতে সারা পৃথিবী থেকে সিকিম নেপাল ও পশ্চিমবঙ্গে ভীড় জমান হাজার হাজার পর্যটক।
উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, দেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন (স্থলবন্দর) থেকে নেপালের দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার। অন্যদিকে হিমালয়ের এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১১ কিলোমিটার।
ভ্রমণ বিলাস থেকে সংগৃহীত লেখক ইমরান হোসাইন হিমুর চোখে বাহারি রূপলাবণ্যে বহুরূপী কাঞ্চনজঙ্ঘা :
ভারতের সিকিম রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘার রয়েছে চমকপ্রদ এক ইতিহাস! কাঞ্চনজঙ্ঘার অনুপম সৌন্দর্য এবং টাইগার হিলের চিত্তাকর্ষক সূর্যোদয় দেখার জন্য প্রতিবছর হাজারো পর্যটক ভিড় করেন। কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব সৌন্দর্য তেঁতুলিয়ায় বসে দেখা যায় অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। মেঘমুক্ত আকাশে স্পষ্ট দেখা যায় বরফে ঢাকা পাহাড়ের চূড়া। রাতে দেখা যায় শিলিগুড়ির উজ্জ্বল আলো। পাহাড়েরই অপর ঢালে স্বপ্নপুরী দার্জিলিং। বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর দিনের প্রথম সূর্যোদয়ের সূর্যকিরণের ঝিকিমিকি দৃশ্য সত্যিই মুগ্ধতার মোহ ছড়ায়।
আগে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে তেঁতুলিয়ায় যেতে হতো। গত কয়েক বছরে ভালোভাবে দেখাও মিলছিলো না। কিন্তু এখন নীলফামারীর চিলাহাটি, ডিমলার ঝুনাগাছ চাপানী ও নীলফামারী সদরের ইটাখোলার ফাঁকা স্থানে দাঁড়ালেই কাঞ্চনজঙ্ঘার বরফশুভ্র গায়ে সূর্যকিরণে চকচকে উজ্জ্বল পাহাড়ের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘার একাধিক রূপ দেখা যায়। এ দৃশ্য দেখার জন্য দূরবীন বা বাইনোকুলার সঙ্গে করে নিয়ে আসতে হবে না। তবে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ সৌন্দর্য সবচেয়ে ভালো দেখা যায়, সর্বোত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়া শহরের উপকন্ঠে মহানন্দার তীর ঘেঁষা সরকারী ডাকবাংলো চত্ত্বর থেকে। এমনকি দার্জিলিংয়ের সবুজে ঘেরা পাহাড় শ্রেণিরও স্পষ্ট দেখা মেলে। রাত হলে পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা শহরের আলোও ঠিকরে আসে। যিনি কখনও চর্মচক্ষে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেননি, তার জন্য প্রথমবার কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দেখাটা যেন অনেকটা জীবনে প্রথম প্রেমে পড়ার মত। সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি।
সারাদিন তাকিয়ে থাকলেও চোখ ক্লান্ত হয় না। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলে দর্শকের চোখ জুড়িয়ে রাখে বহুরূপী কাঞ্চনজঙ্ঘা। ঊষালগ্নে মনে হয় যেন কাঞ্চনজঙ্ঘার সাদা বরফ কাঁচা সোনায় ছেয়ে গেছে।
বেলা বাড়লে কাঁচা সোনা শরতের মেঘের বসন নেয়। দিনের মধ্যভাগে মনে হয় যেন এক খন্ড প্রকান্ড মেঘ উত্তরের আকাশটা দখল করে দাঁড়িয়ে আছে। সারাদিনে কোন নড়চড় নেই। বিকেলে যেন বরফ লজ্জায় রাঙ্গা হতে শুরু করে। আর গোধূলি বেলায় পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা আবীরখেলায় মেতে ওঠে চপল কিশোরীর মত।
রাতেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ। জোছনা রাতে যখন চারদিক উদ্ভাসিত হয়, তখন সাদা বরফ থেকে চাঁদের মৃদু আলো প্রতিফলিত হয় বরফ থেকে দর্শনার্থীর হৃদয় পর্যন্ত। জোছনারাতে কাঞ্চনজঙ্ঘার শুভ্র বরফে প্রতিফলিত রূপালি চাঁদের আলোর স্বর্গীয় শোভা দেখে হয়ত এখনকার সৌন্দর্য পিপাসীরা পাগলই হয়ে যাবেন!
সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং বিকাল ৪টা থেকে ৫টা এই সময়ে মধ্যে সবেচয়ে ভালো দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার।
তিনদিকে ভারতের ভূমিতে ঘেরা পঞ্চগড় জেলা কেবল কাঞ্চনজঙ্ঘার জন্যই বিখ্যাত নয়, স্বল্পখ্যাত এই জেলায় দেখবার আরও অনেক কিছুই আছে। দেশের একমাত্র রক্স মিউজিয়াম, ভিতরগড় দূর্গনগরী, মহারাজার দিঘী, চা বাগান, বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর, ডাকবাংলো, কাজলদিঘী, বার আউলিয়ার মাজার, শাহী মসজিদ, বোদেশ্বরী মন্দির, ঠাকুরবাড়ি ইত্যাদি।
কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে পঞ্চগড় কিংবা তেঁতুলিয়া অথবা বাংলাবান্ধায় সরাসরি দূরপাল্লার (দিবারাত্রি) বাস রয়েছে। রাজধানী থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়ায় যাওয়ার একাধিক পরিবহন রয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে নীলফামারীর সৈয়দপুর হয়ে বাস, মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কারে চড়েও তেঁতুলিয়া যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে সরাসরি পঞ্চগড় নামতে পারবেন। যাত্রাপথে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ও ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা খরচ পড়বে।
থাকা-খাওয়ার ফিরিস্তি:
রাত্রি যাপনের জন্য তেঁতুলিয়ায় সরকারি ৩টি ডাকবাংলোর পাশাপাশি কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। ডাকবাংলোগুলোতে অবস্থান করতে হলে আপনাকে আগেভাগেই উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। তবে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে থাকলে সেখান থেকেই আপনি দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ রূপ।
স:খ:/ট্যু:ট্রা:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য