। খোজেস্তা নূর-ই নাহরীন।
চট্টগ্রামের মানুষেরা অতিথি পরায়ণ ও ভীষণ ভোজন রসিক। সাধারণ পরিবারেও কাউকে দাওয়াত করলে ১৫ থেকে ২০ পদে টেবিল ভর্তি খাওয়া থাকা চাই।
দুদিন ধরে মন্ত্রী মহোদয়ের এই ছবিটি নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে, কিন্তু আমি কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। তাঁর পক্ষের লোকজনের অভিমত ”ভুয়া ছবি”।
কিন্তু আমি মনে করি ছবিটি সঠিক হলেই দোষ হবে কেন ?এটাতো চট্টগ্রামের সাধারণ পরিবারগুলোতেও নিত্ত নৈমত্তিক ঘটনা।মেহমান মানেই দুরুস্কুরা (আস্ত মুরগির রোস্ট), নলা(নেহারি), গরুর কালা ভুনা, মগজ, জিলফা( জিহব্বা),কলিজা ভুনা, খাসির গোশত, গলদা চিংড়ী, রূপ চাঁদা ভাঁজি, খাট্টা বাইগুন (টমেটোর ঝোল),লইট্যাঁ আর ছুরি শুঁটকি, উঁনি(শুটকি মাছ), চর্বি আর গোসের সাথে বুটের ডাল, লাক্ষা মাছ, সুরমা মাছ, চিরিং মাছ, ময়দা দিয়ে নরম লইট্যাঁ মাছ ভাঁজি, রুই মাছ ভাজি, টাটকিনি মাছ, মাছ দিয়ে রান্না করা মাসকালাই ডাল, ডিমের সাদা কুরমা, নানা রকম ভর্তা, জীয়ল মাছ দি খাইস্যা (শিমের বিচির তরকারী),বেলেম্বু(টক) দিয়ে উঁনি(শুঁটকি) তরকারী থাকবেই । সাথে চালের কমলা রঙের জর্দা, চিনি পাতা দই আর বড় বড় রসগোল্লা, স্প্রাইট আর কোকের বোতল ।
চট্টগ্রামের ভাষায় গর্ভা অর্থাৎ মেহমান হল ঘরের লক্ষ্মী, সাথে করে ভাগ্য নিয়ে আসে।
এখানে অহেতুক আপনারা দোষ বা অন্যায় খুঁজবেন কেন ? এটা চট্টগ্রামের রীতি রেওয়াজ, খুবই সাধারণ একটি ঘটনা মাত্র ।একজন মানুষ প্রতিদিন এই পরিমাণ খাবার খেলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে অবেস (ওজন বেড়ে অতিরিক্ত স্থূলকায় বা মোটা ) হয়ে অসুখ-বিসুখ ধরে মরে যেতে বাধ্য। যাকে বলে খেতে খেতে মরে যাওয়া।
হাসান মাহমুদ ভাই চট্টগ্রামের ছেলে, অতীব স্বাস্থ্য সচেতন একজন মানুষ। তিনি নিশ্চয়ই এক-দুই পদ তরকারীর বেশী মুখে তুলেননি। এই বয়সে তিনি কম খাবেন, ডাক্তারের পরামর্শে বেছে বেছে খাবার খাবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন এটা বলাই বাহুল্য ।
যদিও জানি না কার বাসায় দাওয়াত ছিল, দেশে নাকি বিদেশে ? কিন্তু কোন বোন তাঁর ভাইকে, বন্ধু তাঁর বন্ধুকে কিংবা কোন কর্মী তাঁর নেতাকে এমন যত্ন করে খাওয়ানোতে দোষ দেখি না।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্য আর অহংকারের শুরুতেই হচ্ছে খাওয়া-দাওয়া। কে কত বড় মেজবান করলো, কতোগুলো গরু ঝরালো (জবাই করলো), সেই গরুদের ওজন, গায়ের চামড়া, রঙ, দেখতে কেমন ছিল এসব খুবই নর্মাল মুখ রোচক আলোচনা।
যে কোন দাওয়াতে খেতে না পারলেও সামনের লোক অর্থাৎ যার দাওয়াতে গেছেন আপনার প্লেটে খাবারের পর খাবার উঠিয়ে দেওয়াটাই নিয়ম, সঠিক আপ্যায়ন বলে বিবেচিত ।এক্কানা গড়ি হা(একটু করে নেন), আরেক্কানা দে(আরেকটু দেই) , আপনার পেট ফেটে যাওয়ার উপক্রম, হাত দিয়ে প্লেট ঢেকে রেখেছেন, না করছেন অথচ লজ্জায় না খেয়ে উপায় নেই। খাওয়ার পর হাঁসফাঁস, মাথার উপড়ের ফ্যান ফুল স্পিডে ছেড়ে দেওয়া, অথচ আপনি ঘামছেন।
দাওয়াত দেওয়ার সময় বলবেন চারটা ডাল-ভাত খাবেন গরীবের বাসায়, অষ্ট ব্যঞ্জন দিয়ে খাওয়ানোর পর বিদায় বেলা বলবেন কষ্ট করে এসেছেন সেইজন্য ধন্যবাদ। এটা তো কেবল চট্টগ্রাম নয় সারা বাংলার ট্র্যাডিশন আর কালচার।
অহেতুক মানুষটিকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। খাবারের মতো একটি সাধারণ বিষয় নিয়ে বৃথাই ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার বা নিন্দা করা পরশ্রীকাতরতারই নামান্তর।
অন্নেরা কত্তুন কডে লই যারগই ?
( আপনারা সাধারণ ঘটনাটিকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?)
এক্কেরে আজগবি হতা (অদ্ভুত) !!!
হানা লই রাজনীতি ! রাজনীতি এহন হনডে জারগই ?
( খাওয়া নিয়েও এখন রাজনীতি! রাজনীতি এখন কোথায় নেমে যাচ্ছে ? )
মন্তব্য নিবেদক-
সম্পাদক, পূর্ব পশ্চিম বিডি
(২৭নভেম্বর,২০২০ এ প্রকাশিত লেখকের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত)
খো:ম:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য