। শাহজাহান শুভ।
ঘটনাটি ছিল ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের। আমি আর দৈনিক সমকালের সিনিয়র সাংবাদিক ফসিহউদ্দিন মাহতাব ভাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ভাইয়ের রুমে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা কথা বলছিলাম একটি নিউজের বিষয়ে। আমাদের আলাপচারিতার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি ফোন আসল-তেজগাঁওয়ে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ নিয়ে পুলিশ আর পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। একজন শ্রমিক মারাও গেছেন কিন্তু পরে জানা গেল শ্রমিক মারা যাওয়ার খবর সঠিক ছিল না।
তাৎক্ষণিক খবর নিয়ে জানা গেলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক নিজেই এই উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদের বিপক্ষে। শ্রমিকরা তাদের সংগঠনের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করেছেন আনিসুল হককে। এভাবে প্রায় ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন তিনি। কেন? তিনি ব্যস্ততম সড়কের ওপর তৈরি করা ট্রাক স্ট্রান্ড উচ্ছেদ করে জনসাধারণের চলাচলের জন্য সুন্দর একটি রাস্তা করতে চান।
পরে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, রাস্তায় ট্রাক পার্কিং বন্ধ করে ভেতরে নির্ধারিত ট্রাক স্ট্যান্ডে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কর্পোরেশনের নাগরিকদের স্বার্থে করা হচ্ছে। এখানে মেয়রের কোনো স্বার্থ নেই। ‘নাগরিকদের ভোটেই আমি মেয়র হয়েছি। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন, আমিও আপনাদের সহযোগিতা করবো। রাস্তায় কোনো ট্রাক থাকবে না। ট্রাক থাকবে স্ট্যান্ডে।
যেমন কথা তেমন কাজ। রাস্তা থেকে ট্রাক স্টান্ড হটিয়ে দিয়ে ঘটনার ঠিক পরের দিনই আনিসুল হক রাস্তা বানানোর কাজ শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যে তেজগাঁও রেল ক্রসিং থেকে সাত রাস্তা পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন রাস্তা তৈরি করেন। যে রাস্তা দিয়ে এখন আমরা কোনও যানজট ছাড়াই কয়েক মিনিটেই সাতরাস্তা থেকে যেমন ফার্মগেটে আসতে পারি, তেমনি ফার্মগেট থেকে সাতরাস্তায়। এই অবদান আনিসুল হকের। সদিচ্ছা থাকলে যে যেকোনও কঠিন রাস্তাও পার হওয়া যায় তা তিনি দেখিয়ে গেছেন আমাদের। অথচ এই রাস্তা দিয়ে আমাদের চলতে এক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাকস্টান্ডেই আটকে থাকতে হতো। এর সঙ্গে ছিনতাইবাজদের কবলে পড়ে সবকিছু হারানোর কষ্টতো ছিলই। এ সব কিছু থেকে রক্ষা করেছেন আনিসুল হক।
তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। রয়েছে জনস্বার্থে করা তার সেই রাস্তা। আমি বলবো এটা তার জীবনের সেরা কাজের একটি। লন্ডন থেকে জীবিত ফিরলে হয়তো আনিসুল হক জনস্বার্থে তেজগাঁও ট্রাকস্ট্রান্ডের মতো আরও রাস্তা তৈরি করে দিতেন আমাদের জন্য। তার বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করি। পাশাপাশি তেজগাঁও ট্রাকস্ট্রান্ডের এই সড়কটি তার নামে করার দাবি জানাচ্ছি।
লেখক -
ডেপুটি হেড অব নিউজ
দৈনিক আমাদের সময়.কম
(১ডিসেম্বর,২০১৭ সালে প্রকাশিত লেখকের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত)
দৃ:আ:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য