সম্পাদকীয় / জনসংযোগ.কম / ০৯-০৫-২০২০
। এম আনিছুর রহমান ।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সময়কালীন আমরা আমাদের এক বন্ধুর হেষ্টেলে থাকতাম, সেখানে ছিল মোট ১৩ জনের একটি বন্ধু পরিবার । শুধুমাত্র দুইজন ছিলেন বড়ভাই । তাদের মধ্যে একজন ছিলেন বড়লোক বাপের নাদুস-নুদুস মহা-ভোজনরশিক ১১০ কেজি ওজনের এক বিশাল দেহী মানুষ, তিনি ভীষণ খেতে পারতেন তাই আমরা তাকে ভালবেসে ও শ্রদ্ধাভরে খাদকমানব বলেই ডাকতাম একইসাথে তাকে আমরা ভীষণ ভালবাসতাম, শ্রদ্ধা করতাম এমনকি মজাও করতাম, আজও তাই করি । তিনি ছিলেন আমাদের সবারই স্যার, ধরতে গেলে তার কাছে শিক্ষা নিয়েই আমাদের মাঝের বেশীরভাগই বিশ্ববিদ্যালয় পারি দিয়েছে । তিনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ মেধাবী, ভদ্র এবং একইসাথে বিশাল দেহী ও খাদকমানব হিসেবে আজও স্বরণীয় ও বিখ্যাত হয়ে আছেন।তখন প্রায়ই দেখা যেত তিনি আস্ত মুরগীর গ্রীল নিয়ে বসে পড়েছেন এবং মূহুর্তেই তা সাবার করে ফেলতেন । আমরা যখন প্রায়ই মধ্যরাতে উত্তরার আজমপুরে ডিম-পরটা খেতে যেতাম তখন তিনি প্রায়সময়ই ডজনখানিক ডিমপোজ ও একই পরিমাণ পরটাও খেতেন,অর্থাৎ প্রতি পরটার সাথে একটি করে ডিম, এই ছিল তার পছন্দনীয় মধ্যরাতের ভোজন মেণ্যু। সেসময় প্রায়ই আমাদের গুরু নগর বাউল জেমস ভাইও আসতেন মধ্যরাতের ডিম-পরটা খেতে, প্রায় রাতেই তার সঙ্গে আমাদের দেখা হত। একদিন খাদকমানব চেখের নিমিষে মোট ২৮ টি ডিম পোছ ও ১৭টি পরটা ও এগার পিছ মুরগীর রোষ্ট টপটপ করে খেয়ে ফেললেন অর্থাৎ প্রায় তিনটা মুরগীর সমান মাংস ! আর তখন নগর বাউল তা অবাক দৃষ্টিতে দেখছিলেন । সরাসরি এ দৃশ্য দেখে নগর বাউল নিজ থেকেই অভিভূত হয়ে খাদকমানবকে বলেছিলেন “খেতে পারাটাও একটা যোগ্যতা, সবাই পারেনা “ । প্রায় ২০ বছর আগের কথা, কালের পরিক্রমায় হয়ত নগর বাউল তা ভুলে গেছেন কিন্তু আমাদের তা মনে আছে । জীবনের ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও খাদকমানব এখনও সপ্তাহে দু-তিনটি আস্ত মুরগী ও প্রতিদিন গড়ে ২/৪ টি ডিম নিয়মিত খেয়ে থাকেন । সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ তথ্যসূত্রে জানা যায় করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে লকডাউন শুরুর আগের দিন রাতে খাদকমানব মোট ৪২ টি মুরগী ও ৩২ ডজন ডিম কিনে পুরো একটি ডাবল ডেকার ফ্রিজ জ্যাম করে ফেলেছিলেন এবং এই দীর্ঘ দুই মাস লক ডাউনে থেকে খোদার অশেষ কৃপায় সবগুলোই খেয়ে ফেলেছেন এবং লকডাউন হঠাৎ শিথিল হওয়ায় তিনি সীমীত আকারে আরও এক কুড়ি মুরগী ও কুড়ি হালি ডিম কিনেছেন ।
আবারও ফিরে যাচ্ছি ২০ বছর পূর্বে, তখন আমাদের হোষ্টেলের পাশের ফ্লাটে থাকতেন রুমকীমনি নামের একজন সূনয়না সূকেশী সধবা, নবোঢ়া, সূদর্শনা এক চপলা চঞ্চলা হরিনী । রুমকীমনির একমাত্র ছেলে সাকিব পড়ত তখন লেবেল-3 তে, পরিপাটি ইংরেজী বলতে পারত সে । একটু ওমেন ওমেন টাইপ ছিল বলে তাকে আমরা ওমেন সাকিব বলেই ডাকতাম । এতে সে রাগ করতনা বরং প্রতি উত্তরে বলত- ম্যান থেকে ওমেনরাই ভাল হয় । খাদকমানবও তার ব্যাচের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র ছিল । ওমেন সাকিব ছিল তার ছাত্র । প্রায়সময়ই ওমেন সাকিব তার কাছে পড়তে আসত আর এ জন্য রুমকীমনি গুরুদক্ষিণা হিসেবে খাদকমানবকে প্রায়ই উত্তরার সী-সেল থেকে আস্ত গ্রীল চিকেন এনে উপহার দিত । খাদকমানব মনের আনন্দে তা খেত, মাঝে মাঝে দয়া করে আমাদেরকেও একটু আধটু দিত । তবে দেয়ার সময় তার ভাবখানা এমন হত যেন না দিলেই ভাল হত । আমরা এতে ভালই মজা পেতাম । এমনিতে তিনি দুহাতে আমাদের জন্য টাকা খরচ করতেন, যখন যা কিছু খেতেন আমাদেরকে সমানভাগেই দিতেন কিন্তু এই “চিকেন এন্ড এগ্” এর বেলায় তিনি অনেকটাই স্বার্থপর ছিলেন। একদিন খাদকমানব প্রায় ডজন খানিক ডিম নিজেই পোছ করে ডাইনিংয়ে বসে খাচ্ছিলেন, এমন সময় ওমেন সাকিব ভেতরে ঢুকে এ দৃশ্য দেখেই বলল- হায় হায় আঙ্কেল আপনি এতগুলো ডিম খেতে বসেছেন ? মুরগীগুলোর পারমিশন নিছেন ? খাদকমানব শুধু ভূরু কুঁচকালেন কিন্তু কিছু বললেননা । পরক্ষণেই ওমেন সাকিব দ্বিতীয় প্রশ্নটি করলেন - আচ্ছা আঙ্কেল বলেনত- “ ডিম আগে না মুরগী আগে “? নিজ ছাত্রের কাছ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে তিনি একটু হতচকিত হয়ে বললেন - তুমি জগতের এই কঠিন প্রশ্নটি আমাকে করলে কেন ? ওমেন সাকিবের প্রতি উত্তর ছিল- যে ব্যক্তি ডিম ও মুরগী খেতে এত ভালবাসে তিনি অবশ্যই এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর জানেন । এবার খাদকমানব একটু নড়েচড়ে বসলেন, আর তাকে বললেন , এ তথ্য তোমাকে কে দিয়েছে ? ওমেন সাকিবের উত্তর ছিল - আম্মু দিয়েছে । একথা শুনে তিনি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন - আচ্ছা সাকিব বলতো - তুমি আগে ? নাকি তোমার আম্মু আগে ? প্রশ্ন শুনেই ওমেন সাকিব বললো, এ ত খুব সহজ প্রশ্ন, অবশ্যই আম্মু আগে । তখন খাদকমানব তাকে বললেন, তাহলে অবশ্যই মুরগী আগে, ডিম পড়ে । খাদকমানবের এই কথা শুনে অট্রহাসির রুল পড়ে গেল পুরো হোষ্টেলে, অন্যদিকে ওমেন সাকিব বাস্তব উদাহরণের মধ্য দিয়ে তার ওইটুকু জীবনের সবচেয়ে জটিল প্রশ্নের সমাধান পেয়ে আনন্দে আত্নহারা হয়ে তাকে ধন্যবাদ জানাল । ওইদিন ওমেন সাকিবের বিশেষ অনুরোধে রুমকীমনি খাদকমানবকে দুটি আস্ত চীকেন গ্রীল উপহার পাঠাল আর সঙ্গে ছিল দুই ডজন ডিম পোছ । সেদিনের সেই উপহারগুলো তিনি একা খাননি, আমাদের সবাইকেই সমানভাগে ভাগ করে দিয়েছিলেন । আমরা খেতে খেতে ভাবছিলাম, যাইহোক আজকে জগতের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নের সমাধান হলো আর খাদকমানব তার সমাধান দিল । সেই থেকে এতবছর ধরে তাই জানতাম যে মুরগী আগে ও ডিম পড়ে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে করোনার বিশ্বব্যাপী মহাতান্ডবে পুরো বিশ্ব সিষ্টেমের সাথে বাংলাদেশের T-420 ম্যাচ খেলা দেখে মনে হল ডিম মুরগী সম্পর্কে যা জানতাম তা সীমীত আকারে কিছুটা ভুল ছিল, তবে এবার এ বিষয়ে স্থায়ী ও কালজয়ী সঠিক তথ্য পাওয়া গেছে । করোনা এই জটিল প্রশ্নের স্থায়ী সমাধান করে দিয়েছে । এ জন্য ঘাতক হলেও করোনাকে ধন্যবাদ । কি সেই সমাধান ? এবং কিভাবে ? চলুন জানা যাক -
প্রথমেই তুলে ধরছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত করোনার প্রেক্ষাপটে স্বদেশ, জনগণ, সরকার ও সরকারের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে জানেনা বিষয়ক কিছু তথ্য -
——————————-
“ পরিবহন বন্ধ—এটা বিজিএমইএ জানে না।বিজিএমইএর নির্দেশে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খোলা—সরকার তা জানে না।পরিবহন কেন বন্ধ, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি কেন খোলা—সেটা আবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানে না। করোনা মোকাবেলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি হয়েও স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেন এসব জানেন না—এটা আবার আমরা জানি না।
*মসজিদে জামাতে ১২ জনের বেশি জমায়েত না হওয়ার নির্দেশ দিয়ে জিলাপির দোকান কেন খোলা হয়—এটা কেউ জানি না। করোনা মহামারীর মধ্যে যে ডেঙ্গু মশার ভয়ঙ্কর উপদ্রব বেড়েছে—ঢাকার দুই মেয়র সেটা জানে না।ওদিকে, ঢাকার দুই মেয়র কোথায় লুকিয়ে আছেন—এটা আবার নগরবাসী জানে না ।
*ধান কাঁচা না পাকা অবস্থায় কাটতে হয়—ফটোসেশনের লোভে ফুরুৎ করে জমিতে নেমে পড়া নেতারা সেটা জানে না। গাজীপুরের মেয়র মসজিদে নামাজ পড়া উন্মুক্ত করার ঘোষনা দিয়েছেন—এটা আবার ধর্ম মন্ত্রণালয় জানেনা! পরবর্তীতে আবার মেয়র সে ঘোষনা ফিরিয়ে নিয়েছেন—সেটা অনেক মুসল্লী জানেনা।এই দুঃসময় কবে শেষ হবে—আমরা কেউ তা জানি না।”
কে যে এই লিখাটা লিখেছেন এটা আবার আমি নিজেই জানিনা ।
———————————
যাইহোক সবসময় সবকিছুই জানতে হবে এমন কোন কথা নেই , মাঝে মাঝে অনেক কিছু না জানাই ভাল । কিন্তু জানা দরকার যে বিষয়গুলো —-
*আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোণাল্ড ট্রাম্প, লক ডাউনের পূর্বেই দেশের সকল মার্কিন নাগরিকের ব্যাংক একাউন্টে ৩-৫ হাজার ডলার করে ট্রান্সফার করে দিয়েছেন এরপর দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজনে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার করার জন্য কিছুদিন সময় দিয়ে দেশটি ফুল লকডাউন করে দিয়েছেন । আমেরিকা সহ ইউরোপের সবগুলো দেশেই একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল । চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় ছিল তানাহলে আরও বহুগুন মানুষ সেসব দেশে করোনায় আক্রান্ত হত ও মারা যেত । সেসসব দেশের নাগরিকরা সরকারের নির্দেশ ও স্বাস্থ্য বিধি সর্বোচ্চ মানতে চেষ্টা করেছে । সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ব্যাতিত সেসব দেশে লক ডাউন শিথিল বা উইথড্রো করা হচ্ছেনা । সরকার ও জনগণের মাঝে নিয়মানুবর্তিতা ও সমন্বয় দৃষ্টিনন্দিত । বুঝলাম বাংলাদেশ ইউরোপ আমেরিকার মত সমৃদ্ধশালী ও সচেতন নয় তাই তাদের ফলো করবে কিভাবে ? কিন্তু নেপাল ও ভূটানকে ত ফলো করতেই পারে কিন্তু তা করবেনা কারন ইউরোপ আমেরিকাকে বাদ দিয়ে নেপাল ও ভূটানকে ফলো করবে বাংলাদেশ ? প্রশ্নই উঠেনা, কারন বর্তমান অনেক মন্ত্রীদের ষ্টেটমেন্ট অনুযায়ী আমরা জানতে পারলাম যে স্বয়ং ইউরোপ আমেরিকাই নাকি বাংলাদেশকে ফলো করছে এমনকি অনেক ক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি জানার জন্য আবেদন দিয়ে ট্রাম্প বা ষ্টুডোরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে দিনের পর দিন ।
অন্যদিকে আমাদের দেশে লক ডাউন করার পরে একের পর এক জরুরী বৈঠক বসছে ডিজিটাল কন্ফারেন্সের মাধ্যমে । নগদ অর্থ সরাসরি প্রদান না করে গণজমায়েত করে দেয়া হচ্ছে ত্রাণ সামগ্রী, নতুন করে রেশনকার্ডের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা এবং ওএমএস এর চাল পৌঁছানোর দায়িত্বহীনতার ফাঁদে পড়ে খেটে খাওয়া মানুষরা খাদ্যের প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে ও অনেকে সুখের তরে স্বভাব দোষে ভেঙ্গে ফেলছে লক ডাউন । সরকার প্রধানের যথেষ্ট সদইচ্ছা ও প্রণোদনা ঘোষনা স্বত্বেও শুধুমাত্র সমন্বয়হীনতা ও কতিপয় হাইব্রীড দলীয় নেতৃবৃন্দের নীতিহীনতার কারনে ত্রাণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী সুষম বন্টন হচ্ছেনা । এদিকে জনগণও যে ধুয়া তুলসীপাতা তা নয় । বেশীরভাগই সারাদিনই ধান্ধায় থাকে কিভাবে একটির জায়গায় একাধিক প্যাকেট নেয়া যায় । ফলে সবল গরীবরা ঠিকই পাচ্ছে কিন্তু দূর্বল গরীবরা প্রায় শতভাগই বঞ্চিত হচ্ছে । যাইহোক দেশে যখন প্রতিদিন ৭-৮ জন করে করোনা সনাক্ত হত এবং মৃতের সংখ্যা ছিল শূণ্য কোটায় তখন দেশ হল লক ডাউন আর এখন দৈনিক ৭-৮ শত করে আক্রান্ত হচ্ছে আর দৈনিক মৃতের সংখ্যাও ১০-১২ জন করে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই মূহুর্তে সীমীত আকারের নামে দেশ হয়ে যাচ্ছে আপ ডাউন । সরকার প্রধান চেয়েছিলেন যেভাবেই হোক বাঙ্গালীকে রক্ষা করতে,দেরীতে হলেও ধীরে ধীরে নাগরিকদের নগদ সহায়তারও ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন কিন্তু বাঙ্গালী শেষ পর্যন্ত তা পরোয়া না করে লক ডাউন ভেঙ্গেই ফেলল প্রায়, ফলে দেশটি বর্তমানে হুমকির মুখে পতিত । সর্বপ্রথম এই বাজে কাজটির উদ্ভোধন করেছে দেশের গার্মেন্ট মালিকরা অর্থাৎ বিজিএমইএ । বর্তমানে দোকানপাট শপিংমল সহ খুলে দেয়া হয়েছে দেশের সকল মসজিদগুলোও । ঢাকার চীরচেনা রুপ দেখা যাচ্ছে এখন, শুনতে পাচ্ছি ১৮ তারিখ থেকে পরিবহন চালু হয়ে যাবে । তাহলে আর বাকী রইল কি ? স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয় ও ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের কারনে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা তথা ডাক্তার, নার্স , আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাংবাদিকরাই আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে একের পর এক ! এছাড়াও স্পষ্টতই লক্ষনীয় যে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাকর্তাদের নিজেদের মাঝে ব্যক্তিগত ইগো প্রবলেম এর কারনে চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যাপক অবনতি দিনকে দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
লক ডাউন অরক্ষিত হয়ে গেছে । প্রথমে বাঙ্গালী মৃত্যুর ভয়ে ও সরকারের আশ্বাসে লক ডাউন খুব সহজেই মেনে নিয়েছিল কিন্তু দীর্ঘ দুই মাসের বাস্তব অভিজ্ঞতা শেষে তারা এখন বাহিরে , তাই পূঁণরায় এই লক ডাউন কার্যক্রম এই বাংলার মাটিতে পূর্বের ন্যায় আর কার্যকর করা কখনই সম্ভব হবেনা, এটা নিশ্চিত, কারন আমরা বীর বাঙ্গালী । এবার আর সরকারের দ্বায় নয় কারণ জনগণই গায়ের জোরে ও জীবীকার তাড়নায় সরকারের বিপরীতে হাটছে আর এতে উস্কানি দিচ্ছে দেশের এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল এবং সরকার দলীয় ছদ্ববেশী আরেকটি কুচক্রী মহল । এ বিষয়টি এখন দৃশ্যমান । তবে সব সম্ভবনার দেশ বাংলাদেশ । মীরাক্কেল ঘটলে ঘটেও যেতে পারে এই দেশে । ভেজাল খাদ্য গ্রহণে আর লাগামহীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত বাঙ্গালী করোনাকে পরাজিত করেও ফেলতে পারে, খুব একটা ক্ষতি নাও হতে পারে । যদি তা হয় তাহলে আমার শ্রদ্ধেয় নেতা ও মাননীয় মন্ত্রীর বাণী সঠিক প্রমাণিত হবে যে “আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী” । আর তা যদি না হয়ে দীর্ঘ মহামারি শুরু হয়ে যায়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধ শেষে যেমন চীর কলঙ্কিত হয়েছিল রাজাকাররা ঠিক তেমনি করোনা মহামারি শেষে এদেশে চীর কলঙ্কিত হবে এই লোভী গার্মেন্ট মালিকরা যারা সরকার প্রধানের সরলতাকে দূর্বলতা হিসেবে ব্যবহার করে এই লক ডাউন ভাঙ্গার জনক হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে । যেখানে তারা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই নিয়মিত শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিতে পারেনা, সেখানে তারা করোনা আক্রান্ত শ্রমিকদের কি দ্বায় নিবে ? এটা একটা হাস্যকর কথা ছাড়া আর কিছুই নয় । এইত আর কদিন পরেই ঈদ । বেতন বোনাস নিয়ে একটা ঝামেলা/আন্দোলন/সড়ক অবরোধ হবেই,বেশীরভাগ মালিকরাই ঘোষিত প্রতিশ্রুতি রাখবেনা, ইতিমধ্যেই তা দৃশ্যমান ।
আসলে দেশে করোনার সার্ভিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যায় - করোনায়
এদেশে সবচেয়ে বড় উপকার হয়েছে বেগম জিয়ার কারন এই করোনার জন্যই তিনি আইনি ইতিহাস গড়ে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন এবং বর্তমানে সবচেয়ে ভাল আছেন ও চুপি চুপি সরকার ও জনগণের মধ্যকার “করোনা T-420” ম্যাচ দেখছেন এবং বেশ মজা নিচ্ছেন । পরিশেষে বলতেই হচ্ছে - করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্ব দেখাল জীবন আগে, শুধুমাত্র স্বদেশ দেখাল জীবীকা আগে অর্থাৎ গোটা বিশ্বে মুরগী আগে, শুধুমাত্র বাংলাদেশে ডিম আগে । ডিম মুরগী সম্পর্কে এটিই কালজয়ী সত্য তথ্য যা আজ করোনা দ্বারা চীরস্থায়ী প্রমাণিত হল । আশাকরি ওমেন সাকিব তার ছোটবেলার প্রশ্নের সঠিক উত্তরটি বর্তমানে যুবক বয়সে এসে হলেও পেয়েছেন, সেইসাথে এবার জগতের এই কঠিন প্রশ্ন বিষয়ে আমরাও জানলাম ঠিক ঠিক সত্য । কেন জানি মনে হচ্ছে- মাননীয় সেতু মন্ত্রী ঠিকই বলেছেন যে “আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী” কারণ এই দেশ গঠনে তিনিও একজন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন, তারা বাঙ্গালীর একেবারে সঠিক নেচারটা বাস্তবসূত্রেই জানেন । তারা বেঠিক এর চেয়ে ঠিকই বলেন বেশীরভাগ সময় ।
শেষ করছি ““ঠিক”” বলার একটি ছোট গল্প দিয়ে —-
একবার এক নাড়ী নির্যাতিত মহিলা তার স্বামীর বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিজ্ঞ বিচারকের উদ্যেশ্যে বলছিল- ইউর অনার , আমার স্বামী প্রায়ই বিনা কারনে আমার উপড় পাশবিক নির্যাতন করে তাই নাড়ী নির্যাতন আইনে তার শাস্তি হওয়া উচিত । জর্জ সাহেব সেই নাড়ীকে উদ্যেশ্য করে বললেন - আপনি ঠিক বলেছেন ! মূহুর্তেই আসামী কাঠগড়া থেকে স্বামী বলে উঠল- ইউর অনার, আমার স্ত্রী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মিথ্যা বয়ান দিয়ে এই মহান আদালতকে অবমাননা করেছেন তাই আদালত অবমাননার দায়ে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত । জর্জ সাহেব সেই আসামী স্বামীকে উদ্যেশ্য করে বললেন- আপনি ঠিক বলেছেন ! সঙ্গে সঙ্গে একজন নিরপেক্ষ এ্যাডভোকেট দাঁড়িয়ে বললেন- ইউর অনার, একই সাথে বাদী বিবাদী উভয়েই ঠিক বলতে পারেনা । বিষয় বিরম্বনায় নিরুপায় জর্জ সাহেব তখন তাকেও উদ্দেশ্য করে বললেন - হে হে আপনিও ঠিকই বলেছেন ।
এই গল্পের সূত্র ধরেই বলতে হচ্ছে - করোনা বিষয় বিরম্বনায় সকল জর্জ সাহেবরাই আজকে নিরুপায় এমনকি মধ্যরাতের সুশীলরাও । তাই, যে যা করছে সবই ঠিক করছে , যে যা দেখছে সবই ঠিক দেখছে, আমরাও আমজনতা যে যা ভাবছি ঠিকই ভাবছি, এরপর আরও যা যা হবে সবই ঠিকই হবে, এটাই সত্যি । তাই এখন থেকে আর “নো মোর লকডাউন” । সরকার আমাদের যথেষ্ট সচেতন করেছে ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা যথেষ্ট শিখিয়েছে । করোনা অবশ্যই একটি দীর্ঘ মেয়াদী ঘাতক । তাই সরকারের পক্ষে সারা বছর সবাইকে এভাবে পাহাড়া দেয়া ও ফ্রি খাওয়ানো সম্ভব নয় , বিশেষকরে সম্ভব হলেও বাঙ্গালীকে কখনই ফ্রি খাওয়ানো উচিত নয় । লক্ষনীয় বিষয় হলো, পুলিশ যখন কোন বাঙ্গালী ক্রাইমার/আসামীকে ধরে তখন তাকে ফ্রি-তে কখনই ছাড়েনা, যদি তার কাছে টাকা না থাকে তাহলে অন্তত দারোগা তার নিজের পিঠ-টা হলেও তাকে দিয়ে একটু চুলকিয়ে নেয় কারন পুলিশ বাঙ্গালীকে সবচেয়ে ভাল চিনে ও জানে । সুতরাং সার্বিক পর্যালোচনায় বলতেই হচ্ছে, পুলিশও যা যা করে সবই ঠিকই করে । তবে এই করোনার প্রাদুর্ভাবে পুলিশের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়, মনে হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ তাদের বিগত দিনের সমস্ত ভুলগুলো করোনা সার্ভিসের মাধ্যমে ধুয়ে মুছে ফেলেছে কিন্তু স্বাস্থ্য খাত পূর্বের সমন্বয়হীনতা থেকে বর্তমানে লাগামহীনতায় পরিণত হয়েছে, ফলে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জিড়ো টলারেন্স নিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর দিকে আরও বেশী মনোযোগী হতেই হবে, এর কোন বিকল্প নেই । তাই এবার নিজের ভাল নিজেকেই বুঝতে হবে । সরকারের চেয়ে বেশী বুঝে যে দেশের জনগণ আবার জনগণের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খায় যে দেশের সরকার সেই সব দেশের সরকার বা জনগণ উভয়েরই ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই ।
আশাকরি, করোনার প্রাদুর্ভাব শেষে এই প্রেকটিক্যাল অভিজ্ঞতার আলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্ব-চেতনায় দীপ্ত তারুণ্য সংযোগে সরকারের কেবিনেট সাজবে নতুন করে আর দল খেকে হাইব্রীড তাড়িয়ে ত্যাগীদের যথার্থ মূল্যায়ন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে সেই চীরচেনা ভূমিকায়, নয়ত এই দেশ হবে হুমায়ুন আহমেদের হাবলঙ্গের বাজার অথবা সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশ । সবই থমকে যাবে শুধু নাচবে আর গাইবে গোপীগাইন ও বাঘাবাইন । ধন্যবাদ ।
সম্পাদক - জনসংযোগ নিউজ
সাধারণ সম্পাদক - বিএফজেএ ।
jsongjugnews@gmail.com
fb.com- @jshongjog
পাঠকের মন্তব্য