। এহ্সান মাহমুদ।
মুরাদ হাসানকে নিরাপদে দেশে ফিরতে এবং প্রবেশ করতে দিতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এটা তার অধিকার। কানাডায় বসবাসকারী বাংলাদেশিরা ‘লুটেরা বিরোধী মঞ্চ’ বানিয়ে মুরাদ হাসানকে সেখানে প্রবেশে আপত্তি জানিয়েছে। ‘লুটেরা বিরোধী মঞ্চ’ এর প্রতিবাদ দেখে দেশের ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ এর কথা মনে পড়ল।
এই দুটি মঞ্চই একই ধরনের কাজ করে। ভাবখানা এমন যে, মুরাদ হাসান একাই এমন অন্যায় করেছেন এই বঙ্গদেশে, তার আগে এবং পরে কেউ করেন নাই! মুরাদের দেশে ফেরার যারা বিরোধীতা করছেন তারা একই রকম অন্যদের বেলায় কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? মুরাদ হাসান এখন কানাডা, দুবাই হয়ে আবার ঢাকায় ফিরছেন। দেশে ফেরার অধিকার মুরাদ হাসানের আছে। মুরাদের দেশে ফেরার বিরোধীতা কইরেন না। তাইলে এমন আরও অনেককে দেশের বাইরে বের করতে হবে। সেটা তো আপনারা করছেন না। তাই গণআদালত বসিয়ে মুরাদ হাসানকে বিচারের মুখোমুখি করা তার সাথে অন্যায় হবে। দেশে প্রচলিত আদালত থাকতে গণআদালত বা মঞ্চ বানিয়ে কারও বিচার চাওয়া ভালো নাগরিকের কাজ নহে। দেশের জনসাধারন এটি বুঝতেছেন না, বুদ্ধিজীবী হিসেবে আমার কাজ এই ভুলটা ধরিয়ে দেওয়া।
মুরাদ হাসান কানাডা চলে গেলেন। তার বিদেশ যাওয়ায় কোনো বাধা ছিল না। কোনো মামলা না থাকায় আইনি বাধা নেই। এত দ্রুত কানাডা চলে যাওয়ায় একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে - বর্তমান সরকারের আর কতজন এমপি মন্ত্রীর কানাডার ভিসা নেওয়া আছে? চাপে পড়লে, দরকার হলেই উড়াল দিতে পারবেন, এমন এমপি-মন্ত্রীর সংখ্যা কত? এটা একটা ভালো অনুসন্ধানী নিউজ এর আইডিয়া হইতে পারে। কষ্টসাধ্য হবে, তবে নিউজ আইটেম হিসেবে ভালো।
গাজীপুরের মেয়রের কল রেকর্ড ফাঁস হইলো, তার মেয়রগিরি গেল। রাজশাহীর এক পৌর মেয়রের কল রেকর্ড বের হইলো, তার মেয়রগিরি গেল, জেলে যাইতে হইলো। এখন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর কল রেকর্ড বের হইছে। এই কারণে যদি প্রজাতন্ত্রের এই মাঝারি চাকরের মন্ত্রিত্ব যায় এই দেশে সেটা অবাক হওয়ার কিছু নয়। কারণ প্রচলিত আইনে মেয়র ও মন্ত্রী অপসারিত হবেন এমন ঘটনা কল রেকর্ড ফাঁস নয়। বুঝতে হবে কল রেকর্ড করার ক্ষমতা ও ফাঁস করার ক্ষমতা সাধারণের বাইরে। এই রেকর্ড ও ফাঁস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্তদের হাতে থাকে। এখন দায়িত্বপ্রাপ্তরা মনে করছেন এই দুই মেয়র ও প্রতিমন্ত্রীকে আর প্রয়োজন নাই। কিংবা তারা যথেষ্ট কাজের নয়, তাদের যা দেওয়ার ক্ষমতা তা দেওয়া হয়ে গেছে; এখন তাদেরকে ক্ষমতার বলয় থেকে বের করে দিতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি সহজ করছে কল রেকর্ড ও কল রেকর্ড ফাঁস। এই ঘটনায় যদি দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে হয়, তাহলে এমন বহু ঘটনা রয়েছে যাতে পুরো সরকারকেই দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া উচিত। তা না করে কেবল একজন দুইজন মেয়র বা প্রতিমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার আওয়াজ তোলা বোকামি।
যেকোনো পরিস্থিতিতে “ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী” বলা লোকগুলো হয় বেকুব, নইলে সুবিধাভোগী।
জনসাধারণ এই বোকামিটা করবে, কিন্তু বুদ্ধিজীবী হিসেবে আমার কাজ এই ভুলটা ধরিয়ে দেওয়া। ধন্যবাদ।
লেখক-
সিনিয়র সাব-এডিটর, দৈনিক দেশ রাপান্তর
( ১০ ও ৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত লেখকের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত)
গ:স:/জ:নি:
পাঠকের মন্তব্য