। আমীন সাহেবের বাণী।
সংগ্রহে - বাণী ও পরামর্শ সংযোগ ডেস্ক, জনসংযোগ নিউজ
[১]
মিশে যাওয়া মানে পিশে যাওয়া। বাড়ি, মানুষ, গাড়ি, জানোয়ার সবক্ষেত্রে অতি ঘনত্ব ভীষণ ক্ষতিকর। চারাগাছ নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে রোপন করা হয়। ঘেঁষাঘেষি করে রোপন করলে কোনো চারাই স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ পেত না। কারো সঙ্গে একদম মিশে যাবেন না, তাহলে পিশে যাবেন; বরং উপযুক্ত দূরত্বে পাশাপাশি অবস্থান করে স্বাধীনসত্তায় উভয়ে বেড়ে উঠুন। অতি মেশামিশি সস্তাও করে দেয়।
[২]
সন্তান-সন্ততি নিজের ছায়া। নিজের ছায়ার সঙ্গে কখনও লড়াই করা যায় না। মেনে নিতে হয় সব। প্রতিবাদও কোনো কাজ করে না।
[৩]
আমি কি জন্মগ্রহণ করিনি যে, ঘুস দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে? এ কেমন দেশ, যে দেশে জন্ম নিয়েও জন্মকে নিবন্ধিত করার সময় ঘুস দিতে হয়! জন্ম না নিলে একটা কথা ছিল। আমি তো জন্ম নিয়েছি, তো ঘুস দিতে হবে কেন? জাতি আমার কাছ থেকে উত্তম কী আশা করতে পারে?
[৪]
যারা সারাক্ষণ মৃত্যুচিন্তা করে তারা জীবন্মৃত, প্রকৃতপক্ষে পচার অপেক্ষায় নির্জীব পড়ে থাকা অকল্যাণের প্রতিভূ আর সম্প্রদায়ের আবর্জনা। এদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে পুরো সম্প্রদায়টাই একসময় আবর্জনা হয়ে যায়।
[৫]
ছেলে কি স্যার তার মায়ের মতো, আই মিন আপনার স্ত্রীর মতো হয়েছে?
তুমি কি কাপড় উলটেও দেখেছ?
সরি, স্যার; বুঝতে পারলাম না।
আমার ছেলে একজন পুরুষ, কিন্তু আমার স্ত্রী একজন মহিলা। পুরুষ কীভাবে মহিলার মতো হয়? ভণ্ডামির একটা সীমা থাকা উচিত।
[৬]
প্রেমে পড়া আর গর্তে পড়ার তফাত হচ্ছে এই, গর্ত হতে কোনোভাবে উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু প্রেমে পড়লে তা হতে উদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা নেই; এর সমাপ্তি তিল তিল মৃত্যু। আর একটা পার্থক্য, মানুষ ইচ্ছে করে গর্তে পড়ে না, কিন্তু ইচ্ছে করে প্রেমে পড়ে।
[৭]
তুমি যদি অন্যের জিনিসকে আকড়ে রাখ, স্বাধীনভাবে অন্যের ইচ্ছেকে নিবেদিত করার সুযোগ না দাও, বরং বিভিন্নভাবে বাধার সৃষ্টি কর তাহলে তুমি নিশ্চিত একা হয়ে যাবে। এটি দাম্পত্য জীবন-সহ সকল সুসম্পর্কের বিষানল।
[৮]
অপমানকারীকে অপমান করে তার সমকাতারে দাঁড়ানো আমার পছন্দ নয়। পরিবর্তে গুরুত্ব কমিয়ে দূরত্ব বাড়িয়ে দিই। ভীতু বলুন আর উদার বলুন এটাই আমার স্বভাব।
[৯]
আমি যা বলছি তা যদি সবার কথা হয়, তাহলে ওই কথা বলা অনাবশ্যক। চর্বিত চর্বন হাস্যকর। আমার মতামত যদি সবার মতামত হয় তাহলে আমি কোন যুক্তিতে ওটাকে আমার মতামত দাবি করব? আমার মতামতে যত ভিন্নমত আসবে ততই আমার মতামতের মৌলিকত্ব শক্তিশালী হবে।
[১০]
প্রবল বিশ্বাস দুর্বল বিবেচনার লক্ষণ। বিশ্বাস যত দৃঢ় হয়, জ্ঞান তত শীতল ও প্রজ্ঞা তত ক্ষীণ হয়। ব্যক্তি তখন খুব দ্রুত মানসিক ও জ্ঞানগতভাবে অন্ধ হয়ে পড়ে। তার বিবেচনাবোধ বিশ্বাস নামক কুসংস্কারের মলে পরিণত হয়। এই অবস্থাকে বলে উগ্রতা।
[১১]
কেবল সংখ্যাধিক্য যদি শক্তির উৎস হতো, তাহলে এক কোটি বিশ লাখ ইহুদি একশ সত্তর কোটি মুসলিমকে রাঁধুনির বটির নিচে পড়ে থাকা পুঁটি মাছের মতো তার ইচ্ছাবটির ক্রীড়নক বানাতে পারত না। মাথার সংখ্যা নয়, মাথার ভেতরে অবস্থিত মগজই মুখ্য বিষয়।
[১২]
যদি প্রকৃত শান্তি, পূর্ণ স্বস্তি ও ভাবনাহীন জীবন চান তো প্রিয়জনের গোপনীয় বিষয়ে নজর রাখার ন্যূনতম আগ্রহও মন থেকে ধুয়েমুছে ফেলুন। এমন আগ্রহ উভয়ের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে।
[১৩]
প্রত্যেকের ধর্ম প্রত্যেকের কাছে পবিত্র। অন্যের ধর্মকে অপমান, অবহেলা বা ঘৃণা করা মানে নিজের ধর্মকে অনুরূপ অপমান, অবহেলা বা ঘৃণার বিষয়ে পরিণত হওয়ার পথ প্রশস্ত করে দেওয়া। নিজের ধর্ম, মতবাদ ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখার প্রধান পূর্বশর্ত হচ্ছে অন্যের ধর্ম, মতবাদ ও বাকস্বাধীনতাকে সম্মান করা।
যে সম্প্রদায় কেবল নিজেকে শ্রেষ্ঠ এবং অন্যকে নিকৃষ্ট মনে করে তারা কূপমণ্ডূক। এরা কেবল নিজেদের শ্রেষ্ঠ এবং অন্যদের নিকৃষ্ট মনে করতে গিয়ে পক্ষান্তরে অন্য সব সম্প্রদায়ের কাছে নিকৃষ্ট আবর্জনায় পরিণত হয়। এমন সম্প্রদায় খুব দ্রুত প্রজ্ঞাহীন, প্রভাবশূন্য ও ভাসমান হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য অন্য সম্প্রদায়সমূহের কৃতদাসে পরিণত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
যারা অন্যের শান্তি বিঘ্নিত করে তারা কখনও শান্তিতে থাকতে পারে না। নিজের স্বাধীনতা সুরক্ষার প্রথম শর্ত অন্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
[১৪]
প্রতিটি ইটে নাম লেখা থাকে। এরূপ নামাঙ্কিত হাজার হাজার ইটের ত্যাগে গড়ে উঠা ভবনে ইটনামের কোনো চিহ্নই থাকে না। কেবল ভবনটাই দৃশ্যমান থাকে। এভাবে হাজার হাজার মানুষের ত্যাগে স্বাধীন হয় দেশ, গড়ে উঠে ইতিহাস, প্রতিষ্ঠা পায় সংস্থা; কিন্তু নাম থাকে কেবল নেতার। প্রকৃত ত্যাগীদের নামচিহ্ন ভবনের ইটের মতো সিমেন্টের আস্তরে ঢাকা পরে যায়।
[১৫]
একটা মেয়ে ব্যভিচার কাজে হাতেনাতে ধৃত হয়েছে। তার বিচার সভায় যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার ইহুদি। এসময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন যিশু খ্রিস্ট।
কী হয়েছে, যিশু জানতে চাইলেন।
বিচারক বললেন, মেয়েটি ব্যভিচার কাজে হাতেনাতে ধরা পড়েছে।
তোমরা কী করতে চাও?
আমাদের মোজেস বলেছেন, এমন অপরাধের একমাত্র শাস্তি প্রস্তর নিক্ষেপ করে হত্যা। আপনি কী বলেন?
যিশু কোনো উত্তর না দিয়ে চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে মুখ করে আঙুল দিয়ে শূন্যে কী জানি লিখে চলেছেন।
ইহুদি নেতারা বারবার তাঁকে একই প্রশ্ন করে যাচ্ছেন। অবশেষে যিশু চোখ খুলে নেতৃবৃন্দের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ সেই ওকে প্রথম পাথরটা নিক্ষেপ করুক।
কথা শেষ করে যিশু আবার চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে শূন্যে লিখতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখেন, অভিযুক্ত মেয়েটি ছাড়া বাকি সবাই চলে গেছেন।
যিশু মেয়েটিকে বললেন, যাও, এমন আর কোরো না।
[১৬]
আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সমস্যার যোগ বড়ো নিবিড়। আকাঙ্ক্ষা যত বাড়ে সমস্যাও তত বাড়ে। তাই আশাবাদীর সমস্যা হতাশবাদীর চেয়ে বেশি। কোনো লোক সমস্যাশূন্য হয়ে গেলে বলা যায় সে হতাশার চূড়ান্ত পর্যায়ে অবস্থান করছে।
(বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত, লেখকের ভেরিফাইড এফবি পেজ থেকে সংগৃহীত)
Writer-
◆Visiting professor at university of ottawa, Canada
◆Secretary at statistics and data information
◆Former DC and UNO
◆◆◆
ভিশন অব জনসংযোগ নিউজ
বিস্তারিত > https://www.jonosongjognews.com/753
পাঠকের মন্তব্য