শুভেচ্ছা সংযোগ । এম আনিছুর রহমান
(১) নেই শফিক রেহমান সম্পাদিত সেই যায়যায়দিন, নেই সেই দিবস উদযাপনের মহাআয়োজনের নির্মল স্বাধীনতা। আছে এই যায়যায়দিন; রসহীন,কাব্যহীন,শ্রী-হীন এক নিউজ লিফলেট। তবুও দেশে আজও ব্যাপক পরিসরেই উদযাপন হয় বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের এই দিনটি যার প্রতিষ্ঠাতা দেশ বরেণ্য লেখক, উপস্থাপক ও সম্পাদক শফিক রেহমান।তাঁর সম্পাদিত যায়যায়দিন ম্যাগাজিন ১৯৯৩ সালে প্রথম এই দিনটিকে উপলক্ষ করে বিশেষ ‘ভালোবাসা সংখ্যা’ বের করেছিল। দিনে দিনে বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস রীতিমত উৎসবে রূপ নিয়েছে। সংগৃহীত, বিবিসি বাংলা ও উইকিপিডিয়ার সূত্রে শুরুতেই জানা যাক শফিক রেহমান ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে কিছু তথ্য-
(২) শফিক রেহমান (জন্ম ১১ নভেম্বর ১৯৩৪) একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, টিভি উপস্থাপক ও লেখক। তাকে বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রচলক হিসেবে মনে করা হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের পক্ষে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে কাজ করেন।
(৩) ১৯৮৪ সালে তিনি সাপ্তাহিক যায়যায়দিন ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠা করেন যা সাবেক স্বৈরশাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সমালোচনার জন্য পরিচিত ছিল। ১৯৮৬ সালে এরশাদ সরকার যায়যায়দিনের ডিকলারেশন বাতিল করার পর তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।
(৪) ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডনে অবস্থান করেন। ইংল্যান্ডে তিনি স্পেকট্রাম রেডিও-এর পরিচালক ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি ডেমোক্রেসি ওয়াচ নামক একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। ২০০৬ সালে তিনি যায়যায়দিন ম্যাগাজিনকে ব্যাপক জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক-এ রুপান্তরিত করেন এবং নানান জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ২০০৮ সালে তা এইচআরসি গ্রুপের কাছে বিক্রি করত: হস্তান্তর করে দেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন-এ “লাল গোলাপ” নামক একটি টক শো উপস্থাপনা করতেন, পরবর্তীকালে যা বাংলাভিশনে প্রচার শুরু হয়।
(৫) প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর পর যায়যায়দিন হারিয়ে পরবর্তীতে তিনি ২০০৯ সালে “মৌচাকে ঢিল” নামে একটি সাময়িকী প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৬ সালের ১৬ এপ্রিল ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে “অপহরণ ও হত্যা-চেষ্টা ষড়যন্ত্রের” অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে জামিন লাভ করে বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন।
(৬) মি: রেহমান ১৯৩৪ সালের ১১ নভেম্বর বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম শফিক-উর-রহমান। তার পিতা সাঈদ-উর-রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক ছিলেন যিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও শিক্ষক ছিলেন।
(৭) ১৯৪৯ সালে শফিক রেহমান পুরান ঢাকার সেইন্ট গ্রেগরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৫১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ও অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও ১৯৫৬ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য পরে ইংল্যান্ড গমন করেন এবং ১৯৬৫ সালে ‘ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইন ইংল্যান্ড ও ওয়েলস’ থেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট বিশ্লেষন ।
(৮) একজন বিখ্যাত সেইন্ট বা ধর্ম যাজকের নাম থেকে দিনটি এমন নাম পেয়েছে। তবে তিনি কে ছিলেন - তা নিয়ে বিভিন্ন গল্প রয়েছে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্পর্কে জনপ্রিয় বিশ্বাস হল তিনি খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে রোমের একজন পুরোহিত ছিলেন। সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস বিবাহ নিষিদ্ধ করেছিলেন। কারণ তার মনে হয়েছিল, বিবাহিত পুরুষরা খারাপ সৈন্য হয়ে থাকে। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন মনে করেছেন, এটি অন্যায়। তাই তিনি নিয়মগুলো ভেঙ্গে গোপনে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। ক্লডিয়াস যখন এই খবর জানতে পারেন, তখন তার আদেশে ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় ভ্যালেন্টাইন কারা প্রধানের মেয়ের প্রেমে পড়েন। ১৪ই ফেব্রুয়ারি যখন তাকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ভ্যালেন্টাইন ওই মেয়েটির উদ্দেশ্যে একটি প্রেমপত্র পাঠিয়ে যান। যেখানে লেখা ছিল, “তোমার ভ্যালেন্টাইনের পক্ষ থেকে”।
প্রথম ভ্যোলেন্টাইন‘স ডে শুরু হয় যেভাবে :
(৯) প্রথম ভ্যালেন্টাইন’স ডে ছিল ৪৯৬ সালে। একটি নির্দিষ্ট দিনে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালনের বিষয়টি বেশ প্রাচীনকালের ঐতিহ্য, যা রোমান উৎসব থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। রোমানদের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে লুপারকালিয়া নামে একটি উৎসব ছিল - আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বসন্ত মৌসুম শুরু হওয়ার সময়। উদযাপনের অংশ হিসাবে ছেলেরা একটি বাক্স থেকে মেয়েদের নাম লেখা চিরকুট তোলেন। যে ছেলের হাতে যেই মেয়ের নাম উঠত, তারা দুজন ওই উৎসব চলাকালীন সময়ে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড থাকতেন বলে মনে করা হয়। অনেক সময় ওই জুটিই বিয়েও সেরে ফেলতেন।
(১০) পরবর্তী সময়ে, গির্জা এই উৎসবটিকে খ্রিস্টান উৎসবে রূপ দিতে চেয়েছিল। একইসাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের স্মরণে এই উৎসব উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ধীরে ধীরে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামটি মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করে। আর মানুষ তার ভালবাসার মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি প্রকাশের জন্য এই নামটি ব্যবহার করা শুরু করে।
(১১) ১৪ফেব্রুয়ারি,২০২০ এ বিবিসি বাংলার পুলক গুপ্তের কাছে শফিক রেহমান বর্ণনা করেছিলেন কিভাবে তিনি বাংলাদেশে প্রথম ভালোবাসা দিবস উদযাপনের কথা ভেবেছিলেন । জনসংযোগ পাঠকদের জন্য তার পূর্ণাঙ্গ বক্তব্যটি তুলে ধরা হল :
।শফিক রেহমান।
“আমার প্রিয় একজন শিল্পী হচ্ছেন মান্না দে। শুধু তিনি নন, আরও অনেক প্রিয় শিল্পী আর গীতিকারের গাওয়া গানের কিছু কলি আমি আমার ঢাকার বাড়ির দেয়ালের বাইরে লিখে রেখেছিলাম। একদিন দেখি, এক ফোকলা দাঁতের বৃদ্ধ ফেরিওয়ালা, প্রায় অর্ধ উলঙ্গ, দাঁড়িয়ে এই লেখাগুলো পড়ছিলেন। তার মাথায় একটা ঝাঁকায় শিশি-বোতল থেকে নানা কিছু। আমি তখন বাইরে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি যে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই লেখাগুলো পড়লেন, বলুনতো, কোন লেখা আপনার সবচেয়ে ভালো লাগলো। তখন তিনি বললেন, এই কথাগুলো তার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে:
“হৃদয় আছে যার, সেই তো ভালোবাসে
প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রেম আসে।”
বৃদ্ধ ফেরিওয়ালার মুখে একথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমার মনে হলো, একজন গরীব মানুষ, সে এই কথা বললো? এর মানে তারও জীবনে নিশ্চয়ই প্রেম এসেছিল। আমরা যারা সমাজের উপরের তলার মানুষ, আমরা যারা লিখি, তারা হয়তো বুঝি না, আমাদের সাধারণ মানুষের জীবনে কিভাবে প্রেম আসে। তখন আমি ঠিক করলাম বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসার মানে বোঝাতে হবে।
১৯৯৩ সালে আমি তখন ঢাকায় যায়যায়দিন পত্রিকাটি প্রকাশ করছি। সেবছরের ১৪ই ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন্স ডে সামনে রেখে আমরা একটি বিশেষ সংখ্যা বের করার পরিকল্পনা করি। আমরা পাঠকদের কাছে লেখা আহ্বান করি। আমি তখন বলেছিলাম, একটি দিনে প্রতিটি মানুষের অন্তত সবার কাছে ভালোবাসাটা প্রকাশ করা উচিত। আমি তখন ভেবেছিলাম, এই যে আমাদের দেশে এবং উপমহাদেশে এত সহিংসতা ঘটছে, এর অবসান ঘটাতে ভালোবাসা দরকার।
এই ভালোবাসা দিবস শুধু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নয়, সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া উচিত। অর্থাৎ বাবা মার সঙ্গে ছেলে মেয়ের, দাদা-দাদীর সঙ্গে নাতি-নাতনির, এমনকি বাড়িওয়ালার সঙ্গে ভাড়াটের। পুলিশের সঙ্গে পাবলিকের, যদি সম্ভব হয়। আমি মনে করেছি এতে দেশে সহিংসতা কমে আসবে। আমি তখন পাঠকদের কাছে তাদের অভিজ্ঞতা চেয়ে পাঠালাম।আমি পাঠকদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাই। ঠেলাগাড়িওয়ালা, রিকশাচালক, তাদের লেখা পর্যন্ত আমি পেতাম। অনেক লেখা আমার কাছে আসতো, বস্তা বস্তা। বলতেই হবে, বাঙ্গালি আসলেই প্রেমিক। নইলে এত লেখা আমরা কেমন করে পেতাম।
আমাদের যায় যায় দিনের প্রথম ভালোবাসা সংখ্যা ছিল ৩২ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে ১৬ পৃষ্ঠা বরাদ্দ রেখেছিলাম পাঠকদের জন্য। সেখানে আমি ব্যাখ্যা করেছিলাম সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে কি ছিল। তবে আমি পাঠকদের বলেছিলাম, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই দিবসটি কীভাবে উদযাপন হওয়া উচিৎ। আমি চেয়েছিলাম, সব ধরণের ভালোবাসার সম্পর্ক যেন এই ভালোবাসা দিবসে স্মরণ করা হয়। আমি বহুবছর লণ্ডনে থাকার সুবাদে জানতাম, এখানে কীভাবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আমি এই নামের পরিবর্তে ভালোবাসা দিবস দিয়েছিলাম ইচ্ছে করে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে বললে অনেকে বলবে এটা খ্রীষ্টানদের ব্যাপার, বলবে আমি এটা ধর্মীয় দিকে টেনে নিয়ে গেলাম।
যে সপ্তাহে আমাদের প্রথম ভালোবাসা সংখ্যা বের হয়, ঐ একই সপ্তাহে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন তাদের প্রথম ভালোবাসা সংখ্যা প্রকাশ করে। সেজন্যে অনেকে বলেন, আমি টাইম ম্যাগাজিনের চেয়ে একটু এগিয়ে ছিলাম। আমি কিন্তু ভাবিইনি যে এই ভালোবাসা দিবস এত বড় আকার ধারণ করবে। বাঙ্গালি যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল। এর কারণও আছে। বাংলাদেশে অন্য যেসব উৎসব হয়, সেগুলো হয় ধর্মীয় নয়তো কোন রাজনৈতিক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। অথবা নববর্ষের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ভালোবাসা দিবস ছিল সেদিক থেকে আলাদা। এখন তো ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে বহুলোক বিয়েও করছে। এই দিনটি বাংলাদেশে অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। যশোরে এক দিনেই নাকি বিক্রি হয় ১২ কোটি টাকার ফুল। এতটা যে হবে ভাবিনি। আমার ধারণা এটি আরও বড় হবে, কারণ এটাকে আমি পারিবারিক রূপ দেবার চেষ্টা করেছি।”
(১২)পরিশেষে বলছি যায়যায়দিন সম্পর্কে কিছু কথা-
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যায়যায়দিনের শ্লোগান ছিল “দেশকে চিনুন বিদেশকে জানুন” কিন্তু ২০০৯ সালে এর মালিকানা হস্তান্তরের পরে এই শ্লোগানটি হয় “১৬কোটি মানুষের জন্য প্রতিদিন, যায়যায়দিন” ; প্রশ্ন হচ্ছে দেশে কি এখনও ১৬ কোটি মানুষই আছে?
মূলত: মালিকানা স্বইচ্ছায় হস্তান্তর নয় বরং তৎকালীন ওয়ানইলিভেন সরকারের প্রবল চাপে ও বসুন্ধরা গ্রুপের চরম অসহযোগীতার জন্য সম্পাদক শফিক রেহমান তার যায়যায়দিনের মালিকানা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এক কথায়, যায়যায়দিন রেহমান সাহেবের কাছ থেকে তখন ক্ষমতার দাপটে জোর করে কেড়ে নেয়া হয়েছিল।
এক বুকফাঁটা নিরব আর্তনাত নিয়ে তিনি ছেড়েছিলেন তার প্রিয় যায়যায়দিন চত্বর ও মালিকানা। তিনি যায়যায়দিনকে যেভাবে সাজিয়েছিলেন তা আজও পর্যন্ত অন্যকোন পত্রিকা অফিস দেখাতে পারেনি, হয়ত ভবিষ্যতে আর পারবেওনা। সেসময় আমরা যারা তার সাথে যায়যায়দিনে কর্মরত ছিলাম তাদের প্রত্যেকের কাছেই যায়যায়দিন থেকে এভাবে বিদায় নেয়াটা ছিল খুবই বেদনাদায়ক। এমন একটি সৃজনশীল গণমাধ্যমের জন্ম এই দেশে আর কখনও হবেনা কারন বর্তমানে বেশীরভাগ সংবাদ মাধ্যমগুলোই আর পাঠকবান্ধব নেই, ধীরে ধীরে প্রায় সবগুলোই যেন ব্যবসাবান্ধব হয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারন হলো: প্রকৃত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে গণমাধ্যমগুলোর মালিকানা চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছে, তারা তাদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করছে গণমাধ্যমগুলোকে।
(১৩) দেশের গণমাধ্যমগুলোতে বেড়ে গেছে রাজনৈতিক প্রবণতা। অর্থাৎ বর্তমানে অনেক রাজনীতিবিদ রাজনীতিকে ধরে রাখতে পাশাপাশি হতে চাইছেন সাংবাদিক আবার এর উল্টোদিকেও অনেক সাংবাদিক তার সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে পাশাপাশি হতে চাইছেন রাজনীতিবিদ কিন্তু হচ্ছেনা কোনটাই, বরং তারা প্রত্যেকেই হয়ে যাচ্ছেন “রাংবাদিক”। এক কথায়- একইসাথে যারা সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ তারাই হলেন রাংবাদিক। অন্যদিকে যিনি সাংবাদিক বা রাংবাদিক কোনটাই নন, অর্থাৎ যারা সাংবাদিক ও রাংবাদিক উভয়েরই উর্ব্ধতন কর্মকর্তার মত, তারাই সাংঘাতিক। এককথায়- সাংঘাতিকরা খবর পড়েনা, খবর দেখেনা, খবর লিখেনা কারন তারা নিজেরাই এক একটি খবর। তাদের কাছে একাধিক বা ততোধিক প্রেস আইডি কার্ড থাকে, তারা একইসাথে অনেকগুলো মিডিয়ায় কাজ করে, তারা একাধারে কোথাও সম্পাদক, কোথাও প্রকাশক, কোথাও চীফ রিপোর্টার আবার কোথাওবা ষ্টাফ রিপোর্টার। তাই বর্তমান বঙ্গসমাজের সবচেয়ে ভয়ংকর একটি শ্রেনী হচ্ছে এই রাংবাদিক ও সাংঘাতিকরা, যারা দেশকে এগিয়েও নিচ্ছেনা আবার পেছাতেও দিচ্ছেনা বরং তারা এ দেশকে থামিয়ে রেখেছে একটি নির্দিষ্ট সীমারেখায়। এদের হাত থেকে পরিত্রাণ জরুরী।
(১৪) যাইহোক যেহেতু সাংবাদিক শফিক রেহমান বেঁচে আছেন এখনও তাই অন্তত প্রতিবছর ভালোবাসা দিবসের বিশেষ সংখ্যাটি শফিক রেহমানের সম্পাদনায় যেন আবার বের করা যায় সে ব্যাপারে বর্তমান কর্তৃপক্ষের একটি কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়া উচিত। যদিও তিনি রাজি হবেননা এই ব্যাপারে তবুও যেভাবেই হোক তাকে কনভেন্স করে পূর্ণ স্বাধীনতা ও ক্ষমতা দিয়ে পূণরায় তার হাতে যায়যায়দিনের সম্পাদনার দায়িত্ব দেয়ার ব্যাপারে বর্তমান কর্তৃপক্ষের উদ্যোগী হওয়া উচিত । যদিও বিষয়টি পূণরায় দুই বাংলাকে এক করার বিষয়ে স্বপ্ন দেখার মত হবে; তবুও পাঠকদের এ ব্যাপারে স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায় ?
শু:স:/জ:নি:
Email- desk@prnews1.com / fb.com- prnews1.com.bd
পাঠকের মন্তব্য